আমার স্ত্রী আগে ফ্রান্সে শপিং করেছে। সে দেখেছে যে, প্রায় ৮০ বছর বয়স্ক ফ্রান্সের এক বৃদ্ধা নারী একটি হাই হিলের জুতো পরে দেখছে। ওরেবাবা! এ ধরনের দৃশ্য বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যাবে না। আমার স্ত্রী সে বৃদ্ধা নারীর দেহের পোশাকসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও খেয়াল করেছে। চমত্কার হাই হিলের জুতো পরার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্নভাবে সে নতুন জুতো পরখ করে দেখে। ঠিক যেনো অল্প বয়ষ্ক তরুণী।
হয়তো অনেক পুরুষ না জানে যে, জুতো হচ্ছে অনেক নারীর প্রিয় জিনিস। যেমন পুরুষ পছন্দ করে গাড়ি। বয়স বেশি হলেও ফ্রান্সের নারীরা হাই হিলের জুতো পরে। এটি জীবনের এক বিশেষ স্টাইল! অন্য দেশের অনেক নারী মনে করেন যে, আমি কোন দিনই নবীনের স্বাদ পাবো না। মন থেকে বুড়িয়ে যায় সে। সৌন্দর্য চর্চাও ছেড়ে দেয়।
ফ্রান্সের নারীরা যে শুধু পুরুষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই সৌন্দর্য চর্চা করে তা ঠিক নয়। সৌন্দর্য বজায় রাখা তাদের একটি দায়িত্বের মতো।
হয়তো বিভিন্ন দেশের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কারণে ফ্রান্সের নারী অন্য দেশের নারীর চেয়ে ভাগ্যবান। ফ্রান্সের পুরুষদের ধারণা চল্লিশ বছর বয়সের নারী সবচেয়ে সুন্দর। কারণ এ অবস্থায় বেশিরভাগ নারীর একটি স্থিতিশীল চাকরি থাকে, তার জীবনেও প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকে। এমনকি অর্থনৈতিক অবস্থাও বেশ ভালো থাকে। ওই বয়সে একজন নারী থাকে পরিপূর্ণ, রুচিশীল ও আকর্ষণীয়। এ কারণেই ফ্রান্সে আমরা সবসময় দেখি যে ২০ বছর বয়সের তরুণরা ৪০ বছর বয়সের নারীদের পছন্দ করে।
শত শত বছর ধরে ফ্রান্স ফ্যাশন জগতের নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু ফ্রান্সের রাস্তায় স্থানীয় নারীরা কোন হাই হিলের জুতো পরে না। ফ্রান্সের নারীরা অনুকরণ পছন্দ করে না। তারা নিজের স্টাইলই খুশি।
অনেক দেশের নারীর মা হবার পর বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণ তাদের শিশুদের ওপর দেয়। কিন্তু ফ্রান্সের নারীরা মা হওয়ার পরও এক সপ্তাহের মাথায় হাই হিল শু পরে শপিংয়ে বের হয়।
অল্প কিছু ফ্রান্সের নারী ডায়েট কন্ট্রোল করে থাকে। প্রতিদিন তারা চমৎকার, সুস্বাদু খাবার গ্রহণ করে। কিন্তু তারপরও তারা শারীরিকভাবে যথেষ্ট আকর্ষণীয় থাকে। কারণ তারা starvation curve therapy মেনে চলে। এটি হলো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি স্বাস্থ্যকর থেরাপি। এ থেরাপি নারীদেহকে ৫ বছর আগের রূপ ফিরিয়ে দেয়।
এছাড়া, ফ্রান্সের অল্প নারীই তরুণী অবস্থায় প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করে। কিন্তু ৩০ বছর বয়স হলে প্রসাধনী ব্যবহার শুরু করে। আমরা দেখি যে ৪০, ৫০ এমনকি ৬০ বয়স্ক বছরের নারীদের মধ্যে কোন পার্থক্য বুঝতে পারা যায় না। মুখে ভাঁজ থাকলেও তার শরীর বেশ ফিট থাকে। কারণ, সৌন্দর্যের ওপর ফ্রান্সের নারীরা বেশি গুরুত্ব দেয়। মন দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। এটা বিশ্বের অন্যান্য দেশের নারীদের শেখা উচিত।
অনেক বন্ধু বলেন যে, চেহারার চেয়ে মনের সৌন্দর্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, মনের সৌন্দর্য অবশ্যই সব সৌন্দর্যের ভিত্তি, তারপরও আমাদের বাইরের সৌন্দর্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর যত্ন করা, রক্ষা করার দায়িত্বও আমাদের।