Web bengali.cri.cn   
সুস্থ থাকার আছে যে উপায়
  2014-08-13 18:29:15  cri


ঊর্মি: আমরা সবাই সুস্থ থাকতে চাই, ভালো থাকতে চাই। সুস্থ থাকার জন্য অনেক সময় কঠিন কঠিন কাজ করার দরকার পড়ে না। কিছু সহজ ও সরল কাজ করলে ও ছোট ছোট কিছু বিষয়ের প্রতি নজর রাখলে ভালো থাকা যায়, সুস্থ ও সুখি জীবন লাভ করা যায়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের 'এম এস এন স্বাস্থ্য' নামক এক ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আচ্ছা, আলিম ভাই, আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন' অনুষ্ঠানে আমরা এ বিষয়েই কথা বলি, কী বলেন?

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি, নিশ্চয়ই। চলুন শুরু করি আজকের অনুষ্ঠান।

ঊর্মি: প্রতিদিনে মাশরুম খান। মাশরুম মানুষের শারীরিক সুস্থতায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। মাশরুম শরীরের রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১০ গ্রাম মাশরুম খেলে নারীদের স্তন ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৬৪ শতাংশ কমে যায়।

আলিম: হ্যাঁ, মাশরুমের পাশাপাশি প্রতিদিন খানিকটা খনিজ উপাদান মিশ্রিত পানি বা প্রকৃত মিনারেল ওয়াটার পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যে খনিজ পানি পান করি, তার মধ্যে যে উপাদান থাকে তা আমাদের শরীরের বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়ামকে দূর করতে সাহায্য করে। গবেষণায় প্রমাণিত যে, অ্যালুমিনিয়াম আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। যুক্তরাষ্ট্রের এক নতুন গবেষণার ফল অনুসারে, টানা ১২ সপ্তাহ প্রতিদিন এক লিটার করে মিনারেল ওয়াটার পান করলে কার্যকরভাবে শরীরের অ্যালুমিনিয়ামের পরিমাণ হ্রাস পায়।

ঊর্মি: আলিম ভাই অনেক ভাল বলেছেন। আমার বিশ্বাস, থেকে শ্রোতারা আমার মতোই উপকৃত হবেন। এখন আমি শরীরচর্চা বিষয়ে কথা বলতে চাই। গবেষকরা বলছেন, প্রতি ঘন্টায় ১০ মিনিটের শরীরচর্চা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যার অফিসে লম্বা সময় ধরে বসে বসে কাজ করেন, তারা প্রতি ঘন্টায় একবার দশ মিনিটের জন্য উঠে হাত-পা নাড়াচাড়া করতে পারেন, হাটাহাটি করতে পারেন বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এতে একটানা বসে কাজ করার ক্ষতি থেকে আপনার শরীর রেহাই পাবে; আপনি সুস্থ থাকবেন। আরো সহজ করলে বললে, আপনাকে অফিস থেকে বাইরে যেতে হবে না বা আপনার রুম থেকেও বেরুতে হবে না; স্রেফ আসন থেকে উঠে দাঁড়ান, একটু হাটাহাটি করুন, হাতপা নাড়ুন। দশ মিনিট পর আবার নিজের আসনে বসে কাজ শুরু করুন। আপনি দাঁড়িয়ে বা অফিসকক্ষে পায়চারি করতে করতেও অনেক কাজ করতে পারেন: ফোন করতে পারেন, কফি বানাতে পারেন, টিভি দেখতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

আলিম: আচ্ছা, এখন আমি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে চাই। তা হল কৃতজ্ঞতার মনোভাব পোষণ করা। প্রতিদিন আমাদের চারপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটতে পারে, যা আমাদের মনকে বিষন্ন করে তোলে; আমাদের অসুখী করে। কিন্তু পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা আমাদের মনে প্রশান্তি, সাহস আর বাঁচার আগ্রহ সৃষ্টি করে। শিশু-সন্তানের মুখের হাসি, বন্ধুর আন্তরিকতা, বড় ভাই-বোনদের সুপরামর্শ, সহকর্মীর সহযোগিতা, বসের প্রশংসা ইত্যাদি সবকিছুই আমাদের মন ভালো করে দেয়; আমাদেরকে দ্বিগুণ উত্সাহে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাই আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত, সবসময় মনে কৃতজ্ঞতার মনোভাব পোষণ করা উচিত। প্রতিদিন আপনি যাদের আচরণে আনন্দ অনুভব করছেন, যাদের উত্সাহ-উদ্দীপনা ও সাহায্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, তাদের ধন্যবাদ দিন। এতে আপনি মানসিকভাবে অনেক শান্তি পাবেন; আর মানসিক শান্তি হচ্ছে শারীরিক সুস্থতার একটি অন্যতম প্রধান শর্ত। তা ছাড়া, আপনি যদি ধার্মিক হন, তবে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ হোন। তিনি আপনাকে জীবন দিয়েছেন, সৃষ্টি করেছেন। প্রতিনিয়ত তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, তাকে ধন্যবাদ দিন। দেখবেন, আপনি তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো বোধ করবেন। জীবনের অনেক দু:খ আর বেদনার মধ্যেও আপনি খুঁজে পাবেন ভালোভাবে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।

তো, অনেক কথা হলো, এবার একটা গান শুনলে মন্দ হয় না।

ঊর্মি: প্রিয় শ্রোতা, গানটি কেমন লাগলো? আশা করি ভাল লেগেছে। এখন আমি ক্ষুদ্র বার্তা বা মাইক্রো মেসেজ ও মাইক্রো ব্লগ নিয়ে কিছু কথা বলবো। আপনি কি প্রতিদিন ক্ষুদ্র বার্তা আদান-প্রদান করেন বা ব্যবহার করে মাইক্রো ব্লগ? হ্যাঁ, আমার বিশ্বাস, অনেকেই তা করেন। তাহলে আমি সবাইকে একটি ছোট অনুরোধ করবো। প্রতিদিনের জন্য এমন একটা সময় নির্ধারণ করুন যখন আপনি কোনো ক্ষুদ্র বার্তা আদান-প্রদান করবেন বা মাইক্রো ব্লগ ব্যবহার করবেন না। কারণ ব্রিটেনের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা বাড়তে পারে। তাই, সবার উচিত মাঝেমাঝে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা এবং কথা বলা। এতে পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক মজবুত হবে এবং ব্যক্তির মানসিক উদ্বেগ অনেক প্রশমিত হবে।

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি ঠিক বলেছেন। এখন আমি একটি মজার বিষয় নিয়ে কথা বলবো। প্রিয় শ্রোতা, আপনি কি শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে চান? বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান? তাহলে একটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন। উপায়টি কী? প্রতিদিন আপনি কী কী খাচ্ছেন, তা ডায়েরিতে লিখে রাখুন। এতে দিনশেষে আপনি বুঝতে পারবেন যে, সারাদিনে আপনি কতটুকু খেয়েছে, শরীরে কতো ক্যালরি গ্রহণ করেছেন। এতে আপনার নিজের খাদ্যাভাস সম্পর্কে এক ধরনের সচেতনা গড়ে উঠবে। এক হাজার ৬ শ' জন লোকের মধ্যে একটি জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, যারা নিজেদের খাবারের হিসেব ডায়েরিতে টুকে রাখে, তাদের ওজন তুলনামূলকভাবে ২০ শতাংশ কম হয়।

ঊর্মি: হ্যাঁ, আলিম ভাই, কথাটি শুনে অনেক মজা পেয়েছি। শ্রোতা ট্রাই করতে পারেন। এবার আমি আরেকটি মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আচ্ছা আলিম ভাই, আপনি কোন হাতে খাবার খান? (আলিম: আমি ডান হাতে খাবার খাই।) হ্যাঁ, ডান হাতেই অধিকাংশ মানুষকে খাবার খেতে দেখা যায়। আমার বন্ধুদের কেউ কেউ অবশ্য বাম হাতেও খাবার খায়। তো, যে কথাটি বলছিলাম। আপনি যদি খাদ্যগ্রহণ কমাতে চান, নিজের ওজন কমাতে চান, তবে হাত বদলে নিন। মানে, যিনি ডান হাতে খেতে অভ্যস্ত, তিনি বাম হাতে খাওয়া শুরু করুন; আর যিনি বাম হাতে খেয়ে অভ্যস্ত, তিনি ডান হাতে খান। এতে কী হবে? গবেষণায় দেখা গেছে, এভাবে করলে একজন মানুষ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত খাবার কম খায়। বুঝতেই পারছেন, খাবার কম খাওয়া মানে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকা বা শরীরের ওজন ধীরে ধীরে কমে যাওয়া।

আলিম: হ্যাঁ, ঊর্মি, এটি সত্যি মজার অথচ কার্যকর একটি উপায়। আমি এটি ট্রাই করে দেখবো। তবে, আমি যখন ক্যান্টিনে খাই, তখন কাঠি ব্যবহার করি। অনেক কষ্টে আমি কাঠি দিয়ে খাওয়া শিখেছি। এখন যদি বা হাত দিয়ে খেতে চাই তাহলে আমাকে অনেকদিন ধরে তা শিখতে হবে এবং আমি ৫০ শতাংশ খাবার খেতে পারবো কি না সন্দেহ! হা হা হা । তারপরও আমি এটা ট্রাই করবো আশা করি।

এখন আমি অন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলবো। সময়ের আগে কাজ শেষ করার অভ্যাস করুন। এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, যার নিজেদের কাজ দেরীতে সম্পন্ন করেন, তাদের অনিদ্রা রোগ হতে পারে বা নিদেনপক্ষে তাদের রাতে ভালো ঘুম হবে না। আর এর ফলে তাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অন্যদিকে, যারা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাজ শেষ করে ফেলেন বা শেষ করে ফেলার অভ্যাস গড়ে তোলেন, তাদের ভালো ঘুম হয়। বিষয়টা সহজ। হাতের কাজ শেষ হয়ে গেলে রাতে আর দুশ্চিন্তা নিয়ে বিছানায় যেতে হয় না। অতএব শান্তির ঘুম হয়। তাই, হাতের কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করা অভ্যাস গড়ে তুলুন, ভালো থাকুন।

ঊর্মি: দেখতে দেখতে সময় ফুরিয়ে এলো। এবার বিদায় নিতে হবে আজকের 'স্বাস্থ্য ও জীবন'অনুষ্ঠান থেকে। সুপ্রিয় শ্রোতা, এ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না। আপনার সুচিন্তিত ও পর্যালোচনামূলক মতামতের প্রত্যাশায় রইলাম।

আশা করি, আপনি ওয়েবসাইটের মেইল বক্স, ইমেইল বা টেলিফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে তা-ও আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা হলো http://Bengali.Cri.com .cn ইমেইল ঠিকানো হলো ben@cri.com.cn আপনি সরাসরি আমাকে ইমেইল পাঠাতে পারেন। আমার ইমেইল ঠিকানা হলো wanghaiman@cri.com.cn

সবাই ভাল থাকুন, আনন্দে থাকুন। আবার কথা হবে আসছে রোববার একই সময়ে। চাই চিয়ান। (ঊর্মি/আলিম)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040