0924
|
মা সিন মিং 'ই' জাতির একটি দরিদ্র গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং সামাজিক অর্থ সাহায্যে নিজের লেখাপড়া শেষ করেন। তিনি মনে করেন দেশের জন্য, সমাজের মানুষের জন্য তার কিছু করা উচিত। ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে নিজে আবেদেন করে মা সিন মিং তিব্বতে আসেন। মা সিন মিং আমাদেরকে জানান, তিনি ভাবতেও পারেননি যে তিব্বত এতো সুন্দর, এখানকার মানুষগুলো এতো সহজ-সরল এবং এখানকার সংস্কৃতি এতো সমৃদ্ধ।
তিনি দেখলেন যেসব ক্যাডার তিব্বতে কাজ করছেন, তারা কর্মনিষ্ঠ, কষ্টসহিষ্ণু ও পরিশ্রমী। তাদের মনোবল দেখে মা সিন মিংও অনুপ্রাণিত হলেন এবং দৃঢ় মনোবল নিয়ে সেখানে কাজ করতে শুরু করেন।
তবে তিব্বতের রাজধানী লাসায় এসেই তিনি একটি সমস্যায় পড়েন। লাসায় তখন মিনিবাস রাস্তা থেকে তুলে দিয়ে নতুন ধরনের বড় বাস নামানো হয়েছে। এদিকে তিব্বতের মালভূমি পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার আগেই কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতে হলো মা সিন মিংকে। মিনিবাসের মালিকদের ক্ষতি ও কর্মসংস্থানসহ নানা সমস্যা সমাধানের জন্য মা সিন মিংকে কয়েক মাস অতিরিক্ত কাজ করতে হলো। তিনি মিনিবাসের মালিক ও চালকদের সঙ্গে পালাক্রমে কথা বললেন এবং মত বিনিময় করলেন। মা সিন মিংয়ের প্রচেষ্টায় মিনিবাসের মালিকরা যথাসময়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে। হং লিন মিনিবাসের মালিকদের অন্যতম। তিনি বলেন-
"এর আগে দশ থেকে বারোটি বৈঠক হয়েছে আমাদের সরকারের সাথে। প্রথম দিকে মিনিমাস মালিকরা সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে না-পেরে তার বিরোধিতা করেন। তবে সরকার পক্ষের লোক অশেষ ধৈর্য নিয়ে আমাদেরকে সরকারি নীতি ও ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। সরকারের পক্ষ থেকে আরো অনেকেই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেনে এবং অবশেষে আমরা মিনিবাস হস্তান্তর করতে রাজি হয়েছি।"
একটি কাজ শেষ হওয়ার পর আসে আরও বেশি কাজ। ১২ হাজার পশুপালককে নতুন বসতিতে স্থানান্তর করা, শট অন (Shoton) দিবসের আয়োজন, সাংস্কৃতিক শিল্পপার্কের নির্মাণসহ নানা কাজে অংশ নেন মা সিং মিং। তিনি কখনও ভাবেননি লাসায় তার জীবন এতো ব্যস্তময় হবে। তিনি ৪ বছরে একবার সপ্তাহান্তের ছুটিও ঠিকমতো উপভোগ করতে পারেননি। মা সিন মিং বলেন-
"তিব্বতে আসার আগে আমাকে কেউ কেউ বলেছিল, আমি নাকি বছরের অর্ধেকটা সময়ই আরামে-আয়েসে কাটাতে পারবো। কিন্তু এখানে আসার পর বুঝলাম, অনেক কাজ। ২০২০ সালের মধ্যে চীনের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মতো উন্নত জীবনমান অর্জনের জন্য তিব্বত এখন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।"
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে দূরপাল্লার দৌঁড়ে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন মা সিন মিং। তারপরও মালভূমিতে অক্সিজেনের ঘাটতি ও বায়ুর নিম্নচাপসহ নানা কারণে তিনি গাউট রোগে আক্রান্ত হন। তিনি তখন থেকেই ক্র্যাচে ভর করে অফিসে যান, সভা-সম্মেলন করেন এবং গ্রাম পরিদর্শন করেন।
মা সিন মিংর স্ত্রী সুন লিং লিংও স্বামীর সঙ্গে তিব্বতে আসেন এবং গত ২০ বছরে তারাই প্রথম দম্পতি যারা একসাথে তিব্বতে কাজ করতে আসেন। একটি গোটা পরিবারের জন্য তিব্বতে কাজ করা সহজ কাজ নয়। অনেকে তিব্বতে না-আসতে সুন লিং লিংকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু সুন লিং লিং স্বামীর সঙ্গে থাকাই সঠিক মনে করলেন। মা সিন মিংয়ের মনে তিব্বতের জনগণের প্রতি ভালবাসা দেখে সুন লিং লিং অভিভূত হন। তিনি বলেন-
"যে-কোনো ভাল জিনিষ মা সিন মিং সবসময় নিজে না-রেখে অন্যকে দেন। নিজে না-পেলেও তার অসুবিধা নেই। তিনি সবসময় অন্যদের অগ্রাধিকার দেন। তার এই স্বভাব আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে।"
সুন লিং লিং আইনবিষয়ে পিএইচডি করেছেন এবং জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে লেখাপড়া করেছেন। গুটিকতক চীনা আইনজীবির মধ্যে তিনিও একজন যারা বিদেশের আইন নিয়ে গবেষণা করেন। নিজের দেশের জন্য কিছুর করার তাগিদ অনুভব করায় তিনি বিদেশে ভাল চাকরি ছেড়ে দেন এবং চীনা সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিতে জাপানবিষয়ক একজন যুব গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন। চার বছর আগে তিনি নিজের গবেষণাকাজ ছেড়ে দিয়ে স্বামীর সঙ্গে তিব্বতে আসেন। এখন তিব্বত সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির 'তিব্বত গবেষণা' সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেন সুন লিং লিং। তার সহকর্মী এবং বিভাগের উপ-প্রধান লিউ হং চুয়ান বলেন, সুন লিং লিং সম্পাদকীয় বিভাগের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। সুন লিং লিং আগে গবেষক ছিলেন, কিন্তু সম্পাদকীয় বিভাগে জাপানবিষয়ক গবেষণাকাজ করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি মন দিয়ে সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করতে শুরু করেন এবং নিজের পছন্দের কাজটি অবলীলায় ত্যাগ করেন। গত চার বছরে সম্পাদকীয় বিভাগের কাজ ছাড়া, সুন লিং লিং তিব্বতের ইতিহাস ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও কাজ করেছেন। তিনি জাতীয়, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ও লাসা শহরের বিভিন্ন পর্যায়ের দশ-বারো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে সময় দিয়েছেন। তিনি এসময় প্রায় ২০ লাখ শব্দের বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করেন।
অফিসের কাজ ছাড়াও, এই দম্পতি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজও করেন। যেমন, তারা লং তে ছিং জেলার সাং মু গ্রামের চুও কা পরিবারকে সাহায্য করেছেন। মান সিন মিং নিজেও একজন সংখ্যালঘু জাতির মানুষ। তাই স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যালঘু জাতির মানুষের জন্য তার টানটা একটু বেশি। তিনি বরাবরই তাদের অর্থ দিয়ে বা পরামর্শ দিয়ে বা অন্যকোনোভাবে তাদের সাহায্য করতে পারলে খুশি হন। লাসা শহরের উপ-মহাসচিব সুন তে কাং বলেন-
"মা সিন মিংকে কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গ্রাম পরিদর্শন করতে হয়। তিনি যখনই কোনো অনাথাশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে যান, তখনই সেখানে কয়েক হাজার ইউয়ান দান করে আসেন।"
১৯৯৭ সালে মা সিন মিং ও সুন লিং লিং তাদের সহপাঠির সঙ্গে 'ওয়ে মিং' নামে একটি বৃত্তি চালু করেন গত ১৮ বছর ধরে এ বৃত্তির মাধ্যমে দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করে আসছেন। তিব্বতে আসার পর তিব্বতি শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র সংগ্রহ করতে তিনি 'উষ্ণ' নামের একটি কর্মসূচি হাতে নেন।
মা সিন মিং বলেন-
"আগে দেশপ্রেম, জাতীয় ঐক্যসহ বিভিন্ন কথা শুনেছি। কিন্তু তখন জানতাম না এ ধারণাগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করতে হয়। এখন আমি এসব ধারণার অর্থ বুঝি। এখানে আমি যা করি তার প্রতিটি জাতীয় ঐক্যের জন্য সহায়ক। আমার কাজ জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমি মনে করি এটাই দেশপ্রেম। গোটা দেশ একটি পরিবার এবং এ পরিবারে শান্তি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে চীনা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।"