1120ruby
|
কিডনি রোগের অন্যতম কারণ কিডনির প্রদাহ। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হতে পারে এই রোগ। আবার যাঁদের রক্তচাপ অতিরিক্ত কম থাকে, তাঁদেরও হঠাত্ খারাপ হতে পারে কিডনি। কিডনির রোগে আক্রান্তরা শুরুর দিকে সমস্যা টের পান না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুরুর দিকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, বমি, পায়ে পানি আসা-এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেজন্য উপরোক্ত যে কোনো লক্ষণ দেখা দিলে আপনার উচিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কিডনির অবস্থা জেনে নেওয়া। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব পরীক্ষা ও রক্তে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ নির্ণয় করা। কিডনি রোগীদের অধিকাংশই বয়স্ক ব্যক্তি। সেজন্য বয়স্ক লোকজনের কিডনির রোগে আক্রান্ত হাওয়ার হার বেশি। ৩৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছরই কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা কমতে থাকে। এর সাথে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। যাঁরা ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই, তাঁদের ঝুঁকিও আরো বেশি।
প্রিয় শ্রোতা, কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে জানার পর আমরা সমস্যা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে আলাপ আলোচনা করবো। কি কি কারণে কিডনির রোগে আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি বাড়ে, কি কি ভালো অভ্যাসে এ সমস্যা মোকাবিলা করা যায়, সে সম্পর্কে জানবো। যারা কিডনির রোগে ভুগছেন এবং যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে চান, তাদের জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উন্নত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনাচার মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
পুষ্টি বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই নিত্য নতুন খাবারের উপকারী বিভিন্ন দিক উন্মোচন করে চলেছেন। কিডনি সুরক্ষায় বিশেষ খাদ্য হিসাবে এরকম কিছু খাবারকে নিশ্চিত করেছে বিশেষজ্ঞরা।
ক্যাপসিকাম: আপনার কিডনি সুস্থ রাখতে ক্যাপসিকাম হতে পারে প্রথম পছন্দ। সালাদ এবং যে কোনো রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি৬, ফলিক এসিড এবং ফাইবার। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ এন্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন এর প্রধান উপাদান, যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধেও সহায়ক।
বাধাকপি ও ফুলকপি: বাধাকপি ও ফুলকপিকে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর খনি বললেও ভুল হবে না। এরা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলস এর বিরুদ্ধে কাজ করে আপনার কিডনিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও কাজ করে। দামে সস্তা হলেও এতে রয়েছে ভিটামিন কে,সি,বি৬,ফলিক এসিড। প্রচুর ফাইবার সমৃদ্ধ বাধাকপি হতে পারে আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকার অন্যতম উপাদান। ফুলকপির একটি বিশেষগুণ হলো এটি শরীর থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।
রসুন: রসুনের গুণের কথা আমাদের সবারই জানা। এটি কিডনি প্রদাহ উপশম করার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনি রোগীদের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
পেঁয়াজ: পেঁয়াজের এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লাভনয়েড, যা রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট কিডনি জনিত উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা রয়েছে।
আপেল: বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা অনন্য।
লাল আঙুর: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফ্লাভনয়েড, যা আপনার কিডনিকে রাখবে সদা তরুণ। এটি রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
ডিমের সাদা অংশ: আমরা অনেকেই স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ডিমকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেই। কিন্তু আপনি কি জানেন ডিমের সাদা অংশই হচ্ছে বিশুদ্ধ প্রোটিন, যা আপনার কিডনির জন্য খুবই দরকারি।
মাছ: মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা৩ যা কিডনি, হার্ট এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী। এছাড়াও কোলেস্টেরল কমাতে এর ভূমিকা তো রয়েছেই।
অলিভ ওয়েল: গবেষণায় দেখা গেছে যেসব দেশে অন্যান্য তেলের চেয়ে অলিভ ওয়েল বা জলপাই এর তেল ব্যবহার করা হয় সেসব দেশে কিডনি রোগী, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি তুলনামূলক কম হয়। অলিভ ওয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনল যা এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চমৎকার কাজ করে। রন্নায় অথবা সালাদে অলিভ ওয়েল ব্যবহার বাড়তি স্বাদ যোগ করে।
চীনের একটি প্রবাদ আছে: খাদ্যাভ্যাস থেকে রোগ। সেজন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কিডনি রোগ প্রতিরোধ ও সে রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য লাইফস্টাইল সম্পর্কে নিম্ন কিছু টিপস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিয়মিত শরীর চর্চা করুন: সময় পেলেই হাঁটুন, সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য সাইকেলকে বেছে নিন। সাইক্লিং, শহুরে জীবনে খোলা পরিবেশে গোসল বা সাঁতার কাটান। কর্মঠ ও সতেজ শরীরে অন্যান্য রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার মত কিডনির রোগের সম্ভাবনাও কমে যায়।
ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ রাখুন নিয়ন্ত্রণে: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অধিকাংশই কিনা কিডনি রোগে ভুগেন। রক্তের চিনি যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে কিডনি রোগ নিয়ে আপনি প্রায়ই চিন্তিত থাকেন। তাই নিয়মিত রক্তের চিনি পরীক্ষা করার পাশাপাশি অন্তত তিনমাসে একবার করে আপনার কিডনি পরীক্ষা করান, দেখুন সবকিছু স্বাভাবিক আছে কিনা। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। অনেকের মতে রক্তচাপ শুধু ব্রেইন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ। আসলে কিন্তু তা নয়। কিডনি ফেইলিওর এর পেছনেও কারণ হিসেবে রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ। রক্তচাপ ১২৮/৮৯ এমএম (millimeters of mercury) এর বেশি হলেই আমাদের ডাক্তার দেখাতে হবে। রক্তচাপ সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখা মানে আপনার কিডনিকেও সুস্থ রাখা।
পরিমাণগত আহার করুন: অতিরিক্ত কোন কিছুই শরীরের জন্য ভাল নয়। সেজন্য আমাদের খেয়াল করা উচিত অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হচ্ছে কিনা। অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ আমাদের শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে ফলে অন্য সমস্যার পাশাপাশি আমাদেরকে কিডনিও আক্রান্ত হয়।
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদকে বিদায় দিন: শারীরিক সমস্যাকে প্রকট করে তুলে ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ পান। ধূমপান ও অতিরিক্ত মদের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই কিডনি ভাল রাখতে চেষ্টা করুন আজ থেকেই ধূমপান ও মদ বর্জন করুন।
প্রয়োজন ছাড়া কোন ওষুধ নয়: আমরা অনেকেই শারীরিক ছোট খাটো কোন সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিজেরা ওষুধ খাই। কিডনির জন্য এসব ওষুধ কম-বেশী ক্ষতিকর।
ফলমূল এর পাশাপাশি সম্ভব হলে সামুদ্রিক মাছ, কালো ফল, শাক-সবজি, শিম ও নানান ধরনের বাদাম কিডনিকে পুষ্টি সরবরাহ করে। সামুদ্রিক খাবার যেমন মাছ, সী-উড, কেল্প ও কিডনি শক্তিশালী করার জন্য খুব প্রয়োজনীয়।
প্রিয় শ্রোতা, কথা তো অনেক হলো, এবারে আপনাদের জন্য নিয়ে আসছি 'Lemon Tree' শিরোনামের একটি গান।এ গানটি গেয়েছেন চীনের তাইওয়ানের কণ্ঠ শিল্পী ওয়াং রুও লিন।
গানের কথাগুলো এমন:
আমি একটি বিষণ্ণ কক্ষে বসে আছি
এটি আরেকটি বর্ষণমুখর রোববারের সন্ধ্যা।
বসে থেকে নষ্ট করছি সময়, কারণ কিছুই করার নেই
বসে থেকে অপেক্ষা করছি তোমার।
কিন্তু তুমি আসবেনা কখনোই!
গাড়ি নিয়ে ঘুরি ফিরি
দ্রুত গতিতে, অনেক দূরে
বদলাতে চাই আমার দৃষ্টিভঙ্গি
তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একাকীত্ব গ্রাস করছে আমায়
কিন্তু কিছুই হবেনা, তাই ভাবছি আমি।
প্রিয় শ্রোতা, আশা করি গানটি আপনাদের ভালো লেগেছে। নিশ্চয়ই এ গান আপনার মনে আনন্দ দিয়েছে, তাই না?
এবার তাহলে নিয়ে আসছি আসরের দ্বিতীয় পর্ব- 'তথ্য প্রযুক্তি জগতের হালচাল।' আজকের এ পর্বে আমরা চালকবিহীন গাড়ি সম্পর্কে সর্বশেষ খবর তুলে ধরছি।
প্রিয় শ্রোতা, আপনি কি কখনও ভেবেছেন, কিছুদিন পরই কোনো এক দিন এমন একটি বুদ্ধিমান গাড়ি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালিয়ে আপনাকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। এটা চিন্তা করার দিন শেষ। আমাদের এ অনুষ্ঠানে বাস্তবে চালকবিহীন গাড়ির কথা জানিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু চালকবিহীন গাড়ি কবে আসবে? অনেকে হয়ত ধারণা করেছেন যে, এটা দূরবর্তী কোন এক ভবিষ্যতে হয়তো আসবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার গবেষকেরা আশার আলো দেখিয়েছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের গাড়ি হাতে পেতে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। এক দশক অর্থাত্ ১০ বছরের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি বাজারে চলে আসবে। আবার অনেকে বলছেন, এ ধরণের গাড়ি আসলেও তা খুব দামী হবে, যা কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব হবে না। এখন সবাইকে সুসংবাদ দিয়ে গবেষকেরা বলছেন, গাড়ি সহজলভ্য হবে, দামও থাকবে হাতের নাগালে, অর্থাত্ সাশ্রয়ী দামেই চালকবিহীন গাড়ি পাওয়া যাবে। তাঁরা বলছেন, গাড়ির জন্য তাঁদের উদ্ভাবিত 'আইস অ্যান্ড এয়ারস' প্রযুক্তির কল্যাণেই কম দামে চালকবিহীন গাড়ি শিগগিরই বাজারে আনা সম্ভব হবে।
অস্ট্রেলিয়ার পার্থের কারটিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা গাড়িতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংযুক্ত করার চেষ্টা করছেন। গাড়িতে সংযুক্ত বিভিন্ন সেনসর থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে তা বিশেষ একটি অ্যালগরিদমের মাধ্যমে কাজে লাগানোর পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দাবি করেছেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিতে গাড়ির জন্য দরকারি অর্থপূর্ণ তথ্য কাজে লাগাতে পারবে চালকবিহীন গাড়ি, যা পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝতে এবং রাস্তায় যেসব বাধার মুখে পড়তে হয় সেগুলোকেও অতিক্রম করতে পারবে।
গবেষক বা টুয়োং ভো জানিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় এই গাড়ি বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদন করা যাবে। কারণ এসব গাড়িতে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন পড়বে না, এমনকি কম খরচেই গাড়ি তৈরি করা যাবে।