আজ থেকে ২০ বছর আগে চীন আন্তর্জাতিক ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়েছিল। এই ২০ বছরে চীনের ইন্টারনেটশিল্প দ্রুত উন্নত হয়েছে এবং মানুষের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
১৯৯৪ সালের ২০ এপ্রিল একটি ৬৪kb সংযোগের মাধ্যমে চীন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ইন্টারনেট পরিবারের ৭৭তম সদস্যে পরিণত হয়। আজ ২০ বছর পরও অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরই সেই স্মৃতি মনে থাকবার কথা।
তেমনি একজন পুরাতন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বললেন, "১৯৯৮ সালে আমি প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করি এবং তখন সাধাণত চ্যাটরুমে অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলতাম। তখন ইন্টারনেট একটি নতুন জিনিস ছিল এবং আমার জীবনের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ ছিল না।"
আর একজন ব্যবহারকারী বললেন, "যখন প্রাথমিক উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র ছিলাম, তখন আমি প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট ব্যবহার করি। আমার কম্পিউটারের সিপিইউর মডেল ছিল 'ফাইভ এইট সিক্স'। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইমেল পাঠানো ও গ্রহণ করা আমার জন্য ছিল একটি অদ্ভূত অভিজ্ঞতা। আমার মনে আছে, তখন আমি ফোন লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছিলাম। তখন ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় কথা বলার জন্য ফোনসেটটি ব্যবহার করতে পারতাম না।"
২০ বছর পর বর্তমানে চীনের ইন্টারনেট শিল্পে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন আর উন্নয়ন। চীনা শিল্প ও তথ্যায়ন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ছাং ফেং বলেন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চীনের অপটিক্যাল ফাইবারের আওতায় এসেছে ১৭ কোটি ২০ লাখ পরিবার এবং ৮০.৫ শতাংশ ব্যবহারকারীর ব্রডব্যান্ডের গতি ৪ MB বা তার বেশি। ইন্টারনেট অর্থনীতিও অনেক উন্নত হয়েছে এবং চীনা ই-কমার্স পৌঁছে গেছে বিশ্ব মানে। পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩ সালে চীনা ই-কমার্সের পরিমাণ ছিল ১০ ট্রিলিয়ান ইউয়ানের বেশি এবং এসময় তথ্যের জন্য চীনারা ব্যয় করেছে ২.২ ট্রিলিয়ান ইউয়ান। জাতীয় তথ্যকেন্দ্রের প্রধান বিশ্লেষক ফান চিয়ান পিং বলেন, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের তথ্য-উপাত্ত অনুসারে, ইন্টারনেটের উন্নয়ন অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তিনি বলেন-
"গত বছরের ১১ নভেম্বর একদিনে ইন্টারনেটে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৬ বিলিয়ান ইউয়ান, যা চীনের প্রথম দশটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের দশ বছরের বিক্রির সমান। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে খুচরা-বিক্রির পরিমাণ ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে ইন্টারনেটে কেনাকাটার পরিমাণ ছিল ৫১ শতাংশের বেশি। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মানুষ ক্রমবর্ধমান হারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জিনিস কিনতে আগ্রহী হচ্ছে।"
ইন্টারনেট মানুষের যোগাযোগ ও জীবনযাপনের রীতিতেও পরিবর্তন এনেছে। একসঙ্গে কেনাকাটা করা বা গ্রুপ পারচেজ, ইন্টারনেটে খাবার কেনা, ইন্টারনেটে আর্থিক ব্যবস্থাপনাসহ
ডিজিটাল জীবনযাপন রীতি এখন শুধু একটি ধারণা নয়, এটি এখন বাস্তব। ২০ বছরের উন্নয়নের পর চীনা ইন্টারনেট শিল্প একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। পেইচিং এরোনটিক্স এবং নভশ্চরণবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট হুয়াই চিন পেং মনে করেন, উপাত্ত যুগ সমাজ ও ব্যক্তির জীবনে আরও বেশি পরিবর্তন এনে নেবে। তিনি বলেন-
"আমরা জানি ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিময় মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। পাই তু (baidu) সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ব্যবহারকারীর অভ্যাস ও কাজের সাধারণ রীতি। থাও পাও (taobao)-এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি ব্যবহারকারীর কেনাকাটার অভ্যাস এবং ওয়ে পো (weibo) –এর মাধ্যমে জানতে পারি এ মুহূর্তে ব্যবহাকারীর আচরণ ও অভ্যাস। তথ্যের এই অবাধ গতি ব্যক্তির জীবনকেও প্রভাবিত করে।"
উল্লেখ্য, ইন্টারনেটের দ্রুত উন্নয়ন মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি কিছু সমস্যারও সৃষ্টি করছে। একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ২০১৩ সালে প্রতিদিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে তা ১৫০০টি জাতীয় গ্রন্থাগারের তথ্যের সমান। প্রতিদিন আমরা অনেক বেশি তথ্য পাই, কিন্তু এতো তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করার বা তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার সময় আমরা পাই না।
ইন্টারনেটের ২০ বছরে চীনা অর্থনীতির উন্নয়ন দেখা গেছে। পাশাপাশি দেশে ইন্টারনেট শিল্পের উন্নয়ন চীন ও চীনের মানুষের জীবনযাপন রীতিতেও পরিবর্তন এনেছে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে ইন্টারনেট আমাদের জীবনে আরো ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনবে।