Web bengali.cri.cn   
বাবা-মা শিশুদের যে 'নির্দোষ মিথ্যা' বা 'সাদা মিথ্যা' বলেন
  2014-09-25 19:08:22  cri


আমরা সব সময় শিশুদের সত্য কথা বলার উপদেশ দিয়ে থাকি। কিন্তু নানা কারণে আমরা নিজেরাই মাঝেমধ্যেই শিশুদের মিথ্যা কথা বলি। অনেক বাবা-মা হয়তো এ কথার প্রতিবাদ করে বলবেন, এটাকে মিথ্যা কথা বলা যায় না, শিশুদের ভালোভাবে বড় হওয়ার জন্যই তারা এমন করে থাকেন। আসলে যাই হোক না কোনো, সত্য কথা না বলাটাই হলো মিথ্যা। আমরা হয়তো একে 'সাদা মিথ্যা' বা ইংরেজিতে একে 'হোয়াইট লাই' বলতে পারি। প্রিয় শ্রোতা, আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা চীনের পারিবারিক জীবনে বাবা-মা শিশুদের যে 'নির্দোষ মিথ্যা' বা 'সাদা মিথ্যা' বলেন তা তুলে ধরবো। প্রিয় শ্রোতা, আপনি ছোট বেলায় সে মিথ্যা কথা শুনেছেন কি না, সেগুলো মিলিয়ে দেখতে পারেন। পাশাপাশি নতুন বাবা-মাকে এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেবো।

তোমাকে কুড়িয়ে পেয়েছি

যখন শিশুর বয়স তিন-চার বছর হলেই তারা নানা প্রশ্ন নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করে। এর মধ্যে বাবা-মা'র কাছে একটি প্রশ্ন খুব প্রচলিত। সেটা হলো: "আমি কোথা থেকে এসেছি"। অনেকে বাবা-মা চিন্তা করেন যে, বাচ্চা জন্ম দেয়ার বিষয়টি খুবই গোপনীয় এক বিষয়। এ বয়সের শিশুদের ঝোঝানো কঠিন হবে। সেজন্য এ প্রশ্নের উত্তরে তারা সহজে বলে থাকে: "তোমাকে কুড়িয়ে এনেছি"। বাচ্চারা এ কথা শুনে আবার জিজ্ঞাস করবে: "কোথায় থেকে কুড়িয়েছেন? বাবামা এ সময় কেবল মিথ্যা বলতে থাকে: "বাজার থেকে কুড়িয়েছি। এ উত্তরে বাচ্চাদের আর কৌতূহল থাকবে না বলে মনে করেন অভিভাবক। আসলে কিন্তু তা নয়, শিশুরা এ কথা শুনে আরও জিজ্ঞাস করতে পারে, "সব শিশুকে আমার মতো কুড়ানো হয়েছে?", কথা থেকে কুড়ানো হয়েছে।

এ সময় অভিভাবক কি করলে ঠিক হবে? আসলে এ প্রশ্নের উত্তরে কোনো মিথ্যা বলা ঠিক নয়। এমন মিথ্যা বললে শিশু ও বাবামা'র মধ্যে সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়ে। শিশুরা নিজেকে বাবা-মা'র কুড়িয়ে পাওয়া সন্তান ভাবতে শুরু করে এবং তার অবচেতন মনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়ে। তাই মনোবিজ্ঞানী ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এ ধরনের কৌশল বা মিথ্যা কথা বলা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

বাবামা ঝগড়া করছেন না

অনেক বাবা-মা শিশুদের সামনে ঝগড়া করেন। এ সময় শিশুরা দেখে ফেলায় উল্টো শিশুকে বোঝানো হয় যে, তারা ঝগড়া করছেন না। এটাও মূলত মিথ্যা কথা। কারণ এতে করে ভীত সন্ত্রস্ত শিশু ঝগড়া ও সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এটি তার মনের ওপর গভীর রেখাপাত করে। তার শিশু মনস্তত্বে এ নির্দেশনা লিপিবদ্ধ হয় যে, এ ধরনের উচ্চ স্বরে, রাগত ভঙ্গিতে কথাবার্তা বা আচরণ ঝগড়ার পর্যায়ে পড়ে না। এটি ভবিষ্যতে তাকে অবচেতনভাবেই ভুল পথে পরিচালিত করে।

এক্ষেত্রে প্রথমত, শিশুদের সামনে ঝগড়া করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, এ ধরনের ঘটনা হয়ে গেলে তা অকপটে শিশুকে বলা উচিত, কিন্তু কোন মিথ্যা বলা উচিত নয়। এজন্য শিশু সন্তানের কাছে দু:খ প্রকাশ করা যেতে পারে। যা চাইল্ড সাইকোলজিস্টদের মতে, অনেক বেশি উপকারী। পাশাপাশি শিশুদেরকে এ বিষয়ে অনেক সুন্দর উপদেশ দিতে পারেন। যেমন বলতে পারেন, মানুষের মধ্যে কখনও কখনও ঝগড়া, রাগারাগি হয়ে থাকে। এটি দুঃখ ও আনন্দের মতো জীবনের এক অংশ। তবে এটা করা উচিত নয়। আমরা ভবিষ্যতে এরকম আর করবো না.... ইত্যাদি ইত্যাদি..।

ওটা ভালো না, এটা ভালো!

অনেক সময় কিন্ডারগার্ডেন থেকে শিশুদের বাসায় নেয়ার পথে অনেক শিশু দোকানে ঝুলানো পণ্য, বিশেষ করে, চিপস, বিভিন্ন স্ন্যাক্স দেখে খাবার আবদার করে। এ সময় বেশিরভাগে বাবা-মা বলেন যে, 'ওটা ভালো না, ওগুলো নোংরা দিয়ে তৈরি হয়েছে। ওটা খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে"।

আবার যখন বাড়িতে শিশু কোনো খাবার খেতে চায় না, তখন বাবামা আবার বলেন, 'এটা ভালো, খুব চমৎকার, খেলে তাড়াতাড়ি বড় হবে"।

আসলে এ সময় কি করা উচিত? বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ব্যাপারে বাবামা প্রকৃত বিষয়টি শিশুর সামনে তুলে ধরতে পারেন। যেমন তারা বলতে পারেন, ওই খাবারটি কেনো অস্বাস্থ্যকর। কেনো তা খেলে শরীরের ক্ষতি হবে। কিভাবে তা তৈরি করা হয়েছে তা শিশুর সামনে খুলে বলতে পারেন তিনি। এসব বিষয় শিশুদের নির্দ্বিধায় জানানো উচিত। আর ঘরে তৈরি খাবার কেনো শিশুদের জন্য উপকারী তাও শিশুদের ধৈর্য নিয়ে বলা উচিত। আর একবার বলেই এ দায়িত্ব শেষ হবে না। ধীরে ধীরে একাধিকবার, বহুবার শিশুদের তা বলতে হবে। যতবার শিশুরা অন্যায় আবদার করবে ততবার হাসিমুখে শিশুদের তা বলতে হবে। কখনই রাগ করা যাবে না। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ধৈর্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখাতে হবে। কারণ, একটি শিশুকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার মহান দায়িত্ব তার অভিভাবকের ওপরই বর্তায়। তাই এক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর অভিভাবকের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি।

স্কুল পরীক্ষায় খারাপ করলে বাবা-মার হতাশ হওয়া উচিত নয়

শিশুরা স্কুল বা কিন্ডারগার্ডেনের পরীক্ষায় খারাপ করলে তার বাবা-মা'র মন খারাপ করা উচিত নয়। আর মন খারাপ করলেও তা শিশুর সামনে প্রকাশ করা উচিত নয়। এতে শিশুর মন ভেঙে যেতে পারে। বরং শিশুকে আরো বেশি উতসাহিত করা উচিত। শিশুকে পড়াশোনায় আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবকের আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিত। ঠিক কি কারণে শিশুর পরীক্ষা খারাপ হলো, তা খুঁজে বের করা, সমস্যা সমাধান করা উচিত। কিন্তু কোনভাবেই শিশুর মনে চাপ দেয়া উচিত নয়।

কখনো মিথ্যা বলা উচিত না

সবশেষে আবারও পুরানো কথা। কখনোই কোন অবস্থাতেই শিশুদেরকে মিথ্যা বলা উচিত নয়। আসলে শুধু শিশুদেরই না, কারও সঙ্গে মিথ্যা বলা উচিত না। কারণ শিশুদের সামনে মিথ্যা চর্চা করা হলে, শিশুরাও মিথ্যা বলা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রতারণা করা শিখে যাবে। বাংলায় একটা কথা আছে, তা হলো, মিথ্যা সব পাপের জননী। অর্থাত, একবার মিথ্যা বলা শুরু করলে কোন অপরাধ করতে তার ভয় করবে না। তাই সব সময় সচেতনভাবে আমাদের মিথ্যা থেকে দূরে থাকা উচিত। আর শিশুদের সঙ্গে বা তাদের সামনে কোন ধরনের মিথ্যা ও প্রতারণামূলক কাজ বা আচরণ করা উচিত নয়।

প্রিয় শ্রোতা, বাবামা শিশুদের আরো অনেক হাস্যকর কথা বলেন, যার কোন অর্থ নেই। প্রকারান্তরে তা মিথ্যাই। যেমন, তরমুজের বীচি খেলে পেটে তরমুজের গাছ হবে। অথচ এটি একেবারে অসম্ভব। তুমি ভালোভাবে হোমওয়ার্ক করলে তোমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবো। অথচ কখনই তা যাওয়া হয় না। পকেটে অর্থ থাকার পরও শিশুদের বলা হয় যে, এখন পকেটে টাকা নেই, তোমাকে ওই জিনিস কিনে দেয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব ক্ষেত্রেও শিশুদের মিথ্যা বলা উচিত নিয়। শিশুদের সরাসরি সত্য কথা বলাই সবচেয়ে ভালো। শিশু ছোট হলেও কিছু কিছু জিনিস সে বুঝতে পারে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040