Web bengali.cri.cn   
সি চিন ফিংয়ের সফর চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতাকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করবে: হু রেন শাং
  2014-09-16 20:33:17  cri


চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন ফিং গত ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশান্‌বে সফর করেন। সেখানে তিনি শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন এবং তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। তিনি দুশান্‌বেতে দ্বিতীয় তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং চীন-মধ্য এশিয়া গ্যাস পাইপলাইনের তাজিকিস্তান অংশের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন।

তাজিকিস্তান সফর শেষে ১৪ সেপ্টেম্বর মালদ্বীপের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট সি দুশান্‌বে ত্যাগ করেন। দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে তিনি শ্রীলংকা ও ভারতেও যাবেন। এ সম্পর্কে চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অ্যাকাডেমির দক্ষিণ এশিয়া গবেষণালয়ের পরিচালক হু রেন শাং সম্প্রতি সিআরআইয়ের সংবাদদাতাকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, প্রেসিডেন্টের এ সফর চীন-দক্ষিণ এশিয়া সহযোগিতাকে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করবে।

হু রেন শাং বলেন, দক্ষিণ এশিয়া হচ্ছে চীনের নিকটতম প্রতিবেশী অঞ্চলগুলোর অন্যতম। সংস্কার ও উন্মুক্তকরণ যুগের সূচনালগ্ন থেকেই চীনের সাথে নিকটবর্তী দেশগুলোর সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়েছে; বেড়েছে পারস্পরিক বিনিময়। সে তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও বিনিময় তেমন একটা গতি পায়নি। প্রেসিডেন্টের এবারের সফর এ ব্যবধান দূর করার একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রচেষ্টা।

তিনি বলেন, "যদি প্রেসিডেন্ট সি'র এবারের সফরকে একটা নাম দিতে বলেন, তবে আমি বলবো, এটা 'সভ্যতার সফর'। কারণ, এটা হবে চীনের সভ্যতা আর দক্ষিণ এশিয়ার সভ্যতার মধ্যকার সংলাপ। এ সফরকে সামুদ্রিক সফরও বলা যায়। কারণ, এবারের সফরে তাকে তিনটি দেশে যেতে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করতে হবে। এ সফরকে আবার 'মনের সফর'-ও বলা যায়। এ যেন দুটি জনবহুল অঞ্চলের মধ্যে মনের বন্ধন দৃঢ় করার প্রয়াস।"

দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা শতাধিক কোটি। এখানে আছে এক বিশাল সুপ্ত বাজার। তাই এ অঞ্চল ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান হবে। দক্ষিণ এশিয়া সফরে প্রেসিডেন্ট সি চিন ফিং রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে এতদঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে চীনের বিনিময় ও সহযোগিতার সম্পর্ক আরো জোরদারে সচেষ্ট হবেন। হু রেন শাং মনে করেন, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকায় সফর ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাথে চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার বিশ্বাস, এ সফর দু'পক্ষের সামুদ্রিক সহযোগিতাকে আরো উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করবে। তবে, দক্ষিণ এশিয়া সফরে প্রেসিডেন্ট সি'র ভারতে উপস্থিতিকেই সবচে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন হু রেন শাং। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "প্রেসিডেন্ট সি চিন ফিংয়ের ভারত সফরে 'উন্নয়ন' হচ্ছে মূল বিষয়। এসময় দু'পক্ষই কয়েকটি বড় প্রকল্পে যৌথভাবে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি, এতদঞ্চলের ভবিষ্যত অর্থনীতিকে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টিও এবারের সফরে আলোচিত হবে। বিশেষ করে, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে দু'দেশ কীভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। আমি মনে করি, এটা হবে এবারের ভারত সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।"

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও ভারতের সম্পর্ক সুষ্ঠু উন্নয়নের প্রবণতা বজায় রেখেছে। এসময় দু'দেশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে ঘন ঘন সফর বিনিময় হয়েছে এবং এর ফলে পারস্পরিক আস্থা ক্রমশ বেড়েছে ও বাস্তব সহযোগিতা গভীরতর হয়েছে। বস্তুত, চীন হচ্ছে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ভারত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। চীন ও ভারত বর্তমান বিশ্বের দুটি বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ এবং নবোদিত বাজার। দু'দেশের উন্নয়নকে পরস্পরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখে থাকেন বিশ্লেষকরা। চীন ও ভারতের সহযোগিতা দু'দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ সৃষ্টির পাশাপাশি এশিয়া তথা বিশ্বের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।

প্রেসিডেন্ট সি'র আসন্ন ভারত সফরে দু'দেশের মধ্যে কয়েকটি আর্থিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি হতে পারে বলে আশা করছেন হু রেন শেং। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এবারের সফরে দু'দেশই পরস্পরের প্রতি রাজনৈতিক হুমকি সৃষ্টি না-করার কৌশলগত নীতির পুনরুল্লেখ করতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে দু'দেশের সম্পর্কের ভিত্তি। এশিয়া তথা পৃথিবীতে এ দু'দেশের অভিন্ন উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ আছে এবং দু'দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রও আছে পর্যাপ্ত। এবারের সফরে অবকাঠামো ও নির্মাণ শিল্পে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন দু'দেশের নেতারা; সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে দ্রুতগতির রেলপথ খাতে। এ ছাড়া, ভারতের শিল্প উদ্যান খাতে চীনের সহযোগিতা করার বিষয়টিও এবার চূড়ান্ত হবার সম্ভাবনা আছে।"

এদিকে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সহকারী লিউ চিয়ান ছাও বলেছেন, প্রেসিডেন্ট সি'র দক্ষিণ এশিয়া সফর রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও একবিংশ শতাব্দীর সামুদ্রিক রেশমপথের নির্মাণকাজ এবং চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যত সহযোগিতার গোটা কাঠামো প্রতিষ্ঠার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চীনের সহযোগিতায় নির্মিত হামবানতোতা বন্দর ও শ্রীলংকার দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সে দেশের সামুদ্রিক রেশমপথের কেন্দ্র হতে পারে। তিনি জানান, ১৯৮৬ সালের পর এটা হবে চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম শ্রীলংকা সফর।

এ প্রসঙ্গে হু রেন শেং মনে করেন, চীন ও শ্রীলংকার সম্পর্ক এক নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এ সফরের ফলে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক আদান-প্রদান, বন্দর, বিমান বন্দর, এক্সপ্রেস সড়কপথসহ অবকাঠামো নির্মাণখাতে দু'দেশের সহযোগিতা আরো জোরদার হবে। তিনি বলেন,  "ভারত মহাসাগরে শ্রীলংকার বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশ ভারত মহাসাগরের প্রধান নৌপথ থেকে মাত্র ১০ নটিক্যাল মাইল দূরত্বে অবস্থিত। ভবিষ্যতে শ্রীলংকা চীনের সামুদ্রিক অর্থনীতি ও সামুদ্রিক কৌশলের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।"

দক্ষিণ এশিয়া সফরে এবার প্রেসিডেন্ট সি চীনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুরাষ্ট্র পাকিস্তানে যাচ্ছেন না। গত ৬ সেপ্টেম্বর চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়: "পাকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দু'দেশের সরকার ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্ট সি চিন ফিংয়ের পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় সফর পিছিয়ে দিতে রাজি হয়েছে।" হু রেন শেং মনে করেন, চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যতের জন্যই প্রেসিডেন্ট সি'র নির্ধারিত সফর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, "পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অস্থিতিশীল। এমন অবস্থায় সফর থেকে সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জিত না-হবার আশঙ্কা ছিল। তা ছাড়া, পাকিস্তানে ক্ষমতাসীন পার্টি ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া এখনো চলছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট সি পাকিস্তান সফর করলে, দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ মধ্যস্থতার প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হতে পারতো। মূলত এসব কারণেই প্রেসিডেন্ট সি'র পাকিস্তান সফর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।" (ইয়ু/আলিম)

মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040