Web bengali.cri.cn   
অন্ত্র ও পাকস্থলীর সুরক্ষায় যা যা করা উচিত
  2014-08-26 15:34:57  cri


বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন আমাদের খেতে হয়। আমরা অনেক কিছু খাই, পান করি। আমাদের একেকজনের খাদ্যাভ্যাস একেক ধরনের। আবার আমাদের সবাই একই গতিতে খাবার খাই না। কেউ দ্রুত খান, আবার কেউ আস্তে আস্তে খান। বলা হয়ে থাকে, মানুষের খাওয়ার গতি দেখে দৈনন্দিন জীবনে তার ব্যস্ততা পরিমাপ করা যায়। হ্যা, বিষয়টি ইন্টারেস্টিং। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের খাওয়ার গতি কেমন হওয়া উচিত? আসলে খুব দ্রুত খাওয়া বা খুব আস্তে খাওয়া উচিত নয়। খাওয়ার গতির ব্যাপারে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা উচিত। চীনা সমাজে এখন অনেক গতি। মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটছে। তাদের হাতে সময় কম, কাজ বেশি। তাই তাদের অনেকেই খাদ্যগ্রহণের সময় নিয়ে কৃপণতা করেন।

চীনে ৪ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, ৯০ শতাংশ মানুষই যে কোনো একটি 'মিল' বা খাবার খেতে গড়ে মাত্র ১০ মিনিট সময় নিয়ে থাকেন। অথচ খাওয়ার জন্য আরো বেশি সময় বরাদ্দ রাখা উচিত। একটু খুলে বলি। যে কোনো খাবার মুখে দিয়ে ভালো করে চিবিয়ে তার পর গেলা উচিত। দু'একবার চিবিয়ে গিলে ফেলা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।

খাবার দ্রুত খেলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর না-হক চাপ পড়ে-- বিশেষ করে অন্ত্র ও পাকস্থলীর ওপর। দুঃখজনকভাবে, এ বিষয়টি অনেকে জানেন না। আসলে দ্রুত খাবার খেলে প্রথমেই চাপ পড়ে খাদ্যনালীর ওপর। বিশেষজ্ঞরা এতদূর পর্যন্ত বলছেন যে, দ্রুত খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ না-করলে, কেউ কেউ খাদ্যনালীর ক্যান্সারেও আক্রান্ত হতে পারেন। আরেকটি কথা, দ্রুত খেলে আমাদের গোটা পরিকাপতন্ত্রের ওপরও চাপ পড়ে। এতে পেট ব্যথা, বমির অনুভূতি ইত্যাদি হতে পারে।

দ্রুত খেলে আমাদের অন্ত্র ও পাকস্থলী কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়? আমরা জানি, খাওয়ার সময় আমাদের মুখ থেকে লালা নিঃসৃত হয়। এই লালায় থাকে বিভিন্ন ধরনের পাচকরস। তো, এটি খাবার হজমে যেমন সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তেমনি খাবার গিলতেও আমাদের সাহায্য করে। দ্রুত খাবার খেলে, লালা নিঃসরণ ঠিকমতো হয় না বা হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, আমরা যখন খাবার মুখে নিয়ে চিবাতে থাকি, তখন মস্তিষ্ক অন্ত্র ও পাকস্থলীতে সংকেত পাঠায়। সংকেতটি অনেকটা এমন: খাবার আসছে; তা গ্রহণ করতে এবং হজম করতে প্রস্তুত হও। অন্ত্র ও পাকস্থলী তখন সে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু আপনি যদি দ্রুত খাবার মুখে দিয়েই গিলে ফেলেন, অন্ত্র ও পাকস্থলী প্রস্তুত হবার সময় পাবে না। মনে রাখতে হবে, খাবার হজমের জন্য পাকস্থলীতে নানান ধরনের পাচকরস নিঃসৃত হয়। এ রস খাবার হজমে সাহায্য করে। খাবার সময় নিয়ে চিবিয়ে খেলে পাকস্থলী মস্তিষ্কের সংকেত পেয়ে প্রয়োজনীয় পাচকরস নিঃসরণের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। তা না হলে, আমাদের হজমক্ষমতা ঠিকমতো কাজ করবে না। আর খাবার ঠিকমতো হজম না-হলে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যের ওপর। তৃতীয়ত, দ্রুত খাবার খেলে সাধারণত বেশি খাওয়া হয়। কারণ, তখন খাবারের পরিমাণ সম্পর্কে আমরা সচেতন থাকতে পারি না বা অনেক সময় সচেতন হতে ভুলে যাই। আর বেশি খাওয়ার অর্থ মুটিয়ে যাওয়া, শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমা, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো না। আরেকটি কথা, যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য দ্রুত খাওয়া অত্যন্ত ক্ষতিকর।

আসলে খাওয়ার জন্য কতোটা সময় ব্যয় করা উচিত? যেমন ধরা যাক দুপুরের খাবারের কথা। দুপুরের খাবার কতোটা সময় নিয়ে খাওয়া উচিত?

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বেলার খাবার খাওয়ার জন্য আমাদের উচিত অন্তত ১৫ মিনিট সময় ব্যয় করা। বিশেষ করে সকালের নাস্তা। আমরা জানি, সকালের নাস্তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, নাস্তা যত সমৃদ্ধ ততই ভাল। নাস্তায় বেশি আইটেম থাকলে, আমাদের পুষ্টি চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি তা খেতে বেশ খানিকটা সময়ও লাগবে। দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যাপারেও মোটামুটি একই কথা প্রযোজ্য। যথেষ্ট সময় নিয়ে দুপুরের ও রাতের খাবার খান। সবচে ভালো হয়, একা একা না-খেয়ে, স্বজনদের সঙ্গে বসে খেলে। এতে খাওয়ার টেবিলে গল্প-গুজব হবে এবং খাওয়ার সময় এমনিতেই বেড়ে যাবে। আরেকটি কথা, খাবার বেশি করে চিবিয়ে খাওয়ার কথা আমরা বলেছি। এতে হজমের সুবিধা হয় এবং অন্ত্র ও পাকস্থলীর ওপর চাপ কম পড়ে। বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এ কথা বেশি করে প্রযোজ্য। তাদেরকে যে কোনো খাবার অন্তত কুড়িবার চিবিয়ে তারপর গেলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।

পরামর্শ ১: নিয়মিত ও পরিমিত খাওয়া

নিয়মিত ও পরিমিত খাওয়ার কথা আগের অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা বারবার বলেছি। এই ভাল অভ্যাস আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য কল্যাণকর। প্রতিদিন প্রায় একই সময়ে খাওয়া ভালো। ক্ষুধার অনুভূতি না-হলে খাওয়া উচিত নয়। আর একেবারে পেট ভরে খাওয়াও উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেট ৭০ শতাংশ ভরে গেলেই খাওয়া বন্ধ করা উচিত। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তা ছাড়া, রাতে যত কম খান, সুস্থতার জন্য ততই ভাল।

ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (দ.) এ প্রসঙ্গে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে মোটামুটি একই উপদেশ দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন: ক্ষুধা না-পেলে খেয়ো না এবং পেটে খানিকটা ক্ষুধা থাকতেই খাওয়া বন্ধ করো। আরো স্পষ্টভাবে তিনি বলেছেন: পেটের চারভাগের এক ভাগ সবসময় খালি রাখবে। অর্থাত তিনি পাকস্থলীর ৭৫ শতাংশা ভরে যাওয়ার পর খাওয়া বন্ধ করতে বলেছেন।

পরামর্শ দুই: নিয়ম করে পর্যাপ্ত পানি পান করুন

পানির অপর নাম জীবন। আমাদের শরীরের ৭০ শতাংশই পানি। পর্যাপ্ত পানি আমাদের অন্ত্র ও পাকস্থলীর সুরক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকাও পালন করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে বেশ খানিকটা পানি পান করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। দিনের বাকি সময়ও পানি পান করা উচিত। দিনে অন্তত চার লিটার পানি পান করতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে, খাওয়ার পরপরই পানি পান করা উচিত নয়। এ অভ্যাস হজমের সহায়ক নয়, বরং তা পেটের ওপর অযথা চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু, খাওয়া শুরুর আগে আমরা কিছুটা পানি বা স্যুপ খেয়ে নিতে পারি। এটা স্বাস্থ্যের জন্য এবং পাকস্থলীর জন্য ভালো। খাওয়ার আগে একটু পানি বা স্যুপ খেলে, পাকস্থলী বাকি খাবার গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পায়। তবে, মনে রাখতে হবে পানিও অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। বিশেষ করে যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তাদেরকে উচিত চিকিত্সকের পরামর্শ অনুসারে পানি পান করা।

পরামর্শ ৩: অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা খাবার খাবেন না

আসলে অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ। খাবারের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। অতিরিক্ত খাবার যেমন স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়, তেমনটি অতিরিক্তি গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা খাবারও স্বাস্থ্যের জন্য, বিশেষ করে পাকস্থলীর জন্য ভালো নয়। এ ব্যাপারে সাবধান না-হলে, আমরা যে-কোনো সময় পাকস্থলীর রোগে আক্রান্ত হতে পারি। সুতরাং, অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা খাবার থেকে দূরে থাকুন।

পরামর্শ ৪: ধীরে ধীরে খাবার চিবিয়ে খান

যে কোনো খাবার ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। খাবার চিবিয়ে খেলে তা 'ফাইনার' হয় এবং পাকস্থলী সে খাবার সহজে হজম করতে পারে। আপনি যত বেশি চিবিয়ে খাবেন, মুখে তত বেশি লালা সৃষ্টি হবে এবং আগেই বলেছি এই লালায় পাচকরস থাকে যা খাবার হজমে সহায়ক।

পরামর্শ ৫: তেলেভাজা খাবার কম খান

এধরনের খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়। অতএব কম খাওয়া উচিত। তেলেভাজা খাবার আমাদের পরিপাকযন্ত্রকে দুর্বল করে। (ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040