Web bengali.cri.cn   
দাঁতের যত্নে ৭টি ভুল অভ্যাস থেকে দূরে থাকুন
  2014-12-14 19:09:29  cri


কথায় বলে অনেকে 'দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না'। আসলে এ কথার অর্থ হচ্ছে, কোনো মূল্যবান ব্যক্তি বা জিনিষ যখন হাতের কাছে থাকে, তখন তাকে মূল্যায়ন না করা। তো, এ কথাটা বোঝানোর জন্য দাঁতের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে কেন? কারণ, দাঁত খুবই মূল্যবান অঙ্গ। যার দাঁত নেই বা যার দাঁতে সমস্যা, তিনি এটা ভালো উপলব্ধি করতে পারেন। হ্যা, দাঁত থাকতে আসলেই আমাদের দাঁতের যত্ন নেওয়া উচিত; এর মর্যাদা বোঝা উচিত।

সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকরা বলছেন, দাঁতের যত্নে আমাদের উচিত অন্তত ৭টি ভুল অভ্যাস বা বদভ্যাস থেকে দূরে থাকা।

দাঁত মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মুখের একটি অঙ্গ। এটি খাদ্য চিবানো ও কাটার কাজে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ প্রাণীর দেহে দাঁতই হচ্ছে কঠিনতম অঙ্গ।

দাঁত কয়েক প্রকার হয়। 'মোলার' বা সহজ বাংলায় "কষ দাঁত" খাদ্যকে চিবিয়ে পিষে ফেলার কাজে ব্যবহৃত হয়। 'কার্নাসিয়াল' দাঁত ব্যবহৃত হয় খাদ্য কাটার কাজে। এটি কেবল শ্বাপদ (মাংসাশী) প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। 'প্রি-মোলার' দাঁত 'মোলার' দাঁতের মতই, কিন্তু আকারে ছোট, এবং অনেক সময় এদেরকে 'বাইকাস্পিড'-ও বলা হয়। 'শ্বদন্ত' বা 'ক্যানাইন' খাদ্য ছিঁড়ে ফেলার কাজে ব্যবহৃত হয়। একে 'কাস্পিড' দাঁতও বলা হয়ে থাকে। 'ছেদক দন্ত' বা 'ইন্সিসর' খাদ্য ছেদনের কাজে ব্যবহৃত হয়।

একটি দাঁতের কয়েকটি অংশ থাকে। 'ক্রাউন' বা মুকুট' দাঁতের সেই অংশ যা মাড়ির ওপরে থাকে এবং আমরা দেখতে পাই। 'রুট' বা শিকড় দাঁতের সেই অংশ যা মাড়ি এবং হাড় দিয়ে আবৃত থাকে। দাঁতের শিকড়ের সংখ্যা এক থেকে চার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দাঁতের মুকুট ও শিকড়ের সংযোগস্থলকে 'নেক' (Neck) বলা হয়। এটিও সাধারণত মাড়ি দিয়ে আবৃত থাকে।

দাঁতে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকে। 'এনামেল' দাঁতের বাইরের শক্ত আবরণ, যা ক্যালসিয়াম ও ফস‌ফেট দ্বারা গঠিত। 'ডেন্টিন' ভিতরের স্তর, যা দাঁতের অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিদ্যমান। 'দন্তমজ্জা' (ডেন্টাল পাল্প) দাঁতের ভিতরের অংশ। এখানে স্নায়ু ও রক্তবাহী নালিকা থাকে। 'সিমেন্ট' দাঁতের মূলের চারিদিকে অবস্থিত পাতলা স্তর। এটি একধরনের অস্থিসদৃশ আবরণ, যা দাঁতকে চোয়ালের সাথে সংযুক্ত করে রাখে। এছাড়াও, দাঁতের সিমেন্ট ও চোয়ালের মাঝখানে যে সূক্ষ ফাঁকা জায়গা থাকে, সেখানে অগণিত অতিসূক্ষ তন্তুসদৃশ লিগামেন্ট থাকে যাকে 'পেরিওডন্টাল টিস্যু' বলে। দাঁতকে হাড়ের সাথে সংযুক্ত রাখাই এর প্রধান কাজ।

ভুল অভ্যাস ১: দাঁতকে বোতলের ছিপি খোলার কাজে ব্যবহার করা।

অনেকে কোকা কোলার বোতল বা বিয়ারের বোতলের ছিপি খোলার কাজে দাঁত ব্যবহার করেন, অনেকটা ওপেনারের মতো। কেউ কেউ আবার দাঁত দিয়ে প্যাকেট খুলে থাকেন। এগুলো খারাপ অভ্যাস। কিন্তু কাজটি মোটেই ঠিক নয়। দাঁতের কাজ বোতলের ছিপি খোলা নয়, দাঁতের কাজ হচ্ছে খাদ্য চিবিয়ে খাওয়া। দাঁতের কাজ দাঁতকে করতে দিন, ওপেনার করুক ছিপি খোলার কাজ। দাঁতকে ওপেনার হিসেবে ব্যবহার করতে থাকলে, দাঁত কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কখনো কখনো দাঁত পড়েও যায়। অতএব আমরা যারা দাঁত দিয়ে বোতলের ছিপি খোলাকে বীরের কাজ মনে করি, তারা এবার ক্ষান্ত হই; দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিই।

ভুল অভ্যাস ২: জিহবা, ঠোঁট ও গালে রিং ব্যবহার করা

হ্যাঁ, আজকাল অনেক তরুণ-তরুণী জিহবা, ঠোঁট, গাল ও ভ্রুতে রিং পরেন। দাঁতের ডাক্তাররা বলছেন, এটা দাঁতের জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে জিহ্বায় রিং পরা তো মোটেই উচিত নয়। এতে দাঁতের এলার্জি হতে পারে, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে।

ভুল অভ্যাস ৩: লেখাধুলার সময় টুথগার্ড ব্যবহার না-করা

আপনারা নিশ্চয়ই মুষ্টিযুদ্ধ দেখেছেন। হ্যা, আমি জানি, সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মুহাম্মাদ আলী বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। তার মুষ্টিযুদ্ধ এখনো স্টারস্পোর্টস, ইএসপিএনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়। তো, মুষ্টিযোদ্ধারা লড়াইয়ের সময় টুথগার্ড বা দাঁত সুরক্ষায় একধরনের গার্ড ব্যবহার করেন। মুষ্টিযুদ্ধ ছাড়াও, অন্যান্য বেশকিছু খেলায় টুথগার্ড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বা সাধারণ মানুষ খেলাধুলার সময় টুথগার্ড সাধারণত ব্যবহার করেন না। দাঁতের চিকিত্সকরা একে ভুল অভ্যাস হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। তাদের পরামর্শ হচ্ছে, স্কুল-কলেজের খেলাধুলায়ও টুথগার্ড ব্যবহার করা উচিত নিয়মিত। দাঁতের সুরক্ষার জন্য এটি করা উচিত। বাংলায় একটি কথা আছে: সাবধানের মার নেই। অযথা কেন ঝুঁকি নিতে যাবেন?

ভুল অভ্যাস ৪: বরফ চিবিয়ে খাওয়া

হ্যা, দাঁত দিয়ে বরফ চিবিয়ে খাওয়াটি একটি বদভ্যাসই বটে। আমাদের অনেকেই না-জেনে এ কাজটি করি। পানীয়র মধ্যে বরফ কুঁচি দিয়ে খাওয়ার মধ্যে কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু পানীয় শেষ হয়ে গেলে গ্লাসের তলানী হিসেবে যে বরফটুকু থেকে যায় (অনেক সময়) সেটি দাঁত দিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যতোই মজাদার হোক না কেন, খাওয়া উচিত নয়। এটি আমাদের দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।

ভুল অভ্যাস ৫: খুসখুসে কাশি হলে বেশি বেশি ওষুধজাতীয় লজেন্স খাওয়া

খুসখুসে কাশি হলে বেজায় খারাপ লাগে। সারাক্ষণ গলা খুসখুস করলে কারইবা ভালো লাগে? আর এই খারাপ লাগা থেকে রেহাই পেতে অনেকেই বেশি বেশি ওষুধজাতীয় লজেন্স চুষতে থাকেন। এতে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়, এ কথা সত্য। কিন্তু বিপদটা অন্যত্র। লজেন্সে প্রচুর মিষ্টি পদার্থ থাকে, যা আমাদের দাঁতের জন্য ক্ষতিকর। তাই, দাঁতের স্বার্থে আমাদের অতিরিক্ত লজেন্স খাওয়া উচিত নয়; খুসখুসে কাশি থেকে সাময়িক আরাম পাওয়ার জন্যও নয়।

ভুল অভ্যাস ৬: যেনতেনভাবে দাঁত সাদা করানো

আজকাল ক্যামিকেল ব্যবহার করে দাঁত সাদা করানোর প্রবণতা বাড়ছে। এতে সমস্যা নেই। কিন্তু শর্ত হচ্ছে, দক্ষ চিকিত্সক দিয়ে কাজটা করাতে হবে। যেনতেনভাবে অদক্ষ চিকিত্সক বা কম্পাউন্ডার দিয়ে দাঁত সাদা করানো উচিত নয়। এতে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তা ছাড়া, কী ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা জানাও জরুরি। ভালো মানের ক্যামিকেল ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

আরেকটি কথা। যদি দাঁত সাদা করার প্রক্রিয়ায় আপনার এলার্জি দেখা দেয়, তবে সাথে সাথে সে প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।

ভুল অভ্যাস ৭: খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাঁত মাজা

নিয়মিত দাঁত মাজা খুবই জরুরি একটা কাজ। তবে, কখন এবং দিনে কতোবার দাঁত মাজতে হবে, এ ব্যাপারে আমরা অনেকেই সচেতন নই। আবার আমাদের কেউ কেউ অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাঁত বাজতে বসে যান। কেউ কেউ যতবার খান, ততবারই দাঁত মাজেন। অথচ চিকিত্সকরা বলছেন, খাদ্যগ্রহণের অন্তত আধা ঘন্টা পর দাঁত ব্রাশ করা উচিত। এতে দাঁত মাজার সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যায়।

মুখের সুস্থতা অনেকাংশেই মুখ পরিষ্কার রাখার ওপর নির্ভর করে। মুখ পরিষ্কার রাখার ফলে দাঁতের ক্ষয়রোগ, গিংগিভিটিজ, পিরিওডন্টাল রোগ, হ্যালিটোসিস বা মুখের দুর্গন্ধ এবং অন্যান্য দন্তজনিত সমস্যা থেকে ব্যক্তি রক্ষা পায়। পেশাদারী এবং ব্যক্তিগত - উভয় পর্যায়েই এ ধরণের সচেতনতা প্রয়োজন। সচেতনভাবে দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি নিয়মিত দন্তচিকিৎসকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করালে দাঁতের ক্যালকুলাস বা টারটার এবং দাঁতে অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। পেশাদারীভাবে দাঁতের পরিষ্কারের জন্য দাঁতের স্কেলিং করা হয়। এটা দাঁতের জন্য ভালো। তবে, স্কেলিং করাতো হবে দক্ষ চিকিত্সক দ্বারা।

দাঁতের যত্নে দন্তচিকিৎসকগণ যে কয়টি পরামর্শ সাধারণত দিয়ে থাকেন সেগুলো হচ্ছে:

১. প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণের পর সকালে এবং রাতে দু'বার নিয়মিতভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে।

২. প্রতি তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করতে হবে। সম্ভব হলে এর আগেই টুথব্রাশ পরিবর্তন করা যেতে পারে।

৩. প্রতি ছয় মাস পরপর দন্তচিকিৎসককে দাঁত দেখাতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত, যা দাঁতকে আরো সুরক্ষা দেব।

(ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040