Web bengali.cri.cn   
লায় গল্প,আমাদের গল্প ০৬২১
  2014-06-23 17:07:18  cri



ট: প্রিয় শ্রোতা, da jiahao! পেইচিং থেকে প্রচারিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগতম। গত সপ্তাহের মতো আজও আপনারা শুনবেন 'বাংলায় গল্প,আমাদের গল্প'। আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আপনাদেরই প্রিয় বন্ধু আমি এনামুল হক টুটুল এবং আমি শিয়েনেন আকাশ।

ক: বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল। কেমন উপভোগ করছেন বিশ্বকাপ ফুটবল? অনেক ভাল তাইনা? টুটুল ভাইয়া তুমি কেমন আছো?

ট: হ্যাম, এইতো আছি!

ভাইয়া জানো, আজকে না আমার মন খুব খারাপ!!

ক: হাহা, আমি জানি কি হয়েছে। স্পেন টিমের জন্য ,তাইনা?

ট: তুমি ঠিক বলেছো ভাইয়া। আসলে স্পেন এভাবে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেবে এটা ভাবতেই পারছিনা। বিশ্বের সব বিখ্যাত বিখ্যাত খেলোয়াড়রা দলে থাকার পরও স্পেন কিভাবে হেরে গেল, তাইনা। অবশ্য এদিন চিলি কিন্তু দারুণ খেলেছে। চিলির খেলা দেখে মনে হয়েছে এ দলটিও এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। আসলে কোনো কিছু নিয়েই ভবিষ্যত বানী করা যায় না। ভেবেছিলাম স্পেন এবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন এবার আর পূরণ হচ্ছেনা। যাক, কি আর করা, এটা মেনে নিয়েই এখন অন্যদের খেলা দেখতে হবে।

ক: হ্যাঁ, এবারের বিশ্বকাপে স্পেন ও পর্তুগালের ভাগ্য খুবই খারাপ। আমার প্রিয় দল জাপান হেরে যাওয়ায় আমার মনও খুব খারাপ।

ট: মন খারাপ করোনা ভাইয়া। দেখবে একদিন তোমার প্রিয় দল জাপান চ্যাম্পিয়ন হবে। জাপান কিন্তু খুবই ভাল একটি দল। তারা খুব পরিশ্রমী। দলের মধ্যে ভাল সমন্বয়ও আছে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো ইউরোপ বা ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চলের দলগুলোর তুলনায় আমাদের এশিয়ার দলগুলো শারীরিকভাবে মনে হয় একটু দুর্বল। যেকারণে মাঠে তাদের সাথে বল দখল এবং রানিংয়ে একটা সমস্যা হয়। তবে এ সমস্যা একদিন থাকবেনা। একদিন তুমি দেখবে এশিয়ার দলগুলো অনেক ভাল করছে। তখন তোমার প্রিয় দল জাপানও চ্যাম্পিয়ন হবে।

ক: ভাইয়া, আসলে আমি কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে একটি খেলাও এখন পর্যন্ত লাইভ দেখিনি।

ট: কেন?

ক কারণ আমি এখন বাসার ডেকোরেশনের কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত। কিন্তু আমি প্রতিটি খেলাই পরের দিন ইন্টারনেটে দেখি।

ট: কোনো সমস্যা নেই। আমি তো আছি। আমি তোমার জন্য এবং আমাদের ভাইবোনের জন্য বিশ্বকাপের সাম্প্রতিক সব খবর জানাবো, কেমন? তাই যখনই খেলা সম্পর্কে জানতে চাইবে তুমি শুধু আমাকে জিজ্ঞেস করবে। হাহা। হ্যাঁ ভাইয়া, এবার আমি তোমাকে এবং আমাদের প্রিয় শ্রোতাদেরকে বিভিন্ন তথ্যমাধ্যম থেকে বিশ্বকাপের কিছু খবর জানাবো।

ট: অভিষেকেই বাজিমাত মানজুকিচের

নিষেধাজ্ঞার কারণে স্বাগতিক ব্রাজিলের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে ছিলেন না ক্রোয়েশিয়ার বিখ্যাত খেলোয়াড় ও বায়ার্ন মিউনিখের ফরোয়ার্ড মানজুকিচ। তাঁর দল ব্রাজিলের কাছে হেরে বসে ৩-১ গোলে।

বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে বুধবার ক্যামেরুনের বিপক্ষে তাই জয়ের বিকল্প ছিল না দলটির সামনে। সে লক্ষ্য অর্জনের পথে মানাউসের স্তাদিও আমাজনিয়ায় শুরুতে ক্রোয়েশিয়ার খেলায় ছন্দের ঘাটতি দেখা গেলেও খানিক বাদেই তা কাটিয়ে ওঠে তারা।

১১তম মিনিটে ফরোয়ার্ড ইভিচা অলিচ ও ৪৮তম মিনিটে অলিচের ক্লাব সঙ্গী ভলফসবুর্গের আরেক ফরোয়ার্ড ইভান পেরিসিচের গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে অভিষেকেই সেমি-ফাইনালে ওঠা ক্রোয়েশিয়া।

দলের প্রথম দুই গোলে মানজুকিচের সরাসরি কোনো অবদান না থাকলেও প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ব্যস্ত রাখার কাজটা ভালোই সামলেছেন তিনি। আর তারপর তো ম্যাচটি হয়ে যায় মানজুকিচময়। ১২ মিনিটের ব্যবধানে প্রথম গোলটি হেড থেকে আর দ্বিতীয়টি গোলপোস্টের সামনে বিনা বাধায় আলতো টোকায় করেন তিনি।

দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে দারুণ খুশি মানজুকিচ বলেন, "ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচে আমি পরিশ্রম করেছি, তারই পুরস্কার হিসেবে গোলগুলো এসেছে। আশা করি, আবারো আমরা পুরোদমে জ্বলে উঠতে পারবো, কারণ আমাদের সেটার প্রয়োজন হবে।"

১৬ বছর পর ফের বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠতে ক্রোয়েশিয়াকে আরেকবার জ্বলে উঠতে হবে। কারণ গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে তাদের জিততে হবে। ড্র করলেও সম্ভাবনা থাকে তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ক্যামেরুনের কাছে হারতে হবে ব্রাজিলকে।

মানজুকিচের প্রশংসায় দলটির কোচ নিকো কোভাচ বলেন, "মানজুকিচ আবারো দেখিয়েছে যে, সে বড় মাপের খেলোয়াড়। সে এমন ধরণের স্ট্রাইকার যে প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরাতে পারে।"

'এ' গ্রুপের ২ রাউন্ড শেষে ব্রাজিল ও মেক্সিকোর পয়েন্ট সমান ৪। তৃতীয় স্থানে থাকা ক্রোয়েশিয়ার পয়েন্ট ৩। দুই ম্যাচে কোনো পয়েন্ট না পেয়ে এরই মধ্যে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ক্যামেরুনের।

জাপান-গ্রিস

স্বাগতিক হিসেবে ব্রাজিলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ছিল আগেই। বাকি ৩১ দলের মধ্যে সবার আগে ব্রাজিলের টিকেট নিশ্চিত করেছে জাপান। ছোট ছোট পাসের আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে এশিয়া অঞ্চলের বাছাইপর্ব পেরিয়েছে তারা। বিশ্বকাপে 'সি' গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কোত দি ভোয়ার (আইভরি কোস্ট) বিপক্ষেও সেভাবে শুরু করেছিল তারা। তাতে প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যে এগিয়েও যায় 'ব্লু সামুরাই'। এরপর তাদের ইতালিয়ান কোচ আলবের্তো জাক্কেরোনির যে কী হল! শিষ্যদের ঢুকিয়ে দিলেন রক্ষণের খোলসে। ব্যস, এরপর আর শক্তিশালী কোত দি ভোয়ার (আইভরি কোস্ট) সঙ্গে কী করে পারে জাপান! হেরে যায় ১-২ গোলে।

প্রথম ম্যাচে শিক্ষা নিয়ে তাই হয়তো জাপানের তারকা কেইসুকে হোন্ডার উপলব্ধিটা এমন, 'আমাদের শক্তির জায়গা হচ্ছে পজেশন। বল যখন পায়ে পাব, তখন সেটি আমাদের পায়ে পায়েই রাখতে হবে। প্রতিপক্ষের কাছে তুলে দিলে চলবে না। আর যখন বল হারাব, দ্রুত প্রেস করে চেষ্টা করতে হবে তা ফিরিয়ে আনার। এটিই আমাদের ফুটবল দর্শন।'

আর তাদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ গ্রিসের দর্শন? শিল্প-সাহিত্যে যতই সৌন্দর্যঘেঁষা হোক, ফুটবলে তারা অসুন্দরের পূজারি। শিল্পী নয়, বরং শ্রমিক। গোল না খাওয়ার মন্ত্রে ২০০৪ ইউরো জিতেছে। এবার যে ব্রাজিল বিশ্বকাপের টিকেট পেল, সেটিও ওভাবে খেলে। বাছাইপর্বে ১০ ম্যাচে মাত্র চার গোল যে গিয়েছে তাদের জালে! অথচ এই গ্রিস বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার কাছে খেয়ে বসল তিন গোল! জাপানের মতো গ্রিসেরও তাই নিজেদের ফুটবল-দর্শনের শেকড়ে ফেরার চ্যালেঞ্জ এই দ্বিতীয় ম্যাচে।

উরুগুয়ে-ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের সেরা হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করা এই ফরোয়ার্ডের মতো নানা মত আছে উরুগুয়ের সেরাকে নিয়েও। একাদশে লুই সুয়ারেসের জায়গা কিংবা পজিশন প্রশ্নাতীত। চোটের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তাকে খেলানো উচিত হবে কিনা- সংশয়টা সেখানে। জোর করে খেলাতে গিয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো চোটে পড়ার ঝুঁকি না তার আরো বেড়ে যায়!

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত একটায় সাও পাওলোয় মুখোমুখি হচ্ছে সাবেক দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। গ্রুপ 'সি'-র এই দ্বৈরথের আগে দুই ফুটবল-সেনাপতিকে নিয়ে অস্থির উরুগুয়ে-ইংল্যান্ড। কিন্তু বিশ্বকাপে টিকে থাকার স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে হলে সুয়ারেস-রুনির বিকল্পও যে হাতে নেই! ঝুঁকি নিয়ে হলেও তাই একাদশে তাদের নামিয়ে দেওয়ার কথা অস্কার তাবারেস ও রয় হজসনের।

ঝুঁকিটা নিতে হবে- কারণ এই ম্যাচ যারা হারবে, তাদের বিশ্বকাপ শুরু হতে না হতেই হয়ে যাবে শেষ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইতালির কাছে ১-২ গোলে হেরেছে ইংল্যান্ড। সেটি হয়তো অঘটন না, কিন্তু উরুগুয়ের হার? গত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালিস্টদের কোস্টা রিকার কাছে হার নিঃসন্দেহে চমকে দিয়েছে সবাইকে। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে ইতালির কাছে হারলেও ইংল্যান্ডের খেলা প্রশংসা কুড়িয়েছে। কোচ হজসন তো তাঁর অধীনে সেরা পারফরমেন্স হিসেবেই স্বীকৃতি দিয়েছেন সেটিকে। তবে 'দুর্ভাগা পরাজিত' হিসেবে চিত্রিত না হয়ে এবার বিজয়ী-বীর হওয়ার পণ ইংলিশদের। স্ট্রাইকার ড্যানিয়েল স্টারিজের কণ্ঠে সেই সুর, 'শেষ পর্যন্ত গণ্য হয় ম্যাচের ফল; পারফরমেন্স না। দল হিসেবে আমরা এটি বুঝতে পেরেছি। এখন যদি ভাগ্য একটু সহায়তা করে, তাহলে প্রত্যাশিত ফল আমরা পাব।'

ইংল্যান্ডের সামর্থ্যকে সমীহ করছেন উরুগুয়ে কোচ তাবারেস। 'বল পায়ে দৌড়ে এবং সিদ্ধান্ত নিতে তারা বেশ চটপটে। ওদের তাই রুখতে হবে। ইতালির বিপক্ষে যেমন আক্রমণাত্মক খেলেছিল ইংল্যান্ড, আমাদের বিপক্ষেও খেলবে তেমন' বলে শিষ্যদের সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি।

তার আশার বড় একটা জায়গা হয়ে আসতে পারে সুয়ারেসের ঠিক সময়ে ফিটনেসে ফেরা। দল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি, তবে সর্বশেষ মৌসুমে লিভারপুলের জার্সি গায়ে ইংলিশ লিগে ৩৩ ম্যাচে ৩১ গোল করা ফরোয়ার্ড নিজেকে ফিট ঘোষণা করেছেন, 'আমি শতভাগ ফিট। নইলে আমি এ জায়গায় থাকতাম না। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে যে ফিটনেস ফিরে পাওয়া কঠিন হবে, সেটি জানতাম। কিন্তু এরপর পূর্ণ ফিট হওয়ার চেষ্টা আমি করেছি। আর কখনো ঘুণাক্ষরেও ভাবিনি যে, বিশ্বকাপটা আমি মিস করব।'

এর আগে ১০ বার পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে উরুগুয়ে-ইংল্যান্ড। তাতে চার জয় লাতিন আমেরিকার দলটির, তিন জয় ইউরোপিয়ান দেশের। তবে এই একাদশ ম্যাচে উরুগুয়ের সম্ভাব্য পঞ্চম কিংবা ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য চতুর্থ জয়ের গুরুত্ব হয়তো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। নইলে যে ব্রাজিল বিশ্বকাপকে বিদায় জানাতে হবে!

উড়ছে ডাচরা

আরিয়েন রবেন আর রবিন ফন পের্সি-এই দুই ফরোয়ার্ডের ওপর ভর করেই উড়ছে ডাচরা। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস গোল পেয়েছে ৮টি। এর মধ্যে ৬টি গোলই করেন এই দু'জন।

নেদারল্যান্ডস পেছন পায়ে চলে গেলেও ত্রাতার ভূমিকায় দেখা দিতে পারেন রবেন আর ফন পের্সি। প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়া ম্যাচে দলকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন ফন পের্সি। ফরতালেজায় বুধবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডাচরা ৩-২ গোলের জয় পেয়েছে এই দুজনের কল্যাণেই।

এর মানে এই নয় যে, রবেন-ফন পের্সি ছাড়া নেদারল্যান্ডস দলের বাকিরা সাধারণ মানের খেলোয়াড়। সব মিলে দারুণ এক দল তারা। বাছাইপর্বে একটি দল হিসেবেই অনেক ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছে তারা।

বিশ্বকাপ অবশ্য অন্যরকম। এখানে দুর্বল দলের সংখ্যা খুব কমই। খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্যও খুব অল্প। এখানে ফন পের্সি আর রবেন পার্থক্য গড়ে দিতে এবং বিশেষ কিছু উপহার দিতে পারে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রবেনের করা প্রথম গোলটিও এরই উদাহরণ।

মাঝমাঠে নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার একজন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোলের দিকে এগিয়ে যান রবেন। তার ডান পাশে ফন পের্সি ফাঁকায় দাঁড়িয়েছিলেন। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বলটিকে পাস দিতেন। কিন্তু পের্সিকে বল না দিয়ে রবেন আরো এগিয়ে গেলেন। এর পর বল পাঠিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার জালে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফন পের্সির গোলটিও ছিল তার ট্রেডমার্ক স্টাইলে। ফন পের্সির সবচেয়ে বড় সম্পদ তার দৌড়ের সময় জ্ঞান। এটি দিয়েই তিনি প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের অফসাইড ফাঁদ খুব সহজে ভাঙতে পারেন।

আর ফন পের্সি নিজের গোল করার কাজটি খুব সহজেই সেরে ফেলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও তিনি তাই করেন।

ফন পের্সি এটাকে সত্যিই সহজ বলে ভাবেন। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, "সমতায় ফেরা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ ক্ষেত্রে আপনাকে এই ধরণের সুযোগ নিতেই হবে।"

ক: বন্ধুরা, টুটুলের কাছ থেকে খেলার খবর শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এবার আমরা একটু বিশ্রাম নেব। আর বিশ্রামের এই ফাঁকে চা অথবা কফি পান করতে করতে একটি চীনা গান শুনবো, কেমন? গানটির নাম হচ্ছে, সুন উ কোং 'SUN WU KONG'। গানের পর আমরা আবারও অব্যাহতভাবে বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা করবো।

(গান)

ট: ভাইয়া, তুমি ছোটবেলায় কখন থেকে ফুটবল খেলতে শুরু করো?

ক: এটা আসলে খুবই কঠিন একটি প্রশ্ন। আমার কাছে মনে হয় যখন প্রাথমিক স্কুলে পড়ি তখন থেকেই ফুটবল খেলা শুরু করি।

বন্ধুরা, চীনে গ্রীষ্মকালে স্কুল দুই মাস এবং শীতকালে একমাস ছুটি থাকে। ছুটির সময় প্রতিদিন বিকেল প্রায় পাঁচটার দিকে পাশাপাশি সব ছোট বন্ধুরা মিলে একসাথে ফুটবল খেলতাম। আমার কাজিন লেই লেইর সাথে বাসার পাশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে খেলতাম। একবার লেই লেই খুব জোরে কিক করলে ফুটবলটি ফেটে যায়। হাহা। ফুটবলটি খুবই দামী ছিল।

ট: আচ্ছা! সে তখন খুবই শক্তশালী ছিল, না?

ক: ফুটবলটি ফেটে যাবার পর আমরা মনে অনেক কষ্ট পাই। কারণ আমাদের তখন আর কোনো ফুটবল ছিলনা।

ট: ফেটে গেছে কোনো সমস্যা নেই, অন্য আরেকটি কিনতে পারতে, তাইনা?

ক হাহা ভাইয়া, তখন তো এটি আমাদের জন্য খুবই দামী।

ট: আমিও প্রাথমিক স্কুল থেকে ফুটবল খেলা শুরু করি।

আমি ছোটবেলায় খুবই ভাল ফুটবল খেলোয়াড় ছিলাম। আমার স্কুল ফুটবল খেলার জন্য বিখ্যাত ছিল। আমার এক কাজিনের একটি লাল এবং সাদা রঙের ফুটবল ছিল। আমার মনে আছে আমি আমাদের বাড়ির সামনের ছোট জায়গায় সময় পেলেই ফুটবল খেলতাম। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই ছিলনা। আশের পাশের ছোট সব বন্ধুদের নিয়ে ফুটবল খেলা শুরু করে দিতাম। বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলা যে কতটা মজার তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।

ক: হ্যাঁ বন্ধুরা, আমাদের হাই স্কুলে নম্বর-টু মিডল স্কুলে ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। প্রতিটি ক্লাসে একটি করে টিম থাকতো। ক্লাসের পক্ষ থেকে একটার পর একটা খেলা থাকতো।

খুবই জোস খুবই সুয়াং!! আমাদের ক্লাসের সব মেয়েরা মাঠের পাশ থেকে আমাদেরকে উত্সাহ দিত, আমাদেরকে শক্তি দিত।

ট: এটা হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে খুশির এবং জোসের অংশ,তাইনা ভাইয়া?

ক অবশ্যই! তখন আমি সবসময় আমার প্রিয় দল জাপানের পোশাক পড়ে খেলতাম। খুবই ছোট বোকা! হাহা।

ট: আমাদের স্কুলেও ফুটবল টুর্নামেন্ট হতো। আমরা যখন খেলতাম আমাদের ক্লাসের মেয়েরা আমাদেরকে মাঠের পাশ থেকে উত্সাহ দিত। আমাদেরকে চকলেট দিত। আমরা ওদেরকে বলতাম তোমরা না থাকলে আমরা তো শক্তি পাবোনা, তাই তোমাদেরকে থাকতে হবে। ওরা আমাদেরকে পানি খাওয়াতো আর আমাদের জন্য মাঠের পাশ থেকে চিত্কার করতো। তখন আমরা সবাই আরো শক্তি পেতাম এবং আরো জোস আরো সুয়াংয়ের মতো করে খেলতাম।

ক: আমার বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা সবাই ফুটবলের জন্য খুবই পাগল থাকতাম। আমরা প্রত্যেক বন্ধু কিছু টাকা দিয়ে সি টান থেকে একটি খুবই চমত্কার নতুন ফুটবল কিনে আনি। আমরা প্রতিদিন খেলতাম। খুবই খুবই জোস, এসব ঘটনা সব সময়ই মনে থাকে। কোনোদিনই এসব কথা ভুলতে পারবোনা।

ট: আচ্ছা, আমাদের উতান ভাই কি আপনাদের সাথে খেলতেন?

ক অবশ্যই ! তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল খেলোয়াড়!! কিন্তু একদিন খেলার সময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এখনও তার সেই ব্যথা আছে এবং তিনি এখনও পাহাড়ে উঠতে পারেন না।

ট: ওহ ! এটা সত্যিই দু:খের খবর। আমার পায়েও অনেক আঘাত আছে। একবার এক টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পাই । তারপর প্রায় একমাস আমি হাঁটতে পারতাম না। আমার দু'পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল তো এখনও ভাঙ্গা। ফুটল খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়ে ভেঙ্গে গেছে। তবে এখন আর কোনো সমস্যা নেই । সব ঠিক হয়ে গেছে।

ক: ভাইয়া, আসলে ফুটবল হচ্ছে চীনের এক নম্বর জনপ্রিয় খেলা। সবাই এর জন্য খুব পাগল হয়ে যায়।

ট: বাংলাদেশেও একই অবস্থা। আমি তোমাকে এর আগেও বলেছি যে, তুমি যদি বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় বাংলাদেশে থাকো তাহলে তোমার কাছে মনে হবে যে, ফুটবল বিশ্বকাপ বাংলাদেশেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ভীষণভাবে ফুটবল পছন্দ করে। তাঁরাও ফুটবলের কথা শুনলে পাগল হয়ে যায়।

আচ্ছা বন্ধুরা, ফুটবল নিয়ে তো অনেক কথা বললাম। এবার আমরা চীনের একটি 'কুংফু' সম্পর্কিত গান শুনবো। তারপর আবার আমরা সবাই একসাথে আমাদের ভারতের শ্রোতাবন্ধু দেবাশীষ ভাই এবং বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার শ্রোতাবন্ধু আনোয়ার কবির ভাইকে স্বাগত জানাবো। বন্ধুরা, এখন যে গানটি শুনবো এটির নাম 'সুয়াং চে কুন'!

ক: কি ? বলো ?

ট: না বলবো না ? তাহলে প্রথমে তুমি আমাকে একটি ফুটবল কিনে দাও!

(গান)

ক: বন্ধুরা, এখন প্রথমেই আমরা আমাদের নতুন বন্ধু আনোয়ার কবির ভাইকে স্বাগত জানাবো।

ট: হ্যাঁ, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে তিনি লিখেছেন,

প্রিয় সিআরআই

আমার অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। আশা করছি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আমি আপনাদের একজন নিয়মিত শ্রোতা। আপনাদের সব অনুষ্ঠান আমি দীর্ঘ দিন ধরে শুনছি। অনেক চিঠি এবং ই-পত্র পাঠিয়েছি। রেডিওতে আমার আমার লেখা চিঠি, আমার নাম চীনা মানুষের কণ্ঠে শুনে আমি অভিভূত হই। বিভিন্ন কুইজ, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কার প্রাপ্তির মাধ্যমে সিআরআই এর অনুষ্ঠান শুনতে আগ্রহ বাড়ায়। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি বেশ কিছু অনুষ্ঠানে আমাকে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার প্রদানের জন্য নাম ঘোষণা করা হলেও পুরস্কার না পাওয়ায় অনুষ্ঠান শোনা এবং লেখায় আগ্রহের ঘাটতি হচ্ছে। কারণ একজন ব্যাংকার হিসেবে অনেক ব্যস্ততার মাঝে সময় করে অনুষ্ঠান শোনা এবং পরে লেখা বেশ কঠিন, এর পরেও যদি শ্রোতা হিসেবে যথাযথ মূল্যায়িত না হই তাহলে কেমন লাগে- একবার ভেবে দেখুন।

যাইহোক ভেবেছিলাম আপনাদের আর লিখব না। কিন্তু গত রাত্রে 'বাংলায় গল্প বাংলার গল্পের' রূপকার, সুযোগ্য উপস্থাপক, মিষ্টি ভরাট কণ্ঠের অধিকারী, সিআরআই এর প্রত্যেক শ্রোতার যেন অতি আপনজন নাট্যকার জনাব মো: এনামুল হক টুটুল ভাইয়ের টেলিফোন পেয়ে মনটা অনেক ভাল হয়ে গেল। আপনাদের অনুষ্ঠান বিষয়ে আলোচনা করতে পেরে মনটা হালকা হলো। একজন নগণ্য অজানা-অচেনা শ্রোতাকে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক স্বয়ং নিজে ফোন করেছেন প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। যাইহোক একটু পরেই বুঝতে পারলাম এযেন আমাদের চির চেনা এনামুল হক টুটুল ভাই। টুটুল ভাই আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে ফোন করার জন্য। আর এই ফোন কলের সুবাদে আমি কথা দিচ্ছি- আমরা আছি সিআরআই এর সঙ্গে।

ইতি-

এস এম আনোয়ার কবীর

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক

জোনাল কার্যালয়

সিরাজগঞ্জ-৬৭০০

বাংলাদেশ।

মোবাইল-+৮৮০১৭১২-৬৬০৭৭৭

ট: ধন্যবাদ আনোয়ার কবির ভাই। প্লিজ, আপনি আমাদের উপর অভিমান করবেননা। আমাদের সিআরআই বাংলা বিভাগ সবসময়ই চেষ্টা করে শ্রোতাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে । আমরা কথা দিচ্ছি আমরা সবসময়ই আছি আপনাদের সাথে। আপনি জেনে আনন্দিত হবেন যে, আমরা আপনার ছোটবেলা নিয়ে লেখা গল্প আমাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার করেছি। সেখানে আপনার নাম বলাসহ আপনার গল্প বিস্তারিতভাবে আমরা প্রচার করেছি। আশা করি আপনি সবসময় সিআরআইয়ের সাথে থাকবেন এবং আপনার মূল্যবান মতামত বা পরামর্শ প্রদান করবেন। আবারও আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

ক: আনোয়ার কবির ভাই, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ! আশা করি আপনি নিয়মিতভাবে আমাদেরকে আপনার মনের কথা, মনের গল্প শেয়ার করবেন। আমাদের এ অনুষ্ঠান হচ্ছে আমাদের বাসা, মানে আমাদের উত্তরা।

ট: হ্যাঁ। হাহা ভাই, তুমি এখন একজন খাঁটি ঢাকাইয়া হয়ে গেছো। তুমি এখন উত্তরা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারো না, তাইনা? বুঝতে পেরেছি, তোমাকে আবার বাংলাদেশ পাঠাতে হবে। হাহা। আচ্ছা, উত্তরার ভাই,এখন তাহলে আমরা আমাদের আরেকজন প্রিয় বন্ধু দেবাশীষ ভাইয়ের তৈরি গরম গরম পরোটা সবার সাথে শেয়ার করবো, কেমন?

ক নিশ্চয়ই।

ট: হ্যাঁ, দেবাশীষ ভাই তাঁর চিঠিতে লিখেছেন,

ক দেবাশীষ ভাই, 'তা চিয়া' চীনা ভাষায় মানে সবাই । 'হাও' মানে ভাল। তা চিয়া হাও মানে সবাইকে হ্যালো জানানো।

উত্তরে বলতে পারেন নি হাও মানে হ্যালো।

দেবাশীষ ভাই, আপনার চিঠি পড়ে আমরা খুবই মুগ্ধ এবং আবেগপ্রবণ হয়ে যাই। আপনি সত্যিই সবসময়ই আমাদের সংগে থাকেন। আমাদের মধ্যে সত্যি কোনো দূরত্ব নেই। কারণ আমাদের মন কখনো আলাদা হয় না। আশা করি আগামী বছর বা তার পরের বছর আমি আপনাকে সত্যি দেখতে পারব । তখনকার মিলনের কথা ভেবে এখন মনে অনেক অনেক আনন্দ পাই এবং এক্সাইটেড হয়ে যাই।

ট: দেবাশীষ ভাই, আপনার ছোটবেলার ফুটবল খেলা দেখার গল্প শুনে রীতিমতো এক্সাইটেড হয়ে গেলাম।

যদিও সেসময় অনেক কষ্ট করেছেন তারপরও কিন্তু অনেক মজা ছিল, তাইনা?

ক: আচ্ছা বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান শেষে আপনাদেরকে আরেকটি মজার গান শোনাবো। গানের নাম হচ্ছে 'আমি সত্যিই আপনার খবর রাখি'।

ভাইবোনেরা, আমরা সত্যিই আপনাদের খবর রাখি। এখন প্রতি রাতে বিশ্বকাপ দেখবেন, আর দিনের বেলা বেশি বেশি ঘুমাবেন, হাহা। সেই সাথে সাথে বেশি বেশি পানি পান করবেন। আমরা পুরো সপ্তাহ জুড়ে আপনাদেরকে মিস করি। কিন্তু সত্যি আমাদের হৃদয়ে আপনারা সবসময় থাকেন।

গান

ট: সুপ্রিয় বন্ধুরা, আজকে এ পর্যন্তই। আপনারা যদি চাইনিজ গল্প বা সংস্কৃতি সম্পর্কে কোনো কিছু জানতে চান তাহলে আমাদের কাছে email করতে পারেন বা টেলিফোন করতে পারেন।

আমাদের email ঠিকানা হলো : akashxienan@gmail.com এবং enamulhoquetutul@yahoo.com । আমাদের টেলিফোন নম্বর হলো: 00861068892420

প্রিয় শ্রোতা, এবার বিদায়ের পালা। আবার আপনাদের সাথে কথা হবে । সে পর্যন্ত আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং সুন্দর থাকুন। চাই চিয়েন। (আকাশ/টুটুল)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040