0914jiankang
|
শুরুতেই বলে রাখি, টমেটোকে পাত্রে রেখে গরম করলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। তখন এটি তুলনামূলকভাবে সহজপাচ্য হয়। কিন্তু টমেটোকে তেলে ভাজলে এর পুষ্টিগুণ অনেকটাই নষ্ট হয়। প্রশ্ন করতে পারেন: টমেটো কাচা খাওয়া যায় কি? উত্তর হচ্ছে: হ্যা, খাওয়া যায়। তবে, পাত্রে গরম করে নিলে ভালো। কাচাও খেতে পারেন। কোনো সমস্যা নেই।
হ্যাঁ, টমেটো আমাদের সবার কাছেই পরিচিত। টমেটো সোলানেসি (solanaceae) পরিবারের লাইকোপার্সিকন (Lycopersicon) গণের অন্তর্ভুক্ত। টমেটোর কাণ্ড কোমল ও রসাল।
উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো একটি ফল হলেও, সবজি হিসেবেই সারা বিশ্বে টমেটো পরিচিত। সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকরী সবজি। সবজি হিসাবে এর ব্যবহার ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এর ব্যবহার সুবিদিত। রান্নার উপকরণ হিসেবে এবং খাবারের সাথে টমেটো সসও বেশ প্রচলিত।
আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে সর্বত্রই এটি জনপ্রিয়। এ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে।
টমেটো বাংলাদেশ বিলাতী বেগুন নামে পরিচিত। বাংলাদেশে টমেটো সবজি হিসাবে বহুল প্রচলিত। সবজি হলেও টমোটোর মধ্যে ফলের সমুদয় গুণ বিদ্যমান এবং ফলের ন্যায় এটি রান্না না করেও খাওয়া যায়।
টমেটো বাংলাদেশের একটি প্রধান শীতকালীন সবজি, তবে গ্রীষ্মেও টমেটো সাফল্যের সাথে চাষ করা যায়।
গুণ ১: চর্মরোগের চিকিত্সায় টমেটো কাজে লাগে
চর্মরোগের চিকিত্সায় টমেটো কার্যকর। আপনার ত্বকে যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তবে টমেটোর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি উপকার পাবেন। হ্যা, চর্মরোগের চিকিত্সায় টমেটোর রস একটি কার্যকর উপাদান। একটি টাটকা টমেটো নিয়ে তার রস সংগ্রহ করুন। তারপর সে রস ত্বকের যে স্থানটি রোগাক্রান্ত সেখানে মাখুন। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার মাখুন। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
গুণ ২: মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং মুখে বয়সের ছাপ লুকাতে টমেটো ব্যবহার করা যায়
টাটকা টমেটো কেটে টুকরো টুকরো করার পর সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করুন। তারপর এই রসের সঙ্গে খানিকটা চিনি মেশান। এই চিনিমিশ্রিত রস প্রতিদিন মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। এতে মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে। বয়স বাড়তে থাকলে মানুষের মুখে যে বয়সের ছাপ পড়ে, এই টমেটো-চিকিত্সা সেই ছাপ লুকাতেও কার্যকর।
গুণ ৩: টমেটো ক্যান্সার প্রতিরোধক
টমেটোর পুষ্টিগুণের কথা আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। টমেটো যে কোনো রোগের মাত্রা হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে বলতে হয় ক্যান্সারের কথা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন দু'একটি টমেটো খেলে মানুষের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। টমেটোতে 'লাইকোপেন' নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
গুণ ৪: উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে
আপনাদের কেউ কি উচ্চ রক্তচাপের রোগী? তাহলে এখন থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি টমেটো খাবেন। সঙ্গে কিছু চিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
গুণ ৫: রক্ত স্বল্পতার চিকিত্সায় টমেটো কাজে লাগে
যারা রক্ত স্বল্পতা বা এনিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো বেশ উপকারী একটি সবজি বা ফল। একটি আপেল, একটি টমেটো এবং ১৫ গ্রাম তিল একসাথে খাবেন। প্রতিদিন এক বা দুইবার খেতে পারেন। এতে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।
গুণ ৬: ক্ষতের চিকিত্সায় টমেটো কার্যকর
আপনার মুখগহ্বরে কি মাঝে মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি হয়? হ্যাঁ, আমি জানি, অনেকের এই সমস্যা হয়। এখন থেকে আর চিন্তা করবেন না। টমেটো রস আমাদের সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে টমেটোর রস খান। দেখবেন, দিন দশেকের মাথায় ক্ষত দূর হয়ে যাবে।
গুণ ৭: হেপাটাইটিসের চিকিত্সায় টমেটো সহায়ক
টমেটোর এই গুণের কথা বলার ছলে আমি আপনাদের একটি মজাদার খাবার রান্না শিখিয়ে দেব। এ খাবারের নাম 'সবজি চাল স্যুপ'। এমন নাম কেন হলো? এই ডিশের প্রধান উপাদান হচ্ছে, টমেটো, সেলারি, গাজর এবং চাল। এ ছাড়া, পরিমাণমতো লবণ দিতে পারেন। এই ডিশ হেপাটাইটিসের চিকিত্সায় খুব কার্যকর।
গুণ ৮: গরমকালে সর্দিগরমি প্রতিরোধে টমেটো সহায়ক
সর্দিগরমি গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে সর্দিগরমি লাগাটা স্বাভাবিক। তো টমেটো আপনাকে এ থেকে রক্ষা করতে পারে। কী ভাবে? এক বা দুটি টমেটো নিয়ে স্লাইস করে অল্প চিনি বা অল্প লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করুন। তারপর গরম গরম খেয়ে নিন।
গুণ ৯: জ্বরের চিকিত্সায় সহায়ক
গায়ের তাপমাত্রা নানান কারণে বাড়তে পারে। কিন্তু কারণ যা-ই হোক, তাপমাত্রা বাড়লেই আমরা বলি 'জ্বর হয়েছে'। শরীরে ইনফেকশান হলে গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তখন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। কিন্তু সামান্য জ্বর হলে অনেক সময় স্রেফ টমেটো খেলেই আরাম পেতে পারেন। এক্ষেত্রে টমেটোর রসের সাথে তরমুজের রস মিশিয়ে খাবেন। ঘন্টায় ঘন্টায় একটু একটু করে খেতে থাকুন।
গুণ ১০: মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
আপনার মাড়ি থেকে যদি রক্তপাত হয়, তবে বুঝতে হবে যে, আপনার ভিটামিন সি-এর অভাব আছে। যাদের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়, তাদের অবশ্যই চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। তবে, প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে দিন পনের পর হয়তো দেখবেন রক্তপাত আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)