সুপ্রিয় শ্রোতাবন্ধু, আপনারা শুনছেন চীন আন্তর্জাতিক বেতার থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান।আর এ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আপনাদের বন্ধু ওয়াং ছুই ইয়াং জিনিয়া।
আজ মঙ্গলবার, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক অনুষ্ঠানে আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। এ অনুষ্ঠানে আপনারা বিভিন্ন ছোট গল্প, আধুনিক ও প্রাচীন কবিতা, সাহিত্যিকের জীবন ও তাদের কর্ম, উপন্যাস, নাটক এক কথায় সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। তাহলে শুরু করা যাক, আজকের 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' বিষয়ক অনুষ্ঠান, কেমন?
প্রথমেই রয়েছে সাহিত্য ও জীবন পর্ব,
চিয়াং আই লিং
চিয়াং আই লিং,চীনের একজন বিখ্যাত আধুনিক লেখিকা। ১৯২০ সালে তিনি চীনের সাংহাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ভালবাসা সম্পর্কিত অনেক বিখ্যাত জনপ্রিয় উপন্যাস আছে এ লেখিকার। তিনি বলেন, সারা জীবনে প্রতিটি ছেলের অন্তত দু'জন মেয়ে তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এ দু'জন মেয়েকে 'লাল গোলাপ ফুল এবং সাদা গোলাপ ফুল' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মানে একজন ছেলে তার জীবনে অন্তত দু'জন মেয়েকে ভালবাসে। যদি সে 'লাল গোলাপ'কে বিয়ে করে তাহলে এ 'লাল গোলাপ' দিনের সঙ্গে সঙ্গে 'দেওয়ালে মশার রক্তে' পরিণত হয়। তবে 'সাদা গোলাপ' আকাশের চাঁদের মত। যদি সে 'সাদা গোলাপ'কে বিয়ে করে তাহলে এ 'সাদা গোলাপ' সময়ের সঙ্গে সঙ্গে 'নোংরা কাপড়ের একটি টুকরায়' পরিণত হয়। তিনি মনে করেন, 'লাল গোলাপ' মনের একটি উপ-মাংসের মত সুন্দর।
তাহলে মেয়েদের জীবন কেমন? আসলে, ছেলেদের মতই, তাদেরও সারা জীবনে অন্তত দু'জন ছেলে গুরুত্বপূর্ণ । তাদেরকে 'উপন্যাস ও গদ্যকাব্য' বলা হয়। 'গদ্যকাব্য' সাধারণত আশা করে একটি স্থিতিশীল চাকরি, নিজের ভালবাসার সঙ্গে জীবন কাটানো। অন্যদিকে 'উপন্যাস' চিত্তাকর্ষক ও নির্ভেজাল জীবন পছন্দ করে, স্থিতিশীলতা তাদের আশা নয়। তবে মানুষ পরিবর্তনশীল। 'গদ্যকাব্য' শান্তি পছন্দ করে, তবে শান্তি অবশ্যই তাদেরকে পছন্দ করে না। জীবনে এক একটি পরীক্ষার পর হয়তো তারা গোলাপফুলের মত মেয়েদেরকে আকর্ষণ করে। অন্যদিকে, 'উপন্যাস' হয়তো হঠাত্ এক দিন তারা অবসন্ন হয়ে শান্তি খুঁজতে চায়। যেমন চীনের বিখ্যাত লেখক চিন ইয়ং'র একটি কুংফু উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ইয়াং কুও, যখন সে তরুণ, তখন তার মনে বিশ্বের সবকিছুই চিত্তাকর্ষক । তবে অনেক বছরের ফাইটিং, অর্থহানি এবং তার ভালাবাসা সিয়াও লুং ন্যু এর সাথে ১৬ বছরের বিরহ শেষে সে শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাতে চায়।
কখনো কখনো জীবন একটি বৃত্তের মত। অভিজ্ঞতা, অকৃতকার্যতার পর আমরা খুঁজি যে, আমরা আরম্ভবিন্দুতে ফিরেছি। 'গদ্যকাব্য' ছেলের জীবনে একটু সাহসের অভাব, অন্যদিকে সাহসী 'উপন্যাস' ছেলে উজ্জ্বল জীবনের সুনাম ও স্বার্থ ছেড়ে দিতে চায় না।
তরুণ মেয়েরা 'গদ্যকাব্য' ছেলের চেয়ে 'উপন্যাস' ছেলেকে বেশি পছন্দ করে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, মেয়েরা বুঝতে পারে যে, জীবন কাটানো তাদের উচিত 'গদ্যকাব্য' ছেলের সঙ্গে।
বন্ধুরা, 'সাহিত্য ও জীবন' পর্বের পর, একটি ছোট কবিতা উপভোগ করবো, কেমন? তাহলে শুনুন ব্রিটেনের কবি জর্জ বায়রন এর কবিতার কিছু অংশ।
যখন আমরা পৃথক হয়ে যাই
নি:শব্দে, জলভরা চোখে
অর্ধ ভগ্ন হৃদয়ে
তোমার মুখ মলিন ও শীতল
তবে চুম্বন আরো শীতল
বিদায়ের পর বিষন্ন স্মৃতি
কী দুঃখ!
যদি তোমাকে দেখি
অনেক বছর পর,
কীভাবে তোমাকে শুভেচ্ছা জানাবো?
নি:শব্দে, জলভরা চোখে।
আচ্ছা, বন্ধুরা কবিতাটি কি পছন্দ হয়েছে আপনাদের? অবশ্যই আমাকে চিঠি বা ইমেইল লিখবেন।
এবারে শুনবেন চীন ও বিদেশের জনপ্রিয় বহুল বিক্রিত কিছু বইয়ের তালিকা।
প্রথমেই amazon.cnতে গত এক সপ্তাহে চীনে জনপ্রিয় বিক্রিত বইয়ের তালিকা:
কাবুলের লেখক খালেদ হোসেন এর 'দ্যা কাইট রানার'
যুক্তরাষ্ট্রের মনস্তত্ত্ব বিষয়ক ডাক্তার কেন লিন্ডনে এর 'ইয়র কিলার ইমোশনস'
চীনের লেখক মা লিয়াং এর 'এ্যা জার্নি থ্রু দ্যা টাইম উইথ অ্যানথোনি' ।
ব্রিটেনের লেখিকা রাচেল জয়েস এর 'দ্যা আনলাইকলি পিলগ্রিমেজ অফ হ্যারল্ড ফ্রাই'
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ব বিষয়ক ডাক্তার কেলি ম্যাকগোনিগ্যাল এর 'দ্যা উইলপাওয়ার ইন্সটিংক্ট:হাই সেল্ফ-কনট্রোল ওয়ার্কস,হোয়াই ইট ম্যাটারস এ্যান্ড হোয়াট ইউ ক্যান ডু টু গেট মোর অফ ইট'।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্না কুইন্ডলেন এর 'লটস অফ ক্যান্ডলস, প্লান্টি অফ কেক' ।
এবং ব্রিটেনের মাইকেল ডবস এর 'হাউস অফ কার্ডস'।
বন্ধুরা, আপনারা কি চীনের উপন্যাস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? আমরা প্রতি সপ্তাহে এ অনুষ্ঠানে চীনের জনপ্রিয় কিছু উপন্যাস আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
আজকে আমরা আপনাদের কাছে চীনের বিখ্যাত ভালবাসা বিষয়ক লেখিকা চিয়াং সিয়াও সিয়েন এর 'মিয়েন পাও সু সান দ্যা ন্যু রেন'---মানে, 'পাঁউরুটি গাছের মেয়ে' উপন্যাসটি তুলে ধরবো। আশা করি, আপনারা পছন্দ করবেন।
লিন ফান ওয়েন গত এক বছর ধরে চিত্তবিনোদন মহলে কাজ করেন, প্রথমবারের মতো তিনি যে কপিরাইট ফি অর্জন করেন তার পরিমাণ অনেক বেশি।
"কী উপহার তুমি চাও?" সে আমাকে প্রশ্ন করে।
"না, কোন উপহার দরকার নেই।" আসলে আমি তার উপহার চাই। অবশ্যই নিজের ছেলে বন্ধুর উপহার চাই।
সে আমাকে দেখে, যেন সে আমার মনের কথা জানে।
"তুমি কী পছন্দ করো, বলো।"
আসলে আমি সবসময়ই একটি জিনিস চাই, তা হলো একটি আংটি। কিন্তু ওয়েন আমাকে একটি বেহালা দেয়।
"কেন সে আমাকে বেহালা দিল?" আমার খুবই আশ্চর্য লাগে।
"আমার মনে হয় তুমি যদি বেহালা বাজাও তাহলে খুব সুন্দর হবে"।
সেটা একটি দামী বেহালা। তার প্রথম উপহার, আমি বেহালাটি পছন্দ করি।
"তুমি কি বেহালার শিক্ষকের খবর জানো?" আমি আমার একজন বন্ধু দি জিকে জিজ্ঞাস করি।
"কেন? তুমি কি বেহালা শিখতে চাও?" সে খুবই আশ্চর্য হয়।
"হ্যাঁ"।
দি জি ফোনে হাসে, "তুমি, তুমি বেহালা বাজাবে? তুমি কি ভুলে গেছো যে, তুমি সঙ্গীতের কিছুই বুঝতে পারো না?"
আমি একটি আয়নার সামনে দাঁড়াই, একজন বেহালাবাদকের মতো বেহালাটি আমার কাঁধে রাখি। ওয়েনের কথা আমার কানে ভেসে আসে, আমি বেহালা বাজাই, কি সুন্দর?
দি জি আমাকে একজন বেহালার শিক্ষক খুঁজতে সাহায্য করে। তাঁর ২০ বছরের বেহালা শেখানোর অভিজ্ঞতা আছে। অনেক মানুষই তাঁর ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে চায়। তাঁর নাম ইয়াং ইয়ুন লে। বাড়িতে তিনি যখন আমাকে বেহালা বাজানো শেখান তখনও তিনি স্যুট পড়েন। আমি জানতে পারি যে, তাঁর ঘরের দেওয়ালে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের অনেক ছবি টানানো আছে।
যখন আমি শিক্ষক ইয়াংয়ের জন্য অপেক্ষা করি, তখন তাঁর অন্য এক ছাত্র আসে। তার বয়স প্রায় ৩০ বছর। তার চোখ ছোট ।আমরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলি। সে বলে, তার বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে এক বছরের মধ্যে সে বেহালা বাজানো শিখতে চায়।
"কেন তুমি বেহালা শেখো?" সে আমাকে প্রশ্ন করে।
"ভালবাসার জন্য"। আমি তাকে বলি।
প্রথম ক্লাসে শিক্ষক ইয়াং আমার বেহালা তন্ন তন্ন করে দেখার পর আমাকে বলে,
"বেহালা শেখার শুরুর পর্যায়ে এত ভাল বেহালার দরকার নেই।"
"এ বেহালার কারণে আমি এখানে আছি।"
"আচ্ছা, তাহলে প্রথম ক্লাস শুরু করা যাক। তবে আমি কিন্তু একজন বিশাল কড়া শিক্ষক।"
আমি তাঁকে বলি, "কখন আমি প্রথম সঙ্গীত বাজানো শিখতে পারবো?"
আমার এ কথা শুনে তিনি প্রচণ্ড রেগে যান।
"তোমার উচিত..."। সে দ্বিধাগ্রস্ত হয়।
আমি বেহালা আমার কাঁধে রেখে তাঁকে বলি, "আমার উচিত...?"
"শিক্ষার ফি দেওয়া।"
'আচ্ছা, আমি শিক্ষার ফি ভুলে গেছি'।
"প্রথম ক্লাসে আমি তোমাকে শুধু কর্ড নিয়ন্ত্রণ শেখাবো।" শিক্ষক ইয়াং বলেন।
আমি বলি, "আপনাকে একটি কথা বলতে চাই, আমি সঙ্গীত, সুর কিছুই বুঝতে পারি না।"
তিনি বলেন, "২০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে, হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদেরকে দেখেছি, পড়িয়েছি, কোন সমস্যা নেই।"
শিক্ষক ইয়াংয়ের বাড়িতে একটি বড় আয়না আছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে আমি মনে মনে ভাবি, আমি লিন ফাং ওয়েনের সঙ্গে বেহালা বাজাবো।
শিক্ষক ইয়াংও আমাকে প্রশ্ন করেন, কেন আমি বেহালা শিখি?
"ভালবাসার জন্য।"
সে আমার উত্তর নিয়ে সন্তুষ্ট।
"এটা একটি চমত্কার চালিকা শক্তি'।
প্রিয় বন্ধুরা, আজকে এ পর্যন্তই । আগামী সপ্তাহে আমরা অব্যাহতভাবে আপনাদের সাথে উপন্যাসটি শেয়ার করবো।
প্রিয় শ্রোতা, আজকের অনুষ্ঠান আপনাদের কেমন লাগলো? আপনারা যদি 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি'বিষয়ক কোনো কিছু জানতে চানা বা আলোচনা করতে চান , তাহলে আমাকে চিঠি লিখবেন বা ইমেইল করবেন। আপনাদের কাছ থেকে চমত্কার প্রস্তাব প্রত্যাশা করি। আর আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, আমি একটি নতুন ইমেইল আইডি খুলেছি। সেটি হলো mackenziehawaii@gmail.com।আমরা আপনাদের প্রস্তাব বা মতামত কমপাইল করে প্রতি তিন মাস অন্তর শ্রেষ্ঠ ৫জন বিজয়ী শ্রোতা নির্বাচন করবো। নির্বাচনের এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা উপহার পাঠাবো। চিঠিতে প্রথমে লিখবেন, 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানের 'প্রস্তাব বা মতামত'। যদি আপনাদের প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাহলে সেই মাসের শেষ দিকে 'সাহিত্য ও সংস্কৃতি' অনুষ্ঠানে আপনাদের নাম ঘোষণা করা হবে এবং সাথে থাকবে উপহার। আপনাদের চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।
শ্রোতাবন্ধুরা, আজকের অনুষ্ঠান এখানেই শেষ করছি। শোনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আগামী সপ্তাহের একই দিনে, একই সময়ে আপনাদের সাথে আবার কথা হবে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। যাই চিয়ান। (জিনিয়া)