মজার ঘটনা হলো, এবারের গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণে সর্বমোট ৮টি দেশ অংশগ্রহণ করেছি । আমরা সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি চীনের গ্রেটওয়ালে। প্রত্যেকেই পরস্পরের প্রতি অনেক সহানুভূতি দেখিয়েছেন। আমাদের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন পাকিস্তান, জাপান, ইতালি, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, কেনিয়া এবং শ্রীলংকার বন্ধুরা। রকমারি খাবারের বাহার। এক একদিন এক এক রেস্টুরেন্টের স্বাদ। এখানে আরও মজার ঘটনা হলো, ট্রাফিক জ্যাম অনেক কম। আর ড্রাইভারেরাও অনেক ভদ্র। এলোমেলো গাড়ি চালায় না। রাস্তার পরিধি অনেক বড়। অনেক পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা এবং অনেক গোছালো। লক্ষ্য করে দেখেছি, সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। চীনের মানুষ অনেক পরিশ্রমী।
আরও মজার ঘটনা হলো, আমরা অনেকেই ইংরেজি ভাষা কম জানি কিন্তু আমরা অনেকেই চীনা ভাষায় কথা বলেছি। আমাদের কাছে এটি একটি ভিনদেশ কিন্তু একটুও মনে হচ্ছে না যে আমরা আমাদের দেশের বাইরে। মনে হচ্ছে আমরা আমাদের দেশেই আছি। এটা একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা যা জীবনে আর কখনও সুযোগ হবে কিনা জানিনা। আমার অনেক ভাল লেগেছে। আমি আন্তরিকভাবে আবারও ধন্যবাদ জানাই চীন এবং বাংলাদেশ সিআরআইকে, আমাকে এই গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। ধন্যবাদ জানাই সিআরআইয়ের সম্মানিত শিক্ষকদেরকেও যারা আমাদের যত্নসহকারে চীনা ভাষা শিখিয়েছেন।
তুনশি শহর ভ্রমণ:
আজ ইংরেজি ৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ । আমরা এখন আনহুই প্রদেশের তুনশি শহরে, এই শহরটা খুবই সুন্দর এবং অনেক শান্ত।
এখানে অনেক দূর দূরান্ত থেকে আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আর্ট শেখার জন্য আসেন। এখানে অনেক মনোরম পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীরা আর্ট শিখতে এবং আর্ট করতে পারেন। জানিনা স্বর্গ কিরকম। তবে আমার মনে হয় স্বর্গ এরকমই। আমরা সবাই সিদি নামের এক গ্রামে প্রবেশ করি। গ্রামটিতে মনে হয় সবাই হাতের কারুকার্যে পারদর্শী। নানান রকমারি হাতের কারুকার্য। আমার মনে হয় না কেউ এই পরিবেশ ছাড়তে ইচ্ছুক। খুবই মনোরম পরিবেশ। আর্ট কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা যেভাবে গ্লাসে পানি ঢেলে নেওয়া হয় ঠিক তেমনি একটি পরিবেশকে কাগজের মধ্যে বাস্তব রূপ দিতে পারেন। ভাবতে অবাক লাগলেও এটা বাস্তব যে, তারা এসব খুবই সহজেই আর্ট করে ফেলছেন।
আজ ৭ই সেপ্টেম্বর ২০১৪। খুবই সকালে আমরা বিছানা ত্যাগ করে নাস্তা সেরে বাসে উঠে পড়ি। কারণ আজকে আমরা অনেক ভ্রমণ করেছি। হোয়াংগ সান এর এই তুনশি শহর অনেক সুন্দর একটি পর্যটন এলাকা। এখানে শত বছরের পুরাতন ইমারতগুলো দেখতে অবাক লাগবে, কারণ এখানে অনেক ইমারত আছে যেগুলো কাঠের তৈরি। ঐ ইমারতগুলো দেখলেই বুঝা যায় আদি কাল থেকেই তারা অনেক কর্মঠ ছিলেন।
তারপর ভ্রমণ করেছি "বাওজিয়া" নামের একটি বাগান। এখানে কয়েক শত বছর আগের "বনশাই" গাছ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। অভিনব কায়দায় এক এক বনশাই অনেক যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে। আমার বন্ধুরা কেউ চীন ভ্রমণ করলে আমি তাদের অবশ্যই বলবো যে, আপনারা সুযোগ হলে অবশ্যই এই শহর একবার ভ্রমণ করে যাবেন।
হুয়াংগ সান পাহাড় ভ্রমণ:
'হুয়াংগ' অর্থ হলুদ আর 'সান' অর্থ পাহাড়, 'হুয়াংগ সান' অর্থ 'হলুদ পাহাড়'। এই পাহাড় পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশে অবস্থিত। চীনারা কয়েকশত বছর আগে এই পাহাড়ের সন্ধান পান।
এই পাহাড়ের উচ্চতা ১হাজার মিটারেরও বেশি। হুয়াংগ সান পাহাড়ের অনেকগুলো চূড়া আছে। জানামতে ৩টি চূড়ার উচ্চতা খুবই বেশি। উক্ত চূড়াগুলোর নাম উল্লেখ করা হলো: ১ম হল, লিয়ান হুয়া ফং, উচ্চতা ১৮৬৪ মিটার। ২য়, গুয়াংগ মিং দিং, উচ্চতা ১৮৪০ মিটার এবং তিয়ান দু ফং। সরাসরি বলতে গেলে এই চূড়াকে স্বর্গের রাজধানী চূড়া হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
পৃথিবী কত সুন্দর তা দেখতে হলে অবশ্যই এই জায়গা সবারই দেখা উচিত। অনেক দূর দূরান্ত থেকে বয়স্ক, মধ্য বয়সী, অল্প বয়সী এবং শিশু পর্যন্ত পাহাড়ের চূড়া ভ্রমণ করে আসছেন। ভাবতে অবাক লাগলেও এটা সত্য। পালকি চরে হলেও ভ্রমণ করছেন। হাঁটতে পারেন না, তাঁরাও এই পাহাড়ের উঁচু জায়গাটা ভ্রমণ করতে আসছেন। আমরা নিচ থেকে প্রথমে ইলেকট্রিক ক্যাবল কারে করে উপরে যাই। তারপর ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা পথ আমাদের পাড়ি দিতে হয়েছিল। আমাদের সাথে ছিলেন সিআরআইয়ের কর্তৃপক্ষ। তাঁরা আমাদের অভিভাবকের মত গাইড করে সাথে নিয়ে যান আবার সাথে করে নিয়ে আসেন। সারাদিন ভ্রমণ করার পর রাতের খাবারের আয়োজনের সাথে চীনের মধ্য শরত উৎসবের আয়োজন। সবাই মিলে অনেক আনন্দ করেছি ।
পরদিন সকালে সূর্যোদয় দেখার জন্য আমরা সবাই গ্র্যান্ড মাউন্ট ভ্রমণ করি। আমাদের দেশের শীতকালীন সময়ের মত কুয়াশার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ১১:৩০ মিনিটের পর কুয়াশা পরিস্কার হতে লাগল। ইতোমধ্যে সকাল থেকেই সবার আগমন। অনেক নতুন নতুন বন্ধু। সবাই মিলে ছবি তুলতে লাগল। কারণ যতই কুয়াশা পরিস্কার হতে লাগল ততই সৃষ্টির অপরূপ দৃশ্য বের হয়ে আসতে লাগল।
ধন্যবাদ সিআরআইকে, ধন্যবাদ সিআরআইয়ের বাংলা বিভাগের আকাশ ভাইকে।
মোহাম্মদ জামিল উদ্দিন (জিমি) 马志远,
চীনে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ কনফুসিয়াস ক্লাসরুমের ছাত্র।