1103huanqiu
|
খুবই আনন্দের বিষয় যে, এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে নি। আসলে গত ২০ বছরে পাতালরেলের ওপর চালানো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কম নয়। প্রতি বছর এতে অনেক লোক হতাহত হয়। তাই এমন সন্ত্রাসী হামলা এড়ানো এবং প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন দেশ অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে এবং করছে।
প্রথমেই আমরা দৃষ্টি ফেরাবো কয়েকটি পরিসংখ্যানের দিকে। তা থেকে আমরা জানতে পারবো পাতালরেলের উপর হামলা কতটা ভয়াবহ।
১৯৯৫ সালে জাপানের ভ্যাস্ত ধর্ম সংস্থা ওম শিনরিকিও রাজধানী টোকিওর পাতালরেলে একটি বোমা হামলা চালায়। এতে ১২ জন নিহত এবং কয়েক হাজার লোক আহত হন।
২০০৪ সালে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের পাতালরেলে দশটি ব্যাগ বোমা পর পর বিস্ফোরিত হয়, এতে ১৯১ জন নিহত এবং ১৮০০ জন আহত হন।
২০০৫ সালে ব্রিটেনের লন্ডনে পাতালরেলে সন্ত্রাসী হামলায় ৫২ জন নিহত এবং ৭ শরও বেশি আহত হন ।
২০১০ সালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর পাতালরেলে সন্ত্রাসী সংস্থা 'ব্লাক উইডো'- আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। এতে শহরের কেন্দ্রস্থলের পাতাল রেলের দু'টি বগি পর পর বিস্ফোরিত হয়। এই হামলায় ৪০ জন নিহত এবং শতাধিক লোক আহত হন।
২০১১ সালে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কের পাতালরেলে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়। এতে ১২ জন নিহত এবং ২ শতাধিক লোক আহত হন।
হামলা আর হতাহতের সংখ্যাই আমাদেরকে জানিয়ে দেয় যে, এমন হামলা কতটা নিষ্ঠুর। পাতালরেলে হামলা বেশিরভাগ সময়ই খুব ছোট এবং রুদ্ধদ্বার বগিতে ঘটে। কারণ মানুষ বেশি, পালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন, তাই এমন হামলায় ক্ষতিও অনেক বড়।
সন্ত্রাসীরা কেন পাতালরেলে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, কারণ এমন হামলা শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে এবং সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। আর এর প্রভাবও অনেক বড়।
তাই সন্ত্রাসী হামলা থেকে কীভাবে পাতালরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তা অনেক দেশের প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে জাপান সরকারের ব্যবস্থা এমন: জাপানের পাতালরেল স্টেশনে মানুষের মুখ চিহ্নিত করার ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এমন ব্যবস্থা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মুখের তথ্য চিহ্নিত করতে পারে, যাতে বোঝা যায় এ ব্যক্তি সন্ত্রাসী কি না। এর মাধ্যমে দেশের সন্ত্রাস দমনের সামর্থ্য জোরদার করা যায়।
স্পেনের রাষ্ট্রীয় রেল কোম্পানি তথ্যমাধ্যমকে জানায়, ২০০৪ সালে দেশে পাতালরেল বিস্ফোরণ ঘটার পর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। অন্য এক রেল কোম্পানিও জানিয়েছে যে, দেশের সব রেলস্টেশনে আরো বেশি নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ব্যবস্থাও উন্নত করেছে। রেল কোম্পানি সরকার এবং স্থানীয় আইন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগও জোরদার করেছে, যাতে পাতালরেল নিরাপত্তা হুমকি আরো ভালোভাবে মোকাবিলা করা যায়।
এবারে আমরা দৃষ্টি ফেরাবো যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম পাতালরেল ব্যবস্থা রয়েছে। তাই নিউইয়র্ককে "পাতালরেল রাজ্য" বলা যায়। নিউইয়র্কের পাতালরেল ব্যবস্থায় ৪৬৫টি স্টেশন আছে। কর্ম দিনে প্রতিদিন ৫০ লাখেরও বেশি লোক পাতাল রেলের মাধ্যমে যাতায়াত করে। তা যুক্তরাষ্ট্রের সব বিমানবন্দরের যাত্রীর সংখ্যার দ্বিগুণ। তাই যদি এমন পাতালরেল ব্যবস্থায় কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে তা হবে অনেক ভয়াবহ এবং মর্মান্তিক। আসলে এমন হুমকি কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যায়না। ২০০৩ সালে এমন খবর প্রকাশ পায় যে, আল-কায়েদা নিউইয়র্ক পাতালরেল স্টেশনে বিষবাষ্পের বোমা হামলা চালানোর অপচেষ্টা চলাতে চেয়েছিল।
এছাড়া,২০০৪ সালে সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনের একটি পাতালরেল স্টেশনে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে চেয়েছিল, ভাগ্যের বিষয় হল পুলিশ সাফল্যের সঙ্গে তাদের এ অপচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয় এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে।
২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা আল-কায়েদার সাবেক সদস্য নাজিবুল্লাহ গ্রেফতার জাজি হয়েছে। তিনি বিমানবন্দরের বাসের ড্রাইভার ছিলেন। তিনি পাতালরেলের ব্যস্ততম সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। তিনি আদালতে স্বীকার করেন যে, সব জিনিস প্রস্তুত থাকলে ম্যানহাটনের পাতালরেল স্টেশনে এক আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করতে পারেন তিনি ।
এখন সন্ত্রাসী হামলার হুমকির সম্মুখে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
বর্তমানে ২.৫ হাজার পুলিশ ও সাদা পোশাকের পুলিশ নিউইয়র্কের পাতালরেল ব্যবস্থায় টহল দিয়ে থাকেন। পুলিশের চোখে যে লোক চুপিচুপি চারিপাশে হাঁটাহাঁটি করেন, যাদের শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে, অথবা নিজের সাথে কথা বলেন এমন মানুষ অনেক সন্দেহজনক ।
এছাড়া পাতালরেলে পুলিশ খুব এলোপাতাড়ি যাত্রীদের পার্সেল পরীক্ষা করে। আসলে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, যাত্রীদের পার্সেল পরীক্ষা করা নাগরিকদের অধিকারকে লঙ্ঘন করা, তবে যাত্রীরা পুলিশের এমন আচরণকে সমর্থন করেন। কারণ তা সব যাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্যই।
এ পর্যন্ত নিউইয়র্কের পাতালরেলে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আসলে ঘটে নি। তবে বর্তমানে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের হুমকিতে পুলিশের চাপ অনেক বেড়ে গেছে ।
নিউইয়র্কের পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশ নিউইয়র্কের পাতালরেল স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় টহল দেয়ার চেষ্টা করেন। যাতে লোকেরা পুলিশকে দেখতে পারেন। সন্ত্রাসীরাও পুলিশকে দেখে ভয় পাবে।
আসলে বিভিন্ন দেশের পাতালরেল ব্যবস্থার জন্য সন্ত্রাসী হামলা এড়ানো একটি কঠোর কর্তব্য। পাতালরেলে যাত্রীর সংখ্যা বেশি, সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নিলেও হান্ড্রেড পার্সেন্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, অন্য আরও বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী হামলা এড়ানোর পদ্ধতির মত, পাতালরেলের সন্ত্রাসী হামলা এড়াতে চাইলে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কেবল পাতালরেল নয়, এই বিশ্বের কোথাও আর কোনো ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটবে না, এই প্রত্যাশা করি আমরা।