Web bengali.cri.cn   
চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সাংস্কৃতিক লেনদেন
  2014-07-14 19:12:02  cri

টিভি নাটক 'তারকা থেকে তুমি'র কারণে কোরিয়ান সংস্কৃতি আবারো চীনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি চীনা তরুণ-তরুণীদের দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতিকে পছন্দ করার একটা উদাহরণ। হাজার বছরের ইতিহাসে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। চীনা ভাষা শেখা, চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা অনেক কোরিয়ানের আগ্রহ। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া দু'দেশের মানুষই মনে করে, পরস্পরের সংস্কৃতিকে পছন্দ করা হচ্ছে দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের সবচেয়ে ভাল ভিত্তি।

চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় 'কোরিয়ান সংস্কৃতি বা স্টাইল' এবং 'চীনা সংস্কৃতি বা স্টাইল'-এর ব্যাপারে সবারই বেশ গভীর দৃষ্টি রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার লেনদেন স্পষ্টভাবে বেড়েছে। চীনের প্রথম কনফুসিয়াস ইন্সটিটিউট দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে চালু হয়। এখন সেখানে ১৭টি ইন্সটিটিউট হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শেখার হিড়িক পড়ে যায়। শুধু প্রাচীনকালে নয়, বরং বর্তমান সমাজে তা আরো বিস্তৃত হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দু'দেশের মধ্যে ৮ শতাধিক ফ্লাইট যাতায়াত করে। গত বছর ৮২ লাখেরও বেশি যাত্রী যাতায়াত করেছে। ফলে বিশ্বে প্রতিবেশী দু'টো দেশের মধ্যে যাতায়াতের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিসংখ্যান দু'দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ নিশ্চিত করছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার তারকা, টিভি নাটক এবং গান চীনের অনেক মানুষ পছন্দ করে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ খুবই উপভোগ করে। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারা বিশ্বে দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতির অনুরাগীর সংখ্যা ৯২.৮ লাখ। বার্ষিক বৃদ্ধি প্রায় ৩০ শতাংশ। দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করলে, কোন কোন চীনা তরুণ-তরুণীর খুব উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তাদের একজন বলেন,

আমি দক্ষিণ কোরিয়ার বৈচিত্র্যের অনুরাগী হয়েছি ৫/৬ বছর আগে। আমার মনে হয়, সেখানে সংস্কৃতি এবং বৈশিষ্ট্যময় ধারণা প্রতিফলিত হওয়ার উপাদান যথেষ্ট রয়েছে।

অন্য একজন বলেন,

প্রায় নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতি আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে। তখন দক্ষিণ কোরীয় স্টাইলগুলো সবেমাত্র চীনে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ কোরীয় টিভি নাটকে অনেক সুদর্শন ছেলে আমাকে আকর্ষণ করে। এছাড়া টিভি নাটকে অত্যন্ত রোমান্টিক চরিত্র আমার মনে হয়, প্রত্যেক মেয়ের জন্য স্বপ্নের মতো।

গত বছর বিদেশের প্রথম বাজার হিসেবে চীনকে দেখা দক্ষিণ কোরীয় তারকা লী মিনহো দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতির রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কমিটির সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হেইয়ে'র সঙ্গে বিদেশে দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতির প্রচার করাসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখান থেকে বোঝা যায়, সরকার থেকে শুরু করে বিনোদন শিল্প পর্যন্ত সবাই চীনা বাজারের ওপর গুরুত্ব দেয়। পাশাপাশি গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হেই চীন সফরকালে, চীনে দক্ষিণ কোরীয় তারকার অনুষ্ঠিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। ঘটনাস্থলে তিনি বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের তারকার সঙ্গীতানুষ্ঠান হচ্ছে এ সফরে চীনা তরুণ-তরুণীর জন্য তাঁর উপহার। তিনি দু'দেশের যুব আদান-প্রদান জোরদার করার প্রত্যাশা করেছেন। দক্ষিণ কোরীয় তারকা এবং বিভিন্ন পরিবেশনা কোম্পানির জন্য চীনের বিরাট বাজার হচ্ছে স্বর্ণ খনি।

আমি লী মিনহো। আমি কিম সু হিউন। আমি চুন চি হিউন......

দক্ষিণ কোরীয় সংস্কৃতি শক্তিশালী হবার পাশাপাশি 'চীনা স্টাইল'ও দক্ষিণ কোরীয় জনগণের নজর কেড়েছে। চীনে ৮ বছর থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার মেয়ে চেয়ং গিয়েং মি চীনের চা সংস্কৃতির কারণে চীনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন,

চীনা চা'র প্রতি আমার খুব আগ্রহ। কারণ চা হচ্ছে চীনা সংস্কৃতির বড় কেন্দ্র। আপনাদের প্রত্যেকের হাতে চা আছে। আমার মনে হয়, চা বানানো এবং চা খাওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে এক ধরনের আত্মোন্নতি। সিছুয়ানে জু ইয়ে ছিং নামে এক ধরনের চা আছে। চা'টা খুবই চমত্কার। আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবার সময় আমার বন্ধু'র জন্য এই চা নিয়ে যাবো।

কোন কোন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিকের জন্য চীনা সংস্কৃতি হচ্ছে তারা চীনে আসার অন্যতম কারণ। কিন্তু বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার আরো বেশি যুবক চীনা ভাষা শেখার অন্যতম কারণ হচ্ছে চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এখানে তারা ব্যবসার সুযোগ দেখেছে। ২৬ বছর বয়সী দক্ষিণ কোরীয় ছেলে পার্ক গত ৫ বছর ধরে চীনে থেকে চীনা ভাষা শিখেছে। ৬ মাস পর তিনি স্বদেশে কর্মসংস্থান করবেন। তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত কাজ করার প্রত্যাশা করেন। তিনি বলেন,

দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনা ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুব বেশি। কারণ চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি খুবই দ্রুত। আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি চাকরি খুঁজতে চাই।

বর্তমানে দু'দেশের সংস্কৃতি, দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্পর্কে চীনে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের প্রধান কিম বলেন,

দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন শহরে চীনা ভাষা শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার নিজস্ব খাবার পছন্দ করি। এছাড়া চীনের চা সংস্কৃতি, তুলি দিয়ে আঁকা এবং ওয়েইছি দাবা আমরা খুব পছন্দ করি। আমরা চীনের কয়েক হাজার বছরের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছি। দক্ষিণ কোরিয়ান মানুষ চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে বেশ পরিচিত। অন্যদিকে চীনের মানুষও দক্ষিণ কোরিয়ার সংস্কৃতিকে পছন্দ করে এবং দক্ষিণ কোরিয়ানরা চীনের সংস্কৃতিকে পছন্দ করে। এটা দু'দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের চমৎকার সুযোগ। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের সংস্কৃতিকে পছন্দ করে। সুতরাং দু'দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040