0713
|
ঊর্মি: প্রিয় শ্রোতা, আপনি কি নিজের ওজন কমাতে চান? হ্যাঁ, আমি জানি, আজকাল অনেকেই নিজেদের ওজন সম্পর্কে সচেতন। তারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান এবং যারা মুটিয়ে গেছেন, তারা ওজন কমাতে চান। এটা ভালো কথা। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। কিন্তু ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় আমরা অনেকেই কিছু ভুল ধারণা দ্বারা প্রভাবিত হই। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সাবধান। সম্প্রতি ওজন কমানো সম্পর্কিত ৭টি ভুল ধারণা নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইটে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা আজকের অনুষ্ঠানে সেগুলো তুলে ধরতে চাই।
আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি। আমি প্রথমে আজকের প্রথম ভুল ধারণাটি নিয়ে আলোচনা করবো।
ভুল ধারণা ১: ওজন কমাতে চর্বিজাতীয় খাবার পুরোপুরি ত্যাগ করতে হবে
অনেকের ধারণা, চর্বিজাতীয় খাবারই মানুষকে মোটা বা স্থূল বানায়। তাই চর্বিজাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকলেই ওজন কমে যাবে এবং ফিগার স্লিম হবে। আসলে এ ধারণা ঠিক নয়। প্রথম কথা হচ্ছে পরিমিত মাত্রার চর্বি শরীরের জন্য প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, পরিমিত পরিমাণে চর্বিজাতীয় খাবার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বরং আমাদের সাহায্য করে।
ঊর্মি: হ্যাঁ, আলিম ভাই ঠিক বলেছেন। আসলে প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে চর্বিজাতীয় খাবার খেলে পেটে ক্ষুধা কম লাগে এবং এর ফলে শরীরে শর্করাজাতীয় খাবারের ইনটেক কমে যায়। এর মানে, পরোক্ষভাবে পরিমিত মাত্রার চর্বিজাতীয় খাবার আমাদের ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তো, এখন আমি দুই নম্বর ভুল ধারণা সবাইকে বলবো।
ভুল ধারণা ২: শরীরের ওজন কমাতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে
অনেকেই এই ভুল ধারণা পোষণ করেন যে, পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর আরও মোটা হয়। আসলে, পুষ্টিকর খাবারকে শরীরের ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী করার কোনো অর্থ হয় না। অতিরিক্ত খেলে যে কোনো ধরনের খাবারেই ওজন বাড়তে পারে। অন্যদিকে, শরীরের সুস্থতার জন্য পুষ্টিকর ও ভিটামিনযুক্ত খাবার প্রয়োজন। এটা যেমন হালকা-পাতলা মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রযোজ্য মোটা মানুষের ক্ষেত্রেও। যারা ওজন কমাতে চান, তারা প্রতিদিন কী ধরনের খাবার খাবেন, তার একটি তালিকা পুষ্টিবিদের কাছে থেকে নিতে পারেন। পুষ্টিবিদ আপনাকে এমন খাবার খেতে বলবেন, যা খেলে আপনার শরীরে পুষ্টির অভাব হবে না এবং আপনার ওজনও ধীরে ধীরে কমে যাবে। অবশ্য এক্ষেত্রে যথাযথ খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা অপরিহার্য।
আলিম: আচ্ছা, ঊর্মিকে ধন্যবাদ। এখন আমি তিন নম্বর ভুল ধারণা সবাইকে বলবো।
ভুল ধারণা তিন: বেশি পানি পান করা যাবে না
অনেকে মজা করে বলেন, মোটা মানুষ পানি খেলেও আরো মোটা হবে। কথাটা মজাদার হলেও, এর কোনো সত্যতা নেই। পানি খাওয়া কমিয়ে দিলে আপনার ওজন কমবে না। বরং যারা ওজন কমাতে চান, তাদের উচিত পর্যাপ্ত পানি পান করা। পানি খাওয়া কমিয়ে দিলে বরং আপনার ওজন বেড়ে যেতে পারে। আরেকটি কথা বলতে চাই যে, শরীরে পানির অভাব দেখা গেলে, তা আমাদের বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে। তার মানে, পর্যান্ত পানি না-খেলে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
ঊর্মি: আচ্ছা, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি চার নম্বর ভুল ধারণা বলবো
ভুল ধারণা ৪: ঝাল খাবার ওজন কমানোর জন্য সহায়ক
অনেকের ধারণা, ঝাল খাবার খেলে যেহেতু আমাদের শরীরে অনেক সময় ঘাম উত্পন্ন হয়, সেহেতু ঝাল খাবার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু, এ ধারণা ঠিক নয়। দীর্ঘকাল ধরে ঝাল খাবার খেলে বরং আমাদের পাকস্থলী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন কি, পেট ব্যথা ও পেটে রক্তক্ষরণ হতে পারে। আরেকটি কথা, অতিরিক্ত ঝাল খাবার আমাদের ত্বকের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।
আলিম:
ভুল ধারণা ৫: খালি পেটে শরীরচর্চা শরীরের জন্য খারাপ
শরীরের ওজন কমাতে শরীরচর্চার বিকল্প নেই। শরীরের ওজন ঠিক রাখতে এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতেও নিয়মিত শরীরচর্চা অপরিহার্য। কিন্তু অনেকে মনে করেন, খালি পেটে শরীরচর্চা করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এটা ভুল ধারণা। যারা ওজন কমাতে চান বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা নির্ভয়ে খালি পেটে শরীরচর্চা করতে পারেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস শরীরচর্চা কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা জানান, খাবার খাওয়ার এক থেকে দুই ঘন্টা আগে পর্যাপ্ত শরীরচর্চা শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। অতএব নিয়মিত খালি পেটে হাঁটাহাঁটি করুন; নাচুন; জগিং ও সাইক্লিং করুন। কোনো সমস্যা নেই।
ঊর্মি: আচ্ছা, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ। এখন আমি ছয় নম্বর ভুল ধারণা সবাইকে বলবো।
ভুল ধারণা ৬: সকালের নাস্তা না-খাওয়া ওজন কমানোর জন্য সহায়ক
প্রিয় শ্রোতা, নাস্তার কথা আগের অনুষ্ঠানগুলোতে আমরা তো অনেকবার বলেছি। হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে সকালের নাস্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকের ভুল ধারণা আছে যে, ওজন কমাতে চাইলে সকালের নাস্তা না-খাওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে নাস্তা না-করলে দিনের অন্যান্য সময়ে খাবার গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।
আলিম: আচ্ছা, ঊর্মিকে ধন্যবাদ। এখন আমি সাত নম্বর ভুল ধারণা অর্থাত্ আজকের শেষ ভুল ধারণা সবাইকে বলবো।
ভুল ধারণা ৭: ওজন কমাতে ক্রাস প্রোগ্রাম কার্যকর
অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর জন্য স্বল্পমেয়াদী ক্রাস প্রোগ্রাম অনুসরণ করেন এবং এর জন্য খুবই স্বল্প খাবার গ্রহণ করেন। এভাবে হয়তো অল্প সময়ে অনেকটা ওজন কমানো যায়, কিন্ত এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এ ধরনের ক্রাস প্রোগ্রামে স্বাধারণত খুবই কম খাবার গ্রহণ করা হয়। এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী হলে মানুষ নানান শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তাই, ওজন কমানোর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাই ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত। পরিমিত খাদ্যগ্রহণ ও পর্যাপ্ত ব্যায়ামের সমন্বয়ে সে প্রক্রিয়া হতে হবে সার্বিক ধরনে।
ঊমি: কথা বলতে বলতে সময় ফুরিয়ে এলো। এখন বিদায় নেওয়ার পালা। প্রিয় শ্রোতা, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন'এখানে শেষ করতে হচ্ছে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত থাকলে আমাকে জানাতে কিন্তু ভুল করবেন না। আপনার সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।
ঊর্মি: আশা করি, ইমেইল বা টেলিফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে , তাহলে তাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমাদের ইমেইল ঠিকানো হলো ben@cri.com.cn সরাসরি আমাকেও ইমেল পাঠাতে পারেন। আমার নিজস্ব ইমেল ঠিকানা হলো wanghaiman@cri.com.cn
সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে আসছে রোববার একই সময়ে। চাই চিয়ান।(ওয়াং হাইমান/আলিম)