রোববারের আলাপন-স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন অধ্যবসায়: বিশ্ব অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন
2021-11-26 16:16:22

আকাশ: সুপ্রিয় শ্রোতা, সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা অনুষ্ঠানে। আপনাদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমাদের সাপ্তাহিক আয়োজন ‘রোববারের আলাপন’। আপনাদের সঙ্গে আছি এনাম এবং আকাশ। 

আকাশ: বন্ধুরা, বেইজিংয়ে ইতোমধ্যে শীতকাল শুরু হয়েছে। এনাম ভাই, আপনি কি সম্প্রতি লাও সান পার্কে গিয়েছেন? বেইজিংয়ের শীতকালীন জীবন নিয়ে আপনি আমাদের শ্রোতাদের কিছু বলবেন কি? 
এনাম:...
আকাশ: এনাম ভাই, বর্তমান আবহাওয়া দৌড়ের জন্য খুবই উপযোগী। আপনি সময় পেলে লাও সান পার্কে গিয়ে দৌড়াবেন, কেমন? 
এনাম:...
আকাশ: বন্ধুরা, এবার আমরা অলিম্পিক গেমসের একজন চীনা খেলোয়াড়ের গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। 

গত পয়লা আগস্ট সকালে টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চীনের খেলোয়াড় কং লি চিয়াও নারীদের শট পুট ফাইনালে স্বর্ণ পদক জিতেন। এটি ছিল তাঁর জীবনে প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ জয়। আমরা আজ তাঁর গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করব। 

সম্প্রতি স্বপ্ন নিয়ে একটি সেমিনার বেইজিং স্পোর্টস বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত হয়। তাতে বিশ্ববিদালয়টির স্নাতক হিসেবে কং লি চিয়াও অনলাইনে তাঁর শিক্ষক ও সহপাঠিদের সাথে তাঁর নিজের গল্প ও টোকিও অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ পদক অর্জনের অনুভূতি শেয়ার করেছেন। 

তিনি বলেন, “সেই মুহূর্তটির জন্য আমি ২১ বছর অপেক্ষা করেছি।” স্বর্ণ পদক অর্জনের সময়টিকে স্বরণ করে তিনি বলেন, “ আমি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছি, আমি এটি করেছি।” 

কং লি চিয়াও ১৯৮৯ সালে জম্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতোমধ্যে চারটি অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিক গেমসে তিনি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমসে রৌপ্য পদক অর্জন করেন, এবং ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিক গেমসে চতুর্থ হন। এবারের টোকিও অলিম্পিক গেমসে তিনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। 

তাঁর আগের ব্যর্থতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি জানি শারীরকে সহজে পুনরুদ্ধার করা যায়, কিন্তু মনকে পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন। এ জন্য আমি নিজের সঙ্গে সংলাপ করে থাকি, আমি নিজেকে বলি, আবারও ঘুরে দাঁড়াতে হবে, নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে, এবং শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।”

অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হতে হলে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ নিতে হয়। প্রতিদিন তিনি প্রায় ২০০টিরও বেশি বার শট পুট করেন। যদি কোনো দিনের নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন বাকি থাকে, তাহলে তিনি তাঁর প্রশিক্ষণ বন্ধ করেন না। যদিও এটি অনেক কঠিন ও কঠোর ব্যাপার, তিনি কখনো পরিত্যাগ করার চিন্তাও করেননি। 
প্রশিক্ষণই তাঁর জীবনের সবকিছু। ফলে তিনি প্রায় ৪ থেকে ৫ বছর সময়ের মধ্যে একটি চলচিত্রও দেখেননি, এবং প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর ধরে বসন্ত উত্সবে জন্মস্থানে ফিরে যেতে পারেননি। 

টোকিও অলিম্পিক গেমসের বিলম্ব তার প্রশিক্ষণের মান নষ্ট করেছে। এক সময়ে তার হাঁটু আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ফলে তাঁর শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, “এটি ছিল একটি বড় পরীক্ষা। আমি ভেবেছিলাম, স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আমার এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। আমাকে আরো এগিয়ে যেতে হবে।”
“মানুষের স্বপ্ন থাকতে হয়, তা বাস্তবায়নের সম্ভবনা অবশ্যই রয়েছে, তাইনা?” কং লি চিয়ান খেলা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তাঁর এ কথা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তাতে অনেকে উত্সাহিত হয়। সাংবাদিকরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, কীভাবে আপনি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন? তিনি বলেন, “শুধু প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হওয়া যায়। অবশ্যই শুরুর দিকে আমি অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ভাবিনি। নিজের পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে স্বপ্নও পরিবর্তন হতে থাকে। শুরুতে আমি শুধু ভেবেছিলাম, একটি ভাল বিশ্ববিদালয়ে ভর্তি হতে। পরে আমার রেকর্ড ক্রমশ উন্নত হতে থাকে, আমার পাওয়া পুরস্কারও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। তখন আমি ভেবেছিলাম ,আমি এগিয়ে যেতে চাই, আমি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তথা অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।”
সংবাদিকরা আরো জানতে চান, অবসর নিয়ে এখন কী ভাবছেন? উত্তরে তিনি বলেন, “এখনো এ নিয়ে ভাবিনি। যদি দেশ আমাকে চায়, তাহলে আমি এগিয়ে যাব, আমি প্যারিস অলিম্পিক গেমসে অংশগ্রহন করতে চাই।”
তিনি আরো জানান, আশা করি, খেলোয়াড়ের পরিচয় কাজে লাগিয়ে আরো বেশি লোকদের আমি উতসাহিত করতে পারব, যাতে আরো বেশি লোকজন গণ-শরীরচর্চায় অংশগ্রহণ করতে পারে। 
তিনি বলেন, “আশা করি, আমার নিজের গল্পের মাধ্যমে আমি মানুষকে আরো বেশি উত্সাহিত করতে পারব।”