Web bengali.cri.cn   
বিভিন্ন দেশের পশু কূটনীতি বা 'এ্যানিমেল ডিপ্লোমেসি'
  2014-03-10 15:30:10  cri



'এ্যানিমেল ডিপ্লোমেসি' বলে একটি কথা আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিদ্যায় বেশ চালু আছে। বন্ধুরা, মনে পড়ে গেছে নিশ্চয়ই। যদি মনে নাও থাকে সমস্যা নেই, কারণ আমরা তো আছি, তাইনা? হ্যাঁ বন্ধুরা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মইন উ আহমেদ যখন ভারতে গিয়েছিলেন, তখন তাঁকে ছয়টি ঘোড়া উপহার দিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান দীপক কাপুর।

কিন্তু এই এ্যানিম্যাল ডিপ্লোমেসির সূচনা হলো কবে, আর কারাই বা বৈরী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে এই চালটি বেছে নিয়েছিলেন?

ইতিহাস বলে, শক্তি প্রদর্শন ও কূটনৈতিক স্বার্থে জীবজন্তুর ব্যবহার হচ্ছে খ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকে। রোমে সিংহ, বাঘ ও অন্যান্য হিংস্র পশুর সঙ্গে যুদ্ধ করে শক্তি প্রদর্শনের একটা প্রচলন ছিল। কখনো বা হিংস্র জন্তুকে পরাজিত করে রোমের পথে পথে শাসকেরা বীরদর্পে হেঁটে বেড়াতেন। সাধারণ মানুষকে তাঁরা বোঝাতে চাইতেন, একজন শক্তিশালী শাসক বা বীরের কাছে হিংস্র জন্তু নতিস্বীকার করতে বাধ্য।

কত জীবজন্তু যে তাঁদের ছিল, এর হিসেব পাওয়া খুব কঠিন। ইতিহাস বলে, সম্রাট ট্রাজানের প্রতিপালিত জন্তু জানোয়ারের সংখ্যা ছিল ১১ হাজার, আর অক্টাভিয়াস অগাস্টাসের ছিল সাড়ে তিন হাজার প্রাণী। এই বাহিনীতে গন্ডার, জলহস্তীর পাশাপাশি ছিল ৪২০টি বাঘ এবং ২৬০টি সিংহ।

ধারণা করা হয়, মিসরের ক্লিওপেট্রার কাছ থেকে রোমের জুলিয়াস সিজার উপহার পেয়েছিলেন জিরাফ। জিরাফ বিনিময় চলেছে এর পরও। মিসরীয় শাসকেরা বাইজান্টাইন শাসক নবম কনস্টানটাইন (১০২৪-৫৫), পবিত্র রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডেরিককে জিরাফ পাঠিয়েছিলেন। ফ্রেডেরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন শ্বেত ভালুক পাঠিয়ে।

এ তো গেল শত শত বছর আগের কথা। চীনে কিন্তু এখনো কূটনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ পান্ডা। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফরের সময় সে দেশের সরকার তাঁকে দুটি পান্ডা উপহার দিয়েছিলেন। লোভ সামলাতে না পেরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথ পান্ডা নিয়ে তাঁর আগ্রহের কথা প্রকাশ করে ফেলেন। দু'বছর পর তাঁর বাড়ি পৌঁছে যায় দু'টি পান্ডা। উপহার হিসেবে নানা দেশ থেকে পাওয়া জন্তু জানোয়ারের সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে নেই রানি এলিজাবেথও।

আর বিভিন্ন দেশের পশু উপহার দেয়ার তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পশু, বাঘ, সিংহ, হাতি, সাপ, গন্ডার, জেব্রা ইত্যাদি। যেমন ১৯৭২ সালের মে মাসে শ্রীলংকার তখনকার প্রধানমন্ত্রী শ্রীমাভো বানদারানায়েক চীনের শিশুদের কাছে একটি এশীয় হাতি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। এর নাম হল মিদুরা। শ্রীলংকা ভাষায় মিদুরা মানে বন্ধু। একই বছর চীন শ্রীলংকাকে দুইটি সাদা ঠোঁটের হরিণ প্রদান করে।

ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, শ্রীলংকা বেশ কয়েক বার চীনকে হাতি উপহার দিয়েছে । ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পেইচিং চিরিয়াখানায় শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাক্সে চীনকে ছোট হাতি "মিগেলা" উপহার দেয় , যাতে চীন ও শ্রীলংকার কূটনীতি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর বার্ষিকী উদযাপন করা যায়। এ ছাড়া ভারতও অতীতে চীনকে হাতি দিয়েছিল বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। সেই ১৯৫৩ সালের কথা। তখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সেই সময়ের চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই এবং চীনা শিশুদের কাছে ১৫ বছরবয়সী একটি এশীয় হাতি উপহার দেন। সেটি পেইচিং চিরিয়াখানায় আসা প্রথম উপহার পাওয়া কোনো পশু।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট পশু অনেক পছন্দ করতেন। ইথিওপিয়ার রাজা তাঁকে একটি জেব্রা ও একটি সিংহ দিয়েছিলেন উপহার হিসেবে।

আমরা সবাই জানি, নতুন দম্পতি বিয়ের সময় আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব উপহার দিয়ে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানায়। তবে ১৬ শতাব্দীর একটি ঘটনা, তখন ফ্রান্সের রাজকুমারের বিয়ে হয়। বিয়েতে তার বাবা অর্থাত্ রাজা তাকে একটি সিংহ দেন উপহার হিসেবে। খুব মজার না? চিন্তা করেছেন বিয়ের মধ্যে সিংহ উপহার !

বিভিন্ন দেশের পশু উপহারের তালিকায় কিন্তু কুমিরও রয়েছে। আমরা সবাই বলি কুমির খুব নিষ্ঠুর পশু, খুব বিপদজনক। কিন্তু কিছু কিছু নেতা আবার কুমির খুব পছন্দ করেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের যষ্ঠ প্রেসিডেন্ট জন এডামস। এটি ১৮ শতাব্দীর কথা। তখন ফ্রান্সের একজন জেরারেল তাঁকে একটি কুমির দিয়েছিলেন। আর শ্রোতা, আপনারা জানেন, এ কুমির কোথায় থাকে? হোয়াইট হাউসের একটি বাথটাবে! হাহা, খুবই মজার, তাই না বন্ধুরা?

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040