Web bengali.cri.cn   
চীনের ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়
  2014-09-03 17:26:09  cri


১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনর 'ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়' ২০০৬ সাল থেকে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি শুরু করে। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, কেনিয়া, জাম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত--এ আটটি দেশের মোট ২১৪ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছেন। তারা ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীবনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন।

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়রত বাংলাদেশী ছাত্র সুয়িম রেজা আর মোঃ সাইয়েদ আল-বাসেত

বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্র সুয়িম রেজার বয়স মাত্র ২১ বছর। ২০১১ সালে তিনি ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করেন। তিনি বলেন, "এ বিশ্ববিদ্যালয় খুব সুন্দর। এর চারদিকে পাহাড়। এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের মতো। ছেংদে হোপেই প্রদেশের শিচিয়াচুয়াং শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। শিচিয়াচুয়াংয়ে আমার অনেক বাঙালি বন্ধু আছে। আমি এখানকার পরিবেশ পছন্দ করি। আমি এখানে আসতে পেরে খুব খুশি। আমার আব্বা মনে করেন, চীন বাংলাদেশের মতো নয়; চীন আরো শান্ত, আরো আরামদায়ক।"

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় হোপেই প্রদেশের ছেংদে শহরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এ বিশ্ববিদ্যালয় আগে চীনের চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শাখা ছিল। ১৯৮২ সালের নভেম্বরে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় একে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করার ক্ষমতা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করে। ২০০৭ সালে চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্নাতক ডিগ্রি শিক্ষাদানের মান নিরূপণ করার সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চ স্বীকৃতি দেয়। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রীয় পরিষদের ডিগ্রি কমিটি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে মাস্টার ডিগ্রি প্রদানের অনুমতি দেয়। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী আছে।

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়। নতুন শিক্ষক যোগ দেওয়ার পর প্রথমে পেশাগত জ্ঞান আর শিষ্টাচারসহ নানা বিষয়ের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। তা ছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিনিময় কেন্দ্র শিক্ষকদের বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য আর বিধি-নিষেধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। শিক্ষকদের মান উন্নত করার জন্য ২০০৯ সাল থেকে ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ জন যুব শিক্ষককে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশি-বিদেশি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর পরিকল্পনা করে। ইতোমধ্যে কিছু শিক্ষক ডেনমার্ক আর মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন।

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন চাং শু ফাং বলেন, "বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের কাজ ভালোভাবে করার লক্ষ্যে আমরা তাদের লেখাপড়া আর থাকা-খাওয়ার সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছি। চিকিত্সাবিদ্যা আর চীনা ভাষা শেখার ক্লাস ছাড়া ফুটবল প্রতিযোগিতা, গানের প্রতিযোগিতা আর ভাষা প্রতিযোগিতাসহ বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য আকর্ষণীয় কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করি আমরা, যাতে তারা এখানে আনন্দময় ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হতে পারে। প্রাথমিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়া বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ স্বদেশে ফিরে গিয়ে চিকিত্সক হিসেবে কাজ করছেন।"

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও চীনা ছাত্রছাত্রীদের মতো বিদেশি ছাত্রছাত্রীরাও বিশ্ববিদ্যালয়, হোপেই প্রদেশ ও জাতীয় পর্যায়ের বৃত্তি পেতে পারেন। ২০১৩ সালে ৩০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী হোপেই প্রদেশের বৃত্তি পেয়েছেন এবং ৩০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে আসা ছাত্র সুয়িম রেজাও বৃত্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, "এখানে এক বছরের শিক্ষা ফি ১৮ হাজার ইউয়ান, থাকার খরচ ৪৫০০ ইউয়ান। বাংলাদেশের তুলনায় এখানকার খরচ খুব বেশি নয়। যদি ভালোভাবে লেখাপড়া করেন, তাহলে ১০ হাজার ইউয়ান বৃত্তি অর্জনের সুযোগ আছে। প্রতিটি পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেলে এবং কোনো নেতিবাচক রেকর্ড না-থাকলে বৃত্তির জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন।"

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ফুটবল দল

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় যথাযথভাবে বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা মেটানোর জন্য, পাঠ্যক্রমে চীনের চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক চিকিত্সা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করেছে। তারা থিয়েনচিন চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয় আর সিআন যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়সহ চীনের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি পাঠ্যপুস্তকের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপযুক্ত ইংরেজি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেছে। তা ছাড়া তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় পাঠ্যপুস্তক ক্রয় করে থাকে।

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছে ১৮টি হাসপাতাল। এসব হাসপাতালে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ইন্টার্নশিপ করতে পারেন। ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের উপ-প্রধান ওয়াং হোং বলেন, "আমাদের হাসপাতালে মোট ৫০টিরও বেশি বিভাগ আছে। মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা এখানে মোট ৪৮ সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। প্রতি দু'সপ্তাহ পরপর তাদের প্রশিক্ষণের বিভাগ একবার পরিবর্তিত হয়। ইন্টার্নি বিভাগ, অস্ত্রপচার বিভাগ, স্ত্রীরোগ বিভাগ, শিশু চিকিত্সা বিভাগ আর জরুরি বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতে সবাই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। সাধারণত একজন চিকিত্সক দু'জন শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করেন। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বেলায় 'একজন চিকিত্সক, একজন শিক্ষার্থী' নীতি মেনে চলা হয়। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভালো করে শেখার সুযোগ বেশি। অনেক ছাত্র স্নাতক হওয়ার পর দেশে ফিরলেও আমাদের শিক্ষকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখেন।"

ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবন

অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী চীনে আসার আগে ভাষা নিয়ে বড় চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু তারা ছেংদে চিকিত্সা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর উপলব্ধি করেছেন যে, এখানকার শিক্ষকদের চিকিত্সাবিদ্যার জ্ঞান ভালো, ইংরেজি ভাষার মানও ভালো এবং তারা শিক্ষার্থীদের অনেক যত্ন করে পড়ান। তারা ছাত্রছাত্রীদের নানা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রেও সাহায্য করেন। কিছু বিদেশি শিক্ষার্থী চীনে আসার প্রথম দিকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। কেউ কেউ ছোট্ট ব্যাপারেও গভীর রাতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে ফোন করে। এ সময় শিক্ষকরা ধৈর্যের সঙ্গে তাদের কথা শোনেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে আসা ছাত্র মো: সাইয়েদ আল-বাসেত ২০১৪ সালের ১০ মার্চ ছেংদেতে এসেছেন। তিনি বলেন, "এখন আমি চীনে খুব ভালো আছি। এ বিশ্ববিদ্যালয় সত্যি খুব ভালো। এখানে সাত জন বাঙালি শিক্ষার্থী আছে। এখানকার প্রতিটি শিক্ষক ভালো। তারা আমাদের সাহায্য করেন। আমরা দু'জন একটি কক্ষে থাকি। রুমে ইন্টারনেট ব্যবস্থা আছে। আমি বাবা-মা, ভাই ও ভাবিকে বলতে চাই, আমি খুব ভালো আছি। আমাকে নিয়ে কোনো চিন্তা করো না।" (ইয়ু/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040