Web bengali.cri.cn   
ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র
  2014-12-18 10:11:59  cri


চীনের চলচ্চিত্র পরিচালক লি ইংয়ের পরিচালিত 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' চলচ্চিত্র ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনের লন্ডনে প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্রে ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্রে katana কাতানা নির্মাণকারী একজন প্রবীণ মিস্ত্রিকে কেন্দ্র করে ইয়াসুকুনির মর্ম অন্বেষণ, গবেষণা এবং তা ব্যাখ্যা করার সঙ্গে সঙ্গে অত্যন্ত সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা উত্থাপন করা হয়। চলচ্চিত্রটিতে যুদ্ধের বিয়োগান্তক মর্ম এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বয়ে আনা ভারী বিপর্যয় তুলে ধরা হয়।

এ চলচ্চিত্রের পরিচালক লি ইং বলেন, নানচিং শহরে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা খুব তাত্পর্যপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, আগে চলচ্চিত্র উপভোগ সম্পর্কিত এক বিশেষ অভিজ্ঞতার কারণে তিনি এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, 'সেসময় জাপানে সেদেশের স্থলবাহিনীর উদ্যোগে পরিচালিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। চলচ্চিত্রে ১৯৩৭ সালে জাপানী বাহিনী বিভাবে চীনের নানচিং শহরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশের পর কিভাবে জাপানের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ও জাপানের জাতীয় সঙ্গীত বাজায়, তারই বর্ণনা করা হয়। যখন আমি সিনেমা হলে এ চলচ্চিত্র দেখছিলাম, তখন আমি হাততালির শব্দ শুনছিলাম। একটা সত্যি কথা বলি, তখন আমার অবস্থা যেন যুদ্ধক্ষেত্রে থাকার মতো, আমার কানে গুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। তখনকার অনুভূতি আমি অনেক স্থানে বহুবার উল্লেখ করেছি। তবে বহুবার উল্লেখ করলেও আমার অনুভূতি খুব স্পষ্ট, আমি কখনও তা ভুলে যাবো না। ইতোমধ্যেই যুদ্ধ শেষ হওয়ার অনেক বছর পার হয়েছে। কেন জাপানে এমন ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়? জাপানীদের এই প্রতিক্রিয়ার অর্থ কি? তা নিয়ে আমাকে বেশ চিন্তা করতে হয়েছে'।

তারপর দশ বছরের পরিশ্রমে নির্মিত 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' চলচ্চিত্রটি ২০০৮ সালে জাপানে প্রকাশ্যে প্রদর্শিত হয় এবং যা জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র প্রসঙ্গে নিজের ধারণা ব্যাখ্যা করে লি ইং বলেন, ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র হলো জাপানের সবচেয়ে জটিল ভাবসমৃদ্ধ একটি মঞ্চ। জাপানের মেইজি যুগ থেকে এখন পর্যন্ত 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' হলো জাপানিদের মুল আধ্যাত্মিক দুর্গ। যুদ্ধ ও শান্তি, উপনিবেশিকতাবাদ ও দেশপ্রেম, মর্যাদা ও লজ্জা সব এখানেই তুলে ধরা হয়। তিনি 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' সম্পর্কিত সমস্যাকে জাপানের যুদ্ধের কারণে রেখে যাওয়া এক ধরনের অনুফলের উপমা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে চীন ও জাপান উভয় পক্ষের শান্তিপূর্ণভাবে ও বিষয়গতভাবে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। লি ইং আরো বলেন, 'চলচ্চিত্র নির্মাণ করার প্রক্রিয়ায় অনেক সাধারণ জাপানী নাগরিকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। জাপানী সৈন্যদের বংশধর হওয়া সত্ত্বেও, তাঁরা অনেক দয়ালু। তাঁদের জন্য ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্রে শ্রদ্ধা নিবেদনের লক্ষ্য হলো সমরবাদকে পুনরুত্থান করতে না দেয়া। ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্রে শ্রদ্ধা নিবেদনে তাঁদের অনেক জটিল ভাবানুভূতি রয়েছে'।

'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' চলচ্চিত্র জাপানে প্রকাশ্যে প্রদর্শনের পর সেদেশের দর্শকদের ইউনিয়নের বিশেষ পুরস্কার লাভ করে। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর্যালোচনা কমিটি এভাবে এ চলচ্চিত্রের মূল্যায়ন করেন, 'এ চলচ্চিত্রের পরিচালকের দৃষ্টি যুগের মর্মের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত'।

ব্রিটেনে 'ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্র' চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারে চলচ্চিত্র পরিচালক লি ইং তাঁর ভাষণে বলেন, 'পরিতাপের বিষয় হলো, এ চলচ্চিত্রে সবাই দেখতে পান যে, ইয়াসুকুনি সমাধিক্ষেত্রের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সৃষ্ট দাঙ্গাহাঙ্গামাসহ যুদ্ধের পরিশিষ্ট উপসর্গ এখনও জাপানে ছড়িয়ে পড়ছে। স্বল্পসময়ের মধ্যে এটার সমাধান করা যাবে না বলে আমি মনে করি। আমি যে কাজ করতে চাই তা হলো নিজের চোখে দেখা এবং নিজের বোধ করা সবকিছু নিরপেক্ষভাবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা। এতে জাপানসহ বিশ্বের কাছে ভাবনা তৈরি করা যাবে'।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040