ভাগ্য, নিজের হাতে
কখনো কখনো আমরা দেখি যে, দরিদ্র পরিবারের শিশুরা তাদের বাবা-মার মতই দরিদ্র হয়।আমরা হয়তো মনে করি তাদের বাবা-মার কারণে তারা এ দরিদ্রতাকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কারণ, তাদের বাবা-মার আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকার জন্যে শিশুরা শিক্ষা অর্জন করতে পারে না, বাবা-মা তাদেরকে কোন সম্পদ দিতে পারেন না, সেজন্য তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। আসলে এটা সত্যি না। নিজের ভাগ্য অনেক সময় নিজের হাতেই পরিবর্তন করা যায়।পরিবারের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও পরিশ্রমের মাধ্যমে ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে হবে।
পরিবারের দারিদ্রতা একটা মারাত্বক বিষয়। অনেক সময় দরিদ্র পিতামাতার মানসিকতা, আচার, আচরণ শিশুদের উপর প্রভাব ফেলে যা শিশুদের জন্য ভয়ঙ্কর।
কারণ একজন মানুষের মনের সাথে তার আচরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০ বছর বয়সী মেয়েরা নিজের জন্মদিন নক্ষত্রপুঞ্জ অনুসারে জানতে আগ্রহী, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে নক্ষত্রপুঞ্জ অনুসারে নিজের ভাগ্য অনেক আগে নিশ্চিত হয়েছে। তবে আমরা জানি যে, এটা একটা কুসংস্কার। একজন মানুষের জীবনে হাজার হাজার পছন্দ রয়েছে, তবে প্রতিটি পছন্দের ওপর সে মানুষের মন বিপুলভাবে প্রভাবিত হয়।
কোন কোন বাবা-মা নিজেদের অবস্থার জন্য ভাগ্যকে দোষারোপ করতে পছন্দ করে এবং এটা তারা তাদের শিশুদের কাছেও প্রকাশ করে। যদি বাবা-মা শিশুদের সামনে নেতিবাচক কথা বলেন, তাহলে তা শিশুদের মনের ওপর একধরণের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের বাবা-মা অবশ্যই আমাদেরকে ভালবাসেন, তবে তাদের কথা সবসময় সঠিক নয়। আমরা নিজেরা পরিবার পছন্দ করতে পারি না, মানে কোন্ পরিবারে আমাদের জন্ম হবে তা আমরা কেউ-ই বলতে পারিনা। তবে নিজের ভাগ্য আমরা পরিশ্রমের মাধ্যমে বদলাতে পারি।
আমাদের বাবা-মার জীবন অবশ্যই আমাদের জীবন নয়। তাহলে কিভাবে নিজের জীবন, নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করে জীবনকে উজ্জ্বল করবো?
প্রথমে অবশ্যই বাবা-মাকে ভালবাসতে হবে, সম্মান করতে হবে। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে, ' আমি কি চাই?'
তবে তার আগে, আরেকটি প্রশ্ন করতে হবে, তা হলো 'এ পছন্দটি কি আমাকে সুখী করবে?' বিশেষ করে মেয়েদের জন্য, ২০ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য।
বন্ধুরা, পরিশ্রম করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবে, আমাদের চেয়ে ধনী, শক্তিশালী, সুখী মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। যখন অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে না, তখন নিজের পছন্দ কে বাছাই করতে পারবে। আর তখন আমাদের বাবা-মায়ের নেতিবাচক মতামত এড়িয়ে যেতে পারবে।
বন্ধুরা, স্যু জি মো'র কথা মনে আছে? হ্যাঁ, গত সপ্তাহে লিন হুই ইং'র জন্য তার একটি চিঠি ও একটি কবিতা শুনেছেন, তাই না?
আপনাদেরকে আমি বলেছিলাম যে, স্যু'র দু'জন স্ত্রী আছে, এর মধ্যে একজন হলেন লু সিয়াও ম্যান।
লু সিয়াও ম্যান
লু সিয়াও ম্যান ১৯০৩ সালে চীনের চিয়াং স্যু প্রদেশের ছিয়াং চৌ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন। যখন তার ১৮ বছর বয়স, তখন তিনি ইংরেজি ও ফরাসী বলতে পারেন। একটি ধনী পরিবারে তার জন্ম। তিনি একজন চিত্রকর। ১৯২২ সালে ওয়াং কেং নামের এক ব্যক্তিকে তিনি বিয়ে করেন। পরে তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হলে ১৯২৫ সালে তিনি স্যু জি মো কে বিয়ে করেন।
তবে স্যু ও লু'র বিবাহ একটি ট্রাজেডি। একটি করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে এ বিয়ে অবশেষে ভেঙে যায়। তবে এই করুণ পরিণতি ছাড়া তাদের ভালবাসা ছিল খুব উজ্জল, খুব রোমান্টিক এবং খুব গভীর।
লু সিয়াও ম্যানের জন্য স্যু জি মো অনেক সুন্দর, রোমান্টিক কবিতা ও প্রবন্ধ লিখেছেন, এমনকি কয়েকটি বইও লিখেছেন। এখন তাহলে তার লেখা একটি সুন্দর চিঠি শুনুন,কেমন?
মেই, (এটা লু'র জন্য স্যুর বিশেষ একটি ভালবাসা সম্বলিত ডাক নাম)
সুখী হতে হবে। সম্প্রতি আমি আবার বিশ্বাস করি।
আজকের সকাল এত মধুর। হ্যাঁ, তুমি আমার সাথে, আমি সবকিছু ভুলে গেছি; আমি সবকিছু চাই না। কারণ, তুমি আমার কাছে থাকলে মনে হয় আমার বিশ্ব আছে।
তোমার সঙ্গে, শুধু তোমার সঙ্গে, অন্য কোন মানুষ আমাদের কাছে নাই, এখন আমি সবচেয়ে খুশী। তোমার সঙ্গে কথা বলি, তোমার সঙ্গে পথে হাঁটি, তোমার সঙ্গে জিনিস কিনি...মেই, তুমি এত সুন্দর, এত উদ্যমী,তুমি একটি ছোট ড্রাগনের মত।
তোমার সহজ সরল আচরণ,তোমার আভিজাত্য, তোমার সবই আমি পছন্দ করি। তুমি একটি নীল পোশাক চি-পাও পড়, তোমার কাছে বৈশিষ্ট্যময় অন্য একটি স্টাইল হবে। শুধু তোমাকে দেখে আমি যে কতটা খুশী তা আমি তোমাকে বুঝাতে পারি না। খুবই সাধারণ অথচ এত মার্জিত তুমি। আমার মন বিশ্বের মত এত বড় নয়, এত বিশাল নয়, আমার মন এত গভীর নয়, ওখানে কখনো কখনো দু:খ রয়েছে। তবে শুধু তুমি, মেই, তুমি আমার মনের জন্য শান্তি বয়ে আনো। তোমার সুমধুর ভালবাসায় আমি বিশ্বের অসাধারণ শান্তি উপভোগ করি।
মেই, আজ তুমি আমাকে বললে, তুমি গ্রামে যেতে চাও, এ কথা শুনে আসলে আমি খুশী, তবে গ্রামের জীবন হয়তো একটু কষ্ট হবে তোমার জন্য। ভবিষ্যতে একই দিনে, তোমার সঙ্গে আমি একটি সুন্দর জায়গায় যাবো, তোমার মধ্যে পরিবর্তন আসবে। মেই, তুমি আমার জীবন, তুমি আমার কবিতা।
আচ্ছা বন্ধুরা, এখন শুনবেন 'প্রতিদিনের কথা'। মনে আছে কি, গত সপ্তাহে আমরা কি নিয়ে কথা বলেছিলাম?
তাহলে শুনুন ১১ এপ্রিলের অংশটি।
এপ্রিল ১১
প্রতিদিন আমাদেরকে বিভিন্ন আর্থিক অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের আর্থিক অবস্থা আমাদের ভবিষ্যতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
কোন এক বিশেষজ্ঞ মাসিক আয়কে ছয়টি অংশে ভাগ করার জন্য প্রস্তাব দেন।
প্রথম অংশটি জীবনের দৈনন্দিন কাজে ব্যয়ের জন্য, দ্বিতীয় অংশটি সমাজের জন্য, তৃতীয় অংশটি নিজের বাবা-মা বা বন্ধুদের জন্য ছোট উপহার প্রস্তুত করার জন্য, যেমন তাদের জন্মদিন এরকম উপলক্ষে, চতুর্থ অংশটি শিক্ষার জন্য।
এই চতুর্থ অংশটি নিয়ে বন্ধুদের সাথে একটু বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করার পর যদি আপনারা ভাল চাকরি না পান, তাহলে নিজের উন্নতি হবেনা, সমাজের উন্নতি হবেনা, সামাজিক অবস্থান উন্নতি হবেনা, এমনকি আপনারা ভালবাসা অর্জন করতে পারবেন না।
সেজন্য, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এ অংশটির টাকা দিয়ে বই কিনতে পারবেন, বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করতে পারবেন, এমনকি কাজ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রীও অর্জন করতে পারবেন। এভাবে আমাদের জীবন আরো উজ্জ্বল হবে।
তারপর পঞ্চম অংশটি পুঁজির জন্য। হ্যাঁ, অনেক বন্ধু প্রশ্ন করেন যে, তারা পুঁজি সম্পর্কিত কোন তথ্য জানেন না, তাহলে কিভাবে পুঁজি করবেন?
আমি বিশ্বাস করি যে, আপনাদের কাছের অনেক বন্ধু আছে যারা এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ। এছাড়া, ইন্টারনেটেও এরকমের মানুষদের অনেক গল্প প্রকাশিত হয়। আমাদেরকে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যাতে নিজে একটু পুঁজি করে আরো ধনী হওয়া যায়।
সর্বশেষ অংশটিতে অবশ্যই আমাদেরকে টাকা জমা করতে হবে। আমরা জানি না যে কখন আমাদের টাকা দরকার হবে, বা আমাদের ঘনিষ্ঠ মানুষদের টাকা দরকার হবে। টাকা জমা করা একটি ভাল অভ্যাস।