বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ১৪টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোট সিয়েনজা। গত ২৯ ও ৩০ আগস্ট সিয়েনজাভুক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
সম্মেলনে বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান, ডেপুটি গভর্নর ও সিয়েনজার বর্তমান চেয়ারম্যান এস কে সুর চৌধুরী, নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর যুবরাজ ড. খাতিওয়াদা, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও পাকিস্তানের ডেপুটি গভর্নর ছাড়াও ১৪টি দেশের মোট ২৯ জন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাস ড. পিটার সিনক্লেয়ার সম্মেলনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। সম্মেলনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট। এ বছর সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ' ম্যাক্রো-ইকনোমিক এনভায়রমেন্ট এন্ড ফাইনান্সিয়াল সেক্টর স্ট্যাবিলিটি: ভালনিয়ারিবিলিটিজ এন্ড ম্যানিজিং ক্রাইসিস'। সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও সিয়েনজা ফোরামের চেয়ারম্যান ড. এস কে সুর চৌধুরী বলেন, মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের জন্য একটি সুস্থ ও মসৃণ আর্থিক খাতের প্রয়োজন। এ খাতের দুর্বলতা একদিকে মুদ্রানীতির বাস্তবায়নকে যেমন জটিল করে তোলে, তেমনি অর্থনীতির বাহ্যিক অভিঘাতসমূহের কারণে মুদ্রানীতি প্রয়োজনীর অভিযোজন ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে। এ সমস্যা নিরসনে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে উদ্ভুত ঝুঁকি প্রশমনে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও ব্যাংকগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার তদারকি কৌশলে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে বলে জানান এস কে সুর চৌধুরী।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান তার মূল প্রবন্ধে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও পরবর্তী সময়ে তার ফলাফল ছিল অত্যন্ত তিক্ত। বিশ্বের বৃহৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকি গ্রহণ করে। কিন্তু অপর্যাপ্ত ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও কৌশল এবং অনিয়ন্ত্রিত তারল্য ব্যবস্থাপনা বাজারে সঙ্কট তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে তা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিকে পিছনে ঠেলে দেয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে গৃহীত নীতিমালা ও পরিবর্তন তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদে আশানুরূপ ফল বয়ে আনেনি। তাই আর্থিক খাত ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ড. আতিউর জোর দিয়ে বলেন, আর্থিক খাত ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশে রাজস্ব ও মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়। নীতি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয় এবং তাদের সুপারিশ আমলে নেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। নীতিমালার সফল বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যষ্টিক পর্যায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকির পাশাপাশি সামষ্টিক পর্যায়ে গোটা আর্থিকখাতের পদ্ধতিগত বলিষ্ঠতা নিশ্চিতকরণের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি অন্তর্ভুক্তিকরণ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন ক্ষুদ্র ও তৃণমূল পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের জন্য এমন সুযোগ সৃষ্টি করেছে যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার পথে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
মাহমুদ হাশিম, ঢাকা থেকে।