টিকা খাতে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা জানাতে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে জিম্বাবুয়ে
2021-11-18 10:15:55

টিকা খাতে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা জানাতে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে জিম্বাবুয়ে_fororder_津巴布韦1

জিম্বাবুয়ে ও চীনের টিকা খাতে সহযোগিতা নিয়ে সেদেশের তৈরি এই তথ্যচিত্রের কাহিনীতে বলা হয়, চীনের নভেল করোনাভাইরাসের টিকার সাহায্যে সেদেশের দর্শনীয় স্থান বা ভিক্টোরিয়া শহরে পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে।

 

সম্প্রতি জিম্বপেপার্স টিভি নেটওয়ার্ক ‘ZIMBABWE-CHINA VACCINE PROGRAMME, BUILDING A HEALTH SHIELD FOR THE CITY OF VICTORIA FALLS নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করেছে।  

আধা ঘণ্টার এই প্রামাণ্যচিত্রে জিম্বাবুয়ের দর্শনীয় স্থান হিসেবে ভিক্টোরিয়া শহরে চীনা টিকার সাহায্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের ও পর্যটকদের ‘কম সংক্রমণ ও শূন্য মৃত্যু’ এবং ধাপে ধাপে পর্যটন খাত পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতির উন্নয়ন বাস্তবায়নের গল্প ফুটিয়ে তুলেছে।

 

ভিক্টোরিয়া শহরে বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম জলপ্রপাতের একটি অর্থাত্ ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত অবস্থিত। সেই সঙ্গে সমৃদ্ধ উদ্ভিদ এবং প্রাণীজ সম্পদ আছে। নভেল করোনাভাইরাস প্রকোপের আগে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার পর্যটকরা ওই স্থানে ভ্রমণ করতে যেতেন। ভিক্টোরিয়া শহরটির পর্যটন খাতে আয় জিম্বাবুয়ের সারা দেশের পর্যটন আয়ের ৫০ শতাংশেরও বেশি।

তবে মহামারীর নেতিবাচক প্রভাবে সেখানকার পর্যটন খাত একদম স্থবির হয়ে পড়ে। সীমানা বন্ধ হয়ে যায়, ফ্লাইট স্থগিত করা হয় এবং আন্তঃপ্রাদেশিক ভ্রমণও নিষিদ্ধ হয়। ভিক্টোরিয়া শহরের হোটেলগুলোতে একটি অভূতপূর্ব শূন্যতা তৈরি হয়। বেশিরভাগ স্থানীয় মানুষ তাদের জীবিকার জন্য পর্যটনের উপর নির্ভর করত। মহামারী প্রতিটি পরিবারের জীবনে প্রভাব ফেলেছে।

টিকা খাতে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা জানাতে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে জিম্বাবুয়ে_fororder_津巴布韦2.JPG

চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষ দিক থেকে ভিক্টোরিয়া শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক আকারে চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হয়। এপ্রিল মাসের শেষ দিকে এ শহরে টিকাদানের হার ৭৭ শতাংশ ছিল এবং এ শহরটি জিম্বাবুয়ের প্রথম শহর হিসেবে গ্রুপ অনাক্রম্যতা অর্জন করে।

জুলাই মাসের পর ভিক্টোরিয়া শহরে বিদেশি পর্যটকরা টিকা নেন, তাদের জন্য জলপ্রপাত আবারও খুলে দেওয়া হয়। দেড় বছর মন্দার পর, শহরটি ধীরে ধীরে তার আগের প্রাণশক্তি ফিরে পায়।

 

প্রামাণ্যচিত্রে অনেক বিদেশি পর্যটক মনে করেন, ভিক্টোরিয়া শহরে টিকাদানের হার উচ্চ এবং অনেক নিরাপদ।

আপনারা এখন যে শব্দ শুনছেন তা হলো পর্যটকদের কণ্ঠ।

তারা বলেন,

নারী: আমার এখানে ভ্রমণ করার কারণ হলো এটি খুব নিরাপদ স্থান। এই শহর আপাতত জিম্বাবুয়ের সবচে নিরাপদ পর্যটন গন্তব্যস্থানের মধ্যে অন্যতম। কারণ এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দা টিকা নিয়েছেন।

পুরুষ: আমার গত গ্রীষ্মে ভিক্টোরিয়া শহর ভ্রমণের কথা ছিল। তবে মহামারীর কারণে আমি আসতে পারি নি। চলতি বছর টিকাদান কাজ সামনে এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে এসেছি। এই স্থান অনেক নিরাপদ। যারা আমাদের কাছাকাছি আসে, তারা ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়। মাস্ক পরে এবং তাদের হাত ধোয়ার অভ্যাস রয়েছে। তাই এখানে ভ্রমণ করা নিরাপদ বলে আমি মনে করি।

ভিক্টোরিয়া শহরে পর্যটন খাতে জড়িত ক্লেমেন্ট মুকওয়াসি বলেন, ভিক্টোরিয়া শহরে ‘গ্রুপ অনাক্রম্যতা’ বাস্তবায়নের পর স্থানীয় পর্যটন শিল্প উন্নত হচ্ছে। ক্লেমেন্ট বলেন,

 ‘বর্তমানে এখানকার পর্যটন শিল্পে প্রাণবন্ত উন্নয়নের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। যেহেতু, এখানকার গ্রুপ অনাক্রম্যতা বাস্তবায়িত হয়েছে, তাই অধিক থেকে অধিকতর পর্যটক ভ্রমণের জন্য এখানে এসেছেন এবং বৈচিত্র্যময় পর্যটন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। যেমন, জলপ্রপাত উপভোগ করা এবং প্রমোদ তরী দিয়ে ঘুরতে যাওয়া প্রভৃতি। এই উন্নয়ন প্রবণতা খুব উদ্দীপনাময় এবং এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, ভিক্টোরিয়া শহরের পর্যটন শিল্প ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে।’

টিকা খাতে চীনের সহযোগিতার প্রশংসা জানাতে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে জিম্বাবুয়ে_fororder_津巴布韦3

ভিক্টোরিয়া শহরের মেডিকেল সুপারভাইজার ফুনগাই মুসিনামি মুউরা বলেন, ভিক্টোরিয়া শহরের পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারে জিম্বাবুয়ে ও চীনের টিকা খাতে সহযোগিতার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন,

 ‘ভিক্টোরিয়া শহরের বাসিন্দারা চীনের টিকা গ্রহণ করেছেন। এসব টিকা আমাদের গ্রুপ অনাক্রম্যতা বাস্তবায়নে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জিম্বাবুয়ে ও চীনের টিকা খাতে সহযোগিতার ফলে ভিক্টোরিয়া শহরের বাসিন্দারা টিকা পেয়েছেন।’

জিম্বাবুয়েতে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত কুও শাও ছুন বলেন, চীন ও জিম্বাবুয়ের টিকা খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে জিম্বাবুয়ের মহামারী নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং আবারও অর্থনীতি ও সমাজের উন্নয়ন স্বাভাবিক পথে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন,

‘আমি আনন্দের সঙ্গে দেখতে পাই যে, চীনের টিকার সাহায্যে জিম্বাবুয়েতে দেশজুড়ে টিকাদান পরিকল্পনা কার্যকরভাবে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ও মৃত্যুর হার কমিয়ে দিয়েছে। ভিক্টোরিয়া শহরের মতো কোনো কোনো জায়গায় গ্রুপ অনাক্রম্যতা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং পর্যটন খাতও পুনরুদ্ধার হয়েছে। জনগণের জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।’

বর্তমানে জিম্বাবুয়ে সরকার সারা দেশে ব্যাপকভাবে টিকাদানের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের শেষ দিকে এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে এবং গ্রুপ অনাক্রম্যতা বাস্তবায়িত হবে। (লিলি/তৌহিদ/শুয়ে)