Web bengali.cri.cn   
শীতকালকে ঘিরে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত আটটি প্রচলিত ভুল ধারণা
  2015-01-11 18:52:56  cri


শীতকালকে ঘিরে বেশ কয়েকটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে। যুক্তরাষ্ট্রের 'স্বাস্থ্য' ম্যাগাজিনে এ ধরনের আটটি ভুল ধারণার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আলিম ভাইয়া, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে চলুন আমরা এই ৮টি ভুল ধারণা নিয়ে আলোচনা করি।

ভুল ধারণা এক: শীত বেশি পড়লে সর্দি-কাশি বেশি হয়।

তাপমাত্রা কমে গেলে বা বেশি ঠাণ্ডা পড়লেই মানুষ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হবে বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হবে, এমন কোনো কথা নেই। বরং ব্যাপারটি ঠিক উল্টো হবার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের শরীরে যে ভাইরাস-প্রতিরোধক জীবকোষ থাকে, শীতকালে সেগুলোর সংখ্যা বেড়ে যায়। ফলে শীতকালে মানুষের শরীর সর্দি-জ্বর মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে অধিক সক্ষম থাকে। মার্কিন রাষ্ট্রীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান অনুসারে, ফ্লু-এর ভাইরাস সাধারণত ৩২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সহজে বেঁচে থাকতে পারে।

শীতকালে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু আপনার কথা শুনে বেশ বুঝতে পারছি যে, গরম কালে কেন সর্দি-জ্বরে মানুষ তুলনামূলকভাবে বেশি আক্রান্ত হয়। ৩২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি তাপমাত্রা চীনে গ্রীষ্মকালে ও বসন্তকালের শেষ দিকে থাকে। আমি যতদূর জানি, এ মাত্রার গরম বাংলাদেশেও পড়ে। অতএব সুপ্রিয় শ্রোতা, বুঝতেই পারছেন। সর্দি-জ্বরের বিরুদ্ধে আমাদের আসলে বেশি সচেতন থাকতে হবে গরমের সময়।

ভুল ধারণা দুই: শীতকালে ঘরের বাইরে শরীরচর্চা করার দরকার নেই।

প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও ঘরের বাইরে শরীরচর্চা চালিয়ে যেতে হবে। এর প্রয়োজন আছে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শরীরচর্চা বেশি করলে শীতকালে বিষন্নতা প্রতিরোধ করা সহজ হয়।

আপনি ঠিক বলেছেন ঊর্মি। শীতকালে আবহাওয়া খারাপ থাকলেও, ঘরের বাইরে শরীরচর্চা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া উচিত। এতে আমাদের শরীর ও মন দুটোই তাজা থাকবে।

ভুল ধারণা তিন: শীতকালে অ্যালার্জি কম হয়।

আসলে ব্যাপারটি ঠিক উল্টো। শীতকালেই বরং বেশি অ্যালার্জি দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, শীতকালে দেশটির এক পঞ্চমাংশ মানুষ নানা ধরনের অ্যালার্জিতে ভোগে।

এই সংখ্যা আসলে কম নয়। শীতকালে ঘর থেকে সৃষ্ট অ্যালার্জিতে মানুষ বেশি ভোগে। কারণ, এসময় সবাই জানালা-দরজা কম খোলেন। সবসময় জানালা বন্ধ থাকলে, ঘরে বিশুদ্ধ বায়ুর অভাব হয়। বিশুদ্ধ বায়ুর অভাবের সাথে অ্যালার্জির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যদি আপনি দশ দিনের বেশি কোনো অ্যালার্জিতে আক্রান্ত থাকেন, তবে অবশ্যই আপনার উচিত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়া।

ভুল ধারণা চার: শীতকালে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করতে হয় না।

এটি একটি ভুল ধারণা। শীতকালেও সানস্ক্রিণ ব্যবহার করার প্রয়োজন আছে সমানভাবেই। এ ব্যাপারে নিউইয়র্কের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে: শীতকালে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর অতিবেগুণী আলোকরশ্মির ৮০ শতাংশ তুষার বা বরফে প্রতিফলিত হয়ে আমাদের শরীরে পড়ে। অর্থাত শীতকালে অতিবেগুণীরশ্মি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ—দুই ভাবেই আমাদের শরীরে এসে পড়ে। তাই ক্ষতি হয় দ্বিগুণ।

শীতকালের কয়েকটি মাস পৃথিবীর পৃষ্ঠতল তুলনামূলকভাবে সূর্যের অধিক নিকটে চলে আসে। তখন আমাদের অজান্তে আমরা সূর্যের ক্ষতিকর আলোকরশ্মি শরীরে গ্রহণ করে থাকি। সুতরাং, শীতকালেও সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা প্রয়োজন। এবার আমি শীতকালকে ঘিরে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ভুল ধারণাগুলোর পাঁচ নম্বরটি নিয়ে আলোচনা করবো।

ভুল ধারণা পাঁচ: রোদ পোহানো কম হলে শীতকালে মানুষ বিষন্নতা রোগে ভোগে।

বিষন্নতা এমন একটি রোগ যার সাথে গায়ে কম রোদ লাগানো বা আলোর স্বল্পতার কোনো সম্পর্ক নেই। আসলে অন্যান্য অনেক ফ্যাক্টরের কারণে শীতকালে মানুষের মন বিষন্ন হতে পারে।

বিভিন্ন বয়সগ্রুপের মানুষ বিষন্নতায় আক্রান্ত হতে পারেন। বিশেষ করে তরুণরা কাজের চাপে, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক অশান্তি ইত্যাদি নানা কারণে বিষন্ন হতে পারেন। যদি আপনি বিষন্নতায় আক্রান্ত হন, তবে আপনার আপনজন ও চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন। শীতকে বা পর্যাপ্ত সূর্যালোকের অভাবকে এর জন্য দোষ দিয়ে লাভ নেই। আচ্ছা, প্রিয় বন্ধু, এখন আমি ষষ্ঠ ভুল ধারণার সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবো।

ভুল ধারণা ছয়: শীতকালে নারীদের ওজন বাড়বে ৫ কিলোগ্রাম।

নারীরা যখন আনন্দে থাকে তখন খেতে পছন্দ করে এবং যখন মনের কষ্টে থাকে, তখনও খেতে পছন্দ করে। এসব ক্ষেত্রে আমরা যা খাই সেগুলোর অধিকাংশই স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল নয় মোটেই। আমরা খেতে পছন্দ করি বলেই খাই। আর এভাবেই আমাদের ওজন বেড়ে যায়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, শীতকালে নিয়ম করে মেয়েদের ওজন ৫ কিলোগ্রাম বেড়ে যাবে। বাস্তবতা হচ্ছে, শীতকালে মাথাপিছু নারীদের ওজন ০.৫ থেকে ১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ব্রিটেনের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে: বসন্তকালে নারীরা যেটুকু ওজন গেইন করে, তা শীতকালে না-কমে বরং খানিকটা বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই শীতকালে নারীদের উচিত পর্যাপ্ত শরীরচর্চা চালিয়ে যাওয়া। আচ্ছা, এখন আমি সাত নম্বর ভুল ধারণাটি তুলে ধরতে চাই।

ভুল ধারণা সাত: শীতকালে চুল বেশি পড়ে।

এক্ষেত্রেও ব্যাপারটি আসলে ঠিক উল্টো। শীতকালে চুল তুলনামূলকভাবে কম পড়ে। সুইজ্যাল্যান্ডের এক হাসপাতালের গবেষণা কর্মীরা ৮২৩ জন নারী বন্ধুর ওপর ৬ বছর ধরে একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। গবেষণা থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে তা হচ্ছে: গ্রীষ্মকালে যাদের চুল পড়েছে, শীতকালে পড়েছে তারচে খানিকটা হলেও কম।

যাদের মাথার ত্বক শুষ্ক, তাদের চুল পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ ধরনের লোকের চুল হালকা ও ভঙ্গুর হয়। এ অবস্থায় খুব ঘন ঘন চুল না-ধোয়াই ভালো। আর এ ধরনের চুলের জন্য শ্যাম্পু্ও বাছাই করতে হয় সাবধানে। এ ধরনের চুলের জন্য পিএইচ নিউট্রাল শ্যাম্পু ভালো। আচ্ছা, আলিম ভাইয়া, এখন আমি অষ্টম অর্থাত্ শেষ ভুল ধারণাটি সম্পর্কে কথা বলতে চাই।

ভুল ধারণা আট: মদ খেলে শরীর গরম হয়।

এ ভুল কথাটি শীতকালে বেশি শোনা যায়। আসলে মদ পান করলে শরীরে রক্তপ্রবাহ দ্রুত হয়। তখন শরীরের ভেতরের উষ্ণতা ত্বকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাময়িকভাবে শরীরে গরম অনুভূত হলেও, সার্বিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। আর শরীরের তাপমাত্রা লক্ষণীয়ভাবে কমে যাওয়ায়, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।

শীতের সময় মদ খেলে শরীর গরম থাকে। এটি যে একটি মারাত্মক ভুল ধারণা, তা আমার জানা ছিল না। আজ জানলাম। আপনাকে ধন্যবাদ। আমার মেঝ মামা একজন ডাক্তার। তিনি কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। উনি যেখানে বাস করেন, সেখানে প্রায় সারা বছরই প্রচণ্ড ঠাণ্ডা থাকে। তো, তাকে আমি একবার এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনিও একই ধরনের কথা বলেছিলেন। শরীর গরম করার জন্য তাকে কোনোদিন বিয়ার পর্যন্ত খেতে হয়নি।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040