0831jiankang
|
চীনে শনি ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটি। অর্থাত আমাদের সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসটি হচ্ছে সোমবার। তাই সোমবারকে কেন্দ্র করে আমাদের মধ্যে একধরনের ভয় বা অস্বস্তি কাজ করে। রোববারটা যতোই শেষের দিকে গড়ায়, এই ভয় বা অস্বস্তির অনুভূতিটা যেন ততোই বাড়তে থাকে। তো, চীনে আমরা এই বিশেষ অনুভূতিকে ডাকি 'সোমবার ভীতি' বা 'মানডে ফোবিয়া' নামে। এ অনুভূতিকে কেউ কেউ 'কর্ম বিতৃষ্ণা' বা 'নীল সোমবার' বলেও আখ্যায়িত করে থাকেন।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য এই অনুভূতিকে 'রোববার ভীতি' বা 'সানডে ফোবিয়া' বলা যেতে পারে। তবে, আমাদের পশ্চিমবঙ্গের শ্রোতাদের জন্য এটি 'মানডে ফোবিয়া'-ই হবে, কারণ ভারতে সাপ্তাহিক ছুটি চীনের মতো শনি ও রোববার। আসলে, যে কোনো ভয় বা অস্বস্তিই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দু'দিন ছুটিতে আমাদের মন ও শরীর বিশ্রাম পায়, আরাম করে। তারপর বিশ্রাম থেকে হঠাত কাজের মধ্যে গিয়ে পড়লে শরীর ও মনের ওপর চাপ অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক। আমরা কীভাবে এই অবস্থা সামাল দেব এবং কীভাবে এই অনুভূতির ক্ষতিকর দিক থেকে নিজের শরীর ও মনকে রক্ষা করবো, এ নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।
বিষয়টি বোঝাতে গাড়িতে ভ্রমণের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। গাড়ি যখন এক গতিতে চলতে থাকে, তখন কিন্তু যাত্রীদের কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু চলতি গাড়িতে হঠাত যদি ব্রেক করা হয়, তখন যাত্রীদের শরীরের ওপর এবং কখনো কখনো মনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সাপ্তাহিক ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে অফিসে যাওয়া যেন অনেকটা এমনই। দু'দিন জীবন চলেছে আরামে-আয়েসে; তারপর হঠাত কাজের চাপ। একটু সমস্যা তো হবেই!
আমাদের অনেকেই হয়তো এ সমস্যা নিয়ে ভাবি না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ভেবেছেন এবং সমস্যা সমাধানের কিছু উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ১১টি পরামর্শ সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
পরামর্শ ১: সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সপ্তাহান্তের প্রথম কর্মদিবসের জন্য একটি কার্যতালিকা তৈরি করুন
অর্থাত সাপ্তাহিক ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে অফিসে এসে আপনি কী কী করবেন, তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখুন সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে। তা না হলে, দু'দিন পর অফিসে এসে আপনাকে এই কাজটি করতে হবে, যা কষ্টকর এবং বিরক্তিকর। তা ছাড়া, তালিকাটি করা থাকলে আপনি ছুটির সময়টায়ও নিশ্চিত থাকতে পারবেন। কারণ, আপনি জানেন, প্রথম কর্মদিবসে আপনি কী কী কাজ করবেন। তালিকাটি করা থাকলে, কোনো কিছু ভুলে যাওয়ার ভয়ও থাকবে না। তালিকা করা ছাড়াও, আপনি সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে কিছু আনুষঙ্গিক কাজ করতে পারেন। যেমন, অফিসে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো যথাস্থানে গুছিয়ে রাখা; টেবিল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদি।
পরামর্শ ২: প্রথম কর্মদিবসের আগের রাতে ৩৫ থেকে ৪০ মিনিট বেশি ঘুমান
ঘুম হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিশ্রাম। সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির প্রথম দিনটি আমাদের অনেক ব্যস্ততায় কাটে। আমরা এদিন কেনাকাটা করি, ঘুরে বেড়াই, পরিবারকে সময় দিই, জমে থাকা কিছু কাজ করি এবং প্রায়শই দিন শেষে রাতে খানিকটা কম ঘুমাই। ছুটির দ্বিতীয় দিনেও আসলে আমরা দাপ্তরিক কাজের বাইরে নিজেদের ব্যক্তিগত কাজ করে থাকি। ফলে প্রথম কর্মদিবসের আগের রাতটিতে একটু বেশি ঘুমানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। উদ্দেশ্য, শরীর ও মনকে প্রথম কর্মদিবসের জন্য প্রস্তুত করা। অনেকে প্রথম কর্মদিবসের আগের রাতে পরের দিনের জন্য কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করেন। এ কাজগুলো ছুটির প্রথম রাতে করা ভালো। তাহলে দ্বিতীয় রাতে ঘুমানোর জন্য একটু বেশি সময় বের করা যাবে।
পরামর্শ ৩: সকালে ঘুম থেকে জেগে বেশিক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করবেন না।
হ্যাঁ, অনেকের অভ্যাস হলো, সকালে ঘুম থেকে জাগার পরও ১০-১৫ মিনিট বিছানায় গড়াগড়ি খাওয়া। এটি ভালো অভ্যাস নয়। ঘুম থেকে জেগে দুই থেকে তিন মিনিট পর বিছানা ছাড়া ভালো। কিন্তু এর বেশি সময় বিছানায় শুয়ে থাকা ঠিক নয়। বিশেষ করে সপ্তাহান্তে প্রথম কর্মদিবসে তো এটি একেবারেই করা উচিত নয়।
পরামর্শ ৪: ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন
হ্যাঁ, যদি কোনো কারণে রাতের ঘুম পর্যাপ্ত না-হয় বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরও চোখে ঘুমের অনুভূতি থেকে যায়, তবে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ভালো লাগবে। চোখে ঘুম নিয়ে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিসে যাওয়া কোনো কাজের কথা নয়।
পরামর্শ ৫: নিজের পছন্দের কাপড় পড়ুন
এক জরিপে দেখা গেছে, কাপড়ের রঙ আমাদের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সুতরাং, যে রঙটি আপনি পছন্দ করেন, সেই রঙের কাপড় পড়ে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিসে যান।সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আপনার পছন্দের পোশাক পড়ুন এবং অফিসে যান। তাতে আপনার মন তুলনামূলকভাবে ভালো থাকবে এবং অফিসের বোরিং কাজগুলো করতে ততোটা বোরিং লাগবে না।
পরামর্শ ৬: বাইরে গিয়ে গায়ে রোদ লাগান
সম্ভব হলে প্রতিদিন গায়ে রোদ লাগতে দিন। বলা হয়, রোগ 'দেহ-ঘড়ি'-র ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। গায়ে রোদ লাগলে আমাদের মনের উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা হ্রাস পায় বলেও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। সুযোগ পেলে সপ্তাহের প্রথম দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের রোদ গায়ে লাগান। এতে আপনার মন ভালো হবে, অফিসে কাজগুলো করার জন্য মানসিক শক্তি পাবেন।
পরামর্শ ৭: পরিমিত কফি পান করুন
অফিসে বসে শুরুতেই এক কাপ গরম কফি পান করতে পারেন। এতে আপনার শরীর-মন চাঙ্গা হবে। তবে, সকালের নাস্তাটাও এক্ষেত্রে জরুরি। অনেকে দ্রুত অফিসে চলে যান সকালের নাস্তা না-করে। সকালের নাস্তা বাসায় সেরেই অফিসে যাওয়া ভালো। কোনো কারণে সম্ভব না-হলে অফিসে গিয়ে নাস্তা করা যেতে পারে। কিন্তু অফিসে সাধারণত ঠিকমতো নাস্তা করা হয়ে ওঠে না। তাই আমাদের চেষ্টা থাকা উচিত বাসায় নাস্তা করা এবং সমৃদ্ধ নাস্তা করা। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কাজে ঝাপিয়ে পড়ার আগে পেটে পর্যাপ্ত রসদ থাকা জরুরি, তাই না?
পরামর্শ ৮: সহকর্মীর সঙ্গে খানিকক্ষণ আড্ডা দিন
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিসে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করুন; হাসিমুখে দু'একটি কথা বলুন। এসময় একেবারে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েই কথা বলা ভালো। দেখবেন মনটা বেশ ফুরফুরে হবে। তারপর ঝাপিয়ে পড়ুন কাজে।
পরামর্শ ৯: মনোযোগ নষ্টকারী কিছু করবেন না
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অফিসে মনোযোগ নষ্টকারী কিছু করবেন না বা যতদূর সম্ভব কম করবেন। ভিডিও গেমস্ খেলা বা চ্যাটিংয়ের মতো বিষয়গুলো কাজ থেকে আমাদের মনোযোগ অন্যত্র সরিয়ে দেয়। অফিসে এমনিতেই এগুলো থেকে দূরে থাকা উচিত। কিন্তু প্রথম কর্মদিবসে এ কথা বেশি করে প্রযোজ্য। প্রথম দিনের কাজগুলো যদি প্রথম দিনেই শেষ করতে পারেন, তবে সপ্তাহের বাকি দিনগুলো আপনার ভালো কাটবে। নতুবা এর জের আপনাকে টানতে হতে পারে বাকি সপ্তাহজুড়ে।
পরামর্শ ১০: হাসার চেষ্টা করুন
হাসি-খুশি মানুষকে সবাই পছন্দ করেন এবং তাঁর সাথে থাকতে পছন্দ করেন। অফিসের কাজে একঘেয়েমি দূর করতে সবচে ভালো ওষুধ হচ্ছে হাসা। হাসার মতো মজার কোনো ঘটনা না-ঘটলেও, নিজের জানা কোনো মজার ঘটনা সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করুন এবং নিজে হাসুন, তাদেরকেও ক্ষণিকের জন্য হাসান। তার পর আবারো কাজে মন দিন।
পরামর্শ ১১: সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে কোনো অফিসিয়াল মিটিং না-রাখাই ভালো
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে অনেক অফিসে মিটিংয়ের পর মিটিং চলতে থাকে। অথচ এদিন মিটিং না-রাখাই ভালো। কারণ, দু'দিন ছুটির পর কর্মীদের মন-মানসিকতায় যে স্থবিরতা আসে, তাতে মিটিংয়ের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সপ্তাহের দ্বিতীয় দিন থেকে মিটিং চলতে পারে।
(ওয়াং হাইমান/আলিম)