'ছিউ শি' ম্যাগাজিনে গত সংখ্যায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সম্পাদক, কেন্দ্রীয় প্রচারমন্ত্রী লিউ ছি বাওয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধের শিরোনাম 'আমরা সঠিক পথে চলছি -চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র সংক্রান্ত কিছু উপলব্ধি।' প্রবন্ধে চীন কেনো নিজস্ব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে, কীভাবে অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থার সভ্যতা সৃষ্টি করেছে, কীভাবে চীনা সংস্কৃতি আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েছে এবং চীনের অগ্রযাত্রার পথে চূড়ান্ত মানদণ্ড নির্ধারণসহ নানা ক্ষেত্রে চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্রের যথার্থতা ও এর প্রতি অবিচল আস্থার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। প্রবন্ধের সারাংশ নিচে দেয়া হলো।
চীনের পথ ধরে আমরা আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম সারিতে গিয়েছি।
আমরা বলছি, চীনের পথ ধরে সঠিকভাবে যাওয়া যায়, এটা কোনো অন্ধবিচার নয়, এটা হচ্ছে বাস্তব পথ অতিক্রমের পর পাওয়া বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত এবং ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তুলনা করে পাওয়া উপসংহার।
বাস্তব অনুশীলন হচ্ছে সবচেয়ে ভালো বিচারক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশেষ করে বিগত ৩০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে উন্নয়নের এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে। এ প্রতিযোগিতায় অনেক দেশের শুরুটা ছিলো চীনের চেয়ে অনেক উন্নত, সমৃদ্ধ, পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল চীনের চেয়ে ভালো। এতো বছর প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর এখন প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কিছু দেশ তার অবস্থা পরিবর্তন করেছে এবং ভুল পথে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। কিছু দেশ সরাসরি অন্য দেশের ব্যবস্থা অনুসরণ করেছে, অথচ তা নিজ দেশের অবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় সমস্যার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু, আমরা অনমনীয় পুরানো পদ্ধতি অনুসরণ করিনি, ব্যবস্থা ও পতাকা পরিবর্তনের ভুল পথও অনুসরণ করিনি। এর বিপরীতে আমরা চীনা বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সমাজতন্ত্র তৈরি করেছি। এ পথে আমরা কয়েক ডজন বছরে শিল্পোন্নত দেশগুলোর কয়েকশ' বছরের উন্নয়নের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি, দারিদ্র থেকে খাওয়া-পরা, তারপর মোটামুটি সচ্ছল হওয়ার ঐতিহাসিক পর্যায়গুলো অতিক্রম করেছি। এখন চীনা জাতি বড় পদক্ষেপ নিয়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মহা জাগরণকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। ইতিহাসে পণ্যদ্রব্যের অভাবগ্রস্ত দেশ এখন 'বিশ্ব কারখানায়' রূপান্তরিত হয়েছে এবং 'বিশ্ব মঞ্চের কেন্দ্রের' কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।
অবশ্যই চলার এ পথ মসৃণ নয়। সামনে এগিয়ে আসার পথে আমরা অনেক চড়াই-উতরাই ও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি এবং নানা ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, আমি কেবল আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আর্থিক সংকট মোকাবিলার উদাহরণ দেই। চীন চমত্কারভাবে সারা বিশ্বের কাছে তার জবাব দিয়েছে। সংকটের মধ্যে বিশ্বের বুকে সর্বপ্রথম আর্থিক স্থিতিশীলতা বাস্তবায়ন করেছে, বিশ্ব অর্থনীতিকে তলানি থেকে টেনে তোলার গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান ছিল ২০ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে চীনের অবদান ৩০ শতাংশ। পাশাপাশি চীনের আকাশ-পাতালে পরিবর্তন দেখে বিশ্বের রাজনীতিবিদ ও পণ্ডিতরা বলছেন, "এটা হচ্ছে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চীনের এ সাফল্য কারো সঙ্গে তুলনীয় নয়।" যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মনে করেন, 'এটা অভাবনীয়।'