Web bengali.cri.cn   
বিশ্ববাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং
  2015-01-01 16:33:55  cri


ডিসেম্বর ৩১: চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আজ (বুধবার) নতুন বছর শুরুর প্রাক্কালে বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পেইচিংয়ে সিনহুয়া বার্তা সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত এক শুভেচ্ছাবাণীতে তিনি বিশ্বের সকল মানুষের সুখ ও শান্তি কামনা করেন। আমরা এখানে তার শুভেচ্ছাবাণীর পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ তুলে ধরছি:

        সত্যিই, সময় দ্রুত বয়ে চলে! ২০১৪ সাল চলে যাচ্ছে, আসছে ২০১৫। পুরনো বছরের সমাপ্তি এবং নতুন বছরের শুরুর এই ক্ষণে আমি গোটা চীনের বিভিন্ন জাতির মানুষ, হংকং ও ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের অধিবাসী, তাইওয়ানের স্বদেশবাসী ও বিদেশে প্রবাসী সকল চীনা নাগরিক এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের বন্ধুদের জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা।  

অবিস্মরণীয় ২০১৪ সাল। এ বছর আমরা দৃঢ়ভাবে সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি, বহু কঠিন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করেছি এবং ধারাবাহিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার-ব্যবস্থা চালু করেছি। এসব সংস্কার-ব্যবস্থার অনেকগুলোই ছিল জনসাধারণের স্বার্থের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের 'নতুন স্বাভাবিক অবস্থা'র সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বেগবান করতে সক্রিয় থেকেছি। এতে জনগণের জীবনমান অনেক উন্নত হয়েছে।

দক্ষিণ চীনের পানি উত্তর চীনে আনার প্রকল্পের মধ্য-লাইনের প্রথম পর্যায়ের কাজ ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়। এ লাইনের আশপাশের ৪ লাখেরও বেশি অধিবাসীকে স্থানান্তর করতে হয়েছে। তারা এ প্রকল্পের জন্য নিঃস্বার্থ অবদান রেখেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আশা করি, তারা তাদের নতুন ঠিকানায় সুখী জীবন কাটাবেন।

বিদায়ী বছরে আমরা দেশে আইন-কানুন ও শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি। এক্ষেত্রে আমরা নেতিবাচক আচার, আমলাতন্ত্রের দৌরাত্ম্য, স্বজনপ্রীতি ও বিলাসীতার প্রবণতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এতে অবস্থার ব্যাপক উন্নতি ঘটেছে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছি এবং 'জিরো টলারেন্স' নীতির আওতায় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে।

এ বছর আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সহযোগিতামূলক যোগাযোগ বাড়িয়েছি। পেইচিংয়ে এপেক শীর্ষনেতাদের অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন আয়োজন করেছি, আমাদের নেতৃবৃন্দ বেশ কয়েকবার বিদেশ সফর করেছেন, অনেক বিদেশি নেতা চীন সফরে এসেছেন। এ সব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্ব চীনকে আরো ভালোভাবে জানতে পেরেছে। এর জন্য আমাদের বিভিন্ন শ্রেণীর কর্মকর্তারা পরিশ্রম করেছেন। আর নিঃসন্দেহে জনগণের সমর্থন ছাড়া এ কাজগুলো ভালোভাবে করা যেত না। আমি আমাদের মহান জনগণের প্রশংসা করি।

       বিদায়ী বছরে আমরা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চীনা জনগণের জাপানি আগ্রাসন-বিরোধী যুদ্ধের বিজয় দিবস, শহীদ স্মরণ দিবস, নানচিং গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে জাতীয় শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা পালনও করেছি। যারা দেশের জন্য, জাতির জন্য, শান্তির জন্য তাদের মূল্যবান প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, কালের পরিক্রমায় পরিবর্তনের যে জোয়ারই আসুক না কেন, আমরা চিরকাল তাদের ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে যাবোই।

এ বছর আমরা কিছু বেদনাদায়ক মুহূর্তও কাটিয়েছি। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এম.এইচ-৩৭০ ফ্লাইট নিখোঁজ হয়েছে। দেড়শ'রও বেশি চীনা নাগরিকের সন্ধান এখনো পাইনি। আমরা তাদের ভুলিনি। তাদের খুঁজে না-পাওয়া পর্যন্ত আমরা অনুসন্ধানকাজ অব্যাহত রাখবো। এ বছর চীন কয়েকটি গুরুতর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়েছে, ঘটেছে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা। ইউয়ান নানের লুথিয়ান ভূমিকম্পে ছয় শতাধিক স্বদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। আমরা তাদের স্মরণ করি, তাদের আত্মীয়স্বজনের সুখ-শান্তি কামনা করি।

খুব শিগগিরই বাজবে নতুন বছরের ঘন্টা। এই মুহূর্তে আমাদের প্রতিশ্রুতি, জনগণের প্রত্যাশা মোতাবেক আমরা আমাদের কার্যপদ্ধতি পরিবর্তন করবো এবং তাদের প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। আমরা সার্বিক সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবো। মনে রাখতে হবে, ধনুক থেকে তীর একবার ছুটে গেলে সেটিকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না।  সংস্কারের এই সন্ধিক্ষণে সাহসী ব্যক্তিই বিজয়ী হবেন। আমরা আরো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, আইনানুসারে দেশ পরিচালনা করবো, আইনের দ্বারা জনগণের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিত করবো, সমাজে ন্যায়নীতি রক্ষা করবো, দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমরা সংস্কার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং আইনানুসারে দেশ পরিচালনার বিষয় দুটিকে পাখির দুটি পাখা বা গাড়ির দুটি চাকার মতো অবিচ্ছেদ্য বিবেচনা করে সার্বিকভাবে সচ্ছল সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাবো।

আমাদের দেশের জনগণের সার্বিক জীবনমান দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তবে জনসাধারণের মধ্যে যারা কঠিন জীবনযুদ্ধে রত, তাদের কথা সবসময় মনে রাখতে হবে। আগ্রহ ও আবেগ নিয়ে জনগণের জীবিকার জন্য কাজ করতে হবে, বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটানোর কাজ অধিক গুরুত্বের সাথে করতে হবে। গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সকল অভাবী মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে মন দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।

নতুন বছরে আমরা কঠোরভাবে বিদ্যমান আইন অনুসারে পার্টি পরিচালনা করবো, 'প্রয়োজনে কাজের রীতিনীতি পরিবর্তনের' নীতিতে অটল থাকব, দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখবো, ব্যবস্থাপনার রশি ভালো করে বাঁধবো। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বাধীন এই সমাজতান্ত্রিক দেশে যে-ই দুর্নীতি করে ধরা পড়বে, সে-ই শাস্তি পাবে।

আমরা যে মহান ব্রত নিয়ে এগুচ্ছি, কেবল অবিচল মনোভাব নিয়ে কাজ করে গেলেই এতে সফল হওয়া সম্ভব; অর্ধেক পথে থেমে গেলে কোনো সফলতা আসবে না। আমাদের উদ্দেশ্য মহান। শুধু কঠোর পরিশ্রম চাই। পাশাপাশি পার্টি ও দেশের বিভিন্ন জাতির জনগণের মধ্যে সংহতি থাকতে হবে, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাপ্ত ভালো সুযোগ কাজে লাগিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দেশের উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমানের ক্রমাগত উন্নয়নের স্বার্থে আমাদেরকে উদ্ভাবনী ক্ষমতার পরিচয় দিতে হবে।

চীনা জনগণ স্বদেশের ভবিষ্যতের ওপর দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি বিশ্বের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবে। আফ্রিকায় ইবোলা হানা দিয়েছে, আমরা সাহায্য করেছি; মালদ্বীপের রাজধানীতে পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে, আমরা দ্রুত সাড়া দিয়েছি। এ ধরণের নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, চীনা জনগণ বিভিন্ন দেশের জনগণের সুখ-দুঃখের সমভাগী। বর্তমান বিশ্ব অশান্ত। আমরা শান্তির আহ্বান জানাই। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, বিশ্বের সকল মানুষকে ক্ষুধা ও শীতের কষ্ট থেকে বাঁচাতে, যুদ্ধের কুফল থেকে বিশ্বের সকল পরিবারকে রক্ষা করতে, বিশ্বের সকল শিশুকে শান্তিময় পরিবেশে সুস্থভাবে বড় হবার সুযোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ যৌথভাবে কাজ করে যাবেন।

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। (ইয়ু/আলিম)

 

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040