প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং নতুন যুগে ‘চীন-আফ্রিকা রোড ম্যাপ’ ঘোষণা করেছেন
2021-12-04 17:17:29

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত ২৯শে নভেম্বর বেইজিং থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের অষ্টম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল বক্তৃতা দেন। এসময় তিনি চীন-আফ্রিকা উন্নয়নের নতুন রোড ম্যাপ ঘোষণা করেন। তিনি স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, পরিবেশ-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই অঞ্চলের সহযোগিতা সম্পর্কে নানা প্রস্তাব দেন। বিস্তারিত শুনুন সংবাদ পর্যালোচনায়।

 

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত সোমবার (২৯শে নভেম্বর) নতুন যুগে চীন-আফ্রিকার অভিন্ন ভাগ্যের সমাজ গড়ে তোলার জন্য একটি নতুন রোড ম্যাপ ঘোষণা করেন। এ লক্ষ্যে তিনি নয়টি প্রকল্পের কথা জানান—যার মধ্যে রয়েছে, আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য আরও এক বিলিয়ন ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সহায়তা প্যাকেজ।

সেনেগালের রাজধানী ডাকারে এ ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেইজিং থেকে দেওয়া মূল বক্তব্যে জনাব সি এসব ঘোষণা দেন।

২০২২ সালের মধ্যে আফ্রিকার জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে চীন। এজন্য চীন ৬০০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দেবে এবং স্থানীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে চীনের যৌথ উৎপাদনের মাধ্যমে আরও ৪০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা দেওয়া হবে বলে জানান সি চিন পিং। এসময় চীন আফ্রিকার দেশগুলোতে ১০টি স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা দেবে এবং আফ্রিকায় ১৫০০ চিকিৎসাকর্মী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পাঠাবে।

চলতি বছর চীন ও আফ্রিকান দেশগুলির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৬৫তম বার্ষিকী। প্রেসিডেন্ট সি বলেন, দুই পক্ষ সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তাদের যৌথ সংগ্রামে এক অটুট ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলেছে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবনের খাতে সহযোগিতা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘যৌথভাবে, আমরা জটিল পরিবর্তনের মধ্যে পারস্পরিক সহায়তার একটি চমত্কার অধ্যায় রচনা করেছি এবং একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি।’

 

তিনি দু’পক্ষের ঘনিষ্ঠ এ সম্পর্কের মূল্যায়ন করে বলেন, এ সম্পর্ক ‘চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের একটি চিরন্তন চেতনা এবং দুই পক্ষের মধ্যে গড়ে ওঠা সহযোগিতা; যা আন্তরিক বন্ধুত্ব, সমতা, পারস্পরিক সুবিধা এবং সাধারণ উন্নয়ন, ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। সম্পর্কের এ বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘উন্মুক্ততা ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে’।

 

একে নতুন যুগে চীন-আফ্রিকা অভিন্ন ভাগ্যের সমাজ গড়ে তোলার ঐতিহাসিক সূচনা বিন্দু হিসেবে অভিহিত করে প্রেসিডেন্ট সি চার দফা প্রস্তাব দেন।  তা হলো- সংহতির মাধ্যমে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করা; বাস্তবসম্মত সহযোগিতা গভীরতর করা; সবুজ উন্নয়ন প্রচার করা এবং সমতা ও ন্যায়বিচার বজায় রাখা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের চীন-আফ্রিকা সহযোগিতার জন্য নতুন সম্ভাবনা খুঁজে বের করতে হবে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, দারিদ্র্য নিরসনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে হবে, ডিজিটাল অর্থনীতির সহযোগিতা জোরদার করতে হবে এবং তরুণ আফ্রিকানদের মাধ্যমে উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগ এগিয়ে নিতে হবে।’

 

সবুজ উন্নয়নে উভয় পক্ষের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, সবুজ ও নিম্ন-কার্বন উন্নয়নের পক্ষে কথা বলা এবং সৌর, বায়ু ও নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যান্য উত্স সক্রিয়ভাবে প্রচার করা প্রয়োজন।

সমতা ও শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে তিনি বলেন, চীন ও আফ্রিকাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে ন্যায়সঙ্গতভাবে দাঁড়াতে হবে।

চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ভিশন ২০৩৫-এর অধীনে রয়েছে প্রথম তিন-বার্ষিক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নয়টি কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য চীন আফ্রিকান দেশগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে বলে জানান জনাব সি চিন পিং বলেন।

 

স্বাস্থ্য কর্মসূচির পাশাপাশি, চীন আফ্রিকায় ১০টি দারিদ্র্যবিমোচন এবং কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে এবং ওই মহাদেশে ৫০০ কৃষি বিশেষজ্ঞ পাঠাবে বলে উল্লেখ করেন   তিনি।

এ ছাড়া, আগামী তিন বছরে আফ্রিকান দেশগুলো থেকে চীন মোট ৩০০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করবে। পাশাপাশি, আফ্রিকার দেশগুলোকে রপ্তানি খাতে  সহযোগিতা করার জন্য ১০ বিলিয়ন ডলার সাহায্য দেওয়া হবে। চীনে ‘চীন-আফ্রিকা বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোন’ তৈরি করা হবে এবং একইসঙ্গে ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় একটি ‘চীন-আফ্রিকা শিল্প পার্ক’ তৈরি করা হবে। আফ্রিকা মহাদেশে ১০টি স্কুল তৈরি বা উন্নয়নে সহায়তা করা হবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন আফ্রিকান পেশাদারদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। আফ্রিকায় কাজ করা চীনা কোম্পানিগুলোতে অন্তত আট লাখ স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উৎসাহ দেবে চীন।

উল্লেখ্য আফ্রিকান দেশগুলোর নেতারা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এসব প্রতিশ্রুতির বহুমুখী প্রশংসা করেন।

 

মোহাম্মদ তৌহিদ, সিএমজি, বেইজিং।