0803
|
ঊর্মি: প্রিয় শ্রোতা, আপনি কি বিষণ্ণতায় ভুগছেন? বিষণ্ণতা কী আপনি জানেন কি? হ্যাঁ, বিষণ্ণতা একটি মানসিক বা স্নায়বিক রোগ। আধুনিক সমাজে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে: মানুষ কেন এ রোগে আক্রান্ত হয়? বিষণ্ণতা থেকে বাঁচারইবা উপায় কী? আমরা আজকের অনুষ্ঠানে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।
আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিষযক ওয়েবসাইটে বিষণ্ণতার তিনটি কারণ এবং বিষণ্ণতা থেকে বাঁচতে ৫টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তো, শুরুতেই আমরা আলোচনা করবো কারণগুলো নিয়ে।
কারণ ১: বংশগত
হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, বিষণ্ণতা রোগটি বংশগত হতে পারে। পিতা-মাতার এ-রোগ থাকলে সন্তানের মধ্যে তা দেখা দিতে পারে। আবার ধরুন, যমজ ভাই-বোনদের একজন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হলে, অন্যজনের এতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা ৭০ শতাংশ বলে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঊর্মি: হ্যাঁ, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি দুই নম্বর কারণ সবাইকে বলবো।
কারণ দুই: মস্তিষ্ক
আমরা জানি, মস্তিষ্ক হচ্ছে আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মস্তিষ্কের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক বস্তু আছে, যার সাহায্যে মস্তিষ্ককোষ বা নিউরন শরীরের অন্যান্য অঙ্গে তথ্য পাঠায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণতার রোগীদের শরীরে এই ধরণের রাসায়নিক বস্তুর ভারসাম্যহীনতা থাকে। সে জন্য এই বিশেষ ধরনের বস্তুর ভারসাম্যহীন অবস্থা মানুষকে বিষণ্ণ করতে পারে।
আলিম: আচ্ছা, ঊর্মিকে ধন্যবাদ। এখন আমি তিন নম্বর কারণ সবাইকে জানাবো।
কারণ ৩: পরিবেশ-পরিস্থিতি
হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, পরিবেশ-পরিস্থিতিও বিষণ্ণতার একটি কারণ হতে পারে। কর্মচ্যুতি, দারিদ্র্য, বৃদ্ধাবস্থা, একাকিত্ব, পারিবারিক কলহ ইত্যাদি নানান কারণে মানুষ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে।
ঊর্মি: তো, আমরা তো বিষণ্ণতার কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করলাম। এখন এই রোগ প্রতিরোধে কী কী সাবধানতা অবলম্ব করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করবো। আগেই বলেছি, বিশেষজ্ঞরা বিষণ্ণতা থেকে বাঁচার জন ৫টি পরামর্শ দিয়েছেন। আমি প্রথমে আজকের প্রথম পরামর্শটি বলছি।
পরামর্শ ১: তিনটি কাজকে 'না' বলুন
প্রিয় শ্রোতা, অনেকে মনে করেন, 'না' বলতে জানাটা জীবনে সুখী হবার অন্যতম মূল অস্ত্র। তো, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্ণতা থেকে বাঁচতেও অন্তত তিনটি 'না' প্রয়োজন। আজকের জন্য রাগ 'না' করা, গতকালের জন্য অনুতাপ 'না' করা এবং আগামিকালের জন্য দুশ্চিন্তা 'না' করা। হ্যাঁ, আমাদের রাগ না করা উচিত। আমরা হয়তো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কিন্তু নিজের মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বাংলাদেশে একটা সুন্দর শ্লোগান আছে: রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আরেকটি কথা প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত: ক্রোধ মানুষের পরম শত্রু। সুতরাং রেগে যাবেন না। পরিস্থিতি যত কঠিন আর অপ্রীতিকরই হোক না কেন, মেজাজ ঠাণ্ডা রাখুন। ঠাণ্ডা মাথায় সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজতর হয়। গরম মাথায় সিদ্ধান্ত নিলে, সে সিদ্ধান্ত ভুল হবার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া, বিষণ্ণতা থেকে বাঁচতেও ক্রোধ সংবরণ করা উচিত।
যা ঘটে গেছে তা নিয়ে চিন্তা করে কী লাভ? তাই গতকালের ভুল থেকে শিক্ষা নিলেও, তা নিয়ে অযথা ভেবে হয়রান হবার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। আত্ম-সমালোচনা কল্যাণকর। আত্ম-সমোলোচনা করুন। কিন্তু এ কাজেও বেশি সময় নষ্ট না-করে, ভবিষ্যতের দিকে তাকান।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করা এবং ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তা করা এক কথা নয়। দুশ্চিন্তা আর চিন্তাও এক কথা নয়। দুশ্চিন্তা সবসময়ই পরিত্যাজ্য। ভবিষ্যতে কী হবে এ নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। এ ধরনের দুশ্চিন্তা আপনাকে বিষণ্ণ করে তুলতে পারে।
আলিম: আচ্ছা, এখন আমি আজকের দুই নম্বর পরামর্শ সবাইকে বলবো।
পরামর্শ ২: ঘুম ঠিক রাখার চেষ্টা করুন
প্রিয় শ্রোতা, প্রতিদিন নিয়ম করে যারা পর্যাপ্ত সময় ধরে ঘুমান, তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। অন্যদিকে, অনিদ্রা বিষণ্ণতার অন্যতম প্রধান কারণ। যারা অনিদ্রায় ভুগছেন, তাদের উচিত দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হওয়া। আর যারা, প্রতিদিনকার নানান ব্যস্তার কারণে, ঠিকমতো ঘুমাতে পারছেন না, তাদের উচিত পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সময় বের করা।
ঊর্মি: এখন আমি তিন নম্বর পরামর্শ সবাইকে জানাবো।
পরামর্শ ৩: ঘরের বাইরের কর্মকাণ্ড বাড়ান
একটি চিকিত্সাবিষয়ক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঘরের বাইরের কর্মকাণ্ড বিষণ্ণতা প্রতিরোধে একটি 'প্রাকৃতিক ওষুধ'। আমরা প্রতিদিন অফিসে ও ঘরে চার দেয়ালের মধ্যে অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করি। আমাদের উচিত কাজের ফাঁকে প্রতিদিন অন্তত ঘন্টা দুয়েক খোলা আকাশের নীচে খেলাধুলা করে বা অন্যান্য কাজ করে কাটানো। হাঁটাহাঁটি, শরীরচর্চা, খেলাধুলা, ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদি করে এ সময়টুকু কাটানো যেতে পারে। তা ছাড়া, ছুটির দিনগুলোতে যতটা সম্ভব বাইরে বেড়ানো উচিত।
আলিম: আচ্ছা, এখন আমি চার নম্বর পরামর্শ সবাইকে বলবো।
পরামর্শ ৪: জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় নিজের সামর্থ্য বাড়ান
হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, আমাদের জীবনে যে কোনো সময় জরুরি অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় আমাদের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন। তাই শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে ফিট থাকার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি চাই আর্থিক সামর্থ্য বাড়ানোর প্রচেষ্টা। দেখা গেছে, আর্থিক সামর্থ্য থাকলে, জীবনের অনেক জরুরি অবস্থা সহজে মোকাবিলা করা যায়।
ঊর্মি: আচ্ছা, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি পাঁচ নম্বর পরামর্শ অর্থাত আজকের অনুষ্ঠানের শেষ পরামর্শটি সবাইকে বলবো।
পরামর্শ ৫: প্রতিদিন চিত্তবিনোদনের জন্য খানিকটা সময় ব্যয় করুন
আমরা সবাই কমবেশি ব্যস্ত সময় কাটাই। ঘরে ও বাইরে আমাদের নানান কাজ করতে হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পাশাপাশি চিত্তবিনোদনের জন্যও আমাদের প্রতিদিন খানিকটা সময় ব্যয় করা উচিত। এতে জীবনের একঘেয়েমি দূর হবে, মনের ওপর চাপ কমবে। মনের ওপর চাপ বাড়ার কারণেই অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রাণ্ত হন।
আলিম: তো, প্রিয় শ্রোতা, কথা বলতে বলতে সময় ফুরিয়ে এলো। এখন বিদায় নেওয়ার পালা। আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন'এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত থাকলে আমাদের জানাতে কিন্তু ভুল করবেন না। আপনার সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।
ঊর্মি: আমাদের ইমেইল ঠিকানা হলো ben@cri.com.cn সরাসরি আমাকে ইমেল পাঠাতে পারেন। আমার ইমেল ঠিকানা হলো wanghaiman@cri.com.cn
আলিম: সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে আসছে রোববার একই সময়ে। চাই চিয়ান। (ওয়াং হাইমান/আলিম)