Web bengali.cri.cn   
টিয়ারস অব গাজা
  2014-09-12 16:20:25  cri


২০১০ সালে "টিয়ারস অব গাজা" নামে একটি সামাজিক চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। চলচ্চিত্রে ফিলিস্তিনের গাজায় নারী ও শিশুদের 'যুদ্ধোত্তর পরিণাম' ও সেখানকার মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে গাজায় বাস্তবিকভাবেই সে পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। গত প্রায় এক মাসে গাজার নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরায়েলের সামরিক হামলায় হাজার হাজার প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এখন মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সেখানে আহতদের ত্রাণ সেবা দেয়া হচ্ছে। সেখানে মানুষ রক্ত ও চোখের পানি একাকার হয়ে গেছে। এরকম অব্যাহত যুদ্ধে হাসপাতালগুলো আহতদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

গত এক মাসে এ ধরনের কামান দাগানোর শব্দ সবসময় শোনা যেতো। গাজার ওপর ইসরাইলের সামরিক আঘাত, আকাশ থেকে সমুদ্র পর্যন্ত, আবার স্থল হামলাও চালিয়েছে ইসরাইল। গাজার সশস্ত্র সংস্থা রকেট থেকে সুড়ঙ্গ পথ অনুপ্রবেশ করতো। চলতি বছর দু'পক্ষের সংঘর্ষ ছিলো সবচেয় বেশি।

কিন্তু এ ধরনের কামানের শব্দের পিছনে রয়েছে একটা যুদ্ধে ক্ষত বিক্ষত একটি দেহ, একটি দেশ, একটি অঞ্চল। বিশেষ করে গাজায় দু'পক্ষের সংঘর্ষের কারণে ১৮৫০ জন বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১০ হাজার সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। মানবতাবাদের দিক থেকে ইসরাইলী বাহিনী গাজার সীমান্ত অঞ্চলে একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে, যাতে ইসরাইলি বাহিনীর সামরিক আঘাতে আহত গাজার মানুষের জন্য জরুরী ত্রাণ সরবরাহ করা যায়। হাসপাতালটির সাজ-সরঞ্জাম উন্নততর এবং ওষুধে পরিপূর্ণ। হাসপাতালের দায়িত্বশীল ব্যক্তি রিশেল মেজান সাংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, হাসপাতাল গাজা থেকে আসা আহত ব্যক্তিদের অভ্যর্থনা জানিয়েছে। তিনি বলেন,

এখানে আসার সময় তাদের খুব ভয় ছিলো। এটা তাদের আচরণ এবং চোখ থেকে বোঝা যায়। কিন্তু যখন তারা দেখেছেন যে, আমরা স্বাভাবিক মানুষের মতো আচরণ করছি, তখন তারা স্থির হন, এমনকি হাসি দেন।

যদিও সীমান্তে অবস্থিত ফিল্ড হাসপাতালটির সাজ-সরঞ্জাম উন্নততর, তবুও সংবাদদাতা সাক্ষাত্কার নেয়ার সময় দেখেছেন যে, হাসপাতালের রোগীর বিছানা খালি রয়েছে এবং গাজা থেকে আসা কোনো রোগী সেখানে নেই। এখানকার ডাক্তার ইলান গ্রীন স্বীকার করেছেন, এ পর্যন্ত এখানে আহত মানুষের সংখ্যা ছিলো একেবারেই নগণ্য। তিনি বলেন,

মানুষের সংখ্যা বেশি না। কারণ তাদের এখানে আসার সাহস নেই। কিন্তু এখানে আসা প্রতিটি আহত মানুষ সবচেয়ে ভালো প্রতিকার পাবে। মানবিক কারণে আমরা তাদের জন্য সাহায্য দিয়ে যাচ্ছি।

গাজা সীমান্তে ইসরাইলের ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা গাজাবাসীর স্বীকৃতি পায়নি। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মারিয়া আল-আকরা বলেছেন, সেবা সুশ্রসার জন্য তারা গাজার আহতদের পূর্ব জেরুসালেম, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এমনকি মিসর ও জর্ডানের হাসপাতালে পাঠাবেন। কিন্তু তাদের ইসরাইলি হাসপাতালে পাঠাবেন না। তিনি বলেন,

আমরা এ হাসপাতাল চাই না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠিত নয়। এটা শুধু ইসরাইলের প্রচারের জন্য এক ধরনের কৌতুক। যাতে তাদের মানবিক দিকটি প্রমাণিত হয়। যদি প্রকৃতপক্ষে তাদের মানবতা থাকতো, তাহলে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করা উচিত। এটাই মানবতা। এক দিকে আমাদের আক্রমণ করে, অন্যদিকে এমন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে মানবতা দেখানো যায় না।

ইসরাইলের সীমান্তে ফিল্ড হাসপাতালের তুলনায় গাজার ভেতরে হাসপাতালে ঠাসাঠাসি।

এবারের সংঘর্ষের আগে গাজায় কয়েকটি হাসপাতাল ছিল। কিন্তু গত প্রায় এক মাসে তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরিভাবে ইসরাইলের গোলা বর্ষণে ধ্বংস হয়ে গেছে। আহতদের এ হাসপাতাল থেকে অন্য একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল শিফা হাসপাতালসহ প্রতিটি হাসপাতালে প্রতি দিনই প্রচণ্ড ভিড় লেগে থাকে। প্রচণ্ড শব্দের মাঝে রোগীদের বিশ্রামের কথা চিন্তাই করা যায় না।

প্রতি দিন গাজার কয়েকশ' আহত মানুষকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে রক্ত ও কান্নার শব্দ ভাসে। একই সঙ্গে বাড়ছে চিকিত্সা সামগ্রীর অভাব। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফাথি আবু-ওয়ার্দি গাজায় জরুরী ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। ত্রাণের মাঝে তিনি সংবাদদাতাকে এক সাক্ষাতকার দিয়েছেন। তিনি বলেন,

গাজার হাসপাতালের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সব হাসপাতাল যুদ্ধাহত দিয়ে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে, আমাদের জরুরি সরঞ্জাম অনেক কম। আমাদের যথেষ্ট ডাক্তার নেই। ডাক্তারদের বিশ্রাম নেয়ার সময় নেই। আমি ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। গত তিন দিন কোন বিশ্রাম নিতে পারিনি।

হাসপাতালের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরের কয়েক ডজন ডাক্তার ও নার্স সম্প্রতি ত্রাণ দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিদিন অব্যাহতভাবে আসা রোগীদের জন্য একজন চিকিত্সক যেনো এক বালতির মধ্যে এক ফোঁটা পানির মতো। গত জুলাইয়ে জাতিসংঘের স্কুল ও হাসপাতালসহ গাজার অনেক স্থাপত্য ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আহত মানুষের সংখ্যা আরো বেশি হয়ে ওঠায় হাসপাতালগুলোতে রোগী সেবা সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির মুখপাত্র সেসিলিয়া গোইন বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি এর চেয়ে আর খারাপ হবে না। আর হাসপাতালগুলোতে হামলা চালানো উচিত হয়নি। তিনি বলেন,

বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া উচিত। এসব মানুষ সশস্ত্র সংঘর্ষের অংশ নয়। তাদের প্রয়োজনীয় সময়ে হাসপাতালে পৌঁছানো উচিত। তাদের অবাধে যাতায়াতের অধিকার থাকা উচিত। এছাড়া চিকিত্সা দল, ডাক্তার, সেবিকা, হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স সংঘাতের আওতার বাইরে থাকা উচিত। কারণ হাসপাতালে আমরা যেটা করি, সেটা শুধু আহতদের দেখাশোনা করা, রোগীদের সেবা দেয়া।

গাজার হাসপাতাল শুধু সেখানকার পরিস্থিতির একটি প্রতীক। এখানে মৃত্যু জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এ ঘটনা গাজার সব জায়গায় ঘটছে। হয়তো অন্য জায়গার পরিস্থিতি আরো খারাপ। ঠিক কয়েক দিন আগের শুজায়ে কমিউনিটির মতো। প্রতিদিন মৃত্যু যন্ত্রণায় ভরা গাজা, চোখের পানি ও রক্তে ভরা গাজা। জাতিসংঘ নিকট প্রাচ্য ফিলিস্তিন শরণার্থী ত্রাণ ও পূর্ত কার্যালয়ের মুখপাত্র ক্রিস গান্নিস তথ্য মাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে কাঁদতে কাঁদতে বলেন,  

আজ রাতে ফিলিস্তিনি এমনকি শিশুদের অধিকার সস্তায় বিক্রি হয়।

এটা একজন প্রৌঢ় পুরুষের কান্না, যা দমন করা কঠিন। কেউ জানে না, গত দু'মাসে কত মানুষ গাজার জন্য কেঁদেছি। পাশাপাশি একটানা চালানো যুদ্ধে এখনও যুদ্ধবিরতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গাজা, আরো বেশি মানুষ তার জন্য কাঁদবে।

প্রেমা/তৌহিদ

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040