Web bengali.cri.cn   
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই এবং কৈলাস সত্যার্থী
  2014-10-24 16:14:18  cri

 

গত ১০ অক্টোবর চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল জয়ী হিসেবে পাকিস্তানের ও ভারতের শিশু অধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই এবং কৈলাস সত্যার্থীর নাম ঘোষণা করেছে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি। মালালা ও সত্যার্থীকে নোবেল পুরষ্কার প্রদানের মাধ্যমে শিশু-কিশোরের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের প্রতি সম্মান জানানো হলো।

মালালা ইউসুফজাই—সবচেয়ে তরুণ নোবেল পদক-বিজয়ী

শান্তির নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার পর, মালালা ইতিহাসে সবচেয়ে তরুণ নোবেল পদক জয়ের গৌরব অর্জন করেছে। মালালা উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের সোয়াত অঞ্চলের বাসিন্দা। তার বাবা জিয়াউদ্দিন একটি স্কুলের প্রধান হিসেবে সবসময় শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করার চেষ্টা চালান। ২০০৭ সালে সশস্ত্র তালিবান গোষ্ঠী সোয়াত অঞ্চল দখল করে সেখানে শরীয় আইনের অজুহাত দিয়ে নারী শিক্ষা নিষিদ্ধ ঘোষণা করাসহ স্থানীয় গার্লস স্কুল বন্ধ করে দেয়। কিন্তু জিয়াউদ্দিন বলেন, মারা গেলেও শিক্ষা অর্জন বন্ধ করা যায় না।

বাবার উত্সাহে ২০০৯ সালে ১২ বছর বয়সী মালালা ছদ্মনামে বিবিসি'র উর্দু ওয়েব সাইটে ব্লগ লিখতে শুরু করে। সোয়াত উপত্যকায় শিশুর জীবন ও তালিবানের শাসনে অবরুদ্ধ জীবনের কথা উল্লেখ করেন মালালা। ব্লগে মালালা মেয়েদের শিক্ষার অধিকারের কথা জানান এবং এ বিষয়ে বহির্বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু একই সময় তার এ ধরনের আচরণ তালিবান গোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে তোলে।

২০১২ সালের ৯ অক্টোবর তালিবানের একটি দল মালালা ও তার সহপাঠীদের বহনকারী স্কুল বাস থামিয়ে দেয়। তারপর তারা বাসে উঠে খুব কাছ থেকে মালালার মাথায় গুলি করে।

সে সময় গণমাধ্যমগুলোতে এ নৃশংস ঘটনাটি ব্যাপক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গুরুতর আহত মালালা ইউসুফজাইকে পর পর পাকিস্তান ও ব্রিটেনে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং পরবর্তীতে সে সুস্থ হয়ে ওঠে। খুব সৌভাগ্যের বিষয় হলো, তালিবানের গুলিটি মালালার মস্তিষ্কের কোনো ক্ষতি করেনি। সুস্থ হয়ে ওঠার পর মালালা নারী ও শিশু অধিকার উন্নত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রভাবশালী 'টাইম' ম্যাগাজিনের কভার ছবি হিসেবে মালালাকে তুলে ধরা হয়। তাকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী একশ' মানুষের মধ্যে অন্যতম নির্বাচন করা হয়। গত জুলাইয়ে জাতিসংঘ তার জন্মদিনকে 'মালালা দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন তার ভাষণে বলেন যে, চরমপন্থি মালালার ওপর হামলা চালানোয় প্রতিফলিত হয়েছে, তাদের ভয়টা কি। তাদের ভয় হচ্ছে, একটি মেয়ে যার হাতে বই রয়েছে।

২০১৩ সালের ১২ জুলাই ছিলো মালালার ১৬তম জন্মদিন। এ দিন সে জাতিসংঘ যুব পরিষদে ভাষণ দিয়েছে। শান্তির জন্য দৃঢ় মনোবল নিয়ে সে বলেছে, আমি হুমকিতে পিছুপা হই না। আমি নিশ্চয়ই অরক্ষিত শিশু, বিশেষ করে মেয়েদের আহ্বান জানাবো। সবার জন্য সমান শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নে লড়াই করবো। খারাপ মানুষ আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাধা দেবে। কিন্তু আমরা তাতে ভয় পাই না। দুর্বলতা, ভয় ও হতাশা আস্তে আস্তে সরে যাবে। সঙ্গে আসবে দৃঢ়তা, শক্তি ও উত্সাহ।

গত ১০ অক্টোবর মালালার শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ের খবর পেয়ে এর নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান তালিবানের মুখপাত্র। কিন্তু ব্রিটেনের বার্মিংহামে থাকা মালালা এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সে বলেছে, এতো বেশি মানুষ শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করছে যে এতে সে খুবই আনন্দিত এবং কখনও নিঃসঙ্গ বোধ করবে না।

বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী নেতা-- কৈলাস সত্যার্থী

১৯৫৪ সালের ১১ জানুয়ারি সত্যার্থী ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতে শিশুশ্রম সাধারণভাবে চলতে থাকায় সত্যার্থী 'মহাত্মা গান্ধী'র অহিংস নীতির পথে চলা শুরু করেন। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের মাধ্যমে শিশুর ওপর অর্থনৈতিক বঞ্চনা কার্যকরের প্রতিবাদ করেন। বহু বছর ধরে তিনি শিশু অধিকার রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে হাজার হাজার শিশুকে শ্রমিকের জীবন থেকে উদ্ধার করেন।

১৯৮০ সালে, সত্যার্থী 'শিশু উদ্ধার আন্দোলনের' উদ্যোগে কিছু প্রক্রিয়াকরণ কারখানার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এসব কারখানায় সাধারণভাবে কিছু 'চুক্তি ভিত্তিক শিশুশ্রমিক' রয়েছে। পারিবারিকভাবে ঋণগ্রস্ত থাকার কারণ শিশুশ্রমিকদের কারখানায় কাজ করতে হয়। কিন্তু আয় কম হওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে পুনরায় দাস হিসেবে বিক্রি করা হয়।

গত শতাব্দীর ৯০ দশকে, বিশ্বের লাখ লাখ দাসত্বে বন্দী শিশু উদ্ধারে সত্যার্থী 'বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী মিছিল' শুরু করেন। 'বিশ্ব শিশুশ্রম বিরোধী মিছিল' ওয়েব সাইটে সত্যার্থী বলেছেন, শিশুশ্রমিক নিয়োগ করা অবৈধ ও অনৈতিক।

চলতি মাসের শুরুতে সত্যার্থী বলেন, পরিপূর্ণভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ না করলে, শিশু শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না। তিনি লিখেছেন, সারা বিশ্বের 'উপলব্ধি করতে হবে যে, শিশুশ্রম এবং শিক্ষাদানের অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে টেকসই অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও শিল্প উন্নয়নে বড় বাধা।"

১০ অক্টোবর সত্যার্থী শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার খবর জানতে পারেন। পরবর্তীতে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, এবার পুরষ্কার পাওয়ার মাধ্যমে আরো বেশি মানুষ বিশ্ব শিশু অধিকারের ওপর মনোযোগ দেবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। তিনি মালালাকে তাঁর সাথে যৌথ প্রচেষ্টা চালানোর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

পুরস্কার ঘোষণার সময় নোবেল কমিটি বলেছে, একজন পাকিস্তানি ও একজন ভারতীয়। শিক্ষার অধিকার আদায়ে চির বিরোধী দুই রাষ্ট্র অভিন্ন লড়াই করতে পারে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজ বিশ্বে প্রায় ১৬.৮ কোটি শিশুশ্রমিক রয়েছে। ২০০০ সালে সে সংখ্যা ছিল আরো ৭.৮ কোটি বেশি। শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করতে বিশ্ব আরো এগিয়ে আসছে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040