Web bengali.cri.cn   
টি-শার্ট-এর ইতিহাস
  2014-04-14 19:52:31  cri
কেউ কেউ বলেন, টি-শার্টের জন্ম ১৯১৩ সালে এবং সে বছরই তা আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নৌবাহিনীর ইউনিফর্মের একটি অংশে পরিণত হয়।

যদি তাই-ই হয় তাহলে চলতি বছরে টি-শার্টের বয়স ১০০ বছরেরও বেশি, তাই না? তবে এত বছর পার হলেও টি-শার্ট কিন্তু সবসময়ই যৌবনের প্রতীক।

আবার কেউ কেউ বলেন, শিল্প সংস্কারের সময়ে অর্থাত্ ১৮ শতাব্দীতে ইউরোপের খনি শ্রমিকেরা কাজ করার সময় টি-শার্ট পড়া পছন্দ করতেন, কারণ তা পাতলা এবং কাজের জন্য ভালো।

তবে যে যাই বলুক না কেন, টি-শা্র্ট কিন্তু সূচনা লগ্নে কেবল অনানুষ্ঠানিক পোশাক হিসেবেই ব্যবহৃত হতো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সৈন্যরা দৈনন্দিন জীবনে টি-শার্ট পরতে পছন্দ করা শুরু করে। আর তখন থেকে আরো বেশি মানুষ প্রকাশ্য স্থানে টি-শার্ট পরতে শুরু করে।

২০ শতাব্দীর ৬০'র দশকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথাগত ঐতিহ্যের বিরোধিতা করার গতিপ্রবাহ দেখা যায়। এর সঙ্গে সঙ্গে রক সঙ্গীত, মাদক দ্রব্য সেবন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

এসময় একেবারে সাদা রং-এর টি-শার্ট তাদের বিদ্রোহী মনোভাবের মর্ম বর্ণনা করতে ব্যর্থ হয়। টেক্সটাইল প্রিন্টিং প্রযুক্তি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরণের স্লোগান এবং তরুণ-তরুণীদের আদর্শের ছবি ছাপানো এমন টি-শার্ট তাদের মধ্যে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে। বিশেষ করে রক সঙ্গীত ভক্তদের মধ্যে।

টি-শার্ট যেন বিশেষভাবে মার্কিন নাগরিকদের স্বাধীন চরিত্রের সঙ্গে মানানসই। তা আস্তে আস্তে যেন সেদেশের নাগরিকদের কাছে ইউনিফর্মে পরিণত হয়েছে। সাধারণ লোকেরাও তা পছন্দ করেন আর বিখ্যাত আইটি কোম্পানীর প্রধানদের কাছে তাতো রিতিমতো জনপ্রিয়। যেমন বিল গেটস, জবস এবং ফেসবুকের সিইও জাকারবার্গ। তাঁরা চামড়ার জুতো, স্যুট এবং টাই এ ধরণের পুরোনো ফ্যাশন ছেড়ে দিয়ে এখন সবসময় টি-শার্ট, জিন্স এবং খেলাধুলার জন্য ব্যবহৃত জুতা পড়তে পছন্দ করেন।

আর টি-শার্ট যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে টি-শার্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাকে পরিণত হয়। লোকেরা যার যার প্রিয় প্রার্থীর ছবি ছাপানো টি-শার্ট পড়ে প্রার্থীদেরকে সমর্থন করেন।

আবার মাঝে মাঝে বিরোধী দলের প্রার্থীদের পরাজিত করার জন্যও তারা কিছু বিশেষ শ্লোগান বা ছবি ছাপানো টি-শার্ট পরেন।

একটি ভালো টি-শার্ট খুব সম্ভবত প্রার্থীর একটি ভালো বক্তৃতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বিখ্যাত শিল্পীরা বিশেষ করে ওবামার জন্য নির্বাচনের পোস্টার তৈরি করেন এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচনের টি-শার্টও ডিজাইন করেন। তাতে বিশেষ করে ওবামার "সংস্কারের" ধারণা তুলে ধরেন যা খুব আধুনিক এবং খুব আমেরিকান। এটি মার্কিন নাগরিকদের ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে এবং তা ওবামার নির্বাচনের জন্য অনেক সহায়ক হয়। এখনও তা ডিজাইন মহলের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করা হয়।

আসলে গত শতাব্দীর ৮০ ও ৯০'র দশকে চীনে টি-শার্টের প্রচলন শুরু হয়। আর তখন লোকেরা এ পোশাকটিকে টি-শার্ট না বলে, একে "সাংস্কৃতিক কাপড়" বলতেন। কারণ এর ওপর বিভিন্ন শব্দ বা অক্ষর ছাপানো যায় এবং এর মাধ্যমে নিজের চরিত্র ও বৈচিত্র তুলে ধরা যায়।

২০০০ সালের দিকে চীনের আধুনিক তরুণ-তরুণীরা বিশেষভাবে চীনের সাবেক নেতার ছবি আছে এমন টি-শার্টকে অনেক পছন্দ করতেন। যেমন চীনের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাও চে তুং প্রমুখ নেতার ছবি। ২০০৮ সালে পেইচিংয়ে অলিম্পিক গেমস আয়োজিত হয়। আর তখন রাস্তার সব জায়গায় দেখা যায় ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস এমন শব্দ ছাপানো সব টি-শার্ট। লোকেরা মনে করেন, পেইচিং সাফল্যের সঙ্গে অলিম্পিক গেমস আয়োজনের অধিকার পেয়েছে এবং সেবার অলিম্পিক গেমস সফলও হয়। এটি খুব গর্বের ব্যাপার। লোকেরা নিজ দেশের প্রতি ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশের জন্য টি-শার্টে ' আই লাভ চীনা' এমন শব্দ ব্যবহার করেন।

আর একই বছরের মে মাসে চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের ওয়েন ছুয়ান জেলায় রিখ্টার স্কেলে ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সে সময় সারা চীন এ ছোট জেলাকে সাহায্য করার জন্য কাজ করে। সাধারণ লোকেরা সেখানকার মানুষকে সমর্থন এবং উত্সাহ দেবার জন্য টি-শার্টে 'কাম ওয়ান, ওয়েনছুয়ান' এমন শব্দ ব্যবহার করে এবং এমন টি-শার্ট পড়ে সেখানে গিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজে অংশ নেন। বলা যায়, টি-শার্ট শুধু এক রকমের পোশাকই নয়, চীনারা তার মাধ্যমে নিজের অনুভূতি বর্ণনা করেন। তা থেকে বর্তমানে চীনের সংস্কৃতি, চীনের চলমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সব কিছুই জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040