Web bengali.cri.cn   
হাতে হাত রেখে জাতির পুনর্জাগরণের স্বপ্ন খোঁজা---ভারতের ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলে সি চিন পিংয়ের ভাষণ
  2014-09-19 00:05:37  cri

নামাস্তে, সবাই ভালো আছেন। ভারতের ওয়ার্ল্ড এ্যাফেয়ারস্‌ কাউন্সিলের আমন্ত্রণে এখানে সবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। শুরুতেই চীন সরকার ও জনগণ এবং আমার পক্ষ থেকে ভারতের মহান জনগণের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দীর্ঘ দিন ধরে চীন-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের প্রতিও আমাদের সম্মান ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

১৯৯৭ সালে আমি ভারত সফর করেছিলাম। তখন আমি চীনের একটি প্রদেশে প্রশাসনিক কাজ করতাম। সে সফরে ভারত আমার মনে খুব সুন্দর ছাপ ফেলেছিলো। ১৭ বছর পর যখন আবার এ উচ্ছল ভূমিতে দাঁড়াচ্ছি, ভারতীয় জনগণের উজ্জ্বল অগ্রগতি দেখছি এবং ভারতীয় জনগণের পরিশ্রমের মর্ম উপলব্ধি করেতে পেরেছি। এখন ভারতের উন্নয়নকে সত্যিকারের 'ইনক্রেডিবল' বলে মনে করা হচ্ছে।

ভারত একটি রহস্যময় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। এটি কয়েক হাজার বছরের সভ্যতার জন্মস্থান। দীর্ঘ ও জটিল পথ অতিক্রম করে ভারত এখন উজ্জ্বল ও উন্নয়নের পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতে এসে যেন ইতিহাসের একটি রঙিন করিডোরে ঢুকেছি, যার গতকাল ছিলো মহান আর আজ উত্তেজনাময় এবং আগামীকাল প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় জনগণ ভবিষ্যতের ব্যাপারে আস্থাশীল। আন্তর্জাতিক সমাজও ভারতের ওপর অনেক ভরসা রাখে। এবারের সফরে আমি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও অভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছি এবং ব্যাপক ঐকমতে পৌঁছেছি। দু'দেশের কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক সম্প্রসারণ করতে এবং অংশীদারি সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে আমরা একমত হয়েছি।

চীনের সাবেক নেতা তেং শিয়াও ফিং বলেছিলেন, 'কেবল চীন ও ভারত উন্নত হলে প্রকৃত এশীয় শতাব্দী বাস্তবায়িত হবে'। ভারতের সাবেক নেতা জওহরলাল নেহেরুও বলেছেন, 'ভারত ও চীন এক হলে তা হবে, এশিয়া তথা বিশ্বের জন্য একটি বড় ব্যাপার'। এশিয়ার দুটো বৃহত্তম দেশ হিসেবে এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধকরণের ক্ষেত্রে দু'দেশের ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে।

ভদ্র মহোদয়া ও মহোদয়গণ, বন্ধুরা,

প্রাচীনকাল থেকে দু'দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দু'দেশ অভিন্ন সমস্যা থেকে বের হয়ে এসেছে। মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, 'চীন ও ভারত একই সমস্যার অংশীদার, একই সঙ্কটের পথে চলা পথচারী'। ব্রাজিলের ফোর্তালেজায় প্রধানমন্ত্রী মোদি আমাকে বলেছিলেন, চীন ও ভারত হলো দু'টো দেহে এক আত্মা। এ সব কথা দিয়ে চীন ও ভারত দুটি সভ্যতার শান্তিগামী মর্মের আন্ত:সংযোগ প্রকাশিত হয়েছে।

চীন ও ভারতের লিপিবদ্ধ যোগাযোগের ইতিহাস দু'হাজার বছরের। 'বুদ্ধ মুখী মন পশ্চিম দিকে, বৌদ্ধ ধর্ম পূর্বে চলে আসে" এ কথাটিতে চীন ও ভারতের জনগণের যোগাযোগের ইতিহাসের রঙিন বৌদ্ধ ধর্মের বিনিময় বর্ণনা করা হয়েছে। খ্রিস্টাব্দ ৬৭ সালে ভারতের প্রখ্যাত ভিক্ষু কাসয়াপা মাতাঙ্গা ও ধর্মরত্না চীনের লোংইয়াংতে এসে গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তাঁদের অনূদিত '৪২ অধ্যায়ের সূত্র' হচ্ছে চীনের বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাসের সর্বপ্রথম অনুবাদ গ্রন্থ। এরপর হিউয়েন সাং পশ্চিমাভিযান চালিয়ে সাদা ঘোড়ায় করে ভারতের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় গ্রন্থ চীনে নিয়ে আসেন। চীনের বিখ্যাত নৌ অভিযাত্রী চাং হোয়ের সাত বারের সমুদ্র অভিযানে ছয় বার ভারতে গিয়ে চীনের মৈত্রী পৌঁছে দেন। ভারতের নাচ গান, জ্যোতির্বিদ্যা, বর্ষপঞ্জি, সাহিত্য, স্থাপত্য, চিনি উত্পাদনের প্রযুক্তি চীনে প্রবেশ করে। চীনের কাগজ তৈরি, রেশম সূতা, চীনামাটির বাসন, চা ও সংগীত ভারতে প্রবেশ করে। এগুলো হচ্ছে দু'দেশের জনগণের প্রাচীনকাল থেকে যোগাযোগ এবং পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের ঐতিহাসিক প্রমাণ।

আধুনিক কালে চীন ও ভারতের জনগণ জাতির স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে পরস্পরকে সমর্থন করেছে এবং একসাথে এশিয়ার জাগরণ অগ্রসর করেছে। চীনের আফিম যুদ্ধে বিরোধিতার আহ্বান জানিয়েছে ভারত । চীন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্সাহ দিয়েছে। চীনা জনগণের জাপান-বিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধে ভারতের সাহায্যকারী চিকিত্সক দল মর্মস্পর্শী কাজ করেছে। তাদের সুবিদিত প্রতিনিধি কাওয়ারকানাথ এস. কোটনিস চীনে চিরকালের মতো ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর উন্নত হৃদয়সম্পন্ন সদাচরণ চিরকাল চীনা জনগণের মনে থাকবে।

১৯৫০ সালে চীন ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে, এতে দু'দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়। ভারত হচ্ছে সর্বপ্রথম নয়া চীনকে স্বীকৃতি দেয়া দেশের অন্যতম এবং সেই সঙ্গে প্রথম জাতিসংঘে চীনের বৈধ আসন পুনরুত্থানের প্রস্তাব উত্থাপনকারী দেশের অন্যতম। চীন, ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ নীতি প্রস্তাব করেছে। এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা ও আধুনিক সভ্যতার জন্য প্রাচ্য মেধার শ্রেষ্ঠ অবদান।

নতুন শতাব্দীতে প্রবেশের পর চীন ও ভারত শান্তি ও সমৃদ্ধ মুখী কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের দ্রুত পথে প্রবেশ করেছে। দশ বারো বছরে চীন ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক পরিমাণ বিশ গুণ বেড়েছে। লোকজনের যাতায়াত প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। দু'দেশের বিনিময়, সহযোগিতার ব্যাপকতা ও গভীরতা উভয়ই অভূতপূর্ব সম্প্রসারিত হয়েছে। বলা যায়, দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়ন এক নতুন ইতিহাসের সূচনায় দাঁড়িয়ে আছে।

ভদ্র মহোদয়া ও মহোদয়গণ, বন্ধুরা,

আমরা যে সময়ে আছি সে সময় পৃথিবীতে বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে, সারা পৃথিবীতে এশিয়ার ভূমিকা দিন দিন গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্বের দুটো গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে চীন ও ভারত এশিয়া তথা বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়নে বড় দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। চীন-ভারত সম্পর্ক শুধু একটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নয়, বরং তার ব্যাপক আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। চীন-ভারত সহযোগিতা দু'দেশ, এশিয়া তথা গোটা বিশ্বের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে।

তাই আমি মনে করি, দু'দেশের উচিত আরো ঘনিষ্ঠ ও কৌশলগত উন্নয়ন ও সহযোগিতার অংশীদার হওয়া।

প্রথমত, চীন ও ভারতের অতীত সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য দু'দেশের আরো ঘনিষ্ঠ অংশীদার হওয়া উচিত। বর্তমানে দু'দেশের সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে জনগণের শান্তি ও সুখী জীবন নিশ্চিত করা। আমাদের উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক সহযোগিতার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শান্তিপূর্ণ, সহযোগিতামূলক ও সহনশীল উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা উচিত।

চীনকে বলা হয় 'বিশ্বের কারখানা' আর ভারতকে বলা হয় 'বিশ্বের কার্যালয়'। দু'পক্ষ একত্রে সম্পূর্ণ সত্ত্বা হতে পারে। চীনের 'পশ্চিমাঞ্চলে উন্মুক্তকরণ' এবং ভারতের 'প্রাচ্যের দিকে উন্নয়ন' প্রকল্প সংযুক্ত করা উচিত। শুধুমাত্র এর মাধ্যমেই বিশ্বের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক উত্পাদন কেন্দ্র, সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাজার এবং সবচেয়ে শক্তিশালী উন্নয়ন ইঞ্জিন তৈরি করা সম্ভব। তাছাড়া দু'পক্ষের সার্বিক উন্নতি বাস্তবায়নের জন্য পুঁজি ও ব্যাংকিং খাতের সহযোগিতাও সম্প্রসারণ করা উচিত।

'কূটনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য হল দু'দেশের জনগণে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন'। চীনের থাইচি ও ভারতের যোগশাস্ত্র এবং চীনের ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সা ও ভারতের আয়ুর্বেদির মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। কয়েক হাজার বছর ধরে দু'দেশের জনগণ যে জীবন দর্শন লালন করে আসছে তাতেও অনেক মিল আছে। এবারের সফরে চীন-ভারত সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের যে সেতু তৈরি হয়েছে তার লক্ষ্য হচ্ছে দু'দেশের মানবিক আদান-প্রদানের গৌরবোজ্জ্বল অতীত পুনরুদ্ধার করা। যুব, সংস্কৃতি, শিক্ষা, পর্যটন, ধর্ম, গণমাধ্যম, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন এবং প্রাদেশিক পর্যায়ের আদানপ্রদান জোরদারের ক্ষেত্রে দু'পক্ষ একমত হয়েছে। তিব্বতের নাথোসলা তীর্থ আবার চালু করা হয়েছে, যেনো ভারতের তীর্থযাত্রীরা সহজেই চীনের তিব্বতে যেতে পারেন।

ছোটবেলা থেকে ভারতের সংস্কৃতি নিয়ে আমার ভীষণ আগ্রহ ছিল, বিশেষ করে ভারতের ইতিহাস নিয়ে। গঙ্গা নদী তীরবর্তী সভ্যতা, বৈদিক সংস্কৃতি, মাউরিয়া রাজবংশ, কুশান রাজবংশ, গুপ্ত রাজবংশ এবং মোঘল সাম্রাজ্য নিয়ে কিছু ঐতিহাসিক বই আমি পড়েছি। ভারতের ঔপনিবেশিক ইতিহাস, এ অঞ্চলের জনগণের নিরলসভাবে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম ও মহাত্মা গান্ধীর চিন্তাধারা এবং দর্শনের ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখি আমি। এগুলোর মধ্য দিয়ে মহান একটি জাতির উন্নয়নের প্রক্রিয়া ও মানস্তাত্ত্বিকতা উপলব্ধি করতে চাই। এবারে আমি স্বেচ্ছায় গুজরাট রাজ্যে এসেছি এবং গান্ধীর বাসভবন ও জাদুঘর পরিদর্শন করেছি। মনের অগাধ সম্মান দেখানোর জন্য আজ সকালে আমি গান্ধীর কবরও দর্শন করেছি। 'গীতাঞ্জলী', 'স্ট্রেই বার্ড' , 'দ্য গার্ডেনার' এবং 'দ্য ক্রিসেন্ট মুন'সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসব কাব্যগ্রন্থ চীনা ভাষায় অনুদিত হয়েছে। সেগুলো আমি পড়েছি এবং কিছু অংশ বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। অনুবাদের কারণে কোনো কোনো বাক্যে কিছু পার্থক্য দেখা দিলেও আমরা এসব কবিতার সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারি। তিনি বলেন, "If you shed tears when you miss the sun, you also miss the stars." "We come nearest to the great when we are great in humility." "Wrong cannot afford defeat but right can, We read the world wrong and say that it deceives us." "Let life be beautiful like summer flowers and death like autume leaves." প্রভৃতি। এসব সুন্দর ও দর্শনে ভরপুর কবিতা আমাকে গভীর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। অনেক চীনা জনগণের আমার মতো একই ধরনের অনুভূতি হয় বলে আমি মনে করি।

দ্বিতীয়ত, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে চীন ও ভারতের সহযোগী হওয়া এবং হাতে হাত ধরে এশিয়ার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সবল করা উচিত্। চীন ও ভারতের আঞ্চলিক উন্নয়ন বেগবান করা এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা উচিত্। তা ছাড়া, আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দু'দেশের ঐকমতে পৌঁছানো এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া উচিত্। বাংলাদেশ চীন, ভারত, মিয়ানমারের অর্থনৈতিক করিডোরের নির্মাণের কাজ দ্রুততর করা, যথাশিঘ্র সম্ভব আঞ্চলিক সার্বিক অর্থনীতির অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বিষয়ক আলোচনা সম্পন্ন করা, এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সুরক্ষা, এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্মুক্ত, সচ্ছল ও সহনশীল নিরাপত্তা ও সহযোগিতার কাঠামো নির্মাণ করা এবং অভিন্ন সহযোগিতার নিরাপত্তা বাস্তবায়ন করা উচিত্।

তৃতীয়ত, চীন ও ভারতের কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদার হওয়া উচিৎ । আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা আরো ন্যায়সঙ্গত ও সঠিক হওয়া উচিৎ । বর্তমানে শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন এবং সহযোগিতার মাধ্যমে উভয়ের কল্যাণ নিশ্চিত করা সময়ের প্রধান দাবি। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে অন্যায় এবং সামঞ্জস্যহীন অবস্থা এখনও রয়েছে। গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে। একের পর এক নানা ধরনের আঞ্চলিক এবং স্থানীয় সংঘর্ষ ঘটছে। বিশ্ব শান্তি সুরক্ষা এবং অভিন্ন উন্নয়ন বেগবানের দায়িত্ব খুব ভারী এবং এ দায়িত্ব সম্পন্ন করতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বৈশ্বিক ইস্যুতে চীন ও ভারত একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দু'দেশের প্রচুর পরিমাণে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও রয়েছ।

চীন ও ভারতের জনসংখ্যা মোট ২.৫ বিলিয়নেরও বেশি,চীন ও ভারত একই কন্ঠ কথা বললে সারা বিশ্ব শোনা যাবে। চীন ও ভারত হাত হাত মিলিয়ে সহযোগিতা করলে সারা বিশ্বও মনোযোগ করবে। বিশ্বের ব্যাপারে চীন ও ভারতের উচিত কৌশলগত সহযোগিতা করা, শান্তি ও সহাবস্থানের পঞ্চম নীতি অনুসরণ ও উন্নয়ন করা,সার্বভৌমত্বের সমতা,ন্যায়নিষ্ঠতা ও ন্যায় এবং অভিন্ন নিরাপত্তা অবিচল থাকা, অভিন্ন উন্নয়ন আর সহযোগিতার মাধ্যমে অভিন্ন স্বার্থ অর্জন করা,মকুবের মাধ্যমে পারস্পরিক অগ্রগতি বাস্তাবায়ন করা,যাতে দু'দেশ ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়।

চীন ও ভারতের উচিত নিজের উন্নয়নে বিশ্বের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আর প্রশাসনে আরো বেশি অবদান রাখা,জলবায়ু পরিবর্তন,খাদ্যশস্য,জ্বালানী সম্পদ ও নেটওয়ার্কের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সমস্যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থের জন্য প্রস্তাব প্রদান করা। চীন-রুশ-ভারত, ব্রিকস দেশ, জি ২০, শাংহাই সহযোগিতা সংস্থাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় চীন ও ভারতের কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘে ভারতের আরো বেশি ভুমিকা পালন করতে সমর্থন করবে চীন।

প্রতিবেশি দেশের মধ্যে খুব সম্ভবত সমস্যা ও দ্বন্দ থাকে। চীন ও ভারতের উচিত সীমান্ত সমস্যাসহ ইতিহাস থেকে বর্তানো সমস্যা সম্মুখীন হওয়া,শান্তিপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরামর্শের মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব ন্যায়সঙ্গত যুক্তিযুক্ত ও দু'পক্ষের গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব খুঁজে বের করা। এর সঙ্গে সঙ্গে শুধু দু'পক্ষের মতভেদের ওপর মনোযোগ করে বরং মৈত্রী ও সহযোগিতা উপেক্ষা করতে হবে না এবং দু'দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি ও দু'দেশের সম্পর্ককে হস্তক্ষেপ করতে হবে না। আমি বিশ্বাস করি, দুটি প্রাচীন সভ্যতা দেশ হিসেবে চীন ও ভারত প্রতিবেশী দেশের বন্ধত্বপূর্ণ সহাবস্থানের পথ অনুসন্ধান করতে সক্ষম।

ভদ্র মহোদয়া ও মহোদয়গণ, বন্ধুরা,

ভারতের অনেক লোক চীনের উন্নয়নের ওপর মনোযোগী এবং চীনের সমৃদ্ধ উন্নয়নের প্রতি আশাবাদী। বৈদেশিক উন্মুক্তকরণ ও সংস্কার নীতি চালু করার ৩০ বছরের পর চীনের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে, জনগণের জীপনযাপনের মানও উন্নতি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চীনের উন্নয়নে কল্যাণকর হয়। তবে বিশ্বের কয়েকটি দেশের লোক মনে করে যে, চীন সমৃদ্ধ হওয়ার পর অবশ্যই আধিপত্যবাদী পথে অনুসরণ করবে এবং অন্যান্য দেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে। এ সম্পর্কে আমি স্পষ্টভাবে জানাতে চাই যে, চীন দৃঢ়ভাবে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পথে অনুসরণ করবে।

চীনা জাতি ইতিহাস থেকে শান্তি চায়, শান্তি, সম্প্রীতি ও সুষম ইচ্ছা গভীরভাবে চীনা জাতির মানসিক জগতে আবদ্ধমূল হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে চীন শক্তিশালী হলে দুর্বলতা আঘাত না হানা, ধনী হলে দরিদ্র্যতা দূরে সরে না থাকার নীতি প্রস্তাব করেছে এবং মনে করে দেশ বড় হলেও যুদ্ধে জড়িত হয়ে লুপ্ত হবে। শান্তি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, শান্তি রেখে অমিল গ্রহণ করার তত্ত্ব চীনে যুগোত্তীর্ণ। প্রাচীনকালে চীন একটি শক্তিশালী ও উন্নত দেশ,তবে চীন বিশ্বের কাছে শান্তিপূর্ণ তত্ত্ব প্রচার করে থাকে। বিশ্বের নানা দেশে চা, রেশম ও চীনামাটিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র রপ্তানী করা হয়। চীনা জাতি ঐক্যবদ্ধ পৃথিবীকে সমর্থন করে, তা ভারতের জনগণের ইচ্ছার সঙ্গে মিল থাকে। চীনা জাতি নিরহঙ্কারতা শ্রদ্ধা করা,তা ভারতের জনগণের বিশ্বপ্রীতির ধারণার সঙ্গে মিল হয়। আমরা শান্তিকে বিশ্বের বড় পথ হিসেবে দেখি এবং বিশ্বের শান্তি নিরাপত্তা ও সুষম সহাবস্থানের প্রতি আশাবাদী।

চীনা জাতি প্রাচীন কাল থেকে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়, 'ব্যাপক পরিদর্শনের পর অল্প গ্রহণ করা এবং সমৃদ্ধি অর্জনের পর অল্প দিয়ে কাজ করা', 'তিন জন একসাথে গেলে অবশ্যই একজন শিক্ষক থাকবে। তার ভালো দিক অনুসরণ করবো, মন্দ দিক সংস্কার করবো' এবং 'ব্যাপক বিদ্যা শেখা, যত্নের সাথে প্রশ্ন ও চিন্তা করা, পরিষ্কারভাবে পার্থক্য করা এবং দৃঢ়ভাবে কার্যকর করা' এর সমর্থন করে। এ শিক্ষার মর্ম থেকে অনেক উপকার পেয়েছে বলে চীনা জাতি কয়েক হাজার বছর ধরে প্রাণবন্ত রয়েছে। আমি সবসময় জোর দিয়ে বলি, চীনকে বড় দেশের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে, অহংকার ও আত্মসন্তুষ্টি থাকা যাবে না, ভুয়া গর্ব করা যাবে না, বিনয়ী ও পরিশ্রমী হবার শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে, নিজের অভাবের দিক পূরণের জন্য সবসময় প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

চীনা জাতি সবসময় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে গুরুত্ব দেয়। প্রতিশ্রুতি পালন করা এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করা হচ্ছে চীনের সবসময়ের পররাষ্ট্র নীতি। চীন নিকটবর্তীকে নিরাপদে রাখা এবং এটিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ হওয়ার ভিত্তি মনে করে। আমরা আন্তরিকতা, সরলতা, সুবিধা ও সহিষ্ণুতা এর নিকটবর্তী পররাষ্ট্র ধারণা উত্থাপন করেছি। অর্থাত্ আমরা সদিচ্ছা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহাবস্থান করতে, একনিষ্ঠ অভিন্ন উন্নয়ন করতে, হাতে হাত রেখে সহযোগিতা সম্প্রসারণ করতে এবং একসাথে উন্নয়নের সুফল উপভোগ করতে চাই।

১৩০ কোটি জনসংখ্যার অধিকারী দেশ হিসেবে চীন কয়েক দশক সময় দিয়ে শিল্পোন্নত দেশের কয়েক শ বছরের উন্নয়নের প্রক্রিয়া অতিক্রম করেছে। এটা হচ্ছে ঐতিহাসিক কৃতিত্ব।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040