Web bengali.cri.cn   
আফগানিস্তানের ভবিষ্যত কোথায় ?
  2014-09-26 19:02:46  cri

মালালাই জয়া

প্রিয় শ্রোতা, ২০০১ সালে সন্ত্রাস দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরু করে। ১৩ বছর পর ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তাদের হাজার হাজার সেনা প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছে। ভয়াবহ রকম যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে স্বাধীনভাবে দেশের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রতিরোধ করার কাজ শুরু করতে হয়, যাতে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও আইন ব্যবস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা যায়। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তান বর্তমানে কী কী সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছে ? এর ভবিষ্যৎ কথায়? বিস্তারিত পরিস্থিতি জানাচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়ায় চীন আন্তর্জাতিক বেতারের সংবাদদাতা ছিন শেংরুই।

যুক্তরাষ্ট্র তার বাহিনী সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর, অনেক মানুষ আফগানিস্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের কল্পনা শুরু করে। কিন্তু ১৩ বছরের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানকে অনেক উদ্বেগজনক বাস্তব পরীক্ষার সম্মুখীন করতে হয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণা করা মারিয়া সুলতান হচ্ছেন পাকিস্তানের সাউথ এশিয়ান স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাবিলিটি ইন্সটিটিউটের পরিচালক। আফগানিস্তানের উন্নয়নের তিনি দীর্ঘ গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষায় মনোযোগ দেয়। দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আইনগত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ পরিকল্পনা সেখানে ছিলো না। পাশাপাশি আফগানিস্তান পপি'র চাষ ও গাঁজা উৎপাদনে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ। কোন সতর্কতা না থাকলে, আফগানিস্তান মাদকদ্রব্য সন্ত্রাসী লালনের বৃহত্তম দেশে পরিণত হবে। সুলতান বলেন,

পাকিস্তানি হিসেবে আমাদের উদ্বেগ খুব বেশি। কারণ আফগান অর্থনীতি স্থিতিশীলতা করার কোন কার্যকর উপায় বা পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেই। বর্তমানে যেটা আছে, সেটা শুধু নিরাপত্তা পরিকল্পনা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তান থেকে চলে গেলে, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন কি হবে তা বলা যায় না। সম্ভবত আফগানিস্তানে মাদকদ্রব্য চোরাচালান এবং সীমান্তে মাদকদ্রব্য পাচার এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন অঞ্চলগুলোতে নিরাপত্তা পরিস্থিতি খারাপ হবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ ছাড়াও, আফগান সমাজে বিচার ব্যবস্থায় শূন্যতা রয়েছে। আফগান নারী পার্লামেন্ট সদস্য মালালাই জয়া মনে করেন, আফগানিস্তানে বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরী। বর্তমানে আফগানিস্তানে ফৌজদারি অপরাধের ন্যায়সঙ্গত বিচারের অভাব রয়েছে। এ অবস্থায় 'শান্তি' প্রতিষ্ঠার কোনো তাত্পর্য নেই। তিনি বলেন,

একটি দেশের বিচার ব্যবস্থা না থাকলে, শান্তির কোন তাত্পর্য নেই। বিচার ছাড়া শান্তি নেই। আমি অনেক দেশের ইতিহাস পড়েছি, যদিও তখন কিছু দেশে "শান্তি"তে ছিল, তবুও ন্যায়সঙ্গত বিচার ব্যবস্থা না থাকায় তারা পুনরায় বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তখনকার "শান্তি" বিধ্বস্ত করেছে। আফগানিস্তানে বেসামরিক নাগরিক হত্যাকারী, নারী ধর্ষণকারী এবং দেশকে নষ্ট করা মানুষ, যারা বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, আমাদের দেশের মানুষের প্রতি অপরাধ করেছে। ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে। বয়স্ক নাগরিকদের অপরাধ শাস্তি দেয়া হয়। কিন্তু এসব সন্ত্রাসীর গণতন্ত্রকে এড়িয়ে যাওয়ার শক্তি রয়েছে। এমনকি তাদের প্রভাব আরো বাড়ছে। সুন্নি সম্প্রদায়ের মানুষ আমাদের হত্যা করছে। আমাদের সবসময় তালিবান ও আল কায়েদার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়।

যখন আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিয়ে সবাই চিন্তিত তখন চীনের প্রথম আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত সুন ইউ সি ২৪ জুলাই আফগানিস্তান সফর করেন, আফগান সমস্যায় চীনের অবস্থান প্রকাশ করার পাশাপাশি আফগানিস্তান পুনর্গঠন ও শান্তি প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার ক্ষেত্র ও সম্ভাবনা পর্যালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চীনের সহায়তার আগ্রহ রয়েছে। এ সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান জোরালো করবে। সুন ইউ সি বলেন,

আমাদের চেষ্টা হচ্ছে তালিবানরা নিজেরাই অস্ত্র সমর্পণ করুক, রাজনীতিতে ফিরে আসুক। এতে সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়বে এবং একে অপরের শত্রু হিসেবে আর লড়াই হবে না। এক সঙ্গে দেশ গঠনের কাজে এগিয়ে আসবে সবাই। এভাবে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। আমরা যেটা করবো, সেটা হচ্ছে আফগান সরকার নিজেই স্বাধীন হবে। যদিও সেক্ষেত্রে অনেক অসুবিধা আছে। তারপরও আমরা অব্যাহতভাবে সহায়তা দিতে পারবো। এর পাশাপাশি আমরা জাতীয় সমঝোতায় আরো বেশি গুরুত্ব দিতে পারি। রাজনৈতিক সমঝোতা প্রক্রিয়া "আফগানদের অন্তর্গত, আফগানদের প্রহরা" হওয়া উচিত। এটা আফগানদের নিজস্ব প্রক্রিয়া। আমাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে অর্থনীতিতে তাদের জন্য একটি সুন্দর আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিকল্পনা করা হয়। এছাড়া বর্তমানে এক একটি প্রকল্প ও ভালো জিনিস করা হচ্ছে, তারা শান্তির স্বাদ গ্রহণ করছে। আমি বিশ্বাস করি, সারা বিশ্বের যে কোন জায়গার জনগণ একই, তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য ও পোশাক থাকলে, কেউ যুদ্ধ করবে না। এটা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

আফগানিস্তানের প্রতিবেশী হিসেবে, অনেক ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের অনুরূপ পরিস্থিতি আছে। পাকিস্তানের দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতাবস্থা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মারিয়া সুলতান বলেছেন, যদিও পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ আশাবাদী নয়, তবুও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তার চেয়েও খারাপ। তিনি বলেন,

বর্তমানে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবশ্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি অন্য উপাদান নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন ন্যাটো ও আফগানিস্তানের সঙ্গে চুক্তি, আফগান সেনাবাহিনীর প্রতি ভারতের প্রশিক্ষণ, এমনকি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অর্থাৎ সিআইএ'র প্রশিক্ষণ। দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের পর গুরুতর নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে। কারণ তখন আফগানিস্তানে স্থায়ী নিরাপত্তা সংস্থা থাকবে না। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকবে না। উন্নয়ন থাকবে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে চূড়ান্ত কৌশলগত ভবিষ্যৎ অর্জনের চেষ্টা চালাবে, শুধু বর্তমান উন্নয়নই নয়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040