Web bengali.cri.cn   
স্বপ্নের খোঁজে নেপালে চীনা তরুণ আলোকচিত্র শিল্পী
  2014-08-22 18:13:41  cri
স্বপ্ন খুঁজে বের করার পথে দ্বিধা করা নাকি অনুশীলন করা? এর উত্তর ৩১ বছরের আলোকচিত্র শিল্পী লিউ ইয়ান জে'র জন্য নিঃসন্দেহে পরেরটা। ভ্রমন এবং চিত্রগ্রহণ দুটোই হৃদয়ের অনুভবকে নিজের ছবিতে লিপিবদ্ধ করা তার কাজ। চীনা ছেলেটি নেপালে নিজের স্বপ্ন পূর্ণ করতে চান। বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময়, একটি কাকতালীয় সুযোগে লিউ ইয়ান জে চিত্রগ্রহণের কাজ শুরু করেন। তিনি তাঁর শিক্ষকের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতারের জন্য কিছু ছবি তোলেন। ঠিক সে সময় থেকে পেশাগত চিত্রগ্রহণে লিপ্ত হওয়ার স্বপ্ন তার হৃদয়ে অঙ্কুরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করার পর লিউ ইয়ানজে সাংহাইয়ের একটি নেট ওয়ার্ক ইন্টারনেট কোম্পানিতে কাজ শুরু করেন। বাণিজ্যিকিকরণ ও মডেলিং তাঁর সফলতা ডেকে আনেনি। অবসর বিনোদন সময় তিনি চিত্রগ্রহণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। শুরুর দিকে তিনি নিজেই ইন্টারনেট থেকে চিত্রগ্রহণ সংক্রান্ত জ্ঞান শিখেন এবং কিছু বৈঠকে অংশ নিয়ে অন্যদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তি বিষয়ক জ্ঞান আদান-প্রদান করেন। ২০০৮ সালে লিউ ইয়াজে নিজের জন্য প্রথম এসএলআর' ক্যামেরা কিনেন। তারপর তিনি ক্যামেরাটা নিয়ে যেখানে সেখানে গিয়ে ছবি তোলেন। লিউ ইয়ানজে বলেন,

চিত্রগ্রহণ ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে নিজের স্টাইল গড়ে তুলতে হয়। সবসময় কিছু না কিছু সমস্যায় পড়তে হয়। কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না। আমার একমাত্র উপায় হচ্ছে ভ্রমণ করা। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে উৎসাহ খোঁজা।

নিজের স্বপ্ন ও প্রত্যয় আরো দৃঢ় হয়ে ওঠার পর লিউ ইয়ানজে নিজের ছবি তোলার স্টুডিও তৈরি করেন। ২০১০ সালে তাঁর স্টুডিও হাইনান প্রদেশের সান ইয়া শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালে তাঁর দ্বিতীয় স্টুডিও তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের রাজধানী লাসায় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর স্টুডিও'র একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পুরো চক্রাকার চিত্রগ্রহণ এবং পোস্ট প্রডাকশনের কাজগুলো তিনি নিজেই করেন। তাঁর কথা হলো, মক্কেলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ভালো শিল্প-কর্মের সৃষ্টি হয়।

প্রথম স্টুডিও প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত, লিউ ইয়ানজে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু তিনি এগুলো মোকাবেলা করেছেন। তিনি বলেন,

আমি চিত্রগ্রহণকে কাজ হিসেবে দেখছি না। বরং এক ধরনের সুখানুভূতি হয়। কিছু সময় পর অন্য এক জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে হয়। বর্তমানে চিত্রগ্রহণের কাজ যথেষ্ট আনন্দের নয়। তাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর চিন্তা করছি।

সেজন্য লিউ ইয়ানজে নিজের স্টুডিও নেপালে স্থাপন করতে চান। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নিজের বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতি ও দৃশ্যের মিল রয়েছে। স্টুডিও স্থাপনের জন্য নেপাল বাছাইয়ের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশের প্রতি তাঁর আগ্রহ ও কৌতূহল আছে। তিনি অনেক বার নেপালে গিয়েছেন। প্রত্যেক বার নতুন উপলব্ধি হয়েছে। তিনি বলেন,

প্রথমবারের মতো নেপাল গিয়েছি, চিতওয়ান আমার ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। হাতি ট্র্যাকিং করা বা যেখানে সেখানে বেড়াতে যাইনি। আমি শুধু প্রতিদিন বিকেলে রাপ্তি নদীর তীরে বিয়ার খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখেছি। খুবই আরামদায়ক সে অনুভূতি। দ্বিতীয়বার আমি পোখরার পছন্দ করেছি। শহরটির স্থির দৃশ্য মানুষের হৃদয়ে শান্তি ডেকে আনে।

লিউ ইয়ানজে বলেছেন, এবারের নেপাল ভ্রমণে একটি ছোট অভিজ্ঞতা তাঁর মনের ওপর গভীর ছাপ ফেলেছে। বন্ধুর সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খাবার খাওয়ার পর তিনি বুঝলেন যে তার মানিব্যাগ হারিয়ে গিয়েছে। খুঁজে পাওয়ার কোনো আশাও তার ছিলো না। কিন্তু পরে তিনি দেখলেন, রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ তাঁর মানিব্যাগ খুঁজে পেয়েছে এবং সংরক্ষণ করেছে। ব্যাপারটা তাকে খুব মুগ্ধ করেছে। তিনি বলেন,

অনেক নেপালির ভালো আয়ের উত্স নেই। যদিও নিজেদের স্বপ্ন এবং ইচ্ছা আছে, তবুও তারা বস্তুগত লোভ প্রত্যাখ্যান করে। আমার মনে হয়, নেপালে আরো অনেক কিছু আছে যা আমার উপলব্ধি করা দরকার।

ছবি তোলার ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ও বাণিজ্যের পরিবেশ খুব ভালো না হওয়ায় লিউ ইয়ানজে কাঠমান্ডুতে নিজের স্টুডিও প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দু'বছর সময় দিয়ে নেপালের বিভিন্ন শহরে জীবনযাপন ও পর্যটনসহ বিভিন্ন কিছু উপলব্ধি করেছেন তিনি। চলতি বছরের শেষ নাগাদ তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। লিউ ইয়ানজে বলেন,

জীবনযাপনের পরিবেশ সহজে পরিবর্তন করতে পারি না। আমি অন্যদের অনুকরণ করতে চাই না। আমি নিজের মতো চলি, যেখানে আমার ভাল লাগে, সেখানেই আমি যাব। সুতরাং, আমার ধারণা এখন আমি বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশে এসেছি। আমি এখানকার সুখের সঙ্গে মিশতে চাই।

নেপালে স্টুডিও প্রতিষ্ঠার জন্য আমাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন, স্থানীয় বাজার এবং সেখানকার নিয়ম কানুন ইত্যাদি। কিন্তু লিউ ইয়ানজে'র জন্য এসব কোনো কঠিন বিষয় নয়। তাঁর জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কিভাবে আরো মানুষকে নিজের শিল্প-কর্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন, যেনো আরো অনুপ্রেরণা তৈরি হয়। তিনি বলেন,

স্টুডিওটি কত বড় হবে এবং কত বেশি অর্থ উপার্জন হবে তা আমার ইচ্ছা নয়। বরং শিল্প-কর্ম নিয়ে যখন ভালো কাজ হবে, সেটাই হবে আমার জন্য সুখকর এবং আনন্দদায়ক। এ ধরনের মনোভাব অনেক টাকা আয়ের অনুভুতি'র চেয়ে ভিন্ন।

নবীন আলোকচিত্রি লিউ ইয়ানজে'র জন্য স্বপ্ন একটি দুরন্ত ঘোড়ার মতো। স্বপ্নের ওপর ভর করে তিনি সামনে এগিয়ে যান। পেশাগতভাবে তিনি এসএলআর' ক্যামেরার অধিকারী, তাঁর জন্য একটি রঙিন, গল্প ও স্বপ্ন ভরা জীবন রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি নিজের ক্যামেরা ও স্বপ্ন নিয়ে নেপালে আরো চমৎকারভাবে নিজের কাজ করবেন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040