1019jiankang
|
ক্যান্সার বা কর্কটরোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কারণ, প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার সহজে ধরা পরে না, ফলে শেষ পর্যায়ে গিয়ে ভালো কোনও চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব হয় না। বাস্তবিক অর্থে এখনও পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসায় পুরোপুরি কার্যকর কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। ক্যান্সার সারানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পরলে এই রোগ সারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি। দুই শতাধিক ধরনের ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। প্রত্যেক ক্যান্সারই আলাদা আলাদা এবং এদের চিকিৎসাপদ্ধতিও আলাদা। বর্তমানে ক্যান্সার নিয়ে প্রচুর গবেষণা হচ্ছে এবং এ সম্পর্কে নতুন নতুন অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্বের সকল প্রাণীর শরীর অসংখ্য ছোট ছোট কোষের সমন্বয়ে গঠিত। এই কোষগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর মারা যায় এবং এই পুরনো কোষগুলোর জায়গায় নতুন কোষ সৃষ্টি হয়। সাধারণভাবে কোষগুলো নিয়ন্ত্রিতভাবে এবং নিয়মমতো বিভাজিত হয়ে নতুন কোষের জন্ম দেয়। সাধারণভাবে বলতে গেলে, যখন এই কোষগুলো কোনও কারণে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তখনই ত্বকের নিচে মাংসের দলা অথবা চাকা দেখা যায়। একেই 'টিউমার' বলে। এই টিউমার বিনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট হতে পারে। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই 'ক্যান্সার' বলে। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজনক্ষম হয়ে বৃদ্ধি পাওয়া কলাকে নিয়োপ্লাসিয়া (টিউমার) বলে, এবং সেরকম ক্রিয়াযুক্ত কোষকে নিয়োপ্লাস্টিক কোষ বলে। নিওপ্লাস্টিক কোষ আশেপাশের কলাকে ভেদ করতে না-পারলে তাকে বলে নিরীহ বা বিনাইন টিউমার। বিনাইন টিউমার ক্যান্সার নয়। নিওপ্লাসিয়া কলাভেদক ক্ষমতাসম্পন্ন হলে তাকে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার, এবং তার অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনক্ষম ভেদক ক্ষমতাযুক্ত কোষগুলিকে 'ক্যান্সার কোষ' বলে। অনেক ক্যান্সার প্রথমে বিনাইন টিউমার হিসাবে শুরু হয়, পরে তার মধ্যেকার কিছু কোষ পরিবর্তিত হয়ে ম্যালিগন্যান্ট (অর্থাৎ ভেদক ক্ষমতাযুক্ত) হয়ে যায়। তবে বিনাইন টিউমার ক্যান্সারে পরিবর্তিত হবেই তার কোন নিশ্চয়তা নেই। কিছু বিনাইন টিউমার সদৃশ ব্যাধি আছে যাতে ক্যান্সার হওয়া অবস্যম্ভাবী - এদের প্রি-ক্যান্সার বলে। নামে বিনাইন অর্থাৎ নিরীহ হলেও বিনাইন টিউমারও চাপ দিয়ে আশেপাশের কলার ক্ষতি করতে পারে। মেটাস্টাসিস হলো ক্যান্সারের একটি পর্যায়, যাতে ক্যান্সার কোষগুলি অন্যান্য কলাকে ভেদ করে ও রক্ত, লসিকাতন্ত্র ইত্যাদির মাধ্যমে দূরবর্তী কলায় ছড়িয়ে যায়।
স্তন ক্যান্সারের কথায়।
যুক্তরাষ্ট্রের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, দেশটির ৮ জন নারীর মধ্যে গড়ে একজন স্তন ক্যান্সারের রোগী। চীনে এ ক্যান্সারের প্রকোপ খুব বেশি না হলেও, এখানেও পরিস্থিতি ভালো নয়। আসলে বিশ্বব্যাপীই স্তন ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নিয়েছে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতির উন্নতির ফলে বিংশ শতাব্দীর ৯০-এর দশক থেকে এই ক্যান্সারে মৃত্যুর হার কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
মধ্যবয়সীদের পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত এ রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে গ্যাস্ট্রোস্কপি করা হয়। যারা সার্বক্ষণিকভাবে পেটে ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের উচিত অবিলম্বে চিকিৎকের শরণাপন্ন হওয়া।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্তের হার বেশি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হারও বেশি। বিগত ৫০ বছরে বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা যায়। এ ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষদের সংখ্যা বেশি। ধূমপানের সাথে ফুসফুসের ক্যান্সারে সরাসরি সম্পর্ক আছে। যারা ধূমপান করেন, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যারা ধূমপান করেন না, তাদের তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। প্রত্যক্ষ ধূমপানের পাশাপাশি পরোক্ষ ধূমপানেও ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে।
মধ্যবয়সীরা এ তিন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। আর আগেই বলেছি, ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে, তা থেকে রেহাই পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই প্রতিরোধই এ থেকে বাঁচার উপায়। তো, ক্যান্সার থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন। এই পরামর্শ মেনে চললে আশা করা যায় যে, ওই তিন ধরনের ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা যাবে।
পরামর্শ ১: নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করুন
নিয়মিত খাওয়া-দাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা আমরা 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে বারবার বলার চেষ্টা করেছি। চিকিৎসকরা বলছেন, খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম করলে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বাড়ে। তাই নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করুন, সুস্থ থাকুন।
পরামর্শ ২: নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
নিয়মিত শরীরচর্চা সুস্থ জীবনের পূর্বশর্ত। আধুনিক জীবন ব্যস্ত জীবন। কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও শরীরচর্চার জন্য খানিকটা সময় বের করে নিন। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনাকে অন্য অনেক রোগের পাশাপাশি প্রায় সবধরনের ক্যান্সার থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
পরামর্শ ৩: বিষন্নতা থেকে দূরে থাকুন
কথাটা বলা যতোটা সহজ, করা ততোটা সহজ নয়। এটা আমরা জানি। জীবন অনেক জটিল। প্রতিনিয়ত আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা আমাদের মন খারাপ করে দেয়, আমাদের করে তোলে বিষণ্ন। কিন্তু এই বিষণ্নতা নিজেই একটা রোগ। তাই তাকে মনে বাসা বাঁধতে দেওয়া যাবে না। তবে খানিকটা সময়ের জন্য বিষণ্ন হওয়ার কথা আমরা বলছি না, বলছি দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতার কথা। যারা দীর্ঘমেয়াদি বিষন্নতায় ভুগছেন, তাদের হজমের সমস্যাসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিষন্নতা মানুষের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। অতএব বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকুন। শত দুঃখের মাঝেও হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন।
পরামর্শ ৪: ধূমপান থেকে বিরত থাকুন
ধূমপানের কোনো উপকারিতা নেই। চিকিৎসকরা বলেন, পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত---এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যা ধূমাপানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। তা ছাড়া, আগেই বলেছি ধূমপান ফুসফুসরের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। অতএব ধূমপান থেকে দূরে থাকুন, ফুসফুসের ক্যান্সারকে 'না' বলুন।
পরামর্শ ৫: নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান
আপনি কি বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান? এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এর মাধ্যমে আমরা শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারি। কিন্তু, অনেকেই অলসতা করে হাসপাতালে যান না। এটা ঠিক নয়। বিশেষ করে ক্যান্সারের মতো রোগকে প্রাথমিক পর্যায়ে চিহ্নিত করার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা দরকার। ECG, খাওয়ার আগে ও খাওয়ার পরে ব্লাড-সুগার মাপা এবং ইউরিন টেস্ট ইত্যাদি পরীক্ষাগুলো আরো ঘন ঘন করা দরকার।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)