.
. এটি জনপ্রিয় মার্কিন টিভি নাটক 'the good wife'
প্রথমেই নাটকের পেছনের কথা জানিয়ে দেই। এ্যালিসিয়া হলো টিভি নাটকটির প্রধান অভিনেত্রী। নাটকে দেখা যায়, তিনি তার চাকুরিতে প্রমোশন পেয়েও খুশি নন। তার কাজ ভালো, এ কারণে তাকে প্রমোশন দেয়া হয়নি। বরং তার স্বামী যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যের গভর্নর। তাই তাকে প্রমোশন দেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে কোম্পানি একটি পার্টি'র আয়োজন করে। এ্যালিসিয়া তাতে অংশ নিতে চান না। এখানে, নাটকটির অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, কোম্পানিটির একজন তাকে বলেন,
তোমার জানা উচিত, আমরা দু'জন এখানে কাজ করি, এ কারণে কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে। তোমার অনুপস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ ও কোম্পানির অন্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদাররা মনে করবেন যে, কোম্পানির সিদ্ধান্তের প্রতি তোমার আস্থা নেই। তুমি হয়তো রেগে যাচ্ছো। তুমি কি জানো, কীভাবে আমি এ কোম্পানির একজন পার্টনার হয়েছি? কোম্পানির সাবেক প্রেসিডেন্ট জনস্ স্টার্ন, যৌন হয়রানির কারণে তার নামে মামলা দায়ের করা হয়। সেজন্য, তিনি একজন নারী পার্টনারের প্রয়োজন বোধ করেন। ব্যাস, এই..।
যখন কোনো ঘরে ঢোকার জন্য দরজায় নক করবে, তা খুলে গেলে তুমি 'কেন' প্রশ্ন করো না। তোমার উচিত সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করা। এখানে কোন মানুষ তোমার অনুভূতির দিকে নজর দেয় না, কোন মানুষ তোমার অবহেলা উপভোগ করে না। তাই, আমার প্রস্তাব হলো, নিজের প্রতি এক মিনিট সময় দাও, চিন্তা করো, নিজের সুন্দর কণ্ঠ নিয়ে, হাসিমুখ নিয়ে পার্টিতে যাও। যারা তোমাকে প্রমোশন দিয়েছে তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাও। কারণ এ সুযোগটি সবাই পায়না, কিন্তু তুমি পেয়েছো।
বন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠানে, আপনাদের জন্য আরো একটি সুন্দর কবিতার সঙ্গে পরিচয় করাবো, তা হলো চীনের প্রাচীন কবিতা সংগ্রহ---the book of odesর মধ্যে 《鄘风.柏舟》 নামে একটি কবিতা।
柏舟
泛彼柏舟,在彼中河。髧彼两髦⑴,实维我仪⑵。之死矢靡它⑶。母也天只⑷!不谅人只!
泛彼柏舟,在彼河侧。髧彼两髦,实维我特⑸。之死矢靡慝⑹。母也天只!不谅人只!
পাই চৌ
ফান পি পাই চৌ, চাই পি চুং হে. তান পি লিয়াং মাও, সি উয়েই উও ই। জি সি সি মি থা। মু ইয়ে থিয়েন জি! পু লিয়াং রেন জি!
ফান পি পাই চৌ, চাই পি হে ছে. তান পি লিয়াং মাও, সি উয়েই উও থে। জি সি সি মি থে. মু ইয়ে থিয়েন জি! পু লিয়াং রেন জি!
চেকের বিশ্ব বিখ্যাত গল্পকার মিলান খুন্দার বলেছেন,"স্বপ্ন সুন্দর, গুরুত্বপূর্ণ তবে অস্পষ্ট।" এ কবিতাটি স্বপ্নের মত, সুন্দর, তাত্পর্যপূর্ণ তবে অস্পষ্ট। ভালবাসা যেমন ব্যাখ্যা করা যায় না। গোলাপ ফুল খুবই সাধারণ, আমাদের স্বপ্নগুলিও অস্পষ্ট, তবে তার সৌন্দর্য উপভোগ্য। এবার কবিতাটি বন্ধুদের জন্য অনুবাদ করছি,
নদীর বুকে ভাসিয়ে নাও, যে আসছে
সে ছেলে আমার ভালবাসা,
এ জীবনে তাকে ছাড়া
আর কাউকে বিয়ে করবো না.
তাহলে আমার মা,
বুঝতে পারে না আমায় !
নদীর বুকে ভাসিয়ে নাও, যে আসছে
সে ছেলে আমার ভালবাসা
সে আমার চিরদিনের ভালবাসা
যা কোনদিন পরিবর্তন হবার নয়।
তাহলে মা আমার,
কেন বিশ্বাস কর না!
আসলে চীনের কবিতায় অনেক কবিতায় এ নৌকার কথা রয়েছে। সাহিত্যে এ নৌকার কথা থাকলে তা একটু দুঃখেরই হয়ে থাকে। নৌকা এখানে দুঃখের প্রতীক। এ কবিতাও একটি ভারাক্রান্ত ভালবাসার গল্প। একটি মেয়ে, একটি ছেলেকে ভালবাসে। কিন্তু ছেলেটিকে পছন্দ করে না মেয়ের মা। প্রাচীন চীনে মেয়েরা বিয়ের জন্য নিজের পছন্দমত ছেলে বাছাই করতে পারতো না। প্রথমে সমাজের সম্মতি, তারপর বাবা-মার সম্মতি, তারপর বিয়ে হতো। সেজন্য যদি মেয়েটির মা এ বিয়েতে রাজি না হয়, তাহলে তার জন্য অন্য ছেলেকে পছন্দ করা হবে। প্রাচীন চীনের সমাজ ছিলো খুবই রক্ষণশীল ধরনের। আমাদের আজকের এ কবিতার মেয়েটি খুবই সাহসী। সে খুব স্পষ্ট করে নিজের ভালবাসার কথা, নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করেছে। যা প্রাচীনকালে একেবারেই বিরল। এতে আমরা দেখি যে, মেয়েটি ছেলেটিকে খুবই ভালবাসে। প্রায় দু'হাজার বছর আগের আরেকটি কবিতা আছে। সেখানে দেখা যায়, শুধুমাত্র বাবার সম্মতি না পাওয়ায় বিয়ে ভেঙ্গে গেছে:
今夕何夕兮,搴舟中流。
今日何日兮,得与王子同舟。
蒙羞被好兮,不訾诟耻。
心几烦而不绝兮,得知王子。
山有木兮木有枝(知),心悦君兮君不知。
চিন সি হে সি সি, ছিয়েন চৌ চুং লিউ।
চিন রি হে রি সি, তে ইয়ু ওয়াং জি থং চৌ।
মেং সিউ পেই হাও সি, পু চি কৌ ছি।
সিন চি ফান এর পু চুয়েই সি, হে চি ওয়াং চি।
সান ইয়ও মু সি মু ইয়ও জি, সিন ইয়ুই চুন সি চুন পু জি।
এ কবিতাটি প্রথম কবিতার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও বিখ্যাত। তাই বন্ধুদের জন্য আমি কবিতাটি বাছাই করেছি। বিশেষ করে সর্বশেষ চরণ: সান ইয়ও মু সি মু ইয়ও জি, সিন ইয়ুই চুন সি চুন পু জি। এখানে দু'টি চীনা শব্দ 枝 ও 知। এ বাক্যের অর্থ,
ডাল-পালার ভালবাসা কথা জানে সুর,
শুধু আমার প্রেমিক ভালবাসার খোঁজ রাখে না।
বন্ধুরা আপনারা বুঝতে পারছেন, যে এ দু'টি কবিতায় নৌকা থেকে, দু'টি দুঃখের গল্প শুরু হয়। এ দু'টি কবিতায় সে দু'টি মেয়ে নিজের ভালবাসা ছাড়তে পারে না, আবার সমাজ-সংসার, বাবা –মা, ছেড়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাহলে তারা কি বিয়ে করতে পেরেছিলো ? যদিও তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, চিরদিন তাদের ভালোবাসা অটুট থাকবে....। প্রাচীন চীনে তাদের ভালোবাসা ছিল একটি সুন্দর স্বপ্নের মত। তবে তাদের সাহসের প্রতি আমাদের সম্মান জানাতেই হয়। যদিও তারা নিজেরা ভালবাসে বিয়ে করতে পারে না, তাদের মনে সে সুখকর স্মৃতি চিরদিনের মত অটুট থেকে যায়।
এবারে বন্ধুদের জন্য চীনের লেখক হান হান'র একটি প্রবন্ধের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো। হান হান, ১৯৮২ সালে চীনের সাংহাই শহরে জন্ম গ্রহণ করে। সে একজন তরুণ লেখক হওয়ার পরও এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ও বিখ্যাত উপন্যাস প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি সে নিজের উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করছে। লেখা ছাড়া সে গাড়ি রেসের সঙ্গে জড়িত। অনেক প্রতিযোগিতায় সে পুরস্কার পেয়েছে। তাহলে শুনুন প্রবন্ধটি, প্রবন্ধটির নাম হলো: যে জীবন ভাবছি মনে
কিছু দিন আগে, আমি একটি রেসিং প্রতিযোগিতা অংশ নেই। সেখানে একজন বন্ধু পেয়েছি। তার কাজ হলো অভিনেতাদের ম্যানেজারি করা। বিদায়ের সময় সে আমাকে বলে, আমার প্রচার বাড়ানো উচিত। আমারও একজন ম্যানেজার দরকার, বিশেষ করে আমার ভাবমূর্তি বাড়াতে এর প্রয়োজন রয়েছে। সে আমাকে ইমেইল পাঠিয়ে বিস্তারিত জানাবে বলেছিলো।
কিছু দিনের পর সে আমাকে ফোন করে জানায় যে, আমার সমস্যা এত বেশি যে ইমেইলে স্পষ্টভাবে বলা যাবে না। সে আমাকে সেদিনের পোশাকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমি জানাই যে, তাড়াহুড়ার কারণে এমনটি হয়েছিল। আর কেউ আমাকে মনে করিয়ে দেয়ার ছিল না।
আমার বন্ধু বলে, পোশাক সমস্যাটি আসলে গুরুতর না। সবচেয়ে গুরুতর হলো, আমি রেসিং কার দলের তাঁবুতে ঘুমাই। ঘুমের সময় প্রায় ১০জন আমার ছবি তোলে। এদের মধ্যে ৫ জন সংবাদদাতা, ৪ জন নিজের ও অন্য গাড়ি দলের সদস্য। তাদের মধ্যে দু'জন ইচ্ছাকৃতভাবে তোমার মুখ নিচু করে ছবি তুলেছে। বাকি ৫ জন তোমার ছবি twitter এ প্রকাশ করেছে। তখন অনেকেই বলেছে, তোমার ছবি কি জঘন্য! তুমি কল্পনা করতে পারবে না। আমি উত্তরে বলি যে, ওই রাতে ফুটবল খেলা দেখায় এ সমস্যা হয়েছে.....।
আমার বন্ধু ফোনে আরো বেশি সমস্যার কথা বলেছে, তবে সেদিন আমার মনে শুধু একটাই চিন্তা ছিলো। আর তা হলো, সে প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে আমার ০.৩ সেকেন্ডের ব্যবধান ছিলো, কীভাবে আমি তাকে পরাজিত করে বিজয়ী হবো। পোশাকের কথা আমার মাথায় ছিলো না.....
ফোনের পর, আমি আমার বন্ধুর কথা ভেবেছি। হ্যাঁ, সে ঠিক বলেছে। আসলে আমি নিজের ভাবমর্যাদার কথা ভাবিনি। নিজের তাঁবুতে আমার নিজের গাড়ি দলের সদস্যদের যা বলি, এগুলো যদি কেউ কথা রেকর্ড করে ইন্টারনেটে প্রকাশ করে, আসলে সত্যি জটিল সমস্যা বয়ে আনবে। তবে আমি মনে করি, বেশিরভাগই ভাল মানুষ। তবে কেউ যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাহলে তাকেও বিশ্বাস করা ঠিক হবে না।
আমার ভাব মর্যাদার দিকে কখনোই নজর দেই নি। সব সময় বেখেয়াল থেকেছি। এ গ্রীষ্মে আমি শুধু দশটি সাদা T-shirt কিনেছি। আগের শীতকালে আমি দু'টি তুলোর কালো পোশাক কিনেছি। আমি কখনও একজন লেখক, কখনো একজন রেসিং ড্রাইভার। বই ও প্রতিযোগিতা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি ফ্যাশন সম্পর্কে কিছুই জানি না এবং পরওয়া করিনা।
আমার মনে জীবনের যে ছবিটি ফুটে ওঠে তা হলো, আমাদের উচিত তাত্পর্যপূর্ণ কিছু তৈরি করা, সংস্কৃতি তৈরি করা। এ বিশ্বের বুকে ত্রিশ বছর ধরে আমি আছি। প্রথম থেকেই আমি একজন জয়ী, তারপর আমি এ জীবনে নিজের স্বাক্ষর রেখে যেতে চাই। আমি স্বীকার করি যে, যথাযথ পরিচ্ছদ ও সুন্দর আচরণ- সুন্দর সংস্কৃতির এটিই নিয়ম। আমি আশা করি, একটির পর একটি শব্দ দিয়ে একটি সুন্দর বিশ্ব তৈরি করবো।
আমার এ জীবনে, নিজের পছন্দের কাজগুলো করবো, নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকবো। জীবনের এ অল্প সময়টিতে ছোট্ট পরিবারে ভালোভাবে কাটাবো। লেখা ও প্রতিযোগিতা ছাড়া আমি আরো অনেক জিনিস পছন্দ করি, তবে এক্ষেত্রে আমার সামর্থ্য যথেষ্ট নয়। হ্যাঁ, আমরা ব্যর্থ হতে পারি, তারপর আমরা ছেড়ে দেবো না, আবার চেষ্টা করবো। ভবিষ্যতে একদিন, আমাদের সফলতা আসবে।
আমি যে জীবনের চিন্তা করি, সেখানে কোন দুঃখ থাকবে না। যেমন, অনেক বছর আগে একটি রেস্তোরাঁয় এক সুন্দর মেয়েকে দেখেছি, দ্বিধা কাটিয়ে সে সুন্দর মেয়েটি গান গেয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলার কোন সুযোগ পাইনি।
কেনো আমি দ্বিধা করি? সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটি হলো, তার ছেলেবন্ধু আমার প্রতিযোগী। তবে আমার কোন দুঃখ নেই। আমি শুধু প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে চাই, ভালো উপন্যাস লিখতে চাই। এজন্য আমার পোশাক ঠিক করা হয় না। তাই আমি একজন সুখী মানুষ।