Web bengali.cri.cn   
বিশ্বের অতি বিত্তশালী মানুষের সহজ সরল জীবন
  2014-12-01 18:11:41  cri


চীনে এমন একটি কথা আছে, এর অর্থ হল : গরিব থেকে বিলাসী জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অনেক সহজ, কিন্তু আবার বিলাসী জীবন থেকে গরিব জীবনে ফিরে যাওয়া অনেক অনেক কঠিন।

সত্যি, এখন তা আস্তে আস্তে এক রকমের সামাজিক অবস্থায় পরিণত হয়েছে। আজকাল সবাই সুন্দর জামাকাপড়, দামি দামি খাবার, প্রথম শ্রেণীর রেসিং কার, ব্যক্তিগত বিমান ইত্যাদি পেতে চান। তবে আমার ধারণা, এতকিছুর মধ্যেও নিশ্চয়ই এমন লোক আছেন, যাদের অনেক সম্পদ, অনেক টাকাপয়সা থাকা সত্ত্বেও তারা খুব সহজ জীবন কাটাচ্ছেন। যতটা বিলাসী জীবন তাদের কাটানোর কথা ততটা বিলাসী নয়।

আসলে সবাই বিলাসী জীবন পছন্দ করেন। তবে আপনারা কি জানেন, মেক্সিকোতে কার্লোস স্লিম নামে এমন একজন সুপার বিত্তশালী রয়েছেন যিনি মেক্সিকোর সবচেয়ে বিত্তশালী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও একটি পুরনো এবং ভাঙা বাড়িঘরে ৪০ বছর ধরে বাস করছেন।

এছাড়া, শেয়ার বাজারের 'স্টক গড' নামে পরিচিত ওয়ারেন বাফিটের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হল হ্যামবার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আর বিশ্বের সবচেয়ে তরুণ বিত্তশালীর অন্যতম, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকার্বার্গের বিয়ের অনুষ্ঠান কোনো বিলাসী হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় নি,, বরং নিজের বাসায় অনুষ্ঠিত হয়।

যদি আপনি একজন মেক্সিকান হন, তাহলে এর মানে আপনি প্রতিদিন সেদেশের কোটিপতি কার্লোস স্লিমকে টাকা দেন। কারণ ব্যবসা বাণিজ্যের প্রায় সবক্ষেত্রেই তার রয়েছে বিশাল আধিপত্য। তাঁর বিশাল বাণিজ্য রাজ্যের আওতায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে খুচরা বিক্রি, টেলি যোগাযোগ, উত্পাদন ও নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি। তিনি মেক্সিকোর বিভিন্ন শিল্পের বাজারকে হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

আপনি হয়ত আবিষ্কার করতে পারেন যে, আপনি স্লিমের টেলিফোন কোম্পানি থেকে কেনা মোবাইল ফোন নিয়ে স্লিমের ব্যাংকে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। হ্যাঁ, কিসের জন্য অপেক্ষা করছেন? স্লিম কোম্পানির বিল পরিশোধ করতে, তাইনা?

যদি এ লাইনটি অনেক লম্বা হয় এবং আপনাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, হয়ত আপনি রাস্তার ওই পাশে স্লিমের খোলা রেস্তরাঁয় এক কাপ কফিও কিনবেন। হ্যাঁ, এ বর্ণনা থেকে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন স্লিমের বাণিজ্যের রাজ্য কতটা বড়। তিনি যেন আকাশের মত বিশাল আর সুউঁচ্চু একটি বড় গাছ, সকল মেক্সিকোবাসীকে তিনি যেন তার গাছের ছায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছেন।

মাইক্রোসফ্ট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা বিল গেইটসকে পরাজিত করে তিনি যখন ২০১০ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের নির্বাচিত বিশ্বের প্রথম বিত্তশালী হন, তখন কিন্তু সবাই অবাক হন নি।

তিনি যেন জন্ম থেকেই একটি অর্থ তৈরির মেশিন। তবে তাঁর জীবন কি সাধারণ লোকজনের কল্পনার মতই বিলাসী? আমরা এখন সে সম্পর্কে একটু জানবো।

মেক্সিকো শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি বাদামি রং-এর দু'তলার পুরনো বিল্ডিং রয়েছে। এটি হল স্লিমের টেলিযোগাযোগ রাজ্যের সদর দপ্তর। এর ঠিক পাশেই রয়েছে আকাশচুম্বী এক অট্টালিকা, যেটি কার্লোসের নয়। এই বিল্ডিংয়ের তুলনায় কার্লোসের বিল্ডিং যেন এক বস্তির মত।

যদি আপনি স্লিমের বাসায় যান, তাহলে আপনি আরো অবাক হবেন। এই বাড়িটিতে ছয়টি ঘর রয়েছে, তবে তা একেবারেই পুরনো। এটি স্লিমের বাবা মার সময়ে কেনা। তিনি ২০ বছর বয়স থেকে সেখানে থাকেন। স্লিমের নিজের ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পরও স্লিম কিন্তু তাদের জন্য কোনো বাড়িঘর কিনেন নি।

সাধারণ জীবনে স্লিম সত্যি অনেক সহজ এবং সাদামাটা। চেহারা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন না যে, তিনিই মেক্সিকোর শীর্ষ বিত্তশালী। তাঁর কোনো ব্যক্তিগত বিমান নেই, নেই কোনো অহমিকা। তিনি বিলাসবহুলদ্রব্য পছন্দ করেন না। তিনি খুব কম কম্পিউটার ব্যবহার করেন।

আপনারা তো জানেন, বর্তমান যুগে ভালো একটি ঘড়ির দাম অনেক অনেক বেশি, কিন্তু স্লিম এত বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর ঘড়ি প্লাস্টিকের সস্তা ঘড়ি। তিনি মনে করেন, এক জনকে সফলতার জন্য চেষ্টা করা উচিত। যদি শুধু বস্তুগত আরামের কথা ভাবা হয়, তাহলে তা হবে পশুর মত । তিনি যে কথা সবসময় বলেন, তা হল : বিত্তশালী ও গরিব মানুষের মূল পার্থক্য হল ভোগ আর পুঁজি বিনিয়োগের পার্থক্য বোঝা।

আসলে এই পৃথিবীতে কেবল স্লিমই যে এমন সাধারণ জীবনযাপন করেন তা নয়। তাঁর মত এত বিত্তশালী কিন্তু সাধারণ ও সাদামাটা জীবন কাটাচ্ছেন এমন লোক হয়ত আরো অনেক আছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফোর্বস ম্যাগাজিনের বিত্তশালী তালিকার কার্লোস স্লিম, ওয়ারেন বাফিট, বিল গেটস এই তিন জনের এমন কাহিনী রয়েছে।

যেমন, শেয়ারের বাজারের 'স্টক গড' নামে পরিচিত ওয়ারেন বাফিট ৫০ বছর আগে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে কেনা একটি পুরনো বাড়িতে বাস করেন। মাঝে মাঝে তিনি নিজেই নিজের বাড়ির দেয়াল চুনকাম করেন। তিনি অনেক বছর আগের পুরনো গাড়ি চালান। তাঁর মানিব্যাগ ২০ বছর ধরে ব্যবহার করলেও তিনি তা ফেলে দেন নি। তিনি হ্যামবার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে পছন্দ করেন। তাঁর প্রতিদিনের দুপুরের খাবারের মধ্যে রয়েছে খই, পটাটো চিপস আর কোকাকোলা।

বিল গেটসের নাম প্রায় সবারই জানা, তাইনা? তবে তাঁর সাদামাটা জীবনযাপন নিয়ে তথ্যমাধ্যমের মতামত একটু ভিন্ন। হ্যাঁ। তাঁর বাড়ি উপরোক্ত দু'জন বিত্তশালীর চেয়ে অনেক বিলাসী। এ কারণে তথ্য মাধ্যম বলে, না, বিল গেটস সাদামাটা মানুষ নন। তবে অন্যদিকে তিনি সবসময় টি-সার্ট ও জিন্স পরেন। কোনো দামি কাপড় নেই তাঁর। তাই অনেকেই বলেন, হ্যাঁ, তিনি সাদামাটা মানুষ। তবে আমরা জানি যে, বিল গেটসের ব্যক্তিগত ড্রাইভার নেই। বাইরে যেতে তিনি বিমানের শোভন শ্রেণীর কামরার টিকিট কিনেন। আরো আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি যদিও একজন শীর্ষ বিত্তশালী, তবে তিনি দোকানের ডিসকাউন্ট করা দ্রব্য কিনতে অনেক পছন্দ করেন।

যারা এতটা বিত্তশালী হওয়া সত্ত্বেও এতটা সাদামাটা, যাদের নেই কোনো অহংকার ও যারা এতটা সাধারণ জীবন কাটাতে পারেন আমরা সত্যি তাদেরকে সম্মান করি। কিন্তু এমন পরিবারের ছেলেমেয়েরা কি আসলে তাদের মত হতে পারেন বা হন? এর উত্তর একটু কঠিন।

উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, যতদূর জানা যায়, হিল্টন চেন হোটেলের উত্তরাধিকারী প্যারিস হিল্টন, মাদকদ্রব্য, মদ্যপান করা থেকে শুরু করে সবসময় বিলাসী জিনিস কিনেন এবং বিলাসী জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন। হ্যাঁ, অনেক বিত্তশালী পরিবারের জন্য দেউলিয়া হয়ে যাওয়াটা ততটা ভয়াবহ নয়, যতটা ভয়াবহ নিজের ছেলেমেয়ের এতটা খারাপ হয়ে যাওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বিত্তশালী পরিবারের ছেলেমেয়েরা যদিও অনেক বিলাসী জীবনযাপন করেন, তবে তারা কিন্তু সবচেয়ে সুখী নন। তাদের মধ্যে উদগ্রীব শিশুর সংখ্যা দেশের গড়পড়তা সংখ্যার চেয়ে ৫ থেকে ৯ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া বিত্তশালী পরিবারের ছেলেমেয়েদের মাদকদ্রব্য তথা মদ্যপান করার হারও গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ের চেয়ে বেশি। তাই ছেলেমেয়েদের এমন জীবনযাপন প্রতিরোধ করার জন্য অনেক বিত্তশালী পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদেরকে বাবা মার সম্পদ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করেন এবং তাদেরকে নিজের সামর্থ্যের মাধ্যমে ভালো জীবন অর্জন করার দাবি করেন।

বিত্তশালী পরিবারের এমন সিদ্ধান্ত সত্যিই অনেক প্রশংসনীয়। কারণ বাবা মার সম্পদের উপর ভর করে বিলাসী এবং নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাপন করে ছেলেমেয়েরা যদি তাদের জীবনটাকে নষ্ট করেন তাহলে সেটি বাবা মার কাছে নিশ্চয়ই অনেক কষ্টের। কোনো বাবা মা-ই চান না তাদের ছেলেমেয়ে খারাপ পথে ধাবিত হোক বা খারাপ জীবনযাপন করুক।

আসলে এই বিশ্বে এমন অনেক পরিবার আছেন যারা হয়তো অর্থনৈতিকভাবে অনেক সচ্ছল কিন্তু তাদের ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন খারাপ কাজের সাথে যুক্ত । এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে সবাই সুন্দর জীবনযাপন করবেন এবং বাবা মার স্বপ্ন পূরণ করবেন এটা আমাদের সকলের প্রত্যাশা। হ্যাঁ, ধনসম্পদের অহমিকা না করে কার্লোস স্লিমের মতো সুন্দর সাদামাটা জীবন নিশ্চয়ই আমাদের জন্য একটি উত্সাহ, তাইনা?

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040