Web bengali.cri.cn   
পাঁচশ কিলোমিটার হেঁটে 'অবৈধ ইটভাটা' থেকে নিজের ছেলেদের উদ্ধার করেছেন ভারতীয় পুরুষ
  2014-11-21 19:51:50  cri

ভারতের একটি অবৈধ ইটভাটায় বিক্রি করা হয় নেপালের তিন শিশুকে। তাদের বাধ্য করা হয় শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে। শিশুদের সন্ধানে তাদের বাবা গোপনে পাঁচশ' কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে তাদের উদ্ধার করেন। গোপনে অনুসন্ধান করতে থাকেন একটির পর একটি কারখানা। অবশেষে খুঁজে পান তার সন্তানদের। অনেক দুঃখ-ক্লেশ পার হয়ে সাফল্যের সঙ্গে তার ছেলেসহ আরো বেশ কিছু শিশুশ্রমিককে উদ্ধার করেন তিনি।

সাহসী এ মানুষটির নাম জাগ্রাম। তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের বাহরাইচ শহরের একটি গ্রামে বসবাস করেন। তিনি 'হিন্দুস্তান টাইমস' পত্রিকার সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের একটি বন্যায় তার গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পর কাজের সন্ধানে তিনি একাই উত্তর প্রদেশের রাজধানী লাখনাউতে গিয়ে একটি নির্মাণ সাইটে কাজ শুরু করেন। তার স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে নিজের গ্রামে থাকতেন। কিন্তু বাসায় ফিরে আসার সময় তিনি জানতে পারেন যে, তার তিনটি ছেলে নিখোঁজ হয়েছে। কোনো এক পাচারকারী তার ছেলেদের অপহরণ করেছে। জাগ্রামের তিন ছেলের বয়স ১৫, ১৩ ও ১০ বছর।

একটি বেসরকারি সংগঠন জানায়, চলতি বছরের জুলাই মাসে জাগ্রাম তার ছেলেদের খুঁজতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন। তিনি তাঁর জমি বন্ধক রেখে ভ্রমণ খরচ জোগাড় করেন। ২০ দিনে ৫শ' কিলোমিটারের দুরূহ ভ্রমণ করে তিনি আগস্ট মাসে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে পৌঁছে একটি অবৈধ ইটভাটায় নিজের সন্তানদের শিশুশ্রমিক হিসেবে খুঁজে বের করেন।

জাগ্রাম জানান, তার তিনটি ছেলেসহ আরো প্রায় একশ' শিশু পাচারকারীর হাতে বন্দী রয়েছে এবং তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হয়। প্রতি দিন তারা ভোর ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে। কারখানার কাছ থেকে পানি আনে এবং ইট বানানোর জন্য ব্যবহৃত কাদা সংগ্রহ করে। মাঝখানে কোনো বিশ্রাম নেয়া যায় না এবং দিনে মাত্র দু'বার খাবার পায়। ইটভাটার পরিবেশও ভালো নয় এবং চারদিকে শক্ত পাহারা। পালানোর সুযোগ নেই বললেই চলে।

যদিও তিনি সন্তানদের খুঁজে বের করেছেন, তবুও ছেলেদের উদ্ধার করা খুবই কঠিন। জাগ্রাম ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে ঢোকার চেষ্টা করেন। 'গুপ্তচর' হিসেবে খোঁজ-খবর নেয়ার সময় তিনি তার গ্রামের আরো চার শিশুকে খুঁজে পান।

এক রাতে যখন নিরাপত্তা কর্মীরা অনুপস্থিত ছিলো, তখন তিনি তার সন্তানসহ ৭টি শিশুকে ইটভাটা থেকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী একটি কৃষিজমিতে লুকিয়ে থাকেন। দ্বিতীয় দিন সকালে তারা একটি বাসে করে ভারতের সীমান্ত নেপালগঞ্জে যান। সেখান থেকে তাদের গ্রাম খুব দূরে নয়।

কিন্তু পাচারকারীও বসে ছিলো না। ইটভাটা থেকে পালিয়ে যাবার সময় তারা ধাওয়া করে এবং নেপালগঞ্জ বাস স্টেশনে জাগ্রামের গতিরোধ করে। জাগ্রাম জানেন, তাদের সঙ্গে মুখামুখি লড়াই কোন কাজ হবে না। সুতরাং তিনি পাচারকারীদের প্রতিশ্রুতি দেয়ার ভান করেছেন যে, তিনি একা একাই ভারতে ফিরে যাবেন এবং ৭টি শিশুকে পাচারকারীর কাছে রেখে যাবেন।

পাচারকারীর হাত থেকে মুক্ত হয়ে জাগ্রাম দ্রুত পুলিশের কাছে যান। স্থানীয় পুলিশ 'অবৈধ ইটভাটা'য় প্রবেশ করে, তার মালিক ও এক সহকারীকে গ্রেপ্তার করে। পাশাপাশি এ পরিস্থিতি ভারতীয় পুলিশ এবং শিশু অধিকার বিষয়ক একটি বেসরকারি সংস্থাকে জানায় নেপালী পুলিশ কর্তৃপক্ষ। ৭টি শিশু নেপালি পুলিশের পাহারায় সীমান্তে পৌঁছায়। ভারতীয় পুলিশ তাদের নিরাপদে জন্মস্থানে পাঠিয়ে দেয়।

জাগ্রাম বলেন, বাচ্চারা শিক্ষা গ্রহণ করুক, এটা তাঁর স্বপ্ন। তিনি নিজের চেষ্টার মাধ্যমে তাদের আরো ভালো জীবনযাপনের পরিবেশ দিতে যান। বর্তমানে তিনি নিজের গ্রামে একটি দোকান চালু করেছেন। তিনটি ছেলে স্কুলে লেখাপড়া করছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে শিশু পাচার ও অবৈধ শিশুশ্রম সব মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ব্রিটেনের একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, কমপক্ষে ৬ কোটি ভারতীয় শিশু বাধ্য হয়ে শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। জাতিসংঘ মাদকদ্রব্য ও অপরাধ অফিস অর্থাত্ ইউএনওডিসি চলতি বছরের জুলাই মাসে বলেছে, ভারত দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের বৃহত্তম শিশু পাচারের দেশে পরিণত হয়েছে।

ইউএনওডিসি আরো বলেছে, অধিকাংশ পাচার হওয়া শিশু বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে ভারতে যায়। এখন অনেক বেসরকারি সংস্থা শিশু অধিকার নিয়ে ইতিবাচক চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা শুধু সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের আশ্রয় দিতে পারে, মূল থেকে সমস্যা সমাধান করতে পারে না। ভারত সরকার শিশু অধিকার রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সম্প্রতি বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু ঐতিহাসিক ও বাস্তব কারণে শিশুশ্রমিক ব্যবহারের পরিস্থিতি এখনও বিরাজ করছে।

প্রেমা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040