1121yin01
|
কিন্তু, জীবন বয়ে চলে আপন নিয়মে। তাই, প্রতিদিন ওঠা নতুন সূর্যের সঙ্গে মা জোভেলিনও জেগে ওঠেন নতুন স্বপ্ন নিয়ে। দেখা মেলে তাঁরই মতো সব হারানো জোয়েলের সঙ্গে। ঝড়ে জোয়েল হারিয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানকে। আত্মহত্যা করতে গিয়েও পারেননি তিনি। কারণ তাঁর আরও দুই সন্তান রয়েছে। তাঁদের দেখাশোনার ভার কে নেবে?
প্রকৃতির খেয়ালে সব হারানো দুজন মানুষ পরিচিত হয়। একে অন্যের হাতে হাত রেখে নতুন করে পথচলা শুরু হয় তাঁদের। সেই পথ মসৃণ নয়। ঝড়ে ফিলিপাইনের সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত একটি এলাকায় ছোট্ট একটি ঘরে সংসার পাতেন তাঁরা। নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। তবে সেই ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোর অভাব নেই। জোভেলিন আর জোয়েলের ঘরে নতুন এক অতিথি আসছে। নতুন সেই অতিথির মধ্যে হারানো সন্তানদের ছায়া দেখতে চান মা জোভেলিন। আর জোয়েল ভাবেন ঝড়ে হারিয়ে যাওয়া তাঁর ছোট্ট ছেলেটিই নতুন রূপে ফিরবে তাঁর কোলে।
গত বছরের ৮ নভেম্বর শক্তিশালী টাইফুন হাইয়ান ফিলিপাইনের উপকূলে আঘাত হানে। সেই ঝড়ের তাণ্ডবে সাত হাজার ৩৫০ জন নিহত হন বা নিখোঁজ হন। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। ওই ঝড়ে নিহত হওয়ার তালিকায় ছিলেন জোভেলিনের স্বামী, ছয়টি ফুটফুটে সন্তান, মা, বোন ও বোনের সন্তানেরা। আর জোয়েল ছিলেন আরও বেশি হতভাগ্য। স্ত্রী ও দুই সন্তানের লাশও খুঁজে পাননি তিনি। নিজেদের সব গেছে। তাই জোভেলিন আর জোয়েল একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করতে থাকেন। এভাবেই কেটে যায় কয়েক মাস।
ছয় মাস আগে বিদেশি দাতা সংস্থার পরিচালিত এক ত্রাণ কর্মসূচিতে দুজনের দেখা হয়। সেখানে জোভেলিন ও জোয়েল পরিচিত হন তাঁদের নামের আদ্যাক্ষরের মিলের জন্য। কাজ করতে করতে একে অন্যের বেদনা ভাগ করতেন তাঁরা। সেই সময়ের কথা মনে করে জোভেলিন বলেন, 'জোয়েলকে আমি বলেছিলাম, আমিও জো, তুমিও জো। আমরা দুজনেই সব হারিয়েছি। তাই আমরা কি একে অন্যের হাত ধরতে পারি?'
নয় বছরের বড় জোয়েলের সঙ্গে নতুন সংসারে খুবই সুখী জোভেলিন। জানালেন তাঁদের চিন্তাভাবনায় অনেক মিল রয়েছে। দুজনে সংসারের ও বাইরের কাজ ভাগাভাগি করে করেন। শুধু স্বামী হিসেবে নয়, বাবা হিসেবেও জোয়েল খুব ভালো হবেন বলে আশা করেন জোভেলিন। পুরোনো দিনের কথা ভেবে মন খারাপ হলে তাঁরা পরস্পরের দুঃখ ভাগ করে নেন। জোয়েল জানান, তাঁর অন্য দুই সন্তান দাদা, দাদির সঙ্গে কাছেই আরেকটি এলাকায় থাকেন। সুযোগ পেলেই দুজন দেখা করে আসেন তাদের সঙ্গে। টাইফুন হাইয়ানে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু জোভেলিন ও জোয়েল কোনো সহায়তা পাননি। তাই সব হারানো দুজন মানুষ নিজেরাই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।