1012jiankang
|
পরামর্শ ১: ওজন কমাতে সঠিক খাবার খান
শরীরের ওজন ঠিক রাখার জন্য বা অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য সঠিক খাবার সঠিক পরিমাণে খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য থাকা প্রয়োজন। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যদি এক বা দুই পদের খাবার দিয়ে আপনি লাঞ্চ বা ডিনার সেরে ফেলেন, তবে ভরপেট খেলেও দেখবেন আপনার নির্ধারিত সময়ের আগে ক্ষুধার অনুভূতি হবে। এটা 'নকল ক্ষুধা'। কিন্তু ক্ষুধা লাগলে না-খেয়ে উপায় কী? আর খাওয়া মানেই অতিরিক্ত ওজন! আপনার খাদ্যতালিকায় ভিটামিন, প্রোটিন ও চর্বিযুক্ত খাবার থাকা জরুরি। খাবার তালিকায় মাছ-মাংস-সবজি-ফল ইত্যাদি থাকা দরকার। মাছ-মাংস সীমিত পরিমাণে খেয়ে সবজি ও ফল বেশি খাওয়া ভালো। আপনার খাদ্যতালিকায় বাদাম রাখার চেষ্টা করুন। মাছ-মাংস শরীরের জন্য প্রয়োজন, কিন্তু অতিরিক্ত ভালো না। এতে পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্রের ওপর না-হক চাপ পড়বে। মোদ্দাকথা, খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য আনুন এবং নিয়মিত পরিমিতভাবে খাদ্যগ্রহণ করুন, আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন, তাদের জন্যও এই কথা প্রযোজ্য।
পরামর্শ ২: বেশি পানি পান করুন
পানির অপর নাম জীবন। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশই পানি। অনেকসময় দেহে পানির অভাব হলেও আমাদের ক্ষুধার অনুভূতি হতে পারে। এই অনুভূতিকে বিশেষজ্ঞরা 'নকল ক্ষুধা' হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। অনেকে অভিযোগ করেন যে, কিছুক্ষণ আগে খেয়েছি, অথচ আবার ক্ষুধা লেগেছে। তাদের সমস্যা এই 'নকল ক্ষুধা'-র অনুভূতি। প্রশ্ন হচ্ছে, কোনটা নকল আর কোনটা আসল ক্ষুধার অনুভূতি তা বুঝবো কী করে? এসব ক্ষেত্রে অন্যকিছু না-খেয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিন। দেখবেন আপনার ক্ষুধার অনুভূতি দূর হয়ে গেছে। তখনই বুঝবেন আপনার ক্ষুধার অনুভূতি ছিল 'নকল ক্ষুধা'। আরেকটি কথা, পানি খাওয়ার পর অপেক্ষা করতে হবে ১০ থেকে ১২ মিনিট। তারপর আশা করা যায় যে, আপনার 'নকল ক্ষুধা'-র অনুভূতি দূর হয়ে যাবে।
পরামর্শ ৩: যথেষ্ট ঘুমান
ঘুম আমাদের শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য। সুস্থ মানুষ ২৪ ঘন্টায় একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ঘুমিয়ে কাটায়। এর অন্যথা হলে শরীর ও মনের ওপর এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়। প্রশ্ন হচ্ছে: পর্যাপ্ত ঘুম না-হলে তা শরীরের ওজন বাড়ার ক্ষেত্রে কীভাবে ভূমিকার রাখে? আপনারা জানেন, আমাদের শরীর থেকে প্রতিনিয়ত নানান ধরনের হরমোন নিঃসৃত হয়। আমাদের ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টির জন্য একটি হরমোন দায়ী। আবার শরীরে চর্বির ভারসাম্যতা রক্ষার জন্যও একধরনের হরমোন দায়ী। তো, যদি আপনার ঘুম কম হয়, তখন ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোন অতিরিক্ত পরিমাণে নিঃসৃত হবে। এতে আপনার ক্ষুধা বেশি লাগবে এবং ফলে আপনি বেশি বেশি খাবেন। আবার ঘুম কম হলে চর্বির ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী হরমোন কম নিঃসৃত হয়। এর ফলে শরীরে চর্বি বেশি বেশি জমতে থাকে। তাই, রাত জাগা বাদ দিন। রাতে ঘুমিয়ে কাটান, পর্যাপ্ত সময় ধরে। আর যদি কোনো কারণে রাত জাগতেই হয়, তবে ক্ষুধার অনুভূতিকে পাত্তা দিবেন না। মনে রাখবেন, এটা 'নকল ক্ষুধা'-র অনুভূতি। এসময় পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারেন।
পরামর্শ ৪: শরীরচর্চার পর খাদ্যগ্রহণের ব্যাপারে সাবধান হোন
হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, শরীরচর্চা তো ভাল ব্যাপার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা সুস্থ থাকার অন্যতম পূর্বশর্ত। আগের অনুষ্ঠানগুলোতেও আমরা এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। তা ছাড়া, যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান বা শরীরের অতিরিক্তি মেদ বা ওজন কমিয়ে ফেলতে চান, তাদের জন্য শরীরচর্চা অপরিহার্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অনেকে শরীরচর্চার পর প্রচুর খাওয়া-দাওয়া করেন। শরীরচর্চা করলে শরীর ক্লান্ত হয়, ক্ষুধার অনুভূতি জাগে। তাই তারা আচ্ছামতো খেয়ে নেন। কিন্তু এতে শরীরের ওজন বাড়বে বৈ কমবে না। প্রথমত শরীরচর্চার পর আপনার শরীর থেকে প্রচুর পানি ঘাম আকারে বের হয়ে যায়। তাই 'নকল ক্ষুধা' আপনাকে তাড়িত করতে পারে। আবার শরীরচর্চার পর আপনার খাবার হজম করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরচর্চার পরপরই খাবার না-খাওয়া উচিত। পানি পান করুন। আর যদি কিছু খেতেই হয় তবে প্রোটিনজাতীয় হালকা খাবার খেতে পারেন। শরীরচর্চার পর সঠিক খাবার বাছাই করা খুবই জরুরি।
পরামর্শ ৫: মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, আমাদের খাওয়ার আগ্রহ নিয়ন্ত্রণে স্নায়ুতন্ত্র ভূমিকা পালন করে। যখন আপনার মেজাজ খারাপ হয়, তখন আপনার স্নায়ুতন্ত্র সুষ্ঠুভাবে কাজ করতে পারে না। আর এধরনের ক্ষেত্রে আমাদের খাওয়ার আগ্রহও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তাই মেজাজ ঠিক রাখুন। আর যদি মেজাজ গরম হয়েই যায় এবং আপনার ক্ষুধার অনুভূতি জাগে, তবে সাবধান হোন; মনে রাখুন 'নকল ক্ষুধা'র অনুভূতির কথা এবং খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। মেজাজ খারাপ হলে বাইরে যান, হাঁটাহাঁটি করুন, গান শুনুন, বন্ধুকে ফোন করুন বা যদি আপনি ধার্মিক হন তবে প্রার্থনায় বসে যান। দেখবেন আপনার ক্ষুধার বা ঠিক করে বললে 'নকল ক্ষুধা'র অনুভূতি দূর হয়ে যাবে। খাবার খেয়ে শরীরের ওজন বাড়ানোর চেয়ে এ কাজগুলো অনেক বেশি ভালো, কী বলেন?
পরামর্শ ৬: অতিরিক্ত মদ্যপান করবেন না
হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, মদ্যপান সম্পর্কে আমরা আগের অনুষ্ঠানগুলোতেও বিচ্ছিন্নভাবে বলেছি। অতিরিক্ত মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাংলাদেশের শ্রোতাদের অধিকাংশই মুসলিম হওয়ায়, তাদের জন্য কোনো সমস্যা নেই। কারণ, ইসলামে মদ্যপান নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের অন্য শ্রোতাদের বলছি, পরিমিত মদ্যপানে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু উপকারিতা হয়তো আছে। কিন্তু আধুনিক চিকিত্সাবিজ্ঞান মদ্যপান থেকে বিরত থাকার অনেক সুফলের কথা বলছে। সুতরাং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা বা নিদেনপক্ষে কম মদ পান করা উচিত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মদ্যপানের সাথে আমাদের শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। মদের মধ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড থাকে যার কিছুটা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীর থেকে বের হয় এবং বাকিটা দ্রুত প্রস্রাব ও ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এর ফলে 'নকল ক্ষুধা'র অনুভূতি হতে পারে। সুতরাং মদ যদি খেতেই হয়, আগে হালকা কিছু খেয়ে নিন। আর মদ্যপানের পর প্রচুর পানি খেতে বলেন চিকিত্সকরা। যে কোনো ধরনের স্যুপও খাওয়া যেতে পারে।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)