Web bengali.cri.cn   
এই শীতে স্বাস্থ্যের যত্নে কী করবেন
  2015-01-05 18:57:59  cri


অনুষ্ঠানের শুরুতে সুপ্রিয় শ্রোতাদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে চাই। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানটি ২০১৫ সালে 'স্বাস্থ্য ও জীবন'-এর প্রথম পর্ব। আশা করি এ বছরও শ্রোতারা আমাদের সঙ্গেই থাকবেন। আচ্ছা, আলিম ভাই, শীতকাল আপনার কেমন লাগে? একজন বিদেশি হিসেবে আপনি পেইচিংয়ের শীতকালকে কেমন দেখছেন?

শীতকাল আমার এমনিতেই প্রিয়। বিশেষ করে পেইচিংয়ে তুষার আমার খুব পছন্দ। অবশ্য এ বছর এখনো তুষার পড়া শুরু করেনি। আমি অধির আগ্রহ নিয়ে তুষারের অপেক্ষায় আছি।

অনেক চীনা শীত পছন্দ করেন না। কারণ, শীতে ফ্যাশনেবল পোশাক পড়ার সুযোগ কম। আর শীতে ঠান্ডা লেগে যায়। আপনি শীতকাল পছন্দ করেন জেনে ভালো লাগলো। সে যাক, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে শীতকালে স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার ওপর আমরা আলোচনা করি, কী বলেন?

হ্যাঁ, শীতে সুস্থ থাকার জন্য একটু বিশেষ যত্ন নিতে হয় শরীরের। চলুন শুরু করা যাক।

আমরা দিনে কখন ঘুম থেকে জেগে উঠি বা রাতেই বা কখন ঘুমাতে যাই, তা আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। শীতকালে এ কথা বেশি করে প্রযোজ্য। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে শোবার আগে আপনি কী কী কাজ করেছেন? হ্যা, এ ব্যাপারটিও আপনার স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে গণ্য করা হয়। পেইচিং প্রবীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা চিকিত্সা বিভাগের মহাপরিচালক ডাক্তার লিউ তে ছুয়ান বলেন, "শীতকালে দিন ও রাতের বিশ্রামের সংশ্লিষ্ট নিয়ম আমাদের মেনে চলা উচিত। এটি আমাদের শরীরকে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় রাখার জন্য সহায়ক।"

তাহলে আমি জানতে চাই, শীতকালে সকালে ওঠা ও রাতে শোয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন কোন বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত?

শীতকালে সকালে একটু পরে ওঠা এবং রাতে একটু আগেই শোয়া উচিত। কারণ শীতকালে দিনের বেলাটা অন্যান্য ঋতুর তুলনায় ছোট এবং রাত্রি তুলনামূলকভাবে দীর্ঘ। তাই আমাদের রাতের ঘুমের সময়টা যেন ঠিক থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টিও কিন্তু স্বাস্থ্য ভালো রাখার ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ। কখন সকালের নাস্তা করবেন বা ডিনারইবা কখন সারবেন, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। শীতকালে সকালে একটু পরে ওঠা মানে, সকালের নাস্তার সময়টাও খানিকটা পিছিয়ে যাবে। সকালে ওঠার পর আপনি প্রথমে এক গ্লাস পানি খেতে পারেন। এটা আপনার শরীরের উপকার করবে। তারপর আপনি নাস্তার প্রস্তুতি নিতে পারেন।

হ্যাঁ, আলিম ভাই, আপনি ঠিক বলেছেন। এখন আমি আলোচনা করবো নাস্তায় ও ডিনারের মেনু নিয়ে। অর্থাত নাস্তায় ও ডিনারে কী কী খাওয়া উচিত, সে বিষয়টি নিয়ে। এক্ষেত্রে এক কথায় বলতে পারি যে, নাস্তায় ভারী খাবার এবং ডিনারে হালকা খাবার খাওয়া উচিত। প্রিয় শ্রোতা, ভারী খাবার বলতে আমি বোঝাতে চাইছি প্রচুর পুষ্টিগুণ ও কর্মশক্তিসম্পন্ন খাবারকে। নাস্তায় যথেষ্ট ভাল খাবার খেলে আমরা সারাদিনের প্রয়োজনীয় কর্মশক্তি পেতে পারি। তবে যেহেতু বয়স্ক মানুষের হজম ক্ষমতা সাধারণত কম থাকে, সেহেতু খাবার বাছাই করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।

হ্যাঁ, উর্মি আপনি ঠিক বলেছেন। এখন আমি ডিনারের খাবার সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রিয় শ্রোতাদের জানাতে চাই। ডিনারের পর সাধারণত আমরা কম নড়াচড়া করি। আরো সহজ করে বললে, ডিনারের পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তেমন কোনো শারীরিক কাজ করি না বা এসময় আমাদের ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি কমে যায়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি থেকে বাঁচতে তাই ডিনারে আমাদের উচিত কম খাওয়া। যে খাবার সহজে হজম হয়, ডিনারে সেসব খাবার খাওয়া উচিত। যেমন ডিনারে স্যুপ একটি ভালো খাবার। স্যুপ আমাদের পাকস্থলীকে সুরক্ষা দেয় এবং রাতের ঘুমও ভালো হয়। আর এমনিতেই ঝাল খাবার খুবই কম বা একেবারে না-খাওয়া উচিত। ডিনারে ঝাল খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়।

আচ্ছা, আলিম ভাই, আপনি কি কখনো হালকা লবণ-পানি খেয়েছেন?

খেয়েছি। তবে, লবণ-পানির সঙ্গে একটু লেবুর রস মিশিয়ে। এটা নাকি খাবার হজমে সাহায্য করে। আপনি খেয়েছেন লবণ-পানি?

আমিও কখনো খাইনি। তবে চীনের প্রাচীন চিকিত্সাবিদ্যায় একটি কথা প্রচলিত আছে। কথাটি হচ্ছে: 'সকালে হালকা লবণ-পানি খাও এবং সন্ধ্যায় খাও মধুমিশ্রিত পানি'।

এটি কিন্তু একটি চমত্কার উপদেশ। এর ব্যাখ্যা আমি দিতে পারবো না। তবে, আমার মনে হয়, রাতে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। ফলে ঘুম থেকে উঠে পানি বা হালকা লবণ-পানি খাওয়া স্বাভাবিকভাবেই স্বাস্থ্যকর। আর মধু তো স্বাস্থ্যের জন্য সবসময়ই ভালো। মধুমিশ্রিত পানি আমরা বাংলাদেশেও খাই। তবে, শুধু মধু না-খেয়ে কেন পানিতে মিশিয়ে খেতে বলা হয়েছে, জানি না। হতে পারে, এতে মধুও খাওয়া হয়, আবার পানিও খাওয়া হয়। দুটোই শরীরের জন্য উপকারী।

এ কথাটি চীনের চিকিত্সাবিজ্ঞান একাডেমীর অধ্যাপক ইয়াং লি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে: লবণের অনেক গুণ। এটি শরীর ঠাণ্ডা করে, রক্ত ঠাণ্ডা করে, খাবারের বিষক্রিয়া দূর করে এবং কিডনিকে সুস্থ রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস লবণ-পানি খেলে তা আপনার পাচনতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়াবে এবং কোষ্ঠকাঠিণ্য প্রতিরোধ করবে। তবে যারা উচ্চরক্তচাপের রোগী এবং যাদের কিডনির অবস্থা ভালো নয়, তাদের উচিত লবণ-পানি না-খাওয়া। তবে, যারা সুস্থ আছেন, তারা যে লবণ-পানি খাবেন সে লবণ-পানিতে লবণের পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে। সাধারণত ১০০ মিলিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ ০.৯ গ্রাম পর্যন্ত লবণ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

আলিম: উর্মি, আমি কিন্তু এ বিষয়টি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখলাম। আপনাকে ধন্যবাদ। এখন থেকে আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস লবণ-পানি খাওয়ার চেষ্টা করবো। তো আমি জানতে চাই, কেন সন্ধ্যায় মধুমিশ্রিত পানি খেতে বলা হয়েছে? এ ব্যাপারে কি কোনো চীনা ব্যাখ্যা আছে?

হ্যাঁ, আছে বৈকি। যেমনটি আপনি আগে বলেছেন, মধু শরীরের জন্য এমনিতেই উপকারী । মধু কেবল যে খাবার হজমে সহায়ক তা নয়, এটি ঘুমের গুণগত মানও উন্নত করে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বা রাতে শোবার আগে এক কাপ হালকা গরম পানির ভেতরে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এতে রাতে ভালো ঘুম হয়।

কিন্তু যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা কি মধুমিশ্রিত পানি নিয়মিত খেতে পারবেন?

না, যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা নিয়মিত এই মধুমিশ্রিত পানি খাবেন না অবশ্যই। এতে তাদের উপকার হবার পরিবর্তে অপকার হবে।

আচ্ছা, এতক্ষণ তো আমরা আলোচনা করলাম খাবার নিয়ে। তা আমাদের তো নিয়মিত শরীরচর্চাও করতে হয়। শীতকালে শরীরচর্চার জন্য সবচে উপযুক্ত সময় কখন? আসুন এ বিষয়ে একটু আলোচনা করি। অধ্যাপক লিউ তে ছুয়ান এ প্রসঙ্গে বলছেন, "শীতকালে শরীরচর্চা করতে হবে সূর্য দেখে এবং না-দেখে। অর্থাত সূর্য ওঠার পর শরীরচর্চা করতে হবে এবং সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার পর শরীরচর্চা করতে হবে।" তাই আমরা বলতে পারি, শীতকালে সকালের শরীরচর্চার সময় অন্যান্য ঋতুর চেয়ে একটু পরে এবং সন্ধ্যায় শরীরচর্চার সময় অন্যান্য ঋতুর চেয়ে একটু আগে হবে।

হ্যাঁ, আলিম ভাইয়া, আপনি ঠিক বলেছেন। শীতকালে খুব সকালে এবং সন্ধ্যায় তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। এসময় ঘরের ভেতরের ও বাইরের তাপমাত্রার ব্যবধানও বেশি থাকে। খুব ভোরে অথবা সূর্য ডোবার অনেকটা সময় পরে শরীরচর্চা করলে তা আমাদের শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ বিষয়ে হৃদরোগী ও রক্তনালীর রোগীদের অধিক সতর্ক থাকা উচিত।

আচ্ছা, আলিম ভাই, পেইচিং আসার পর আপনার কি কখনো অনিদ্রা হয়েছে?

অনিদ্রা হয়েছে দু'একবার। বরাবরই আমার রাতে ভালো ঘুম হয়েছে।

আপনি কি জানেন রোদ পোহালে অনিদ্রা রোগ দূর হয়? জাপানিরা এ পদ্ধতিটি বেশি ব্যবহার করেন। আমাদের অধ্যাপক লিউ তে ছুয়ানও সবাইকে বেশি বেশি রোদ পোহানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

হ্যাঁ, রোদ পোহানোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে এটি শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণের জন্য সহায়ক। ১৫ মিনিট রোদে বসে থাকলে, আমাদের গায়ে ভিটামিন-ডি'র পরিমাণ বাড়বে এবং শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব দূর হবে।

হ্যাঁ, যথাযথ মাত্রায় রোদ পোহালে শরীর সুস্থ থাকে ও চনমনে হয়ে ওঠে। আবার অতিরিক্ত রোদ পোহানোও ঠিক নয়। তাতে ত্বক নষ্ট হবার আশঙ্কা থাকবে।

ঊর্মি, মাত্র আপনি বলেছেন অনিদ্রার সমস্যার কথা এবং তা থেকে উদ্ধারের উপায়। আমি এখন রাতে বিছানায় শোয়া সম্পর্কিত কিছু পয়েন্ট তুলে ধরতে চাই। প্রিয় শ্রোতা, ঘুমের আগে হালকা গরম পানিতে পা ধোয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালা। এতে পায়ে রক্ত সঞ্চালন সহজতর হয়। আপনি সারা দিন কাজ করেন। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই অনুভব করেন ক্লান্তি। এসময় যকৃত ও কিডনিকেও বিশ্রাম দেওয়া দরকার। অধ্যাপক ইয়াং লি বলেন, "দিন শেষে গরম পানিতে পা ধোয়া উচিত। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।" অধ্যাপক লিউ তে ছুয়ানও আরো বলেন, "শোবার আগে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির ভেতরে আধা ঘন্টা পা ডুবিয়ে রাখা ভালো। আর এটি করতে হবে সব কাজ শেষ করার পর। গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখার পর কোনো কাজ করা চলবে না। পা ধোয়ার কয়েক মিনিট পরই সোজা বিছানায় শুয়ে পড়তে হবে।"

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040