Web bengali.cri.cn   
ঈর্ষা থেকে কিভাবে নিজেকে এড়িয়ে চলবেন ?
  2014-04-03 16:43:43  cri


বলুন তো জগতে কার মধ্যে ঈর্ষা নেই? উত্তরটা পানির মত সহজ, মানুষ ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে ঈর্ষা নেই। তাহলে বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এই যে, তুমি, আমি, আমরা, আমাদের প্রিয় জগতের সবার মধ্যেই ঈর্ষা রয়েছে। তবে একটি কথা প্রচলিত আছে, ঈর্ষা নারী ও পুরুষ ভেদে কম-বেশি হয়। স্বয়ং ঈশ্বর ইচ্ছাকৃতভাবেই নারীদের মধ্যে ঈর্ষার পরিমাণটা নাকি একটুখানি বেশি দিয়ে রেখেছেন। তাইতো বান্ধবীর জামাইটা দেখতে এত সুন্দর কেন? ওর শাড়ীটা এত দামী কেন? আমার গহনাগুলো ভাবীরটার মতো নয় কেন? ও বাড়ির গাড়ির মডেলটা কেন আপডেটেড? এরকম হাজারো ঈর্ষকাতর প্রশ্নে কেবল নিজের মন বিষিয়ে ওঠে তাই নয়, কাছের মানুষদের শান্তিও নষ্ট করে দেয়।

কিন্তু ঈর্ষা কি সর্বদাই খারাপ? আপনার কি ভাবতে ভাল লাগবে না যে, আপনার কর্ম, আপনার ব্যক্তিত্ব, আপনার সফলতা নিয়ে অন্যেরা ঈর্ষান্বিত হোক, আর তারাও তাদের জীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাক । তাহলে দেখা যাচ্ছে ঈর্ষা এমন একটি বিষয় যার খারাপ ও ভাল দুটি দিক-ই আছে। প্রশ্ন হচ্ছে কী নিয়ে ঈর্ষা করছেন? যে ঈর্ষা আপনার মনকে ছোট করে দেয়, সব সময়ে অসুখী করে রাখে এবং যে ধরণের ঈর্ষা দ্বারা আমরা সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ি তা থেকে রক্ষার উপায় কি?

আসুন তাহলে এই ধরণের বদ ঈর্ষা থেকে কিভাবে নিজেকে এড়িয়ে চলবেন সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।

যারা আমাদের চেয়ে বিত্তশালী, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদেরকে আমরা হিংসার দৃষ্টিতে দেখি। যখন সহকর্মী আপনার চেয়ে বেশি বেতন পান, তখন আপনি ভেবে দেখেছেন কি, এর পেছনে তার মেধা ও শ্রম কতখানি ছিল। অথচ আপনি কিন্তু সহজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে আপনার সহকর্মীর অনৈতিক পথের অর্থ উপার্জনের সকল পথ-ঘাট ভালভাবেই জেনে বুঝে নিবেন। আবার যখন সহপাঠী উচ্চবিত্তের স্বামীর সাথে বিয়ে হয় তখনও আপনি সহজেই ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন। কিন্তু একবারও ভেবে দেখেছেন কি উচ্চবিত্তের ঘরে বিয়ে হওয়ার মধ্যেই কি সকল সুখ, নাকি মান, মর্যাদা আর স্বামী সন্তানদের নিয়ে হাসি-খুশী অথচ একটুখানি কম বিত্তশালীর ঘরেও বেশি সুখ থাকতে পারে। একবারও ভেবে দেখেছেন বড় বড় বিত্তশালীর ঘরের জ্বালা যন্ত্রণাও বড় আর বেশি হতে পারে?

ঈর্ষান্বিত হয়ে আমরা প্রায়শই নকল সুখ, শান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু নকল সুখের পিছনে যে খাঁটি যন্ত্রণার চেহারাটা রয়েছে এবং যা সহজে দেখা যায় না, তা উপলব্ধি করেছেন কি একবারও? অন্যের দিকে তাকিয়ে অন্যের নকল সুখ দেখে দেখে তো সময় নষ্ট করেছেন। উপলব্ধি করেছেন কি কখনো যে, তার অনেক দুঃখ রয়েছে, এমন কি আপনার চেয়েও তা অনেক দুঃখজনক। তারপরও কি ঐ সুখ চাইবেন?

হ্যাঁ বন্ধুরা, অন্যের দিকে তাকিয়ে এভাবে আর সময় নষ্ট করবেন না। সুখ নদীর ওপারে নেই, বরং আপনি যে পাড়ে আছেন সেই পাড়েই সুখ রয়েছে। তাই নিজের দিকে খেয়াল করুন। দেখবেন মূহুর্তেই তা আপনাকে ভালো মুডে অর্থাত মন ভাল করে দিয়েছে। এটা মনে রাখবেন যে, প্রত্যকেরই ভাল ও মন্দ বা সুবিধা ও অসুবিধা রয়েছে।

আপনি যদি সর্বদাই অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাহলে নিজের মধ্যে অজানা সব মহত্তর গুণাবলী আর ভাল দিকগুলো আপনি দেখতেই পাবেন না বা উপলব্ধিও করতে পারবে না। ফলে সহজেই আপনি হিংসা দ্বারা আক্রান্ত হবেন। আর এ জন্য আপনি নিজের ভালো দিকগুলোর ওপর নজর দিন এবং ক্রুটিগুলো সংশোধন করুন। আর এভাবে আপনি সহজেই হিংসা আর ঈর্ষামুক্ত দৃঢ় অথব শক্তিশালী মন গড়ে তুলতে পারেন। যা সহজেই অন্যদের সাথে শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

এ বিশ্বের সবকিছু আমাদের পছন্দ আর চাহিদা মত হবে না, আর তা সম্ভবও নয়। যেমন যে বংশ-পরিচয়ে, বা যে পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন অথবা প্রকৃতি আপনাকে যে রকম চেহারায় তৈরি করে দিয়েছে তা কি আপনি বদলাতে পারবেন? যেমন ধরুন প্রকৃতি আপনাকে যে চেহারাটি উপহার দিয়েছে, আপনি মেকআপ করে সাজাতে পারেন কিন্তু শত চেষ্টা করেও তার পরিবর্তন করতে পারবেন না। সুতরাং এই বিষয় নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগে আর অন্যের রূপে ঈর্ষান্বিত হয়ে কোন লাভ নেই।

বরং উল্টো ভাবে নিজের দিকে তাকান, খুঁজে দেখুন, তাদের যেটা নেই, হয়তো সেটা আপনার আছে। যেমন তিনি ভালো পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে বলে আপনি হয়তো ঈর্ষা করছেন, কিন্তু লক্ষ্য করেছেন বাবা মা প্রায়ই ঝগড়া করে বলে তাঁর মনে সুখ নেই, নেই পারিবারিক সুসম্পর্ক। হয়ত আপনার সহপাঠি আপনার চেয়ে সুন্দর। কিন্তু তার নেই আপনার মত সুন্দর মন, সুরুচী, সুবচন আর সুকণ্ঠ। এটা যখন আপনি বুঝতে পারবেন তখন কি আপনার ভাল লাগবে না? তখনও কি আপনি ঈর্ষান্বিত হবেন?

ঈর্ষা করে নয় বরং যদি আপনার সহকর্মী সত্যিই আপনার চেয়ে দক্ষ হয় তাহলে আপনি তাঁর কাছ থেকে শেখার শক্তি আর সাহস অর্জন করুন, দেখবেন আপনার দক্ষতাও কেবল উন্নত হবে তাই নয়, বরং আপনার মধ্যে উদার মনের মানুষটাও জেগে উঠবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040