Web bengali.cri.cn   
কেন চুল পড়ে? চুলের যত্নে কী করবেন?
  2014-08-13 19:02:24  cri


প্রিয় শ্রোতা, শুনছেন পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠান। এখন রয়েছে আমাদের নিয়মিত সাপ্তাহিক আয়োজন 'স্বাস্থ্য ও জীবন'। পরিবেশন করছি আমি ওয়াং হাইমান ঊর্মি এবং আলিমুল হক।

ঊর্মি: প্রিয় শ্রোতা, মাথার চুল পড়া নিয়ে কি আপনি চিন্তিত? নিয়মিত চুল পড়তে পড়তে মাথায় কি চকচকে টাক উঁকি দিচ্ছে? হ্যা, আমি জানি, শ্রোতাদের অনেকেই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষ করে, পুরুষ শ্রোতারা। তো, চলুন আজ আমরা স্বাস্থ্য ও জীবন অনুষ্ঠানে চুল পড়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করি। চুলের যত্নে কী করা উচিত, অনুষ্ঠানের শেষে সে বিষয়েও আলোচনা থাকছে আজ। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি চুল পড়ার সমস্যা কিন্তু আমারও আছে। এক সময় আমার মাথায় অনেক চুল ছিল। কিন্তু এখন পড়তে পড়তে বলতে গেলে খালি হয়ে গেছে। যেমনটি আপনি বলেছেন, মাথায় ভালোভাবেই উঁকি দিয়েছে চকচকে টাক। আমিও অনেক শ্রোতার মতো জানতে চাই চুল পড়ার কারণ; জানতে চাই চুলের যত্নে কী করা উচিত। তো, আমার এ জানার চাহিদা সম্প্রতি মিটিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট। সেখানে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

তবে, সে আলোচনায় যাবার আগে আমি মাথার টাক নিয়ে দুটি কথা বলতে চাই।

টাক (ইংরেজি: Baldness) বলতে চুলের অভাবকে বোঝায়, বিশেষ করে মাথার চুল। মাথার চুল ক্রমাগত হালকা হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সাধারণত টাক হওয়া প্রকাশ পায়। পুরুষের ক্ষেত্রে এটি অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেসিয়া বা "পুরুষের টাক" নামে পরিচিত। এটি পরিণত মানুষ ও অন্যান্য প্রজাতিতে দেখা যায়। টাকের পরিমাণ ও বিস্তৃতি অনেক বেশি হতে পারে এবং এক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। মাথার কিছু অংশের চুল পড়ে যাওয়াকে অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা ও পুরো মাথার চুল পড়ে যাওয়াকে অ্যালোপেসিয়া টোটালিস বলে। চুল পড়ে যাওয়ার আরো একটি মারাত্মক প্রকাশ হচ্ছে অ্যালোপেসিয়া ইউনিভার্সালিস। এক্ষেত্রে মাথাসহ সমস্ত শরীরের লোম ঝরে যায়।

আংশিক টাক বা Pattern baldness-এর ক্ষেত্রে বংশগতির পটভূমির ওপর ভিত্তি করে টাকের বিস্তার ও প্রাদুর্ভাব বিভিন্ন হয়। পরিবেশগত প্রভাব এই ধরনের মুণ্ডতার ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাথার সামনের মাঝে চুল ঝরে পড়ার হার বয়সের ওপর নির্ভরশীল ও ৮০ বছরের উপর বয়সী ৫৭% নারী ও ৭৩.৫% পুরুষ এর দ্বারা আক্রান্ত। মডার্ন মেডিক্যাল লাইব্রেরি'র ওয়েবসাইটের ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি পুরুষ আংশিক টাকের শিকার। প্রায় ২৫% পুরুষের ৩০ বছর বয়সের পরেই মাথা টাক হওয়া শুরু হয়। দুই-তৃতীয়াংশের শুরু হয় ৬০ বছর বয়সে।

পুরুষের ক্ষেত্রে টাক সৃষ্টি হতে পারে এই ধরনের চুল কপালে পার্শ্বীয় অংশ থেকে শুরু হয়ে পেছনে ঢালু অংশের দিক পর্যন্ত বিস্তৃত। একে "প্রান্তীয় অংশের চুল" বলে অভিহিত করা হয়। এ স্থানে চুল সচরাচর ২০ বছর বয়সের পরে দেখা যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির শেষ ভাগেও এই চুল দেখা যায়।

মাথার উপরে, শীর্ষে টাক সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যায়। আংশিক টাকের কারণ হিসেবে ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন (DHT) নামক একটি শক্তিশালী যৌন হরমোনকে দায়ী করা হয়। এটি শরীর ও মুখের চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তামূলক ভূমিকা রাখে। প্রোস্টেট ও মাথার চুলের ওপর এই হরমোন প্রতিকুল প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে,এর ফলে পুরুষে আংশিক টাকের সৃষ্টি হতে পারে।

প্রিয় শ্রোতা, এখানে আরেকটি কথা বলে রাখি, সাধারণত প্রতিনিয়ত আমাদের মাথার কিছু চুল পড়ে যায় এবং নতুন করে কিছু চুল গজায়। এটা কিন্তু স্বাভাবিক। কিন্তু চুল যখন অস্বাভাবিক হারে পড়তে থাকে, তখনই বিপদ। এ ক্ষেত্রে চুল বেশি পড়ে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম ওঠে। কখনো কখনো নতুন চুল গজানো একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।

সে যাক, আগেই বলেছি, আমরা চুল পড়া সম্পর্কে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে আলোচনা করবো। শুরুতেই থাকছে চুল পড়ার সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ সম্পর্কে আলোচনা।

ঊর্মি: হ্যা, আমি এখন চুল পড়ার কয়েকটি কারণের একটি নিয়ে কথা বলবো।

কারণ ১: মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপকে চুল পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মানসিক চাপে ভুগলে রাতে ভালো ঘুম হয় না। এবং রাতে ভালো ঘুম না-হলে একটি বিশেষ ধরনের রোগ আমাদের পেয়ে বসতে পারে। আর ঠিক তখনই মাথার চুল পড়তে শুরু করে।

আলিম: অতিরিক্ত মানসিক চাপ কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো নয়। আমাদের উচিত অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলা। তো, এখন আমি চুল পড়ার দ্বিতীয় কারণটি সবাইকে বলবো।

কারণ ২: দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটার গেমস্ খেলা, টেলিভিশন দেখা বা চুলে নিম্নমানের রঙ বা শ্যাম্পু ব্যবহার করা

প্রিয় শ্রোতা, আপনি জানেন কি, দীর্ঘসময় ধরে কম্পিউটারে গেমস্ খেলা বা টেলিভিশন দেখা মাথার চুল পড়ার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে? হ্যা, বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে সাবধান হতে বলেছেন। আর চুলে যারা নিয়মিত রঙ ব্যবহার করেন বা নিম্নমানের শ্যাম্পু ব্যবহার করেন, তাদেরও চুল পড়তে পারে।

ঊর্মি: আচ্ছা, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি তিন নম্বর কারণ সবাইকে জানাবো।

কারণ ৩: শরীরের রোগ

আগেই বলা হয়েছে, আমাদের মাথা থেকে প্রতিনিয়ত কিছু কিছু চুল পড়ে যায় এবং নতুন করে কিছু চুল গজায়। কিন্তু এক ধরনের ভাইরাস আছে, যা এই নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়ায় বাধার সৃষ্টি করে। তখন মাথার চুল ক্রমাগত কমতে থাকে। সোজাভাবে বললে, শরীর সুস্থ থাকলে, নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া বাধাহীনভাবে চলতে থাকে। কিন্তু শরীর অসুস্থ হলে, এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তখন চুল পড়ার হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যেতে পারে।

আলিম: আচ্ছা, ঊর্মিকে ধন্যবাদ। এখন আমি চার নম্বর কারণ সবাইকে বলবো।

কারণ ৪: বংশগত কারণ

প্রিয় শ্রোতা, বংশগত কারণেও আমাদের মাথার চুল পড়তে পারে, সৃষ্টি হতে পারে টাক। আপনার বাবার মাথায় টাক আছে? তাহলে আপনার মাথায় টাক পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। এ সমস্যা সাধারণত পুরুষদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। নারীরা এ থেকে মোটামুটি মুক্ত বলা চলে।

ঊর্মি: আচ্ছা, এখন আমি পাঁচ নম্বর কারণ সবাইকে বলবো।

কারণ ৫: বদভ্যাস

হ্যাঁ, বদভ্যাসই বলবো। আপনি যদি নিয়ম করে রাত জাগেন, রাত জেগে কম্পিউটার গেমস্ খেলেন বা জীবনযাপনের ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো ধরনের অনিয়ম করেন, একে বদভ্যাসই বলতে হবে। আর এ ধরনের বদভ্যাস থাকলে, আপনার চুল পড়ার আশঙ্কা বাড়বে। কারণ, প্রতিনিয়ত রাত জাগলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনির ওপর চাপ পড়লে চুল পড়ার আশঙ্কা বাড়ে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সুতরাং পুরুষ বন্ধুরা, রাত জাগার ব্যাপারে সাবধান!

আলিম: হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, চুল পড়ার কারণগুলোতো আমরা আলোচনা করলাম। এখন চুলের যত্নে করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের ৬টি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো আমরা।

পরামর্শ ১: অনিয়ম এড়িয়ে চলুন

চুলের যত্নে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সবধরনের অনিয়ম এড়িয়ে চলুন। নিয়মমাফিক খাওয়া-দাওয়া করুন, ব্যায়াম করুন, বিশ্রাম করুন, সময়মতো ঘুমান এবং সময়মতো জেগে উঠুন। ইংরেজিতে একটি কথা আছে: আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ, কিপস আ পারসন হেল্দি, ওয়েল্দি অ্যান্ড ওয়াইজ। আশা করা যায়, এতে আপনার চুলও স্বাস্থ্যবান থাকবে।

ঊর্মি: আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি দুই নম্বর পরামর্শ সবাইকে বলবো।

পরামর্শ ২: তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন

কম্পিউটার, টেলিভিশন এবং মোবাইল ফোনের মতো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে। তো, এসব যন্ত্রপাতি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন। তেজস্ক্রিয় পদার্থ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের পাশাপাশি চুলের জন্যও ক্ষতিকর।

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি ঠিক বলেছেন। এখন আমি তিন নম্বর পরামর্শ সবাইকে বলবো।

পরামর্শ ৩: পুষ্টিকর খাবার খান

নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান। যেমন পর্যাপ্ত ফল এবং ভিটামিনযুক্ত খাবার। তা ছাড়া, চুলের যত্নে কালো তিলের বীজ, কালো চাল, কালো মটরশুটি ইত্যাদি খেতে পারেন। পরিমিত শাকসবজিও খাবেন।

ঊমি: আচ্ছা, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি চার নম্বর পরামর্শ সবাইকে বলবো।

পরামর্শ ৪: চুলের সাজগোজ কম করুন

হ্যাঁ, প্রিয় শ্রোতা, এ প্রসঙ্গে খুব বেশি কথা না-বললেও চলে। চুলের সাজগোজ কম করা ভালো। বিশেষ করে চুলে রঙ করার ব্যাপারে পরিমিতিবোধের পরিচয় দিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে মাথার স্কাল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর মাথার স্কাল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। আরেকটি কথা, মাথার ত্বক সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখা চাই। তাতে খুসকি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। সপ্তাহে তিন বার ভালো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। এর বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো।

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি ঠিক বলেছেন। এখন আমি পাঁচ নম্বর পরামর্শ সবাইকে বলবো।

পরামর্শ ৫: শরীর অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিত্সকের শরণাপন্ন হোন

একটা কথা সবাইকে বলতে চাই যে, শরীরে কোন রোগ থাকলে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সা নেওয়া উচিত। শরীর সুস্থ থাকলে, আমাদের মাথার চুলও সুস্থ থাকবে; আর শরীর অসুস্থ থাকলে চুলও অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।

ঊর্মি: হ্যাঁ, আলিম ভাই ঠিক বলেছেন। এখন আমি ছয় নম্বর পরামর্শ অর্থাত্ আজকের অনুষ্ঠানের শেষ পরামর্শ সবাইকে বলবো।

পরামর্শ ৬: শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখুন

হ্যাঁ, গত অনুষ্ঠানে আমরা তো ওজন কমানোর কথা বলেছি। সত্যি কথা বলতে কি, ওজন স্বাভাবিক থাকলে আমাদের অসুস্থ হবার আশঙ্কা অনেক কমে যায়। তাই, শরীরের ওজন ঠিক রাখতে হবে। হ্যা, শরীরের ওজন স্বাভাবিক রাখার সাথে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকার একটা সম্পর্ক আছে বৈকি!

আলিম: কথা বলতে বলতে সময় ফুরিয়ে এলো। এখন বিদায় নেওয়ার পালা। প্রিয় শ্রোতা, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন'এখানে শেষ করতে হচ্ছে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত থাকলে আমাকে জানাতে কিন্তু ভুল করবেন না। আপনার সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।

ঊর্মি: আশা করি, ইমেইল বা টেলিফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে , তাহলে তাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমাদের ইমেইল ঠিকানো হলো ben@cri.com.cn সরাসরি আমাকেও ইমেল পাঠাতে পারেন। আমার নিজস্ব ইমেল ঠিকানা হলো wanghaiman@cri.com.cn

সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে আসছে রোববার একই সময়ে। চাই চিয়ান। (ওয়াং হাইমান/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040