Web bengali.cri.cn   
বসন্ত উত্সব পরিযাণ
  2014-02-07 19:10:16  cri
চীনের মতো অনেক দেশের নিজস্ব 'উত্সব পরিযাণ' আছে। তাহলে বিদেশের 'উত্সব পরিযাণ' কী রকম হয়? সেখানে যানবাহনের টিকিট পাওয়ায় অসুবিধা হয় কি?

চীনের মতো দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম উত্সবও বসন্ত উত্সব। দক্ষিণ কোরীয়রা পরিবারের পুনর্মিলনের ওপর গুরুত্ব দেয়। যখন বসন্ত উত্সব আসে, তখন ৪ কোটিরও বেশি দক্ষিণ কোরীয় নাগরিকের অন্তত অর্ধেক নিজেদের জন্মস্থানে গিয়ে উত্সব উদযাপন করে। দেশটির মানুষেরা এটিকে 'জাতির বৃহত্তম স্থানান্তর' বলে। সুতরাং দক্ষিণ কোরিয়ায় বসন্ত উত্সব চলাকালে ট্রেন টিকিট পাওয়াও খুবই কঠিন একটা বিষয়।

এবারের বসন্ত উত্সব উপলক্ষে ৭ জানুয়ারি সিউল ট্রেন স্টেশনে উত্সবকালে রাজধানী থেকে দেশের বিভিন্ন প্রধান শহরগামী ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। যদিও অনলাইনে টিকিট কেনার সুবিধা থাকে, তবুও টিকিট বিক্রি শুরুর আগের রাত থেকে সিউল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন হয় টিকিটপ্রত্যাশীদের। ঘরে ফেরার টিকিট কিনতে অপেক্ষা করার প্রস্তুতি নিয়ে অনেকে মাদুর, ছোট টুল ও কাঠের বেঞ্চ নিয়ে আসে। তারা বসে বই পড়া বা মোবাইল ফোনের গেমস খেলার মাধ্যমে সারারাত কাটায়। একজন নারী যাত্রী বলেন,

"আমি শুনেছি, সারারাত লাইনে না থাকলে টিকিট পাওয়া যায় না। তাই এমনভাবে ধৈর্যধারণ করছি।"

একজন পুরুষ যাত্রী বলেন, "এমনিভাবে দশ-বার ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় আছি। সত্যি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকিট কিনে বাসায় ফিরতে চাই।"

টিকিট কাউন্টারের লাইনে ৭০ বছরের বেশি বয়স্কদেরও দেখা যায়। তাদের জন্য শীতকালে সারারাত বাইরে অপেক্ষা করা খুবই ক্লান্তিকর ব্যাপার। কিন্তু বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুনর্মিলন হবে – এই প্রত্যাশায় তাদের মন খারাপ হয় না। একজন প্রবীণ বলেন,

"জন্মস্থানে যাওয়ার মানে হচ্ছে আনন্দ। সুতরাং অনেক কাপড় পরে টিকিট কিনতে এসেছি। এখন খুব গরম লাগছে।"

পরের দিন সকাল ৭টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। যারা টিকিট কিনতে পারে, তাদের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কিন্তু যারা সারারাত কাটিয়েও টিকিট পায় না, তারা নানা অভিযোগ করতে শুরু করে। একজন নারী যাত্রী বলেন,

"আমি ৭ ঘন্টারও বেশি অপেক্ষা করেছি। অবশেষে জন্মস্থানে যাওয়ার টিকিট পেয়েছি। খুবই খুশী আমি।"

তবে একজন পুরুষ যাত্রী বলেন,"৭টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ৭টা ১০ বা ১২ মিনিটে বলা হয়, দ্রুতগতি ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেছি। অবশ্যই রাগ করেছি।"

দক্ষিণ কোরিয়ার রেল বিভাগ প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৭ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত - এ ৪ দিনে বসন্ত উত্সবকালীন ভ্রমণের জন্য মোট ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ট্রেন টিকিটের মধ্যে ৬৩.৪ শতাংশ বিক্রি হয়। এটা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.৬ শতাংশ বেশি। প্রধান সময়ের ট্রেনের অধিকাংশ টিকিট একেবারেই বিক্রি হয়ে যায়। রেল বিভাগ ১৪ জানুয়ারি বাকী ৩১ শতাংশ টিকিট বিক্রি শুরু করে। ফলে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকিট ক্রয় প্রতিযোগিতার পর্যায়ে প্রবেশ করে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতেও নানা উত্সব রয়েছে। চীনের মতো যখন উত্সব আসে, তখন জন্মভূমি থেকে দূরে থাকা ভারতীয় নাগরিকরা বাড়ি ফিরে গিয়ে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলিত হয়। সে সময় রেল পরিবহণ খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। মাঝেমাঝে ট্রেনের ছাদের ওপর মানুষ বসার 'দুঃসাহসিক ব্যাপার' দেখা যায়।

ভারতের উত্সব পরিযাণ প্রধানত প্রতি বছরের নভেম্বর মাসের 'দিওয়ালি' উত্সবের সময় হয়। 'দিওয়ালি' হচ্ছে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী উত্সবগুলোর অন্যতম। প্রতি বছর যখন এ উত্সব আসে, বাইরে কাজ করা অনেক গ্রামীণ মানুষ জন্মস্থানে ফিরে উত্সব পালন করে। বেশ আগে প্রকৃত নামে টিকিট কেনার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ভারতে ট্রেন টিকিট কেনা তুলনামূলকভাবে সুবিধাজনক হয়েছে। রেল স্টেশন ছাড়া প্রত্যেক শহরে অনেক টিকিট বিক্রির এজেন্ট আছে। বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে টিকিট কেনা যায় সেখান থেকে। ভারতের রেল বিভাগ কোনো কোনো সাইবার ক্যাফের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে, যাতে যাত্রীরা সেগুলোতে গিয়ে টিকিট কিনতে পারে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সরাসরি অনলাইনেও টিকিট কিনতে পারে যাত্রীরা।

যদিও ভারতে টিকিট কেনা ঝামেলমুক্ত, তবে রেল ব্যবস্থার পরিবহণ ক্ষমতা যথেষ্ঠ না হওয়া এবং ট্রেনের তুলনায় যাত্রী বেশি হওয়ায় ট্রেনে সবসময় অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হতে দেখা যায়। এ অবস্থা উত্সব চলাকালে বেশি দেখা যায়। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে কর্মরত কুমার উত্তরাঞ্চলীয় বিহার রাজ্য থেকে এসেছেন। প্রত্যেক বারের উত্সবে তিনি তাঁর স্ত্রী ও দু'টো বাচ্চাকে নিয়ে ১৫ ঘন্টা ট্রেনে করে জন্মস্থানে যান। তিনি বলেন,

"উত্সব চলাকালে যাত্রীর সংখ্যা খুবই বেশি হয়। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত। প্রত্যেক মানুষ বাড়ি ফিরতে চায়। তাই কেউ কেউ বগির ভেতরে একটু জায়গা খুঁজে নেয়, কেউ কেউ স্বল্প দূরত্বের ট্রেনের ছাদের ওপর বসে। যাত্রী খুব বেশি হওয়ার কারণে অনেক সেবার ঘাটতি দেখা যায়। যেমন পানীয় জল, বিশ্রামগার ইত্যাদি।"

কুমার বলেন, যদিও রেল বিভাগ পরিবহণের অভাব মোকাবিলায় অনেক ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তবুও সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে ব্যবস্থাগুলোর তেমন কার্যকর হচ্ছে না। কুমার বলেন, "ভারত সরকার প্রায়ই ট্রেনের সংখ্যা বাড়ায়। পাশাপাশি রেলবিভাগ বগির সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আসন ও বার্থ নতুন করে সাজায়। কিন্তু তারপরও প্রত্যেক যাত্রীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। যাত্রীদেরকে কাড়াকাড়ি সহ্য করতে হয়।"

এছাড়া ভারতের অনেক ট্রেনের যাত্রা বিলম্বিত হয় এবং সাময়িকভাবে কোনো কোনো ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। ফলে যাত্রীরা নিজেদের ট্রেন খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে। এ ধরনের অবস্থায় যাত্রীরা শুধু রেডিও শোনা বা টেলিফোন করার মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থা জানতে পারে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্য
Play
Stop
ওয়েবরেডিও
বিশেষ আয়োজন
অনলাইন জরিপ
লিঙ্ক
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040