0216
|
ঊর্মি: প্রিয় বন্ধু, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে ১০টি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো। এই দশটি পরামর্শ শুনে সে অনুসারে কাজ করলে আপনার পক্ষে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সহজতর হবে। শুরুতে আলিম ভাইকে একটি প্রশ্ন করতে চাই। আলিম ভাই, আপনি কি কখনো নিজেকে চিঠি লিখেছেন? (আলিম: নিজেকে চিঠি লেখা! সত্যি বলছি, আমি এর আগে এমন আজব কথা শুনিনি!! নিজের সঙ্গে কথা বলার কথা শুনেছি; কিন্তু চিঠি লেখা? না, শুনিনি মোটেই!)। আসলে নিজেকে চিঠি লেখা অনেকটা নিজের সঙ্গে কথা বলার মতোই। তো, আমাদের আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানের আলোচ্য বিষয় 'দশটি পরামর্শের' প্রথম পরামর্শ হচ্ছে: নিজেকে চিঠি লিখুন। এক জরিপে দেখা গেছে, মন খারাপ হলে যারা নিজেকে নিজে চিঠি লেখেন, তারা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকেন। আপনি কোনো কারণে কষ্ট পেয়েছেন? হতাশায় ভুগছেন? নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বা বুঝিয়ে-শুনিয়ে বা সাহস দিয়ে চিঠি লিখুন। অন্য কেউ আপনাকে এসব সমস্যার কথা বললে তাকে আপনি যেসব কথা বলে সান্ত্বনা দিতেন, সেসব কথা গুছিয়ে নিজেকে লিখুন। তারপর এক সময় সে চিঠি খোলা মন নিয়ে পড়ুন। দেখবেন আপনি আগের তুলনায় ভালো বোধ করবেন; নতুন করে সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা পাবেন।
আলিম: ঊর্মি, এটি একটি অভিনব পরামর্শ! আমি আগে কখনো শুনিনি। তবে, শুনে মনে হচ্ছে, এটি খুবই কার্যকর একটি পরামর্শ। আমি নিজে এখন থেকে এই পরামর্শ অনুসারে কাজ করার চেষ্টা কবরো। আপনাকে ধন্যবাদ। তো, প্রিয় শ্রোতা, আশা করি আপনারা ঊর্মির পরামর্শ আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবেন এবং এর কোনো ইতিবাচক ফল পেলে আমাদের চিঠি লিখে জানাবেন।
যাই হোক, এবার আমি আজকের দ্বিতীয় পরামর্শটি শোনাবো। দ্বিতীয় পরামর্শটি হচ্ছে: সবসময় সত্য কথা বলুন। সত্যনিষ্ঠা হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে ভাল গুণ। আপনি যদি সবসময় সত্য কথা বলেন, তবে আপনি শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে তুলনামূলকভাবে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন তিনটির বেশি মিথ্যা কথা বলে না, তারা যারা বেশি বলে তাদের তুলনায় অন্যের কাছে অধিক আস্থাবান হয়। তার মানে এই নয় যে, নিয়ম করে প্রতিদিন তিনটি মিথ্যা কথা বলতে হবে। আসলে, সবসময় সত্য কথা বলাই কল্যাণকর। যিনি সততার চর্চা করেন, তাকে কখনো মিথ্যা বলতে হয় না। সত্যবাদী মানুষ মনের দিক থেকে অনেক শক্তিশালী হয়ে থাকেন।
ঊর্মি: আলিম ভাই, আমার প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়ছে বিখ্যাত কবি কিটস্-এর কথা। তিনি বলেছিলেন: সত্যই সুন্দর, সুন্দরই সত্য। আমাদের সবার উচিত সত্য পথে থাকা ও সত্য কথা বলা। আচ্ছা, এবার আমি তৃতীয় পরামর্শটি বলছি। তৃতীয় পরামর্শটি হচ্ছে: সময়-সুযোগ পেলে অন্যকে সাহায্য করুন। যারা সময় ও সুযোগ পেলে সক্রিয়ভাবে অন্যকে সাহায্য করেন, তারা তুলনামূলকভাবে বেশি আনন্দে থাকেন এবং দীর্ঘায়ূ হন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্যকে সাহায্য করার মাধ্যমে মানুষ তার নিজের কাছে আরো মূল্যবান হতে পারে। এক্ষেত্রে বড় বড় ব্যাপারে অন্যকে সাহায্য করতে হবে, এমন নয়। ছোট ছোট ব্যাপারে অন্যকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন; যেমন: কাউকে রাস্তা অতিক্রম করতে সাহায্য করা, বাসে কোনো প্রবীণকে বা শিশুকে আসন ছেড়ে দেওয়া, অন্যের জন্য দরজা খুলে দেওয়া ইত্যাদি। এমন ছোট ছোট কাজ আপনাকে আনন্দ দেবে। আর আনন্দ মানুষকে সুস্থ রাখে।
আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি, কথাটি পুরোপুরি সত্য। অন্যকে সাহায্য করলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। তা ছাড়া, আপনি যখন অন্যকে সাহায্য করবেন, তখন অন্যরাও আপনাকে সাহায্য করবে। সমাজে পারস্পরিক সহযোগিতার এই মনোভাব একটি সুস্থ পরিবশে সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আর সুস্থ পরিবেশ আমাদের শরীর ও মনের জন্য কল্যাণকর।
সে যাক, আজকের চতুর্থ পরামর্শ হচ্ছে: প্রতিদিন অন্তত ২১ বার গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং ছাড়ুন। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে তিনটি সময়ে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজটি করা ভালো। সকালে দশ'টায় কাজে ব্যস্ত থাকার সময়, বিকাল দুটা থেকে তিন'টার মধ্যে যখন শরীরে ক্লান্তি চলে আসে এবং রাতে শোবার আগে। তিন সময়ে প্রতিবার ৭ বার করে। এতে আপনার হৃত্পিণ্ড সুস্থ থাকবে এবং ফুসফুস থাকবে ভালো।
ঊর্মি: হ্যাঁ, আলিম ভাইকে ধন্যবাদ এতো মূল্যবান মতামত দেয়ার জন্য। এখন আমি পাঁচ নম্বর পরামর্শটি সবাইকে জানাবো। আশা করি, পুরুষ শ্রোতারা বেশি মনোযোগ দিয়ে এটি শুনবেন। হ্যাঁ, পাঁচ নম্বর পরামর্শটি হচ্ছে: নিজের ঘর ও অফিসকক্ষ গোছগাছ করে রাখুন। এক জরিপ ফলাফল থেকে জানা গেছে: প্রতিদিন ঘরে বা অফিস গোছগাছ করার জন্য খানিকটা সময় ব্যয় করলে, শরীর তুলনামূলকভাবে অধিক ভালো থাকে। গোছগাছের ব্যাপারটা মেয়েরা সাধারণত এমনিতেই করেন। তাই বিশেষভাবে পুরুষ শ্রোতাবন্ধুদের বলবো, প্রতিদিন ঘর গোছাতে খানিকটা সময় ব্যয় করুন বা খাওয়ার পর রান্না ঘরের কাজ করুন। আর অফিসে নিজের টেবিল-চেয়ার নিজেই পরিস্কার করুন বা গোছগাছ করে নিনি। আপনার আশপাশটা পরিস্কার থাকলে, আপনার মন ভালো থাকবে। ধুলাবালি থেকে আপনার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকলে আপনার শরীরও সুস্থ থাকবে। উপরি হিসেবে পাবেন শরীরচর্চার সুবিধা।
তো, অনেক পরামর্শ হলো; শ্রোতাদের এবার খানিকটা বিশ্রাম দেওয়া যেতে পারে। আসুন একটা গান শুনি; তারপর আরো কয়েকটা পরামর্শ দেওয়া যাবে।
আলিম: হ্যাঁ, গানটি কেমন লাগল? আশা করি ভাল লেগেছে। এখন আমি আজকের অনুষ্ঠানের ছয় নম্বর পরামর্শটি সবাইকে শোনাবো। পরামর্শ নম্বর ছয়: শোবার আগে আগামী কাল কী কী করবেন তার একটি ছোট্ট তালিকা তৈরি করে ফেলুন আপনার নোট বইয়ে। তারপর ঘুমাতে যান। আপনার ভালো ঘুম হবে। কালকে আপনি যা করবেন, সে বিষয়ে আপনার চিন্তাগুলো তখন ঠাঁই নেবে আপনার নোটবুকে। আপনার মাথা হবে পরিস্কার ও ঘুমের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এটি একটি মানসিক ব্যাপার। আপনি যদি কালকের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি মাথায় নিয়ে ঘুমাতে যান, তাহলে সে আপনাকে বিরক্ত করবে; তখন আপনি শান্তিমতো ঘুমাতে পারবেন না। তাই, ঘুমানোর আগে কাজটির চিন্তা নোটবুকে পাচার করে দিন।
ঊর্মি: আলিম ভাই, এটা কিন্তু বেশার মজার এবং কার্যকর। আশা করি, শ্রোতার এটা ট্রাই করে দেখবেন। আচ্ছা, এখন আমি সাত নম্বর পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করবো। সাত নম্বর পরামর্শ হচ্ছে: প্রতিদিন অন্তত ৬ মিনিট বই পড়ুন। বই পড়া খুবই ভালো অভ্যাস। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আজকাল যেন আধুনিক মানুষের বই পড়ার সময় নেই। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বই যেন মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। এ অবস্থায় ব্রিটেনের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ৬ মিনিট বই পড়লে মানুষের শরীর ও মনের ওপর অনেক চাপ কমে যায়। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, শরীর-মন সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে বই পড়া গান শোনার চেয়েও বেশি ভূমিকা পালন করে।
আলিম: প্রিয় শ্রোতা, তার মানে এই নয় যে আপনি ছয় মিনিটের বেশি সময় ধরে বই পড়বেন না। যত বেশি সময় ধরে বই পড়বেন, তত ভালো। বই কিনুন, বই পড়ুন। তো, এখন আমি আট নম্বর পরামর্শটি সবাইকে শোনাবো। আট নম্বর পরামর্শ হচ্ছে: অন্যের প্রশংসাকে গুরুত্ব দিন, নিজের আনন্দ প্রকাশ করুন। অন্যের কাছে প্রশংসিত হওয়া একটি ইতিবাচক ব্যাপার। প্রশংসা মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। তাই অন্যের প্রশংসাকে গুরুত্ব দিন। যখন কেউ আপনার প্রশংসা করে, তখন আপনি যে তাতে খুশি হয়েছেন, তা প্রকাশ করুন। এমনভাবে তাকে ধন্যবাদ দিন বা হাসুন যেন তিনি আপনার আনন্দ উপলব্ধি করতে পারেন। তাহলে, তিনি আপনাকে আবারো প্রশংসা করতে উত্সাহ পাবেন। প্রশংসা শুনে অতিরিক্ত বিনয়ী হবার দরকার নেই। বিনয় ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত বিনয় ভালো নয়। আপনি যদি এমন ভাব করেন যে, প্রশংসাকারী আপনার অযথাই প্রশংসা করছে, তাহলে প্রকারান্তরে তাকে অসম্মানও করা হয়; তার বিচার-বুদ্ধির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। অবশ্য যারা স্বার্থের জন্য অযথাই আপনার প্রশংসা করে, তাদের ব্যাপারে সাবধান হওয়াও উচিত।
ঊর্মি: আলিম ভাই, আপনি ঠিক বলেছেন। প্রশংসা শুনতে সবারই ভালো লাগে। আমারও ভালো লাগে। ঠিক আছে, এখন আমি নয় নম্বর পরামর্শটি সবাইকে শোনাবো। পরামর্শ নম্বর নয়: প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খান এবং মনোযোগ দিয়ে খান। আমরা সবাই জানি যে প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর ভালো থাকে এবং শরীর ভালো থাকলে সাধারণত মনও ভালো থাকে। হ্যা, হজমে সহায়ক ও শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার খাওয়া উচিত আমাদের। যেমন: দই। দই আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে খেতে পারেন। এমন আরো খাবার প্রতিদিন খাওয়ার চেষ্টা করুন। কিন্তু খাবার শুধু খেলেই হবে না; খেতে হবে মন দিয়ে, গুরুত্বসহকারে। খাওয়া ও আড্ডা দুটো একসাথে না-করাই ভালো। কারণ, এসময় অনেক সময় আড্ডাটাই মুখ্য হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যগ্রহণের সময় যদি আড্ডাটা মুখ্য হয়ে যায়, তবে খাদ্যগ্রহণের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে না। অতএব যখন খাবেন, মন দিয়ে খান। আড্ডা মারুন খাদ্যগ্রহণের পর।
আলিম: আচ্ছা, প্রিয় শ্রোতা, এখন আমি আজকের ১০ নম্বর তথা শেষ পরামর্শটি শোনাবো। পরামর্শ নম্বর দশ: গোসল করার সময় সুন্দর সুন্দর কল্পনা করু। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গরম পানিতে স্নান করার সময় মানুষের শরীরের ৭২ শতাংশ ক্লান্তি দূর হয়ে যেতে পারে। তবে, শর্ত হচ্ছে, এসময় সুন্দর সুন্দর কল্পনা করতে হবে। এসব করার উদ্দেশ্য হচ্ছে মন ও শরীরের ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ফেলা এবং শরীর ও মনকে রিলাক্স হতে দেওয়া। সুস্থ থাকার ও সুখি হতে হলে মাঝেমাঝে মন ও শরীরকে চাপমুক্ত করতে হয়। গোসলের সময় এটা করা তুলনামূলকভাবে সহজ। গোসলের সময় বিশেষ ধরনের তেল শরীরে মেখে নিলে উপকার পেতে পারেন।
ঊর্মি: সুপ্রিয় শ্রোতা, এতক্ষণ আমরা মন ও শরীর সুস্থ রাখতে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া দশটি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করলাম। আশা করি আপনারা পরামর্শগুলো অনুসরণ করে উপকৃত হবেন। তো, এবার বিদায় নিতে হবে। এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আপনার সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।
আশা করি, আপনারা ইমেইল বা টেলিফোনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। কোনো প্রশ্ন থাকলে, তা-ও করতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো http://Bengali.Cri.com .cn ইমেইল ঠিকানো হলো ben@cri.com.cn আপনি সরাসরি আমাকে ইমেইল পাঠাতে পারেন। আমার ইমেইল ঠিকানা হলো wanghaiman@cri.com.cn
সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে আসছে রোববার একই সময়ে। চাই চিয়ান। (ঊর্মি/আলিম)