0723lvyou.m4a
|
২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন ফিং কাজাখস্তানের নাজারবায়েভ বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রথমবারের মতো 'রেশম পথ অর্থনৈতিক অঞ্চল' প্রতিষ্ঠার কৌশলগত ধারণা এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে মানবীয় যোগাযোগ, সড়ক যোগাযোগ, বাণিজ্যিক লেনদেন, মুদ্রা বিনিময় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে আন্তঃআঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এদিকে, সিনচিয়াং এশিয়া ও ইউরোপের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। চীনের পশ্চিমমুখী উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সিনচিয়াং প্রস্তাবিত 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলে' অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত 'দ্বিতীয় কেন্দ্রীয় সিনচিয়াং কার্য বিষয়ক আলোচনা সভায়' বলা হয়েছে যে, সিনচিয়াংয়ের উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া আরো দ্রুততর করতে হবে এবং একে 'রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের' কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এমনটি করা হলে, সিনচিয়াংয়ের উন্নয়নের আরেকটি নতুন উপায় সৃষ্টি হবে।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পলিট ব্যুরোর সদস্য, সিনচিয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পার্টি কমিটির সম্পাদক চাং ছুন সিয়ান মনে করেন, সিনচিয়াং উন্নয়নের স্বর্ণযুগে আছে। তিনি বলেন, "সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কেন্দ্রের জোরালো সমর্থনে সিনচিয়াংয়ে সুদূরপ্রসারী উন্নয়নের সাথে জড়িত অবকাঠামো ও মৌলিক শিল্পসংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। সিনচিয়াংয়ের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে এগুচ্ছে। ২০১৩ সালে সিনচিয়াংয়ে উত্পাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১.১ শতাংশ। এক্ষেত্রে মাথাপিছু উত্পাদনের মূল্য দাঁড়ায় ৬১৭৪ মার্কিন ডলার। এসময় সরকারি আয় ২৪.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গোটা সমাজের স্থাবর সম্পত্তি ও বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের মাথাপিছু ব্যবহারযোগ্য আয় ১০.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যটন শিল্পের মোট আয় ১৬.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিকে, লানচৌ থেকে সিনচিয়াংগামী রেলপথের দ্বিতীয় লাইনও চালু হবে। এ ছাড়া সিনচিয়াংয়ে চালু হবে উচ্চগতির রেলপথ। এর ফলে সিনচিয়াংয়ে যাতায়াতের সময় অনেক কমে যাবে। যাত্রী ও মাল পরিবহনের সামর্থ্যও বেড়ে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বলা যায়, সিনচিয়াংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় নতুন সুযোগ যুক্ত হয়েছে।"
সিনচিয়াংয়ের উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির পরিচালক চাং ছুন লিন বলেন, সার্বিক পরিবহনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলে মানুষ, পণ্য ও তথ্য বিনিময় আরো দ্রুততর হবে। চাং ছুন লিন বলেন, "আমি মনে করি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও সহজতর করা। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে মানুষের চলাচল ও পণ্য স্থানান্তর সহজতর হবে। এভাবে সকলের কল্যাণ করা যাবে। এটা হবে রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অন্যতম সুফল।"
ভবিষ্যতে সিনচিয়াংয়ের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে জনগণের জীবিকার সাথে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত করার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। সিনচিয়াং সমাজ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক কাও চিয়ান লোং বলেন, "জনগণের জীবিকার সাথে উন্নয়নের গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলা দরকার। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা থেকে একদিকে পারস্পরিক কল্যাণ ও সুবিধা পাওয়া উচিত, এবং অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত হওয়া উচিত। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ অঞ্চলসংশ্লিষ্ট দেশগুলোর জনগণ উপকৃত হবে। যেমন, পণ্য বিনিময়ের গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি শুল্কবিভাগসংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস পাবে, আন্তঃদেশীয় পর্যটন সহজতর হবে, এবং সিনচিয়াংয়ে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে, পণ্য স্থানান্তরের হার বাড়লে শুল্ক হ্রাস পাবে এবং এতে ভোক্তারা আরো সস্তায় পণ্য পাবে। এসব ব্যবস্থা এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের জনগণের দৈনন্দিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।"
সিনচিয়াং উন্নয়ন ও সংস্কার কমিটির পরিচালক চাং ছুন লিন মনে করেন, ভবিষ্যতে সিনচিয়াং অব্যাহতভাবে জ্বালানিশিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি পোশাক, কৃষিপণ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্য, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাঁচামালের প্রক্রিয়াকরণসহ নানান শিল্পে আরো উন্নতি করবে এবং এতে সিনচিয়াংয়ের জনসাধারণের জন্য আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
চাং ছুন লিন বলেন, "আমরা অব্যাহতভাবে জ্বালানিশিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি শ্রমঘন বস্ত্র ও পোশাক শিল্প, কৃষিপণ্য ও আনুষঙ্গিক পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শিল্পের কাঁচামাল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে উন্নয়ন ঘটাবো। রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের মাধ্যমে সিনচিয়াংকে বড় আকারের কয়লা ও রাসায়নিক শিল্পের কেন্দ্র ও বড় আকারের বায়ু-বিদ্যুত্কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে এবং একে দেশের জ্বালানিসম্পদের পরিবহনপথে পরিণত করা হবে। সিনচিয়াং চীনের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সক্রিয় অবদান রাখবে।" (ইয়ু/আলিম)