কেবল বাংলায় নয়, বলা যায় সবদেশেই একটি কথার প্রচলন রয়েছে যে, 'বন্ধু ভাগ্য বড় ভাগ্য' অর্থাত্ যার যত ভাল বন্ধু আছে সে তত ভাগ্যবান। হ্যাঁ বন্ধু, আজ থেকেই আপনার প্রিয় বন্ধু আর বান্ধবীর সঙ্গে বেশি বেশি করে যোগযোগ শুরু করুন এবং নিবিড় বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোন। কেননা, প্রযুক্তির উত্কর্ষতা আর বিভিন্ন হাইটেক পণ্যের কারণে বর্তমান বিশ্বের মানবকুল ক্রমশই পারিপার্শ্বিক জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অন্তর্মুখী হয়ে পড়ছে। এই অন্তর্মুখী ঘরকুনো স্বভাবের কারণে মানুষ সহজেই রোগে আক্রান্ত হতে পারে, বলা হয়ে থাকে যে, এর কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও কমে যায়। কারণ বর্হিজগত বা সামাজিক জগতের সাথে যোগাযোগ কমে গেলে মানুষের মস্তিষ্কে উদ্বেগ জাতীয় উপাদান সৃষ্টি করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ২৭৬জন মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, যারা বন্ধু-বান্ধব বা সামাজিক জীবনে ঘনিষ্ট ও নিবিড় যোগাযোগ রাখেন, তাদের ঠান্ডা লাগার ক্ষমতা যারা ঘরকুনো হয়ে থাকেন তাদের তুলনায় ৪গুণ কম।
সেজন্য আপনি যদি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে শত ব্যস্ততার মাঝেও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন। আপনি যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন বন্ধুর আড্ডার জন্য সময় বের করতেই হবে আপনাকে। যদি আপনার হাতে সত্যি সময় না থাকে, তাহলে আপনি অন্তত টেলিফোনের মাধ্যমে বন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন।
শ্রোতা, আমাদের অনুষ্ঠানে অনেকবার ঘুমের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধে সহায়ক এ জন্য দৈনিক কমপক্ষে ৮ ঘন্টা করে ঘুমান। কেননা, ঘুমের গুণগতমানের সাথে রোগ প্রতিরোধ এবং ভাইরাস প্রতিরোধ সেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এক গবেষণায় জানা গেছে, যারা সপ্তাহে চার ঘন্টা করে ঘুমান, তাদের রক্তে ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ সেলের সংখ্যা যারা প্রতি রাতে সাড়ে সাত থেকে আট ঘন্টা করে ঘুমান যাদের তুলনায় অর্ধেক।
সেজন্য প্রতি রাতে এক টানা সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান। মনে রাখবেন যদি সকালে ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে না হয় বা ক্লান্তি লাগে, তার অর্থ হচ্ছে আপনার ভালো ঘুম হয়নি।
ভাল মুড সুন্দর ও সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রতিদিন ভালো মুডে থাকার চেষ্টা করুন। কেননা আপনি যদি প্রতিনিয়ত ভালো মুড আর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, তাহলে সহজেই অনেক কষ্ট আর দুঃশ্চিন্তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন। ভাল মুড মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অধিক মানসিক চাপ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে তোলে। তাই চাপ কমান। এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপে থাকলে শরীরে বিভিন্ন ধরণের সেলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়।
মানুষ নিজের স্বভাব বা আচরণ সহজে পরিবর্তন করতে পারে না। তাই সব সময় আপনি নিজেকে আনন্দঘন পরিবেশে থাকার উপায় খুঁজে বের করুন। অনেক সময় ছোট ছোট বিষয়ও আনন্দের খোরাক জাগাতে পারে। পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ডিনার করার সময় আপনি প্রতিদিনের মজার ঘটনা বা সু-খবরগুলো শেয়ার করতে পারেন।
স্বামী ও স্ত্রীর সঙ্গে খোলামেলা ভাবে আলোচনা বা মত বিনিময় করুন। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যেই ছোট্টখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়ে থাকে। ঝোগড়া হলেও তা কোনো বড় সমস্যা নয়। কিন্তু ঝগড়ার পর দ্রুত মুড ভালো হবে কি না, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। যে দম্পতি সব সময় নিজের স্বামী বা স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করে কথা বলে, অপমান করে, তাদের শরীরে ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত হ্রাস পায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, আনন্দময় বা স্বাভাবিক আচরণের দম্পতিদের তুলনায় যারা প্রতিনিয়ত খারাপ আচরণ বা ঝগড়া-ঝাটি করে এমন দম্পতিদের শারীরিক অসুস্থতা নিরাময়ে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ বেশি সময় লাগে।
আবেগের নিয়ন্ত্রণ নয় বরং প্রকাশ করুন। কেউ কেউ সহজে নিজের মতামত ও আবেগ প্রকাশ করতে চায় না, শরীরের জন্য এটা ভাল লক্ষণ নয়। দেখা গেছে, যারা অতিমাত্রায় আবেগ নিয়ন্ত্রণ করেন, তাদের মধ্যে ভাইরাস প্রতিরোধমূলক সেল অন্যদের তুলনায় কম।
ভাইরাস জনিত ঠান্ডা থেকে রক্ষা পেতে সব সময় নিজের কলম ব্যবহার করুন। বিষয়টি অতি তুচ্ছ কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শ্রোতা, ঠান্ডা ও প্রচলিত ঠান্ডা সংক্রান্ত ভাইরাস সহজেই হাত থেকে হাতে সংক্রমিত হয়। তাই পাবলিক ব্যবহার্য দ্রব্য সামগ্রী স্পর্শ করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন। এভাবে ঠান্ডা বা ভাইরাস জনিত ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি কমাতে পারি আমরা। যেমন, ব্যাংক কাউটারে যে কলমটি সকলের ব্যবহারের জন্য রাখা হয়েছে, সেটি ব্যবহার না করে নিজের কলমটি ব্যবহার করাই সবচেয়ে উত্তম।
প্রতিদিন কিছু না কিছু ব্যায়াম করুন। এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, প্রতিদিন হাটাহাটি বা ব্যায়াম করেন এমন ব্যক্তিদের তুলনায় চার মাস ধরে কোনো প্রকার ব্যায়াম করছেন না এমন ব্যক্তিদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার দ্বিগুণ। সেজন্য প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হালকা ব্যায়াম করুন।
ধোঁয়া এবং ধুলা বাহিত পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। ধোঁয়া এবং ধুলা এজমা এবং এলার্জি রোগীদের বেশি ক্ষতি করে থাকে। সেজন্য ধোঁয়া বা ধুলাবালুময় পরিবেশে এড়িয়ে চলা ভালো।
স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখতে চাইলে এ্যন্টিবায়োটিক কম ব্যবহার করুন। আরেক গবেষণা থেকে জানা গেছে, বেশি বেশি এ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে সাইটোকিন কমে যেতে পারে। সাইটোকিন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করতে সহায়তা করে। এ্যন্টিবায়োটিকের অতি ব্যবহারে রোগ প্রতিরোধের ওপর ভীষণ চাপ পড়ে। এ ফলে আপনার শরীরে একগুঁয়ে ভাইরাস সৃষ্টি হতে পারে। ডাক্টরের পরামর্শ অনুসারে কেবল সত্যিকার ভাইরাল সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধে এ্যন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারেন।