Web bengali.cri.cn   
আমার আজকের জীবন
  2014-05-27 15:17:07  cri

মা লি, চীনের একজন তরুণ লেখক। তার অনেক উপন্যাসের মধ্যে একটি হচ্ছে <寂静之城> ।২০০৫ সালে চীনের বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার '银河奖' লাভ করেন তিনি। মা লি চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম weibo তেও খুবই জনপ্রিয়। সম্প্রতি তিনি weibo তে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৩ হাজারেরও বেশি পাঠক তা পড়েছে। এবার তাহলে শুনুন মা লি'র প্রবন্ধ: 'আমার আজকের জীবন'

আমি আজ সকালে উঠেছি। আজকের পরিকল্পনা হলো: হাই তিয়েন অঞ্চলে যাবো। তারপর বিকেলে চিত্রশালায় এক জন ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করবো। আমার মতে, হাই তিয়েন অঞ্চলের খাবার অনেক সুস্বাদু। তাই সব কাজ শেষ করে কাছাকাছি কোন বন্ধুকে ফোন করে একত্রে খাওয়া দাওয়া করবো। তারপর একটি বই-এর দোকানে গিয়ে কয়েকটি বই কিনবো, আর 雕刻时光ক্যাফেতে বসে একটি প্রবন্ধ লিখবো। বিকেলের কাজ শেষ করে বিমান বন্দরে যাবো। সেখান থেকে একজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে ফিরবো।

আমার দৃঢ় বিশ্বাস আজ অবশ্যই একটি চমৎকার ও সুন্দর দিন হবে!

তবে! আজকের শুরুর সবই যথাযথ হয়নি। সকালে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র খুঁজে পাইনি। আমি বুঝতে পারছি না! এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাগজ গতকাল রাতে ঘুমার আগেও ছিলো।

প্রায় এক ঘণ্টা খোঁজা খুঁজির পর চিন্তা করলাম। ঘুমানোর আগে সেগুলোকে কোথায় দেখেছি ও রেখেছি সেটা ভাবার চেষ্টা করলাম। সেগুলো অবশ্যই টেবিলের ড্রয়ারে রাখার কথা। তবে কাগজগুলো খুঁজে পেলাম দেরাজে আটকে থাকা অবস্থায়। ওগুলো টেনে বের করতে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেলাম। আমার মাথা দেরাজে hit করে......

ব্যথা

ব্যথা

ব্যথা

হাতে সময় যথেষ্ট নেই, ব্যথা নিয়েই রওনা দিলাম আমি। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনে কিছু ছোট-খাট ব্যাঘাত ঘটেই থাকে।

সৌভাগ্যক্রমে সকালের কাজ সুষ্ঠুভাবেই শেষ হয়। তখন সকালে ১১টা, মজাদার সব খাবার এখানে আছে। তাই বন্ধুরদের ফোন করা শুরু করলাম।

"হ্যালো, হ্যাঁ, আমি এখন হাই তিয়েন অঞ্চলে, চলে এলো, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি। "

"দুঃখিত, আজ আমার একজন কাকার জন্মদিন।"

"হ্যালো, হ্যাঁ, আমি এখন হাই তিয়েন অঞ্চলে, আজ একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করা যায় কি ?"

"ওহ! আমি তো এখন পেইচিংয়ে থাকি না।"

"হ্যালো, হ্যাঁ, আমি এখন হাই তিয়েনে আছি। চলে এলো, এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি?"

"আমি তো ছাও ইয়াং অঞ্চলে চলে এসেছি।"

"হাই, হ্যাঁ, আমি এখন হাই তিয়েন অঞ্চলে, কি করছো তুমি ? চলে এসো, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করি?"

"ও.....গত রাতে একটুও ঘুমোতে পারিনি।....."

"হ্যালো, হ্যাঁ, আমি এখন হাই তিয়েন অঞ্চলে, আমার মনে হয়, আজ তুমি এখানে ক্লাসে এসেছো, তাই না? আসো একসঙ্গে খাবার খেয়ে নেই।"

" আমার যে বিকেলে ক্লাস আছে.....।"

......ব্যর্থ......

আমার সব বন্ধুত্বই ভেঙে গেছে মনে হয়......

ফোন রেখে দিয়ে এবার আমি গাড়ির স্টিয়ারিং হুইলের ওপর ঠেস দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকি। একটি গাড়ির পর একটি গাড়ি পার হয়ে যায়। ভাবতে থাকি, আমার জীবন কি পুরোপুরি অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে !!! আমি কি একা ! একাকীত্ব কি আমাকে গ্রাস করতে যাচ্ছে !

সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনেও কিছু ছোট-খাটো ব্যতিক্রম রয়েছে।

আচ্ছা, আজ তবে একা একাই খেয়ে নেই।

একা একা খাওয়া আসলেই একটি কঠিন ব্যাপার। কারণ আমি ফাস্ট ফুড পছন্দ করি না আর জাঁকজমকপূর্ণ রেস্তোরাগুলোতে কত্ত রকম মেনু, ওগুলো বাছাই করা আমার জন্য খুব কঠিন কাজ। আমি ভু-আন নামে একটি ছোট জাপানী নুডুলসের দোকানে ঢুকলাম। এই ভু-আন নুডুলসের দোকানটি খুবই জনপ্রিয়, তার হাতে তৈরি নুডুল খুবই মজার। আমি যেহেতু হাই তিয়েন অঞ্চলে থাকি না, তাই দোকানটিতে খাওয়ার সুযোগ কমই হয়। হঠাত্ আমি খুশি হয়ে উঠি। এখন আমি একজন একাকী পথিক। একাকী ভোজনরসিক। আমার সব কথা weiboতে প্রকাশ করবো। একাকী ভোজনরসিক: বিশাল পেইচিং শহরে একাকীত্বকে সঙ্গে নিয়ে সুস্বাদু খাবার খুঁজি, মুগ্ধ হই বা দুঃখিত হই, কোন মানুষ আমার খোঁজ না নিলেই আমি খুঁজে নেই মজাদার সব খাবার।

গিয়ে দেখি নুডুলের দোকানটি তখনও খোলেনি !!!

সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনেও কিছু কিছু ছোট-খাটো ব্যাঘাত রয়েছে।

একটি গল্প রয়েছে। একটি বিশাল গম ক্ষেতে, তুমি প্রবেশ করেছো, সুযোগ খুঁজে গমের একটি বড় শীষ খুঁজে নিলে। তারপর হাঁটছো। এর পর কেউ একজন প্রথমেই তোমার চেয়ে বড় শীষটি তুলে নিলে তোমার কষ্ট হবে। আর কোন কোন মানুষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কোনটি রেখে কোনটি নেবে, পরে হয়তো আরো বড়টি পাবে। এমন চিন্তা তাদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু ছোট সাধারণ একটি গমের শিষ নিয়েই সে বাড়ি ফিরে।

আমি গল্পের প্রথম রকমের মানুষ। কেন এভাবে বলছি ? কারণ, যে কোন সুস্বাদু খাবারের দোকানে ঢুকে আমি দ্রুততার সঙ্গে খাবারের অর্ডার দিয়ে ফেলি। তবে অন্য কোন দোকানে খাবার সময় আমি ফোনে weibo চেক করি। ভু-আন নুডুলের দোকানের মালিক আমাকে বলেন যে, দুঃখিত, প্রতিদিন ১২টায় দোকান খুলি। তাই আমি ১১টা ৫০মিনিটে দোকান ছেড়ে চলে গেলাম।

আমি জীবনের সবচেয়ে নিচের পর্যায় পৌঁছেছি। এখন পারিবারিক সান্ত্বনা আমার বেশি প্রয়োজনীয়। আমার স্ত্রী ও ছেলে অন্য প্রদেশে থাকে। তবে তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বললেও তাদেরকে আনতে যাইনি। আমি আমার মাকে ফোন করি। মা দিবস এলে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাবো। তিনি তাতে অনেক খুশি হবেন এবং আমাকে অনেক আদর করবেন।

"মা, তোমাকে মা দিবসের শুভেচ্ছা... !"

"ধন্যবাদ।"

"মা, এখন আপনার শরীর কেমন?"

"ভালো আছে।"

"মা, আপনি কি আমাকে মিস করছেন ?"

"হ্যাঁ।"

"আচ্ছা মা, আপনি কি মাহজং খেলছেন ?

"হ্যাঁ।"

মনে হচ্ছে এ বিশ্বের সঙ্গে আমার সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

নিজেকে সান্ত্বনা দেই। ঠিক আছে, মন খারাপ করো না, এখন তাহলে মনোযোগ দিয়ে প্রবন্ধ লিখবো। প্রবন্ধ লেখার জন্য মন খারাপ অনুভূতি খুব কাজে দেয়। আমি একটু গেমস খেলি, মন হালকা করি। কিন্তু গেমস খেলে বার বার হারি। এতে নিজের ওপরই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠি আমি।

এদিকে নিজের প্রবন্ধ আমি সংরক্ষণ করিনি!

কেন ! আমার কি সমস্যা আছে! আমার হাত কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আমি! কে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে? আমার সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন?! এ জীবনের কিছু ছোট-খাটো ব্যাঘাত তা কখন শেষ হবে?!

আমি হাল ছেড়ে দেই, আমার এক বন্ধু বিমান বন্দরে অপেক্ষা করছে...

আমি গাড়িতে বসি, তখন তার ফোন বেজে ওঠে। সে আমাকে বলে "দুঃখিত, আমার ফ্লাইট দেরি হয়েছে, এখনও রওনা হতে পারিনি। তুমি বিমান বন্দরে এসো না।"

এখন আমি শুধু বাড়ি ফিরতে চাই, নিজের বিছানায় শুয়ে পড়তে চাই।

আমি গান ছেড়ে দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করি। প্রথম গানটি হলো, পর্বত চুড়ায় চাঁদ। তারপর একটি বিষণ্ণ গান। তৃতীয়টিও একটি দু:খের গান। ওফ্‌ আমি আর দু:খের গান শুনতে চাই না।

আমাকে এখন গান বন্ধ করতে হবে। গভীর মনোযোগে ড্রাইভিং করতে হবে। তবে কয়েক মিনিট পর আমার পেট ব্যথা শুরু হয়।

এখন আমি বাড়ি থেকে দু'কিলোমিটার দূরে। এ দু'কিলোমিটারের মধ্যে কয়েক হাজার গাড়ি রয়েছে আর প্রচুর যানজট দেখা যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, প্রত্যেক মানুষের এরকম অভিজ্ঞতা হয়। নিজের শরীরের সব কোষ নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার। ঠিক এ মুহূর্তে আমার স্ত্রী ফোন দিলো আমাকে।

"কি খবর? ফোন করেছো কেনো?"

"কোন কারণ নেই। বাড়িতে ফিরে তোমাকে আবার ফোন করবো।"

"কেন? তুমি এখন কোথায়?"

"বাইরে, গাড়ি চালাচ্ছি।"

"তুমি বলো, আমার এখন সময় আছে।"

কিছু সময় পর, আমার স্ত্রীকে রাজি করাই যে, বাড়িতে ফেরার পর ফোন করবো। সে কয়েক মিনিট যেনো আমার জন্য শতাব্দীর মত দীর্ঘ মনে হয়।

অবশেষে, আমি বাড়িতে ফিরেছি, দৌড়ে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করি। দরজার কাছে গিয়ে মনে হলো, গাড়িতে চাবি ফেলে এসেছি। দৌড়ে ফিরে গেলাম, চাবি আনতে।

অবশেষে ফিরে এলাম সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবনে!

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040