Web bengali.cri.cn   
ওয়েন্ডি ডেং তার সৌন্দর্য হারিয়েছে
  2014-06-11 15:29:25  cri

মানুষ ওয়েন্ডি ডেংকে নিয়ে আলোচনা করছে, ওয়েন্ডি ডেং-এর কী নেই, কী প্রাপ্তি, এনিয়ে তাদের ভীষণ উদ্বেগ। অবশ্যই ওয়েন্ডি ডেংকে অনেক বেশি মূল্য দিতে হয়েছে। গত ১৪ বছরে তার অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই। তবে ওয়েন্ডি ডেং এখন আর সুন্দর নেই। তাই আমার মনে হয় যে মারডকের সঙ্গে বিবাহের পর এ নিয়ে তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২০১৩ সালের স্মরণীয় মানুষ ও জিনিসের তালিকায় বার্ষিক বিবাহবিচ্ছেদের ঘরে এ দম্পতির ঘটনাটি উঠে এসেছে।

ওহ, অবশ্যই!

২০১৩ সালের এ ঘটনা ছাড়া, বিভিন্ন ক্ষেত্রে, নতুন এ শতাব্দীতে ওয়েন্ডি ডেং এক শক্তিশালী ও বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন নারী।

দীর্ঘ দিন আগে, একটি শক্তিশালী রাজত্ব ছিল। এ রাজত্বে এক পুরাতন রাজা ও তার ৪ মেয়ে থাকত। পরে এক ডাইনী অন্ধকার মেঘ নিয়ে রাজত্বে নেমে আসে। সে ব্ল্যাক ম্যাজিক দিয়ে পুরাতন রাজা নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর রাজা তার মেয়েদের ব্যাপারে নিস্পৃহ হয়ে ওঠে। ডাইনীর নিয়ন্ত্রণে, এ শক্তিশালী রাজত্বে ধীরে ধীরে অশান্তি নেমে আসে।

এরকম অনেক রূপকথা এত আকর্ষণীয় যে অনেক বেশি মানুষ তা পছন্দ করে। এর কারণ হলো, গল্পটিতে অনেক বাধা থাকলেও, অবশেষে একটি আনন্দময় সমাপ্তি থাকে। তবে, বাস্তব জীবনের গল্প বিভিন্নভাবে শেষ হতে পারে।

ওয়েন্ডি ডেং এক সুন্দর প্রাচ্য বিশারদ ছিলেন। তিনি ভাল ছাত্রী ছিলেন, ভাল মেয়ে ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলিবল দলের অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমতী, তারুণ্য-দীপ্ত একজন আমেরিকার গ্রিন কার্ড হোল্ডার হবার পরও তার মার্কিন সমাজের উচ্চ মহলে প্রবেশে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল।

সে যেনো রূপকথার রাজকুমারী, তবে রূপকথার আনন্দিত অথবা দুঃখময় সমাপ্তি তার জীবনেও ঘটেছে।

১৫ বছর আগে, মারডক হঠাত্ করে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করে ও তার ১৭ দিন পর অনিন্দ্য সুন্দরী এক নারীকে বিয়ে করে। তখন বিশ্বের বিভিন্ন বিনোদনমূলক গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হয়। এক রাতের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকের মুখে ওয়েন্ডি ডেং-এর নাম ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এ বিয়ে শুরুতেই বিশ্বের বহু মানুষের নজর কাড়ে। তবে, এটা ছিল শুরু মাত্র।

আসলে গত ১৪ বছরে তাদের সম্পর্কিত প্রায় প্রতিটি খবরই বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মারডকের সাবেক স্ত্রীর ধারণা ছিলো যে মারডকের সমস্যার কারণে তাদের সন্তান হবে না। তবে উন্নত চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহায়তায় নতুন এ দম্পতির দু'টি মেয়ে সন্তান হয়। এরপর ওয়েন্ডি ডেং-এর সহায়তায় তাদের পারিবারিক ব্যবসা উন্নত হয়।

মারডকের দু'টি মেয়ে হলেও ওয়েন্ডি ডেং-এর কার্যকর কোন ক্ষমতা ছিল না। তাদের দাম্পত্য জীবনের সংকটাপন্ন অবস্থা বেশ আগে থেকেই মিডিয়ায় প্রচার হতে থাকে। বছর ৭ আগে একটি নৌবিহারে দাতব্য কাজে অংশ নিতে যান তারা। কিন্তু এ সময় তাদের মধ্যে কোন ধরনের যোগাযোগ হয়নি, যা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। আর কয়েক বছর পর হঠাত করেই ওয়েন্ডি ডেংকে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেয় মারডক। আর গত বছরের শেষ দিকে আদালতে ১০ মিনিটের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে পরস্পরের ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের বিচ্ছেদ ঘটায় তারা। সেদিন মানুষ মারডকের হাসি ও ওয়েন্ডি ডেং এর বিষণ্ণ মুখ দেখেছে।

গত ১৪ বছরে কী কী ঘটেছিল তাদের মধ্যে? আমরা তা জানি না। যা আমরা জানি তা হলো, অতীতের সুন্দর ওয়েন্ডি ডেং তার সৌন্দর্য হারিয়েছে, তার মুখে বলিরেখার ছাপ স্পষ্ট।

এ ঘটনার পর লোকজন ওয়েন্ডকে নিয়ে আলোচনা করছে, সে আসলে কি পেলো, কি হারালো। অথচ দু' বছর আগে, সে আদালতে তার স্বামীর প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে। তখন মানুষ তাকে বার্ষিক সেরা স্বামী রক্ষাকারী সম্মানে ভূষিত করে। আর এখন তার স্বামী পরিবার থেকে তাড়িয়ে দেয়। আসলে এ দু'টি বিষয় Murdochর জন্য কল্যাণকর হয়েছে। এ দু'টি ঘটনার পরই তার কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কিন্তু এ যুদ্ধে সে সুন্দরী ওয়েন্ডি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।

কারো কারো মতে, ওয়েন্ডি ডেং যৌবন হারিয়েছে। কারো মতে, তার বিবাহিত জীবনটা আসলে আনন্দদায়ক ছিলো না। তাই ১৪ বছর শেষে কিছু সম্পদ নিয়ে তাকে বিদায় নিতে হয়। কিন্তু, তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিলো না। পেইচিংয়ে তার মত, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া এক সাধারণ নারীর একটি, দু'টি বা তিনটি বাড়ি থাকে। এই পেইচিংয় আর নিউইয়র্কে কী পার্থক্য আসে যায়? তবে, আগে তার সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা দিয়ে তার স্বামীর ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছিলো। এক নারী আশা করে, এক পুরুষের জীবনে সে হবে সফল, অনন্য। কিন্তু তা কি এতো কঠিন ! যাই হোক না কেনো, ওয়েন্ডি চেষ্টা করেছিলো। তাই নতুন শতাব্দীতে নারীর অনুসরণীয় মডেল ওয়েন্ডি ডেং।

সহজ সরল জীবনেও অনেক ঝুঁকি থাকে। তাদের বিবাহিত জীবনেও অনেক বিষয়ে মতভেদ, চ্যালেঞ্জ ছিলো। তবে দু'জনের মতভেদ এত জটিল পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে মারডক তাকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেয়।

তবে, এখানে শুধু একটি বিষয় ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। তার প্রায় অচেনা মুখমণ্ডলে যে চাপা ক্ষোভ আর রাগের ছাপ পড়েছিলো তা দেখে মনে হচ্ছিলো, এ রকমের একটি মুখে হয়তো ৫শ' পাতার বইয়ের চেয়েও বেশি গোপন কথা রয়েছে।

আমার মনে হয়, সে এখনও সুন্দর। তার চেহারায় হিংস্র রাগ আমি দেখিনি। হায়...

আমার কাছে একজন মানুষের মুখ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নারী। ৪০ বয়স বছর বয়সের আগে, মানুষের মেটাবোলিজম ঠিক থাকে। একটু প্রসাধন সামগ্রীর সহায়তায় তার সৌন্দর্য ধরে রাখা সম্ভব। তবে ৪০ বছর বয়সের পর, নিজের মুখের সৌন্দর্য আর ধরে রাখা যায় না। চীনে একটি বহুল প্রচলিত প্রবচন '相由心生' আছে। মানে, হৃদয়ের কথা লেখা থাকে মুখে। তুমি একজন মানুষের হৃদয় সম্পর্কে জানতে চাও ? তার মুখ থেকেই তা জানতে পারবে।

তোমার অবশ্যই এরকম অভিজ্ঞতা আছে। অফিসে সবসময় ওয়েন্ডির মতো প্রভাববিস্তারকারী চরিত্র নিয়ে কেউ না কেউ থাকে। তাদের কারণে সবসময় বেশ চাপে থাকতে হয়। তাদের জীবনে সবই যেনো তাদের... এ চুক্তি তাদের, এ কোম্পানি তাদের, এ পুরুষ তাদের......তাদের যেনো কোন বিশ্রাম নেই, সময় তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বুদ্ধিমান, সাহসী মানুষ ছাড়া অন্য সবাই তাদের কাছে দু'টি রকমের, প্রয়োজনীয় অথবা গুরুত্বহীন। তাদের জন্য তুমি ভাসমান বাতাসের মতো অথবা তার জীবনের সুউচ্চ ভবনের কোন একটি ইট!

তবে, জীবনে যদি সুখী না হও, এর কোন তত্পর্য থাকে কী? জীবনের চূড়ান্ত সফলতা বা জ্ঞান কখনোই আমরা জানতে পারবো না। আমরা যে সাফল্য অর্জন করি, তা আসলে মূল সফলতার পথের শুরুতে দাঁড়ানোর মতো।

আমরা জানি যে এ বিশ্বে অনেক বুদ্ধিমতী নারী রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানী নারী তো অল্প। কী রকমের জীবন তুমি বেছে নেবে ? কি ধরনের সফলতা অর্জন করতে চাও তুমি। কি ঝুঁকি নেবে ? এরকম হাজার হাজার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের এগুতে হয়।

ওয়েন্ডি ডেং-এর বয়স এখন ৪৫ বছর। সে আবারো সুন্দর হতে পারবে। একটু দেরিতে হলেও সুখী হতে পারবে। সুখ হলো তার সেরা প্রসাধন সামগ্রী।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040